মায়া
যে মাটি, যে জল, যে সোঁদা গন্ধ
তারই কথা বলি
সে আমার চিরন্তন।
...
মুনিয়া
তখন দুপুরের মধ্যভাগ।
তার কোলে একটা তিন বছরের ছেলে
হাতে একটা সস্তা সুটকেশ।
মাননীয় ধর্মাবতার
আপনার দেশে শাস্তির বহর আছে বটে!
চুরি ছিনতাই খুন অপহরণ ধর্ষণ
...
মেঘ-মল্লার
মিলন
কি অদ্ভুত, কি অদ্ভুত!
কাদের বাসা কি কিম্ভুত,
কি কিম্ভুত, কি কিম্ভুত।
তাদের নাচে দিক-হারা
...
মিছুটান
...
মা
বিকাল বেলা। আমি দোতলার বারান্দায় বসে কিছু একটা পড়ছিলাম। ক্লাস ইলেভেনে পড়ি, গরমের ছুটি চলছে তখন।
...
মুখ-মুখোশ
জানতে ইচ্ছা করে।
নাকি তোমার বুকের কোণায় লুকানো আছে খাঁচা,
আর তার ভিতরে আস্ত একটা বাঘ!
...
মনকে বোঝাও
মনকে বোঝাও।
রামকেও না শ্যামকেও না
যদুকেও না মধুকেও না।
মনকে বোঝাও।
...
মুক্ত
আমি বাইরে যাব।
একাই যাব।
আমার কান্নাগুলোকে ছড়িয়ে আসি ক্ষেতে।
ভয়গুলোকে পুড়িয়ে আসি নেড়াপোড়ার মত।
আমি একলাই যাব।
...
মন
জলও নই, বাতাসও নই।
আমি মন।
আমার খুশী আছে,কান্না আছে,
আশা আছে, ভাঙা আশার টুকরোও আছে।
...
মরণপণ
জল ভরেছ চোখে?
বেশ হয়েছে।
কাঁদিয়েছিলে আমায় এমন
মুখ বুজে সব সয়ে ছিলুম
রক্ত রাঙা চোখে।
ব্যাথা ভরেছ মনে?
বেশ হয়েছে।
দাপিয়ে ছিলে বুকের ভিতর
ছটফটিয়ে মরে ছিলাম
মনকে নিয়ে মনে।
বলবে বুঝি কিছু?
শুনব না যাও
(যদিও জানি শুনতে হবেই)।
সেদিন, বলব বলে
সুর সেধেছি
গান বেঁধেছি
কই শুনেছ?
পড়ছে মনে কিছু?
মার্জনা
সবচাইতে বড় আড়াল নিজের সাথে নিজের আড়াল। যে করেই হোক নিজের মুখোমুখি হতেই হবে। যা কিছু পাপ, তাকে মাথা নীচু করে স্বীকার করে, জোড় হাত করে নিজের অন্তর্যামীর সামনে হাঁটু গেড়ে বসতে হবে, ক্ষমা চাইতে হবে।
মন
সবাই বলল মনটাকে শক্ত করো। উনুনে আঁচ দিয়ে, তাতে ঘুঁটে, কাঠ কয়লা সব ঢাললাম। আঁচ গনগন করে উঠল। মনকে চড়ালাম। শক্ত হল। শক্ত হল, শুধু বাইরেটাই। ভিতরে একটুও আঁচ ঢুকল না।
বাইরেটা এত শক্ত এখন, যে বৃষ্টির ছিটে বাইরে আসে না, কিছু ভেঙে পড়ার আওয়াজ কান পাতলেও বাইরে থেকে শোনা যায় না, ঝড়ের দাপটও শুধু ভিতরেই আছাড় খেয়ে মরে।
মোহনা
মাত্র দুটো ছবি ছিল মনে
এক, তুমি আসবে
দুই, তুমি থাকবে
দিন গেল
মাস গেল
বছর গেল
আমার মনে দুটো আশা
এক, হয়তো তুমি আসবে
দুই, হয়তো তুমি থাকবে
দিন গেল
মাস গেল
বছর গেল
আমার মনে দুটো ভয়
এক, বোধহয় তুমি আসবে না
দুই, বোধহয় তুমি থাকবে না
দিন গেল
মাস গেল
বছর গেল
মন
মন বাইরের দিকে ছুটেছে। সারাক্ষণ তার বাইরে বাইরে খোঁজ। সে ছুটে মহাকাশকে ছুঁতে চাইছে, সে প্রশান্ত মহাসাগরের গভীরে গিয়ে নুড়ি কুড়িয়ে আনতে চাইছে। সে আলোর বেগে ছুটতে চাইছে, মাতাল হাওয়ায় নাচতে চাইছে। সেই ছোটবেলায় একরকমের খেলনা ছিল, একটা যন্ত্রকে পাঁই পাঁই করে ঘুরিয়ে যাওয়া, ওর সাথে একটা দড়ি লাগানো থাকত সেটাও পাঁই পাঁই করে চরকীর মত ঘুরত। আমাদের মনটাও সেরকম। সারাদিন পড়িমড়ি করে ছুটছে। কেন ছুটছে?
মেঘ-মল্লার
মহাকাশ কারোর অপেক্ষা করে না
কেন আমার জন্য বসে থাকবে?
