জানলে কি করে?
জানলে কি করে?
অমুক নাকি খুবই অসুখী তমুককে বিয়ে করে
...
জানে তো দুজনেই
শরৎ এসে দাঁড়িয়েছে চৌকাঠে,
জানা
তবু বলিনি। তুমি বলবে বলে।
তুমি বললে না। শুধু কাঁদলে।
...
জেগে আছো?
আমি জেগে আছি
তুমি জেগে?
যদি জেগে থাকো তবে
কিছুটা অন্ধকার ঠেলে সরিয়ে
পাশে এসো।
অনেক যুগ ধরে কিছু কথা বলা হয় নি।
বাকলের মত মনের গায়ে লেগে আছে
কিছু কথার আবরণ।
ওগুলো মিথ্যা কথা।
তুমি সত্যি কথাটা খুঁজে বার করো
জোঁক না, কেঁচো হই এসো
আমার সহযাত্রীদের কথা বলি। আমার পাশেই আছেন একজন আসামের প্রত্যন্ত গ্রামের মাঝবয়সী একজন ব্যক্তি। নীল টি-শার্ট আর খয়েরী রঙের প্যান্ট পরা। কাল দশটার থেকে মুখের অভিব্যক্তির খুব একটা পরিবর্তন দেখিনি। বসার ভঙ্গীও প্রায় একই রকম। পূর্ণ নির্বাক।
জানি
রাস্তাটা শেষ হবে আরেকটুখানি এগোলে, জানি
তবু হাঁটছি
তোমার হাতটা আরেকটু পরেই ছেড়ে যাবে, জানি
তবু আঙুলে আঙুল রাখছি
তোমায় বাঁধিনি আমি, নিজেকে বেঁধেছি, জানি
তবু কোথাও একটা বাঁধন খুঁজছি
আমার জীবন 'তবু' তে আটকে জানি
তবু চলার পথে 'কিন্তু' কে দূরে রাখছি
জখম
তোমার পাশে বসার জন্য
কত চেষ্টা করলাম।
জানতাম না-
পাশে তোমার অন্য কেউ তখন,
এখন ইরেজারে মুছতে মুছতে
খাতার পাতাই জখম।
জল
আমার চারিদিকে চারটে মরা নদী
আগে জল ছিল, কোনো না-দেখা পাহাড়ী ঝরণা থেকে নামত
এখন খালি নুড়ি পাথর বালি আর বালি
আমি জল চাইতে এ পাড়া ও পাড়া ঘুরেছি
কই জল?
শুকনো খাল, শুকনো দীঘি, শুকনো নদী
ওরা বলল, চলুন খুঁজি জল, যাবেন?
হাঁটতে হাঁটতে বন পাহাড় পেরিয়ে মরুভূমিতে এলাম সবাই
ওরা বলল খুঁড়বেন বালি?
বালি খুঁড়তে খুঁড়তে নীচের দিকে নামছি তো নামছি
জেনে গেছে?
রাস্তার ধারে চাদরে ঢাকা একটা আস্ত মানুষ
ঘুমাচ্ছে
একটা কুকুর শুঁকে দেখে গেল, বেঁচে আছে!
একটা মানুষ (ভাল পোশাক পরা) লাথি মেরে বলল, বেঁচে আছে শালা!
কিছুটা দূরে কল থেকে, ভাঙা কানা উঁচু থালায় জল ভরে তার বাচ্চা মেয়ে
কয়েকটা যমদূতের মত গাড়ি ডিঙিয়ে লোকটার পাশে এসে বলল, বাবা ছাতু মাখ্
জীবন মানে কিছুটা সময়
যা নিল, না হয় নিলই
...
জানি না
জানি না
...
জিজ্ঞাসা
...
জানলাম
বুঝলাম, হৃদয়টা এতদিন বেওয়ারিশ ছিল।
তোর হাতে হাত রাখতেই বুঝলাম
এতদিন আমার কাছে আমি ছিলাম অবৈধ ।
...
জানতে ইচ্ছা করে
জিজ্ঞাসা করতে ইচ্ছা করে-
"তুমি কি কাঁদছিলে?"
...
