আমায় নামিয়ে দে
আমি অন্য নৌকায় উঠব
তোর চোখে দেখছি তীরের তৃষ্ণা
আলাদা
আমি সে ভাবে না বুঝলেই, আমি ভুল?
...
আদালত
রাম শ্যাম যদু মধু আসামী
তুমি বিচারক, তোমার মন উকিল।
...
আচমকা
হাওয়ার সাথে খেলছে।
সামনের ছাদে তারে শুকোতে দেওয়া
সারি সারি কাপড়গুলো ভিজছে
স্কুল পালানো বাচ্চাদের মত।
...
আর না
বেঁকে গেল যার,
তিনিও এককালে সুন্দরী ছিলেন।
...
আমার দেশ
তাতে দূর্নীতি আছে, শোষণ আছে,
অনাচার আছে, ভন্ডামী আছে,
আরো অনেক কিছু খারাপ আছে,
সবাই জানি।
...
আমি দুর্বল বলে
তুই না, আমি দুর্বল বলে।
তোর হাত সবার সামনে ধরি না,
লজ্জা লাগে বলে না,
তোর হাতটা সবার চোখে পড়বে যে!
...
আলোকাশ্রম
"শেষমেশ কি না এই!"
"তাও কি না সাধুর সাথে!"
"বলি অমন শান্ত সদাশিব স্বামী থাকতে কি না...! ছি ছি..!"
...
আবর্তন
বললাম, "হা ঈশ্বর দেখতে পাচ্ছ না!"
ভিতরে দেখলাম কি চরম সহ্য শক্তি মানুষের,
বললাম, "হা ঈশ্বর আর কত?"
...
আলো ও ছায়া
অনেক দিন আগেকার কথা। একজন থাকত আলোর দেশে। আরেকজন থাকত ছায়ার দেশে। কি ভাগ্যচক্রে দুজনের হল আলো-ছায়া পথে পরিচয়। অনেক কথা হল। বেলা গেল বয়ে। দেশে ফিরে ছায়ার দেশের মানুষটা একটা প্রদীপ জ্বালল তার দেশের প্রান্তে, নাম রাখল মন্দির। নিন্দুকেরা বলল, আলোর পুজা! ভন্ডামী!
আশা
ভীষণ ধূলো ঝড় উঠেছে
কানে নাকে চোখে মুখে ঢুকছে ধূলো
দেখতে দেখতে দুটো হাতের মুঠো
ভরে উঠলো ধূলোয়
বারে বারে ফেললেও
আবার ধূলো উঠছে মুঠো ভরে
তবু হাত পাতছি অভ্যাসের বশে।
আমি ধূলো চাই না
কিছু পেতে চাই
আশ্বাস
প্রভু,
প্রদীপটা না নিভুক,
আমার হাতের আড়াল পাশে
তোমার হাতের পরশ রাখো।
ভয়ে কেঁপে কেঁপে ওঠা শিখা-
তাকে করূণা পদ্মে ঢাকো।
এমন শকতি নেই প্রভু নেই
যা কিছু সব আনি
অনেক প্রণামে স্বার্থ মিশেছে
প্রণত হওয়াকে দিয়েছে গ্লানি।
আশ্বাস দাও, ফিরাবে না আর
যত দোষ ত্রুটি থাক
করূণাধারার প্লাবনে হে প্রভু
চিত্তশুদ্ধি পাক।
আমার কি?
তুমি আসলে
চোখের শান্তি
আমার কি?
তুমি বললে
কানের শান্তি
আমার কি?
তুমি ছুঁলে
দেহের শান্তি
আমার কি?
তোমার চুমুতে
ঠোঁটের শান্তি
আমার কি?
তুমি চলে গেলে
সব চলে যায়
আমার কি?
না আমারই যায়!
