শিক্ষক
তাঁর নিজের জন্য না, আমার জন্য।
শর্মিলাকে
তাই যারা চিন্তা করতে পারে
তাদের নিয়ে ভয় ওদের চিরকাল,
ওদের ছেড়ে রাখতে ভরসা পায় না ওরা।
...
শরণাগতি
শেষ চাওয়া
আমি এপার থেকে ওপারে যাব
শেষ কথা
কুমার বললেন,"অস্ত্র।"
পিতা বললেন,"বেশ।"
শুরু হল কুমারের অস্ত্রশিক্ষা।
কিন্তু দিন যত এগোলো, কুমার তত পিছলেন।
খবর গেল পিতার কাছে।
...
শুভ বুদ্ধি
মেয়েরা আমাদের অতীত সমাজে যে খুব সন্মানের সাথে বাস করেছেন তা বলতে পারি না। সতীদাহপ্রথা, পণপ্রথা, বাল্যবিবাহ...উদাহরণ বেড়েই চলবে। তারপর অনেক সমাজসংস্কারক এলেন।আমরা ধীরে ধীরে সভ্য হতে শুরু করেছিলাম। সত্যিই কি? বিশ্বাস করতে অসুবিধা হচ্ছে।আদিম রিপুর বর্বরতা কে সংযত করলে যে পৌরুষ বলে কিছু থাকবে না! তাই চলুক! আমরা রাস্তায় প্রতিবাদ করি,চেঁচাই,কাঁদি,তাতে কার কি!
শ্রেষ্ঠ জ্ঞান
সেদিন ভোর থেকেই রাজধানীতে লোক জমা হতে শুরু হয়েছে। চারিদিকে চাপা উদ্বেগ, কি হবে! কি হবে?
শোনা- জানা
লোকটা কোনোদিন লঙ্কা খায় নি শুনেছিলো ঝাল
সে লঙ্কা দেখলেই বলত, উঃ কি ঝাল!
লোকটা কোনোদিন তেঁতুল খায় নি
শুনেছিল টক
সে তেঁতুল দেখলেই বলত, উঃ কি টক
লোকটা এই ভাবে করলা দেখলে বলত, ইস তেতো!
কুমড়ো দেখলে বলত, ইস মিস্টি!
তাকে একদিন বাজারে পাঠানো হল
বাজারে গিয়ে সে একসাথে সব দেখে ফেলল গুলিয়ে
শেষ বসন্ত
বসন্তকে বলেছিলাম, আমার কাছে এসো না। বড্ড বেশি শৌখিন তুমি, আমার সাথে বনবে না।
শুনল না। ষড়যন্ত্র করল আমার জানলার পাশের আমগাছটা। এক ঝাঁক মুকুল সাজিয়ে, গন্ধে মাতিয়ে, ওঁত পেতে বসেছিল আমারই জানলার পাশে।
জানতাম কই? ভোরবেলা জানলা খুলতেই হল অতর্কিতে আক্রমণ। বসন্ত এল ঘরে। বসল আমারই বিছানায়, আমার মুখোমুখি।
বললাম, কি চাও?
শিকড়
গায়ে কেউ কটা ফুল ছড়ালো
গলায় কেউ মালা পরিয়ে গেল
অতর্কিতে
ভাল লাগছিল
তারপর ফুলগুলো কুটকুট করতে লাগল সারা গায়ে
মালাটা ভারী হতে হতে
আমার মাথাটাকে নীচে নামিয়ে আনছিল
আমারই পায়ের কাছে
শপথ
শপথ করবে যদি করো
কোনো বইয়ে হাত রেখে না
কোন গত মানুষের নামে না
এমনকি ঈশ্বরের নামেও না
শপথ কর নিজের বুকে হাত রেখে
যেখানে হাত রাখলে সমুদ্রের গর্জন শোনা যায়
যেখানে হাত রাখলে আগ্নেয়গিরির উত্তাপ পাওয়া যায়
যেখানে হাত রাখলে ঝড়ের বাতাস ছোঁয়া যায়
বুকের ওপর রাখো হাত
আর বলো তোমার শপথবাক্য
যে বাক্যের মরণ আবীরে রাঙা হয় জীবনের মুখ, পরমানন্দে
শাসন
প্রেমের অনুশাসন।
...
শিমুল
তার পাশে ছিল একটা মাঠ
আর চারদিক ঘিরে উঁচু উঁচু ফ্ল্যাট।
...
