ওরা দুজন
ফোনে এটাই ছিল আন-অফিসিয়াল ফুটনোট।
তারা আসবে তাদের রিসার্চের বিষয়ে কথা বলতে।
তবু কিরকম অস্বস্তি। মন দ্বিধান্বিত - আসতে বলব?
...
ওরা
দীর্ঘশ্বাসগুলো ছাদের কার্নিশে
জানলার পাশে, উঠোনে, আমগাছে বসে।
আমি যতবার ওদের দৌড়ে গিয়ে তাড়াই-
হুশ..যা... যা... হুশ...
ততবার ওরা উড়ে গিয়ে, আবার ফিরে আসে,
আবার বসে আমার ঘরের
আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে।
কি চায় ওরা?
ওদের হাতে করে খাইয়েছি কি কবে?
জানি না।
তবে কেন ওরা আমার চোখের দিকে
ও
পথ চেনে না আমায়
আমিও চিনি না তাকে
চলতে চলতে চিনছি তাকে
প্রতিটা বাঁকে বাঁকে
সময় চেনে না আমায়
আমিও চিনি না তাকে
পেয়ে হারিয়ে বুঝছি তাকে
আলো আঁধারের ফাঁকে
আমি চিনি না আমায়
আমায় চেনে না কে ও?
আমার বুকেই থাকে দেখি
চেনা চেনা, তবু অচেনা-ও!
ওদিকে
নরহরিবাবু প্রায় তিরিশ বছর হল ইছাপুর থেকে ডেলিপ্যাসেঞ্জারী করছেন।ইদানীং একটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটছে। উনি ঠিক ঠাহর করে উঠতে পারছেন না, ঠিক কি হচ্ছে।
উনি বাড়ি ফেরেন প্রায় রাত আটটার কাছাকাছি। স্টেশানে নেমেই কোনো একজন অপরিচিত মানুষের সাথে উনি কোনো পরিচিত মুখের আদল পান। শুধু তাই না, সেই পরিচিত মানুষের সাথে নরহরিবাবুর দেখা হবেই, সেদিন না হলে পরের দিন তো অবশ্যই।
ওয়েটিং রুম
কখনো শুচ্ছি, কখনো জাগছি
...
ওঁরা দুজন
"তোমায় ছাড়া বাঁচব না"
তাঁদের একজন icu-তে, আরেকজন
নার্সিংহোমের ওয়েটিং রুমে বসে।
ওঠো
জানলাটা খোলো। দরজাটা খোলো।
ওরা অনেকবার তোমার দরজায় টোকা দিয়ে গেছে।
কারা?
এক নদী জল
আর এক আকাশ তারা
মলাটটা ছেঁড়ো। ভূমিকাটা মোছো।
ওরা অনেকবার এ পাশ ও পাশ করে ঘুমিয়ে পড়েছে।
কারা?
এক পাহাড় স্বপ্ন
আর একমুঠো স্বচ্ছ কবিতারা
ওরা আছে, আশেপাশে
তোমার ফেলে যাওয়া কয়েকটা গ্রীষ্মের রাত
তোমার হেঁটে যাওয়া কয়েকটা বর্ষার সন্ধ্যে
তোমার কুয়াশা ঢাকা কিছু উষ্ণ আলিঙ্গন
এখনও ছায়ার মত আমার সাথে ফেরে
যখন মাঝরাতে কয়েকটা কুকুরের সাথে হাঁটি
যখন মাঝরাতে ঘুম ভেঙে জলতেষ্টা পায়
যখন মাঝরাতে দূরে রেলগাড়ির আওয়াজ শুনি
তখনও
ওদের পাশে তুমি নেই যে
দেউলিয়া হলাম জানো
যেদিন প্রথম তাকালাম
অসমাপ্ত কাজগুলো ডেকে ডেকে ফিরে গেছে
বুঝে গেছে আমার আর ফেরা হবে না ওদের কাছে কোনোদিন
সন্ধ্যাবেলার যে উদাসীন রঙ সামনের বটগাছটার মাথায়
ওই রঙটা যেন এই পৃথিবীর নয়
ওকি চিঠি তোমার?
