তর্পণ
আমার হৃদয়তটের অববাহিকায়
তোমার স্মৃতির ধারা অবিরাম,
তারা বুকের দু-পাড়ে ধাক্কা দিয়ে
...
তথ্য
সেই নিয়ে সে শুতে যায়, সকালে ওঠে,
তাই কি?
যাকে খুশী
যখন খুশী
যেমন খুশী।
...
তুমি আসবে বলে
তুমি আসবে বলে।
তোমার পাশে
যায় হারিয়ে।
তাই মন্দিরের পথ ছেড়ে দীঘির ধারে বসি, একা।
তপস্যা
তার থেকে অপেক্ষার মাধুর্য্য কেড়ে নিও না।
বোলো না আমার কালকেই চাই, কি পরশু,
তার চেয়ে
ওই শিউলি গাছটা উপড়ে ফেল,
ওখানে লাগাও আলফানসো আমের চারা
...
তবু আছি
কত কান্না বুকে জেগে
মুখ থুবড়ে মাটিতে পড়ে
সারা গায়ে কাদা লেপে
...
তবু তুমি ব্যর্থ
পেতেই পারো পৃথিবীর অন্তিম ধূলিকণার উপর আধিপত্য।
তবু তুমি ব্যর্থ,
যদি না পেলে এক ফালি হৃদয়ে একটুকরো বাসা।
...
ত্রিগুণাতীত
আমার সাথে দেখা হলে - ফোনে, মেসেজে, ফেসবুকে মায় টুইটারে পর্যন্ত্য একই প্রশ্ন, "তা বিয়ে করো নি কেন? বয়স তো অনেক হল (তা মিছে বলব না, বেলা অনেক হয়েছে, মেঘের আড়ালে না, পুরোপুরি নীলাকাশে)। এবার করো বিয়েটা?"
...
তোর তাতে কি?
নাই ভিজল।
এক মাঘেতে শীত যায় না,
নাই বা গেল।
কানা মামাই নাকি ভাল,
না হয় হল।
...
তবু
তবু করতে হয়, অভ্যেস।
তুলনা করে শান্তি পাই নি কোনোদিন,
তবু করতে হয়, অভ্যেস।
...
তুমি এসো না
আমার পুরোনো কথা মনে পড়বে।
তোর জন্যে
তুই ওড়।
আমার গোটা হৃদয় তোকে দিলাম
তুই ঘুমা।
আমার সবটা শক্তি তোকে দিলাম
...
তোমার জন্যে
জানি মনে পড়ছে তোমার।
তোতা কাহিনী
আর জানতে চায় না মাছওয়ালাকে
তার মাছের দাম কত।
বুবাইকে জিজ্ঞাসা করে না
তার স্নান হয়ে গেছে কি না।
ফুলপিসিকেও জানতে চায় না
তাঁর পূজো হয়ে গেছে কি না।
...
তুমি কোন পথে যে এলে
অনেক ভেবে সে গেল নগরের সবচেয়ে নামী কাঠের কারিগরের কাছে।
...
তোমারই মত
মন খারাপ আমারও করে
তোমারই মত।
মাঝে মাঝে সব ফেলে দিই ছুট-
আমিও ভাবি
তোমারই মত।
মাঝে মাঝে হাতের ঘামে
হাত পিছলে থুবড়ে পড়ি
তোমারই মত।
বেঁচে থাকার অর্থ খুঁজেছি আমিও সেদিন
তোমারই মত।
সব ছেড়ে দিয়ে বাঁচতেই চাই
বেঁচে থাকাটাই সুখ বুঝি আজ
তোমারই মত।
তখনই
তবু
হাতের থেকে পিছলে পিছলে যাচ্ছে সময়
খাদের গা ঘেঁষে ঘেঁষে হেঁচড়ে হেঁচড়ে উঠছি-
উঠছি কি?