শিখা
প্রদীপের সলতে এগিয়েছি সারারাত
শিখাটাকে জ্বালিয়ে রাখব বলে
যেন প্রদীপের বুক না জ্বলে
শিখা এগোতে এগোতে
কখন আমার আঙুলে ধরেছে আগুন
আঙুল থেকে শিখা এসেছে সারা শরীরে
পুড়ুক পুড়ুক। আগুনের ভুল ভাঙিয়ো না।
তবু প্রদীপের বুকটা বাঁচুক
শখ
শোনার সময় হয় না
যে হাতটা কেটে গেলে- শুধু বঁটি, হাত মোছার ন্যাকড়া, খুন্তির ডান্টি, বড়জোর ডেটল জানে.... সেই হাত দুটো ছাড়া নাকি সংসার অচল!
ওরাই বলে। বড্ড বলে। এত বলে যে শোনার সময় হয় না।
শুভ জন্মদিন, মা
একটা ছোট্ট চারাগাছ জন্মাল বনে। বড় হতে লাগল। বনের পাখি, পশু, মানুষ সব্বাইকে সে ভালোবেসে ফেলল। পাখি ডালে বাঁধল বাসা। মানুষ ক্লান্ত হয়ে পেল আশ্রয়, পেলো মনের কথা বলার সাথী।
শীতের কম্বল
যে আলোতে নিজের, অন্যের ভিতরটা দেখা যায় তা হল অনুকম্পা। অন্যের দিকে ফিরলে অন্যকে দেখায়, নিজের মধ্যে ফিরলে নিজেকে চেনায়। না হলে, নিজের অহংকারের জুলুমে অন্যকেও মারি, নিজেও মরি। নিজের ভার লাঘব করলে অন্যের চলার পথে পাথর হই না, আর নিজের বুকের ওপর পাথর হয়ে বসি না।
শুভ জন্মদিন -মা
ছেলেটা অফিস থেকে ফিরল। মদের বোতল, গ্লাস টেবিলে সাজাতে লাগল, বন্ধুরা এসে যাবে। হঠাৎ হাতে লাগল, মদের বোতলের গায়ে সাঁটানো ছোট চিরকুট -
'শুভ জন্মদিন -মা'
শূন্য আমি
ফুল তোলার কথা ছিল
তুলিনি
চন্দন বাটার কথা ছিল
বাটিনি
মালা গাঁথার কথা ছিল
গাঁথিনি
ভোগ রাঁধার কথা ছিল
রাঁধিনি
বেলা গেল, বেলা হল, বেলা গেল
তবু উঠিনি, উঠিনি, উঠিনি
"তুমি তো নাই, নাস্তিক আমি!"
বলে পাশ কাটালাম বাইরে
শুধু কালের অপেক্ষা
তবে কি সব ভণ্ডামী ছিল?
হাতে হাত রাখা
কাঁধে হাত রাখা
হাসিগুলো ছিল সৌজন্যের?
প্রাণের না?
তবে এত অসহিষ্ণুতা কেন?
তবে কি গোপনে গোপনে সবাই আমরা
বারুদ সাজাচ্ছিলাম?
শাণ দিয়ে রাখছিলাম ছুরি, কাটারী?
শুভদৃষ্টি
যতবারই চাঁদের সাথে চোখাচোখি হয়
কত জন্মের শুভদৃষ্টির কথা মনে পড়ে
সেদিন শ্রাবণের পূর্ণিমা
মেঘের ঘোমটা টেনে
চাঁদ আসল আমার নিকানো উঠানে
অনেক গভীর রাতে।
শিক্ষক দিবস
আজ রাধাকৃষ্ণানজীর জন্মদিন। শিক্ষক দিবস। এ কথা গত বছরও এই দিনটাতে লিখেছিলাম যে, যাঁর জন্মদিনটাকে শিক্ষক দিবস হিসাবে পালন হয়, তাঁর লেখা আমাদের সিলেবাসে এত ব্রাত্য কেন?
শান্ত হাওয়া
শান্ত হাওয়া চাঁদের সাথে ফিরে
নিঝুম রাতে জোনাকির ব্যাথা
শ্বেত চন্দনে ঢাকে।
শূন্যপাত্র
একটা লোক তৃষ্ণার্ত। গ্লাস হাতে কলের কাছে গেল। কল খুলল। হাতের গ্লাসটা কলের নীচে না ধরে, উপরে ধরল।
হাসির কথা না?