ওঁ ভূর্ভুবঃ স্বঃ
ওরা বোঝে না
কেউ বলেনি আমায় তোমার কাছে নিয়ে যাবে
আমি তবু নিশ্চিন্তে খেয়া পারাপারের ঘাটে বসে আছি
কেউ বলেনি তুমি আমার অপেক্ষায় পথ চেয়ে আছো
আমি তবু কয়েকটা করবী ফুল একটা কচু পাতায় মুঠো করে নিয়েছি
তোমার জন্য
ওগো মহাপ্রাণ
ওরা
ওম
ওমেরও জাগতে ইচ্ছা করল না
ঋতুরও করেনি
কেন?
কাজ ফুরিয়ে গিয়েছিল?
বাড়তি শ্বাস-প্রশ্বাসে ঋণী হতে চায়নি?
ওপার
নিয়ে যাওয়া যায় না
ফিরে আসা যায় না
রেখে যাওয়া যায়
ফেলে যাওয়া যায়
এখানে ওখানে
উচ্ছিষ্ট খুঁজে ফেরে স্মৃতিরা
ওপার
মেয়েটা বলত, তাকে যে বিয়ে করবে সে কত টাকা যেন মাইনে না পেলে বিয়েই করবে না, বেশ বড় অঙ্কের টাকা থাকবে, চারচাকা থাকবে, বড় বাড়ি থাকবে ইত্যাদি। খবরের কাগজে, ম্যাগাজিনে ক্রিকেটার, অভিনেতাদের ছবি বেরোলে কেটে কেটে বইয়ের ফাঁকে রাখত। তারাই তার জন্য আদর্শ হবু বর।
ওরা
ওগো ভালোবাসা
ওগো ভালোবাসা
কোনো এক মরমী পাখির
ডানা থেকে খসা পালক আমি
আমায় ঝড়েতে ঝড়েতে পাগল কোরো না
আশ্রয় দাও
গভীর রাতের আকাশ যেমন বুকে নেয় নিস্তব্ধতাকে
ওরা তিনজন
অবন্তী, মল্লিকা, রেণু
তিনজন আজও দরজার কাছে বসে
সন্ধ্যেবেলা
রোজকার মত
অবন্তী, মল্লিকা দুই জা, রেণু শাশুড়ি
আজ বড্ড অন্ধকার লাগছিল ওদের বারান্দাটা
মুখগুলো স্পষ্ট দেখতে পেলাম না
ওগো চিত্তগামী
ওগো আদিকবি
কেউ কেউ তবে কাব্য বোঝে?
তোমার রচিত বিশ্বরাজ যে
কোন ভক্তের কি মোহ ঘোরে
আজ সে মাটির আসন খোঁজে?
বল্মিক যত বল্মিক আজ
ধুলোয় ধুলোয় ওড়ে
ওগো আদিকবি,
শানিত অস্ত্র, হুংকার কেন
পূজা স্তবমালা ঘিরে?
ওরা তিনজন
গন্তব্য নেই আর গন্তব্য হারিয়েছে - এমন দুজন রেল স্টেশানে দাঁড়িয়েছিল
যার গন্তব্য আছে, তার ব্যস্ততা দেখে
যার গন্তব্য নেই মৃদু হেসেছিল
যার গন্তব্য হারিয়েছে লজ্জা পেয়েছিল
সিগন্যাল হল
লাইন জোড়া হল
ইঞ্জিনের ধোঁয়া দেখা গেল
ট্রেনটা এলো না
ওদিকে যেমন হয়
আর সামাজিক চিন্তা করবেন না। তাই মহেশ্বরবাবু ঠিক করেছেন কয়েকটা দিন কোনো ভূতুড়ে বাড়িতেই কাটিয়ে আসবেন। অনেক খোঁজপাতি করে শেষে রাণাঘাটের থেকে চোদ্দো মাইল দূরে হাড়জোড়া গ্রামের কোনায় একটা ভূতুড়ে বাড়ির সন্ধান পেলেন। একদিন বেলায় চাট্টি ডালভাত খেয়ে, একটা ট্রল
ওটা কিসের লোগো,
ওরা কারা?