আমার মা
আজ কিছু কথা মায়ের ব্যাপারে বলতে ইচ্ছা করছে। খুব অদ্ভুত মানুষ। উড়িষ্যার কালাহান্ডির খড়িয়ার নামের এক গ্রামে মায়ের জন্ম। দাদু ছিলেন সরকারী হাসপাতালের ডাক্তার। খুব নামডাক ছিল তাঁর। দাদুরা ছিলেন প্রবাসী বাঙালী। খুব রোগীবৎসল চিকিৎসক। গ্রামের অচ্ছুত, অশিক্ষিত, সব স্তরের মানুষের খুব কাছের লোক ডাক্তার শিবপদ চ্যাটার্জী।
আবেশ
আমি কি খুব জোরের সাথে বলতে পেরেছি
"আমার এসব চাই না"।
পারিনি বোধহয়
তাই শ্যাওলাগুলো এত দুর্বল হলেও
আমায় পেয়ে বসেছে
পায়ের নখগুলো বেড়ে গিয়ে শিকড় হয়ে আটকে
আমি নীলাকাশে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ঘুমিয়ে পড়ি-
কিছুটা ক্লান্তিতে, কিছুটা অবিশ্বাসে
কখন শঙখচিল উড়ে গেছে খেয়াল করিনি
আমার মুখের উপর ওর ছায়া আঁকা হয়ে আছে জীবাশ্মের মত।
আছে
আমার কিছু একটা আছে তোমার কাছে।
কি বলো তো?
আমার সেই হারিয়ে যাওয়া জামার বোতাম?
নাকি পকেট থেকে পড়ে যাওয়া নীল রুমাল?
না সেই কালো কালির বল পেনটার ঢাকনা?
এগুলো নয়?
আড়াল
তোমায় বলা কথাগুলোর আড়ালে, আমার না বলা কথাগুলো আছে।
বোঝো তুমি?
সারাদিন দূরে থাকার অভিনয়ে
কাছে থাকতে চাওয়ার কাঙালপনা ধরা পড়ে তোমার চোখে?
তুমি পাশে আসলে আমার বেহায়া মনের তীক্ষ্ণ দৃষ্টিকে ছদ্ম শালীনতায় ঢাকি।
দেখতে পাও?
আচমকাই
কিছু মুখ জানলার কাঁচের ওদিকে এখন
এদিকেই ছিল ওরা
এই তো কিছুক্ষণ আগেও
আর জল হাওয়া লাগবে না
আওয়াজ, আর্তনাদ, ডাক কানে যাবে না
আচমকাই হল,
কিছু বোঝার আগেই
আশা
কিছু স্বপ্ন ঝরে গেছে
কিছু স্বপ্ন মাড়িয়ে গেছে
কিছু স্বপ্ন একটা প্রজাপতি পেলো না সারাজীবন
শুকিয়ে গেছে
তবু বেঁচে আছি, কারণ-
আজও কিছু স্বপ্ন কুঁড়ি হয়ে আছে
আকাশকে খোঁজ
কি আশ্বাসে তাকাবো তোমার মুখে?
বিকালের পড়ন্ত রোদ বটগাছটার মাথায়
শুকনো কিছু পাতা ডাল ছড়ানো মাটিতে
এতো বিষন্ন কেন তোমার মুখ?
সারাদিনের সাজানো প্রদীপ ভেঙেছে?