হ্যাঁ, অনেককেই দেখেছি শূন্যপাত্র নিয়ে ফিরছে। সঠিক স্থানে পৌঁছাচ্ছেও হয় তো বা। কিন্তু নিজেকে নীচুতে না রেখে, রাখছে ওপরে। পরিণাম? সেই শূন্যপাত্র!
শিক্ষা
অধ্যাপক মহাশয়
তাঁর সম্ভাবনাময় ছাত্র-ছাত্রীদের
যখন গাছটার বৈজ্ঞানিক গুরুত্ব বোঝাচ্ছিলেন
অশিক্ষিত মালীটা
দাঁড়িয়ে ছিল একটু তফাতে
ওনারা চলে গেলেই
গাছটায় জল দেবে বলে
শুনেছি কি?
মনকে বলেছি, ভেবো না
চোখকে বলেছি, চেয়ো না
হৃদয়কে বলেছি, শান্ত হও
সময়কে বলেছি, বয়ে চলো
বৃষ্টিকে বলেছি, ঝরে চলো
রক্তকে বলেছি, ছুটে চলো
ওরা শুনেছে হয় তো
আমি শুনেছি কি ?
শান্তি আনন্দ প্রেম
শান্তি-
নিজেকে ভুললে
তোমায় ভুললে না।
আনন্দ-
তোমায় চাইলে
নিজেকে চাইলে না।
প্রেম-
তোমায় ঘিরে
নিজেকে ঘিরে না।
শুভেচ্ছা
তাকিয়েছো কি নিবিড় করে
পথের পরে
চেয়েছিলে কি আপনমনে
আমার কাছে
গোপন উপহার?
শুধু
ধুলো শুধুই ধুলো হত
যদি তোমার পা না ছুঁতো মাটি
বাতাস শুধু বাতাস হত
যদি তোমার শ্বাসে না পেত বাস
আলো শুধু আলো হত
যদি তাতে চোখ না মেলতে চেয়ে
জল শুধু জল হত
যদি তোমার তৃষ্ণাকে রাখত তৃষ্ণার্ত
আকাশ শুধু আকাশ হত
শুধুই
আমার শুধু শুধুই তোমায় ভালো লাগে
কেন ভালো লাগে জানতে চেয়ো না
এর কোনোদিন কোনো উত্তর হয় না
যদি হত -
তবে আগমনীর সুরে বিঁধত
নবমী নিশির দ্বিধা
সন্ধিপূজোয় প্রদীপ জ্বলত না
শিক্ষক দিবস
"এখনকার ছেলেমেয়েরা স্যারেদের আগের দিনের মত সম্মান করে না। আগে হাজার মারধর করো মুখে 'টুঁ' শব্দ করত না। আগেকার দিনে পড়াশোনাও অনেক ভালো ছিল এখনকার থেকে। এখনকার মত এত নোটস মুখস্থ, টিউশান পড়ার ধুম ছিল না। স্যারেরাও স্কুলে খুব ভালো পড়াতেন। ওতেই সব হয়ে যেত।"
শসা
রাস্তা মেরামতের কাজ চলছে। একটা বুড়ি, শসা হাতে নিয়ে সেটাই বসে বসে দেখছে। শতছিন্ন শাড়ি। রোগা বুড়ির গড়ন বেশ শক্তপোক্ত। মিস্ত্রীরা যত বলছে, ও ঠাকুমা সরে বোসো, গায়ে নোংরা লাগবে যে! বুড়ি নির্বিকার। নড়েও না, চড়েও না।
খুব মুশকিল দেখে একজন বুড়ো মিস্ত্রী ওর পাশে গিয়ে বসল। বলল, তোমার কি হয়েছে ঠাকুমা? তুমি সরছ না কেন?
শুধু
গাছ, শুধু শিকড়ের ভরসায় আকাশের দিকে তাকায়
তুমি শুধু এটুকু বুঝলেই হবে
গাছ, শুধু শিকড়ের জোরেই ঝড়কে সামলায়
তুমি শুধু এটুকু জানলেই হবে
গাছ, শুধু শিকড়ের রসেই সিঞ্চিত তন্ত্রীতে তন্ত্রীতে
ছেড়ে যেও না।
শুধু এটুকু করলেই হবে।