দোলনা
আরো দোলো
দরকার ছিল না
হার্টের যে অপারেশনটার দরকার ছিল না,
ডাক্তার সেটাই করলেন।
...
দিশা
ঈশ্বরকে ডাকলে সব দু:খ দূর হবে
চিরকালের মত।
বড় হয়ে বুঝলাম তা হয় না।
...
দেখা
তাই যদি হত তা হলে হয়তো বা দেখতাম একটা হনুমান কলার কাঁদি পাশে রেখে ফুলের শোভায় বিমোহিত হয়ে মালা গাঁথতে বসেছে, আর গুনগুন করে গাইছে, "পরাবো বলিয়া তোমার গলায় সাধের মালাটি গেঁথেছি।"
...
দাঁড়াও
...
দাও
তার চেয়ে থাক না কিছু গাছে।
কিছু তোলো সাজিতে।
দমকা বাতাস
দমকা বাতাসে প্রদীপটা নিভল
আলোর বাধা সরিয়ে, সামনে কে?
তুমি?
আলো জ্বালব না আর
এসো অন্ধকারে, সবার আড়ালে।
ভেবেছিলাম, সব ফুরিয়েছে বুঝি
গোপন পথে আসো যদি চিনব কি করে?
জানতাম না-
আমার কান্নাগুলো এখনো আছে
তোমার গন্ধে মিশে।
দুই-ই
কারোর না আসার অজুহাত
কারোর যে কোনো ভাবে আসার ছুতো
দুইই দেখেছি
কারোর চোখে পাশে বসেও অস্থিরতা গোপনের চেষ্টা
কারোর গলায় দূরে থেকে কাছে না থাকার যন্ত্রণা লুকাবার অভিনয়
দুইই জেনেছি
কারোর মনে পড়েও ভুলে থাকার চেষ্টা
কারোর ভুলে গিয়েও মনে পড়ানোর অভ্যাস
দুইই বুঝেছি
দু'চক্ষের বিষ!
তোমায় আমি ভালোবাসি?
কক্ষনো না!
অমন খুদে চোখ
অমন বোঁচা নাক
অমন খ্যানা গলা
অমন ছ্যাদা কান
ধুর ধুর ধুর!
তবু কেন রোজই আসি?
না হলে মূর্খ বোঝাব কি করে
তোমায় আমি কতটা বাজেবাসি!
কেন এত রাগ?
তা হবে না!
এমন পোড়া রূপ নিয়ে
এমন ঢঙের সাজ!
দেখেছি
আমি রাগী মানুষ দেখেছি
আমি কামুক মানুষ দেখেছি
আমি লোভী মানুষ দেখেছি
আমি ঈর্ষাপরায়ন মানুষ দেখেছি
আমি ঠগ মানুষ দেখেছি
আমি শঠ মানুষ দেখেছি
আমি খুনি মানুষ দেখেছি
আমি ধর্ষক মানুষ দেখেছি
আমি এদের সবার চোখেই একটা ভয় দেখেছি
আর সেই ভয়কে আড়াল করে
হিংস্রতার মুখোশ।
দিবাস্বপ্ন
একবার উঠে কড়াটা নেড়েই দেখো না
হয়তো দরজাটা খুলবে
না হয় খুললোই না।
তবু জানবে, কড়া তো নেড়েছিলাম
নাকি বসে বসে ভেবেই যাবে-
'আহা রে, যদি দরজাটা খুলত!'
দান
যা নিয়ে গেলে, যাও
ফেরৎ চাইব না।
চেয়েছিলে দু'হাত পেতে
শূন্য হাতে ফেরাতাম কি করে?
তুমি জানতে, আমি তা পারব না
যাওয়ার সময় পিছনে ফিরে তাকালে না একবারও।
আমি তাকিয়েছিলাম,
যদি কিছু ফেলে যাও
কুড়িয়ে ফিরিয়ে দেব বলে
আমি যা দিই, একেবারেই দিই।
তুমি হতভাগ্য,
যদি তিলমাত্র বুঝতে সে ব্যাথার সুখ
আর হাত পাততে হত না
দূরে
তোমার দিকে কম তাকাই
কারণ, তোমার হৃদয় ফোঁড়া চোখ।
তোমার সাথে কম কথা বলি
কারণ, তোমার কথা বলার ফাঁকে
শুদ্ধ নীরবতা।
তোমার কাছে যাই না
কারণ আমার নিঃসঙ্গ হৃদয়।
দূরত্ব বাড়বে স্মৃতিতেও
জানো
যে পেনটায় তোমায় চিঠি লিখতাম
সেটা পাশের বাড়ির হাবলু নিয়ে গেছে
কাল থেকে ওর মাধ্যমিক
যে ডায়েরীটার পাতা ছিঁড়ে চিঠি লিখতাম
সেটা লুকিয়ে রেখেছিলাম
কাল দেখলাম উইয়ে কেটেছে এমন
একটা পাতাও আস্ত নেই আর!