জীবনপথ
জাগরণ
একটা কয়েন পড়ল মাটিতে। আমার কানে শব্দ আসল। মনে চমক দিল, আমি ফিরে তাকালাম।
জগৎমে ঝুঠহি দেখি প্রীত
জীবন
ভেজা পাথর
শ্যাওলা জমা পাথর
দাঁড়াতে গেলেই, হুমড়ি খেয়ে
পিছলে ফেলা পাথর
তার উপরেই দাঁড়াতে চাইছি
গোছাতে চাইছি কবে থেকে-
এরই নাম জীবন
জোনাকি
একাকীত্বের খাঁজে খাঁজে
জমাট বাঁধা বিষাদ
তাতে জোনাকির মত ছোট ছোট সুখ
কখনো জ্বলে, কখনো নেভে।
আমি কুয়াশায় ঢাকা হতাশাকে বলি
"আর কতদিন?"
বিভ্রান্ত হতাশা আকাশ হাতড়ায়
সূর্যের খোঁজে
ক্ষত বিক্ষত হয়ে আসে ফিরে, ক্ষুব্ধ হয়ে
ধূমকেতুর সাথে আঘাত লেগে।
জলের দাগ
জীবনটা খানিকটা জলের দাগ কেটে খেলার মত। তুমি মনের আনন্দে একটা জলের দাগ কাটলে, কল্কা আঁকলে। সেটা কিছুক্ষণ থেকে গেল। আরেকটা কিছু আঁকতে লাগলে, ইতিমধ্যে আগেরটা মিলাতে শুরু করল। তুমি বিদায় নিলে, জলের সব দাগও চিরকালের জন্য মিলিয়ে গেল।
জেনেও
দেওয়ার পর
দুটো হাত গুটিয়ে নিও অলক্ষ্যে
না হলে শূন্য হাতদুটোর
না মেলা হিসাব জাগাবে অনেক রাত
দেওয়ার সাথে পাওয়ার হিসাব
মেলেনি অনেকেরই
এটাই হয়
এমনই হয়
তবু দিতেও হয়
আবার হাত গুটাতে হবে জেনেও
জীবন
চোখে লেগেছিল সুন্দর
খুঁত ছিল, ছিল অপূর্ণতা
তবু চোখে লেগেছিল সুন্দর
মনে এসেছিল ভালবাসা
বিষ ছিল, ছিল ঈর্ষা
তবু মনে এসেছিল ভালাবাসা
চেতনায় এসেছিল আলো
সংশয় ছিল, ছিল ভয়
তবু চেতনায় এসেছিল আলো
জীবনে এসেছিল জীবন
মৃত্যু ছিল, ছিল বিচ্ছেদ
তবু জীবনে এসেছিল জীবন
জঞ্জাল
কই শান্ত হলাম?
কই ক্ষমার আলো বুকে জ্বলল?
কই ভালোবাসার স্নিগ্ধতা
সকালের আলোর মত জড়িয়ে থাকল হৃদয়?
ওই তো, গভীর রাগ
বুকের মাটিতে পোঁতা - মরেনি তো!
ওই তো, লোভের লতাপাতার গায়ে
ঈর্ষার বিষফল ফুটে আছে থরে থরে!
ওই তো, প্রতিহিংসার ধিকি ধিকি আগুন
ফুঁসে চলেছে কালো অন্ধকারে!
জাগা রাত
অনেক রাত।
কিছু তারা জেগে,
কটা প্যাঁচা আর পাড়ার কটা কুকুর-
ওরাও জেগে।
আমিও জেগে।
আমার চোখ আর হৃদয় পাশাপাশি শুয়ে
চোখ দেখেছে তোমার চোখ আজ
হৃদয় ছুঁয়ে এসেছে তোমার মন
ওরা দুজনে এখন তোমার কথাই বলছে
আমি শুনছি,
ঘুম ক'বার এসে ফিরে গেছে,
তা যাক।
জাগো
অচেনা রাস্তা, চেনা লাগে তোমার
অচেনা তুমি সবার কাছে তাই
ঝুঁকিকে নাও মুঠোর মধ্যে পুরে
সাবধানীরা এড়িয়ে চলে তাই
দাঁড়াও একটু, আরেকটু যাক বেলা
দেখবে সবাই আশেপাশেই আছে
যাবে কোথায়?
চারদিকে যা নরককুণ্ড জ্বালা!
এবার তুমি একবার দাও ডাক
তোমারই দিকে অলক্ষ্যে সব চেয়ে
দেবেই, জেনো দেবেই মরণ ঝাঁপ!