আলগোছে রেখেছিলে হয়তো বা
কিম্বা হয়তো ওদের ভাঙারই ছিল আজ।
উঠে এসো
সামনের পুকুরটার পাড়ে গিয়ে বসো
দেখো একটু পরেই জ্বলবে সন্ধ্যাতারা
সে তোমারও সন্ধ্যাতারা, আমারও।
আঁচড়
আয়নার কাঁচে ধুলো পড়েছিল
পরিস্কার করতে গিয়ে
কাঁচে পড়ল আঁচড়
এখন মুখ দেখতে গেলে আঁচড়ের দাগটাও দেখি
দেখতেই হয়
বুকের ভিতর প্রতিবারই চিনচিন করে ওঠে
বুঝতে পারি না কেন
ধূলোর জন্য না আঁচড়ের জন্য
আশা
আমার প্রদীপটা নিভেছে খানিক আগে
শেষ ধোঁয়াটাও মেলালো বাতাসে, এই তো,
পোড়া পলতেটা লেগে আছে এখনও
একটা আলতো ছোঁয়ায় ঝরে যাবে যদিও
ও নিজেও জানে
তবু হাত দিয়ে দেখো
আমিও
দিদার মুখে ছোটবেলায় অনেক গল্প শুনতাম। তার মধ্যে একটা গল্প আজও সময়ে অসময়ে খুব মনে পড়ে। গল্পটা বলছি। দিদা কোথায় পড়েছিলেন জানি না। হয়তো অনেকের জানা। তবু যাঁদের অজানা তাঁদের জন্যই বলছিঃ
আদিম ব্যথা
তুমি চলে যাওয়ার পর
সন্ধ্যাতারা উঠল
তখনও অন্ধকার হয়ে আসেনি গাঢ় হয়ে
গাছের পাতার ফাঁকে ফাঁকে সদ্য জমছে অন্ধকার
ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক বাড়ছে ধীরে ধীরে
হালকা বাতাস সারা ছাদ আমার সাথে সাথে ফিরছে
একফালি চাঁদ যুগান্তরের বিরহ নিয়ে একা।
আবরণ
ভারী বাতাস। জলে ভারী। কালো মেঘের বুকে জমে থাকা বিদ্যুতের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে অবাক হয়! এত আলো! এত তেজ! তবু সে মেঘের বুকে মিলিয়ে থাকে কি করে? কেন সে থাকে?
সে বৃষ্টি হয়ে নীচে পড়ে। কত রঙের ফুল পৃথিবীর বুকে ফুটে। তার অবাক লাগে। এত রঙ! এত রূপ! তবু এই একরঙা সবুজ গাছগুলোর মধ্যে লুকিয়ে থাকে কি করে? কেন তারা থাকে?
আয়
খোল দরজা
টান মেরে খোল
ওরে ভিতরে আয়
আসবি না?
তবে আমায় বাইরে ডাক
ডাক, ডাক, ডাক
বুক চিরে ফিনকি দিয়ে প্রাণের ফোয়ারা
মাটি ভিজিয়ে যাচ্ছে
গাছ লাগাবি না?
আয় আয় আয়
বীজ বুনেছি রে
সব মৃত আশাগুলো
গুটিয়ে গুটিয়ে
শুকিয়ে শুকিয়ে
বীজের পর বীজ জমিয়েছি
তোর মুখের দিকে তাকিয়ে বসে
কোথায় তুই ঝোড়ো বাতাস?
আমার লেখা
১
---
ইচ্ছা ছিল তোমার ঘরের ডাস্টবিনটা হব
ইচ্ছা ছিল তা না হোক, পাপোষখানা হব
তা না হলেও ঝাঁটা কিম্বা ন্যাতা?
হলাম কই?
নিম্নমানের কিছু কবিতাই ভরে রইল খাতা
যদি পারতাম একটা কাঁটা তুলতে
আর না হোক
সারা জীবনে একটা পা পারতে যদি
বিনা ব্যাথায় ফেলতে!
আমি নোঙর তুললাম
আমি কি তোমার জন্য অপেক্ষা করব?
না, আর না
যে অপেক্ষা অপেক্ষাতেই শেষ হয়
আমি সে অপেক্ষার অপেক্ষায় থাকব না
আমি নোঙর খুললাম
তোমায় পেলাম না
না হোক কিছু দুর্যোগ পাক আমায়
কূল তুমি চিনতে, ধ্রুবতারাও তুমি জানতে
আমি কিছু চিনি না
আজ চেনার দরকারও নেই
চেনা সুখ থেকে অচেনা ঝড়
অনেক বেশি বাস্তব আমার কাছে
আমি ভাসলাম
আগুন
বুকের ভিতর যে আগুন
তা নিভতে দিও না
দেখেছি যে ভিতরে পোড়ে
সে বাইরে পোড়ে না
আনমনা
তুমি নিঃসন্দেহে ডেকেছিলে
তাই ব্যস্ততাতেও আনমনা হয়ে ভাবি
কে যেন ডেকেছিলো
অন্য কোথাও ছিল যেন যাওয়ার
তুমি নিঃসন্দেহে এসেছিলে
তাই বোধায় অন্যমনস্কতায় ভাবি
যাদের চিনি তারা তো নয়
খুব চেনা কার ছায়া আমার মনে?