জানি না তো।
এগোচ্ছি কোনো দিক না জেনেই,
কম্পাস জবাব দিয়েছে,
বাঁ-ডান গেছে গুলিয়ে।
চিন্তার ভাগাড়ে জমে আছে ফেলে আসা সময়ের জীবাশ্ম
মাঝে মাঝে খুঁড়ে খুঁড়ে তুলছি তাদের
কঙ্কালময় শরীরে কোথায় প্রাণের স্পন্দন?
অন্ধকার! অন্ধকার!
বন্ধু শত্রু মুখোশে একাকার!
তুমি
আমি বুঝি।
তবু ভুলি।
আমার বোঝা আর ভোলার মাঝে
তুমি নীরব,
জানা-অজানার পারে
তোমার স্থির দৃষ্টিপাত।
এ আমার একান্ত বিশ্বাস
আমার অন্তিম সম্বল।
তুমি
আমার উৎস
আমার অববাহিকা
আমার মোহনা।
তুমিও জানো
অনেকটা পথ যেতে বাকি
তুমিও জানো
তবু কেন প্রতি পায়ের হিসাব রাখো
অনেক আরো সইতে বাকি
তুমিও জানো
তবু কেন সব ক্ষতকে জাগিয়ে রাখো
অনেক কিছু দিতে বাকি
তুমিও জানো
তবুও কেন কুড়িয়ে নুড়ি বেলা কাটো
অনেক কিছু ভাঙার বাকি
তুমিও জানো
তবুও কেন বালির ঘরে আগল ঘেরো
তবু তা আন্তরিক হোক
ওগুলো কি ফুল?
প্লাস্টিকের?
ফেলে দাও
বরং আনো কিছু বুনোফুল
তবু তা প্রকৃতির হোক
ওটা কিসের কাগজ?
গানের খাতা?
সরিয়ে দাও
না হয় দু'লাইনই গাও
তবু তা প্রাণের হোক
এ কিসের মিছিল?
প্রভাতফেরী?
বন্ধো করো
না হয় নিভৃতে বসো তাঁর কাছে
একান্তে একটা প্রণামই জানাও
তবু তা আন্তরিক হোক
তোমরা
আমার স্বর্গ
আমার নরক
আমার মুক্তি
আমার বাঁধন
আমার বিশ্বাস
আমার সংশয়
আমার প্রেম
আমার অপ্রেম
আমার নীতি
আমার আবেগ
আমার আশা
আমার অবসাদ
আমার সুখ
আমার দুখ
আমার যাওয়া
আমার আসা
সব তোমরা-
আমার চারপাশে যারা।
তোমাদের ছায়ার ছায়া
আমার অস্তিত্ব, আমার কায়া।
তীক্ষ্ণ উপস্থিতি
রোজ রোজ দরজার কাছে দাঁড়িয়ে থেকে ফিরে যেত
আজ ডাকলাম, বললাম কি চাও?
সে তাকিয়ে থাকল শুধু
অনেকদিন গেল
রোজ দেখি তাকে পুকুর পাড়ের রাস্তার পাশে
আমারই জানলার দিকে তাকিয়ে
কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, কি চাও?
আরো অনেক বছর গেল
রোজ তাকে দেখি আমার সান্ধ্যভ্রমণের পথে দাঁড়িয়ে
আমারই দিকে চেয়ে
কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, কি চাও?
তুমি ভিতরে এসো
বাইরে দাঁড়িয়ে কেন?
ভিতরে এসো
পায়ে ধুলো?
তার চেয়ে অনেক বেশি ধুলো
আমার ঘরে বন্ধু
ময়লা জামা?
সে ময়লা সহ্য হবে
জামার নীচে যে হৃৎযন্ত্রটা?