ইচ্ছা হলে ডানদিক, বাঁদিক
যেদিক খুশী যেতে পারো
সমুদ্র, পাহাড়, জঙ্গল, মরুভূমি
যেখানে খুশী যাও
মা জানো
মা জানো তোমার শাড়ীগুলোতে
এখন শুধুই ন্যাপথলিনের গন্ধ
তোমার চটিটা প্লাস্টিকে মোড়ানো,
একটুও কাদা লেগে নেই তাতে
তোমার শাঁখা-পলা গুলোয়
সিঁদুরের দাগ ফিকে হয়েছে অনেক
মোহ
প্রভু বসি রাজসিংহাসনে
ভক্ত প্রবেশিল
হস্তে তার সহস্র ছিন্ন মস্তক, রুধি সিক্ত অসি
দিল প্রভু পায়ে
প্রভু শিহরিয়া উঠি জিজ্ঞাসিলেন, কি এ?!
মানুষকে ভালোবেসে
মিথ্যা কথা
তোমায় আমি চাই না
তুমি হেসে বললে, তাই?
আমি বললাম, তাই তাই তাই
তুমি বললে, বেশ তো
আমি তবে যাই যাই যাই
আমি বললাম,
না না না
তুমি বললে, না কেন?
আমি বললাম, ইচ্ছা তাই
যাব বললেই যেতে হবে?
যখন খুশী যাওয়া চাই!
মনের মধ্যে একটা ঘর বানাও
মনের মধ্যে একটা ঘর বানাও। শুধু নিজের জন্য। সে ঘরের চাবি কারোর হাতে দিও না। কারোরই হাতে না, সে যেই হোক। ঘরটা নিজের মত সাজাও।
সে ঘরে দেখা পেতে পারো হঠাৎ কোনো একদিন অচেনা অতিথির। যুগান্তরের নিমন্ত্রণ যেন তার তোমার সেই ঘরে। কি মন্ত্রবলে খুলে ফেলেছে সে তোমার গোপন ঘরের দরজা। সেই তোমার প্রাণের সখা, তোমার বঁধূ। তাকে বরণ করে নিও।
মৃত্যুঞ্জয়
কিছু ধুলো আলোর সাথে উড়ছে
কিছু কাদা স্রোতের সাথে ভাসছে
কিছু কাঁকড় ভিজে রাস্তা বাঁধছে
কিছু ডাস্টবিন কিছুতো খেতে দিচ্ছে
কিছু আস্তাকুঁড় এখনো আশ্রয় হচ্ছে
কিছু প্রতিবাদ অলিতে গলিতে মরছে
তবু ঝোঁপে ঝাড়ে নতুন ভ্রুকুটি উঠছে
সব আশা শেষে, সব চিতা নিভে
বুকের ভিতরে তবু ওটা কি নড়ছে?
মোহভঙ্গ
কি মুগ্ধতা ছেয়েছিল তোমার চোখে!
তুমি ফেরার রাস্তা ছিলে ভুলে
তারপর?
তারপর যা হওয়ার তা হল
মুগ্ধতা রঙ হারাল
ফেরার রাস্তা নতুন রঙ পেল
মাঝে মাঝে
মাঝে মাঝে কৌটোটাকে উল্টিও
হয়তো হারিয়ে যাওয়া,
চাপা পড়ে যাওয়া এমন কিছু পেয়ে যেতে পারো
যা অনেকদিন ধরে খুঁজছিলে
হতে পারে সেদিন খুব দরকারী ছিল না
ভয় পাচ্ছ?
ভাবছ কেঁচো খুঁড়তে কেউটে বেরোবে?
তা কেন?
ছাইগাদায় অমূল্য রতনও তো থাকতে পারে!
দেখোই না কি হয়?
আর অন্যভাবে দেখতে গেলে
কেঁচোর থেকে কেউটেই ভাল
বাঁচার মত বাঁচা যাবে
মরণ সাক্ষী
আমি তোমায় অনন্তকাল চাই
বুকের মধ্যে এক সমুদ্র কান্না
দু'হাত দিয়ে তোমায় বুকে চেপে
হারাবার ভয় তবু নিঃশেষ হয় না
দু'চোখ তোমার মুখের দিকে চেয়ে
সূর্য্য চন্দ্র বালি ঘড়িতে আটকে
কথাগুলো বোবা ব্যাকুল চাওয়ায়
ঠোঁটের কোণে থরথরিয়ে কাঁপছে
মাটি
লাফিয়ে লাফিয়ে আকাশ ছোঁয়ার চেষ্টায় আছি
একবারও ফিরে দেখছি না,
প্রতিটা লাফে মাটির বুকে কি বাজছে!
মাটি যদি কাদা হয়ে আটকাতো?
আটকাবে না, সেটা জানি
সে তো সর্বংসহা!
তাই লাফাইও মাটিতে
মুখ থুবড়িয়ে পড়িও মাটিতেই
মা
'মা' কখনো ব্যক্তিগত হন না
...
মধ্যপথ
সেটা পরে পাবে
আগে তোমায় উপরে উঠতে হবে হাঁশফাঁশ করতে করতে
...
মায়াবিনী
তোমায় শুধু না, তোমাদের মত অনেককে আমি চিনি।
...
মনের ওদিকে
তার পূব দিকের নীচে আমি থাকি
এদিকে চিন্তার জঙ্গল, ভাবের ঝরণা
ওদিকে কি, জানি না
...
মধ্যপথ
নাকি আলোনা সন্ন্যাসী?
...
মোহরদি
সেই ছোটবেলা থেকেই।
না, কোনো ঠাকুর দেবতার নয়,
বা কোনো আলোকিত মহাপুরুষেরও না
...
মহাকাশ
কেউ শুনতে চায় না, কেমন আছি।
সকাল থেকে রাত কৌটোর মধ্যে বন্ধ
বাইরের আওয়াজ ভিতরে আসে না
...
মিথ্যুক
এক ঝলকা আলো আমার মুখের ওপর এসে পড়ল,
বলল, সূর্য্য বলে কিচ্ছু নেই, আমিই সব।
...