আজ আকাশ চলো লুটি
রোজ রোজ এক পাড়া না
মাঝে মাঝে অন্য পাড়াও যেও
রোজ সকালেই পূবাকাশে না
মাঝে মধ্যে পশ্চিমাকাশেও চেও
আজ সকালে
না হয় খবরের কাগজ বাদ
ওতে শুধু ওদের খবর আছে
যারা থেকেও নেই কাছে
আজ সকালে
না হয় তাকেই মেসেজ করো
যাকে না ভেবেও রোজ ভাবো
যার কাছে রোজই ভাবো, যাবো
আমি এখানে, তোমার জন্য
সিঁড়ির একদম নীচের ধাপটায় বসে আছি
এখানে
এক পা বাড়ালে মাটি
এক পা বাড়ালে জল
এক হাত বাড়ালে ঘাস
এক হাত বাড়ালে বাতাস
সব কাজ মিটিয়ে
আমার কাছে এসো
আমার পাশে বোসো
একবুক শান্তি ঘটে ভরে দেবো
তুমি স্নান সেরে এসো
একটাই কথা মনে রেখো -
উপরের সিঁড়িগুলোতে কিছু ফেলে এসো না
রেখে এসো
আর ফিরতে না হয় দেখো
আপন বলতে
মন ডুবে যা শব্দতলে
বাক্য সেথায় ডুবতে নারে
মিলবে সে মুখ, অনন্তসুখ
জ্বলছে রে তোর হৃদ-মাঝারে
তারে বেঁধে আনবি পাড়ের কাছে?
কোনোকালেই হবে না তা
জগৎ বাঁধা তাঁর দুয়ারে
তোর ভ্রমের শেষে শিখি পাখা
ডুব দে রে মন, পাড়ে সে নেই
কথার ফাঁদে হারাস নে খেই
অহং অন্তে পারবি জানতে
আপন বলতে সেই শুধু সে-ই
আজ বলব তোমায়
আজ বলব, তোমায় আমি ভালবাসি
আজ বোঝাব, তোমায় কতটা ভালবাসি
কিন্তু কিভাবে?
সকাল থেকে কাগজ পেন নিয়ে
লিখব আজ জীবনের শ্রেষ্ঠ কবিতাটা
কোহিনুরের মত রাখব তোমার পায়ে
বলব তোমায়, বোঝবো তোমায়
আমি তোমায় কতটা চাই
কতটা ভালোবাসি
কিন্তু একি, বেলা গড়িয়ে দুপুর হল
সাদা কাগজ সাদাই পড়ে আছে!
একটা আঁচড়ও নেই!
শব্দগুলো হারালো কার কাছে?
আটপৌরে
তোমায় নিয়ে একটা কবিতা লিখব?
সামনে দাঁড়াও তবে
কেমন লাগল?
ভাল
আমার চোখের থেকে চোখ সরাও এবার
আমি পাতা উল্টাবো
হিসাব করব
মাসকাবারি বাজারের
আরেকটু হলেই
যেন ছুঁয়েই ফেলেছিলাম আরেকটু হলেই
আরেকটু হলেই যেন জেনে ফেলেছিলাম
বোধায় বুঝেই ফেলতাম প্রথম থেকে শেষ
হল না যে
যবনিকা পড়ল হঠাৎ, যেমন পড়ে
প্রজাপতির মত উড়ে গেল, ফুড়ুৎ!
মন বলল, ইস্, আর একটু হলেই..
প্রাণ বলল, ধুস্
কে যেন বলল, বেশ হয়েছে