দাঁড়িয়েছে তারা, বহু অপমান সয়ে
জানলা
খোলা জানলা
বাতাস এলো তোমার গন্ধ নিয়ে
বন্ধ জানলা
আমার গন্ধে বাতাস উঠল ভারী হয়ে
জ্যোতিষী জানেন
জ্যোতিষী জানেন, কার হাতের কোন দাগ কাকে কোথায় নিয়ে যাবে
অথচ জানেন না, কার হাতের পর কার হাত তার সামনে পাতা হবে
জগন্নাথ ও রামকৃষ্ণ
দূরদর্শনের বিভিন্ন চ্যানেলের বহু মানুষের অক্লান্ত পরিশ্রমে বাড়ির টিভির পর্দায় ভেসে আসছে পুরীর রথযাত্রার দৃশ্যাবলী। অজস্র মানুষের অসীম উৎসাহ, নৃত্য-গীত-কীর্তনে মুখরিত মন্দিরের সম্মুখস্থ বড়দাণ্ড বা মহৎপথ। ধারাবিবরণকারীদের বিভিন্ন ভাষায় ভক্তিপূর্ণ ব্যাখ্যান।
জাগাও
এ পাঁকের দহ থেকে বাঁচাও
তৃষ্ণার জ্বলন্ত কুণ্ডে কিছুকাল আমারও তো কাটল
সব ব্যর্থ হত যদি তুমি না ডাকতে ব্যাথার মত ডাকে
ওরা স্নান সেরে হয় তো এপথ দিয়ে যাবে
ওদের স্তবমালার একটি সুর আমার প্রাণে জাগাও
হোক অক্ষয় সে সুর
প্রাণের সবকটা তার ছিঁড়ে গেলেও
জীবন
জীবন মানে নদী?
নাকি একটা ঘূর্ণিপাক?
গড়গড়িয়ে ছুটছি?
নাকি বোঁ বোঁ চর্কিপাক?
আশা মানে সামনে?
নাকি পিছন টেনে আগে?
হতাশ মানে ব্যর্থ?
নাকি 'সত্যি' গেছে জেগে?
আকাশ সে কি অসীম?
নাকি শেষ না হয়ে থমকে?
প্রেম মানে কি সুখ?
নাকি খানিক গরম কলকে?
কার মানে কি করবে
সেটা মনের উপর দাঁড়িয়ে
সব কি বোঝা যায় রে?
জীবন
জীবন
শাঁখের খোলে অসীমের নিনাদ
যদি কান পাতলে - তো শুনলে
নয় তো দেখলে
সারা গায়ে শুধুই
দাগের উপর দাগ
জাতিস্মর মৃত্যুঞ্জয়
তোমার গায়ের গন্ধে - আমি জাতিস্মর
তোমার হাতের স্পর্শে - আমি মৃত্যুঞ্জয়
জয় হোক
ভাষার জঙ্গলে বিভ্রান্ত বুদ্ধি
বসল চিরবহমান হৃদি-নদীর তীরে
শ্রান্ত মন শান্ত হল
ভিতরে কে গায়?
সমস্ত প্রাণ উজাড় করে নামল জলে
তখন সান্ধ্যসূর্য সদ্য নেমেছে ঝোঁপের আড়ালে
তিরতির করে কাঁপছে ঝাউপাতার ঝালর
জঙ্গল কেটে সভ্যতা বানালাম
জঙ্গল কেটে সভ্যতা বানালাম। জঙ্গলের পশুত্বটাকে সাথে করেই আনলাম। ওকে কাটবে কে? বাঁধবে কে?
জানলাটায় তোমার অধিকার
যদি বলি জানলাটায় তোমার অধিকার, জানলার বাইরের প্রবহমান দৃশ্যে নয় - বলবে জ্ঞান দিচ্ছো।
অথচ তোমার চোখের পাতায় চুমু খেতে দিয়ে, চোখের কথাগুলোকে চির-অনধিকারে রাখছো।
জোছনা
এক মুঠো জোছনা চুরি করে
সিঁড়ি দিয়ে পা টিপে টিপে
তোমার ঘরের দরজায় এসে দাঁড়ালাম
তুমি বললে -
মোছা মেঝে, একটু দাঁড়াও
জলটা শুকিয়ে যাক আগে