আমার সে যন্ত্রটা বিকল হয়েছে অনেকদিন,
তোমায় বাইরে রেখে।
তবু
ভয়ের জিনিসকে যত সহজে বিশ্বাস হয়, অভয়কে তত সহজে বিশ্বাস হয় কই? তুলসীদাসজী বলছেন, অমৃত সারা জীবন কানেই শুনে এলাম, চোখে পড়ল শুধু বিষ।
এ অভিজ্ঞতা কার জীবনে না নেই। তবু নিজের সামনে যখন দাঁড়াই, প্রশ্ন করি তোমার এ সংসারে চলার পুঁজি কি? মন বলে, কিছু ভাল কাজ করার ইচ্ছা। হ্যাঁ, এইটাই আজ থেকে কাল, কাল থেকে পরশু হাত ধরে নিয়ে চলেছে।
তেমন কিছু না
আমি বললাম, কিছু কি হয়েছে?
ও বলল, না, তেমন কিছু না।
(ওর চোখ বলল, হয়েছে)
আমি বললাম, আচ্ছা।
(আমার চোখ বলল, হয়তো বুঝলাম)
ও বলল, হাসলে যে?
(ওর চোখে ফুটল যন্ত্রণা)
আমি বললাম, না এমনি।
(আমার চোখে জড়ালো স্নেহ)
ও বলল, আচ্ছা।
তৈরী তো?
কে যেন বলে
বেশ জোরের সাথে বলে
আত্ম-বিশ্বাসের সাথে বলে
আমার কানে কানে বলে
তৈরী তো?
তোমায় আমি চেয়েছিলাম
তোমায় আমি চেয়েছিলাম।
এই কথাটা ভুলতে গিয়ে-
কত কি না করলাম!
চেষ্টা করতে করতে
করতে করতে
নিজেকে ভুলে গেলাম
তবু কথাটা ভুলতে পারলাম না-
তোমায় আমি চেয়েছিলাম।
তবু বিশ্বাস করি
তবু বিশ্বাস করি
সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই
তবু বিশ্বাস করি
মানুষের উপর বিশ্বাস হারানো পাপ
তবু বিশ্বাস করি
নিজের বিশ্বাসের জন্য প্রাণ দেওয়া যায়
প্রাণ নেওয়া যায় না
তবু বিশ্বাস করি
মানুষের ধর্ম বইতে নেই, মানুষের ধর্ম প্রেমে
তবু তুমি
তোমায় দেখে বুঝেছিলাম
বিধাতা কাউকে নিজের হাতে সাজান
তোমার চোখের ওপর চোখ রেখে বুঝলাম
চোরাবালি শুধু পায়ের তলায় না
বুকের তলায়ও আছে
তীর্থযাত্রা
দেহের সাথে আত্মা গেল তীর্থে
দুজনেই ফিরল
আত্মা ফিরল সারা গায়ে মেখে লাল আবীর
শরীর ফিরল মেখে ধূলো
শরীর বলল, ভাই এটা কেমন হল?
তুমি পেলে রঙ, আর আমি মাখলাম ধূলো!
আত্মা বলল, তুমি গিয়েছিলে পেতে
আমি গিয়েছিলাম দিতে
যে চায়, সে পায় ধূলো
যে দেয়, সে রঙীন হয় প্রেমে
তুলসীমঞ্চ
তুমি?
রাত দুটো
পরদাটা একটু নড়ল
তুমি এলে?
রাত আড়াইটে
ঘরে তোমার গায়ের গন্ধ
তুমি এসেছ?
রাত তিনটে
আমার বুকের মধ্যে ছুঁচ ফুটছে
তুমি দেখতে পাচ্ছ আমায়?
আমি পাচ্ছি না তো!
ভোর চারটে
আমার গলার কাচ্ছে কান্না
চোখদুটোতে জ্বালা
তুমি চলে যাচ্ছ?
আবার!
আসবে আবার?
আমার দু'চোখ জোড়া ঘুম
তিনটি কবিতা
১
==
অনেক কিছু বদলে গেছে
কিছুটা পাল্টেছি আমি
কিছুটা পাল্টেছো তুমি
আর কিছুটা পাল্টেছে সময়
২
==
গাছের শিকড় কি বুঝতে পারে
কখন বসন্ত এলো?
সে জানে বর্ষাকে
যখন সে পায় মাটির সোঁদা গন্ধ তার সারা গায়ে