যে গোলাপ ঝাড়ের গোলাপ তোমায় দিতাম
সেটা নেই আর
ওখানে ড্রেন বানাবার জন্য মাটি কেটে রেখেছে
মিউনিসিপ্যালিটির লোকেরা
দিগন্তরেখায়
তোমার চোখের দিকে তাকিয়ে
সমুদ্রকে পিছনে রেখে দাঁড়িয়ে আছি
বহু শতাব্দী ধরে
পায়ের শিরা ফেটে রক্ত পড়েছে বালিতে
ধুয়ে নিয়ে গেছে সমুদ্রে
মুক্ত এসেছে ঝিনুকের খামে
ফিরিয়ে দিয়েছি
শুধু তাকিয়ে থেকেছি তোমার চোখে
দেখেছি
আমি দেখেছি
একবার না, বহুবার দেখেছি
যে অন্যকে ব্যর্থ করার সঙ্কল্পে
এক বুক ষড়যন্ত্র নিয়ে
বাড়ি থেকে বেরোলো ভোরবেলা
তাকে দেখেছি
একবার না, বহুবার দেখেছি
মাথা নীচু করে, নিজেকে ব্যর্থ করে
গোপনে ফিরছে সে চোরের মত, সন্ধ্যাবেলা
দম্ভ
সাগরের দাম্ভিক জলকণা
পড়ল বালুতটে, চায় পৃথক অস্তিত্ব
কেন সে থাকবে একাকার হয়ে
প্রকাশ কি করে হবে, ব্যক্তিত্ব!
তবু সে আজ
সাগরের দিকে কাতর নয়নে চেয়ে
আজ বুঝেছে, সূর্য্য কি ভীষণ!
মরণ যে তার মাথার উপরে ছেয়ে
দিও না
ওরা কাড়তে চাইছে
ছিনিয়ে নিতে চাইছে
সরিয়ে দিতে চাইছে
তুমি কি দেবে, ওদের-
কেড়ে নিতে?
ছিনিয়ে নিতে?
সরে যেতে?
দ্বিমেরু
আদি কথা
----------
বেলো যে মিথ্যা বলত তা নয়। মিথ্যাকে সত্যি ভেবে বিশ্বাস করার এক অদ্ভুত ক্ষমতা ছিল ওর মধ্যে। মিথ্যাকে সত্যি জেনে বিশ্বাস করা আর সত্যি মেনে বিশ্বাস করার মধ্যে পার্থক্য আছে। প্রথমটা অজ্ঞতা। দ্বিতীয়টা হয় দুর্বলতা, না হয় চালাকী।
দু-প্রান্ত
তাই প্ল্যাটফর্মে ক্ষুধার্ত অসুস্থ বাবাকে ভিক্ষা করতে দেখলে কেমন লাগে জানি না
...
দিও না
ওরা বুকের সব রক্তটুকু খেয়ে মুখ মুছে
কুলকুচো করে ফিরে যাবে
তারপর তোমার কুৎসা রটাবে
...
দুঃখ বিলাসিতা!
গাছের পাতা ঝরতে দেখিস নি আগে?
দেখিসনি শুকনো নদীতে ঝোপের জঙ্গল?
...
দুখন্ড
অহংকারী কখনো বোঝার চেষ্টা করে না।
দু'দিক বাঁচিয়ে চলতে গিয়ে
...
দ্বন্দ্ব
পাখির মধ্যে শুধুই পাখি
গরুর মধ্যে শুধুই গরু
...
দেখেছি
গা ঘেঁষে যায়, আঁচড়ও লাগে না তার গায়ে।
...
দু'হাত
আগলিও না।
...
দুশ্চরিত্রা
ছেলেটা হৃদয় ছাড়িয়ে শরীর নিল নিংড়ে
...
দান
প্রথমটায় না
দ্বিতীয় কি তৃতীয় আঁশের সাথে হাতে
লাগবে রস।
...
দেওয়াল
আমার আর আমার সুখী পরিবারের
ছবি আটকেছি।
...
দুরকম
"ভালবাসি।"
দুজনের অন্তর্যামী হাসলেন,
তাকালেন ওদের স্নায়ুর দিকে- জ্বলছে!
...
দূর হটো!
লড়াই অনেক বেশি সত্যি
আমার কাছে।
...
দীর্ঘশ্বাস
দু'দিক
অহংকারের একদিকটা গরম, আরেকদিকটা ছুঁচালো। তুমি একদিকে, আমি একদিকে। তুমি বিঁধছ, আমি পুড়ছি।
অথচ দুজনেই জানি, চাইলেই একে সরিয়ে দেওয়া যায়। দিই না। নিজেদের মুখোমুখি হতে ভয়। সাধারণত্বের বিনয়, মিথ্যা অসাধারণত্বের মুখোশ। সেই মুখোশেই ভরসা।
জানি না তো, আসলে সত্যিই অসাধারণ কে? তুমি না তো?
দ্রোহাত্মা ও মহাত্মা
দরবারি কানাড়া
গভীর রাত। বাঁশিতে বাজল সুর - দরবারি কানাড়া। সুর উঠল কেঁপে কেঁপে চার দেওয়ালের মধ্যে মাথাকুটে। কে দেবে ওকে আগল খুলে? ও কাকে চায়? কার কান্না ওর বুকে এমন জমাট বেঁধে?
দেবদাসী
ফাঁকা মন্দির। বেশ বড় মন্দির। বিগ্রহ - শ্রীকৃষ্ণ ও রাধার। সন্ধ্যা হয়েছে ঘন্টাখানেক হল। শীতের সন্ধ্যা তাড়াতাড়ি হয়।
প্রণাম করে উঠতেই খেয়াল করলাম একজন বৃদ্ধা পূজার আয়োজন করছেন মন্দিরের এক কোণের দিকে বসে। সাদা শাড়ি। মাফলার জড়ানো মাথা। দেহটা একটু সামনের দিকে ঝোঁকা।
বললাম, দরজাটা একটু খুলবেন, একটা ছবি তুলব। আমার আর আমার আরো দু'জন বন্ধুরই মুর্তিটা খুব ভাল লেগেছিল।