তুমি নিশ্চুপ
আমিও
ওরা কারা,
যাদের কণ্ঠস্বরে অবয়বহীন অনৈতিহাসিক সত্য?
তুমি বিভ্রান্ত
আমিও
ওরা কারা,
যাদের সবকটা পথে সুনির্দিষ্ট অশ্বমেধের অশ্ব?
তুমি বালিঘড়ি, উপরপক্ষ
আমি তো বালি শূন্য
ওরা কারা,
যাদের ঘড়ি সময়ের না, রাজ অঙ্গুলি ভক্ত?
ওলটপালট
পাঁচিলটা ভেঙে পড়তে দেখার
আলোর মজলিশ ঘিরে জীবনের উৎসব
আমিও অপেক্ষায় আছি
...
ওরা প্রতিবাদ করবে না
তুমি একটা কফিনে
আরো কয়েকটা মৃতদেহ রাখতে পারো
অথবা কিছু মৃতদেহ
আধপোড়া করে নদীর চরে ফেলে রাখতে পারো
মৃতদেহরা প্রতিবাদ করবে না
ওঠো, আলো জ্বালতে হবে
- ওরা রেডি?
- হ্যাঁ তো, বৌদি, দুই ছেলে সব রেডি, ওঠো, এরপর ফ্লাইট মিস করবে যে
...
ওকে গিয়ে বলো
যে বাড়িটা পুড়ছে
মাঠে দাঁড়িয়ে একা
...
ওগো তুমি আমার চিরকালের
কেন?
আহা, এমন বাদলে তুমি কোথা?
উঠতে ইচ্ছা করছে না। বৃক্ক সিঞ্চিত জলধারার আত্মপ্রকাশের তাগিদ উপেক্ষা করেই শুয়ে।
তবু, এমন বাদলে তুমি কোথা?
...
ওরে ভাই মিথ্যা ভেবো না
দুশ্চিন্তা কিসের এত? আমার ভাবনাই শেষ কথা? তা তো নয়। আমার ভাবনার পরে আরো কিছু আছে। সে ভাবনা না, সে ঘটনা। যা ঘটে চলেছে। সেকি আমার ভাবনার অপেক্ষা করে?
ওদিকে
মানুষটা কুয়ো থেকে জল তুলে
পা'টা ডলে ডলে ধুতো
তখন চারদিকে
...
ওয়াশিং মেশিন
...
ও মোর দরদিয়া
...
ওগো নিঠুর দরদী
ভালোবাসার ব্যথা অনেক। না ভালোবাসার ব্যথা নেই। ভালোবাসার ব্যথা মাটির গন্ধের মত। সে যেমন থেকেও নেই। কিন্তু যেই না বৃষ্টির জল এসে পড়ল, সে জেগে গেল, এও তেমন।
ওদের জন্য
কারণটা ভেঙে বলি। নিবারণ ঘোষেদের ওঝা বংশ। শোনা যায় নিবারণদের কোনো এক পিতৃপুরুষ, চোল বংশের পুরোহিত ছিলেন। তার কানে কিছু সমস্যা ছিল। দীক্ষার সময় ঠিক মন্ত্র শুনতে পাননি। কিন্তু পরম নিষ্ঠা নিয়ে জপের জন্য শিবকে না পেলেও ভূতসিদ্ধ হয়েছিলেন। সেই থেকে নিবারণদের ভাগ্য ফিরে যায়। কি করে তারা ঘোষ হল আর এই বাংলায় এলো সেও এক ভৌতিক কাণ্ড। সে নিয়ে কারোর স্পষ্ট কোনো ব্যাখ্যা নেই, কিন্তু শোনা যায় যে কোনো এক পূর্বনারী (পূর্বপুরুষ যদি হয় পূর্বনারী হতেই বা দোষ কি!) নাকি এক ব্রহ্মদৈত্যের সঙ্গে এ দেশে এসে ঘর বেঁধেছিলেন। সেই থেকেই তারা এই হুড়ুমকুণ্ড গ্রামে এসে আছেন। তারকেশ্বর থেকে বেশি দূরে নয় এ গ্রাম।
....