ছেলেটা- মেয়েটা
দিন গেল
ছেলেটা মেয়েটাকে ছাপিয়ে অনেক এগিয়ে গেল
অনুভবে চিন্তায় সৃষ্টিতে।
...
ছদ্মবেশ
ছেলেটা
খুব গরম। রোদে ঝলসে ওর সারা মুখ।
বললাম, "বোসো।"
রোগা শরীরে অপুষ্টির থাবা। বয়স চোদ্দ-পনের হবে।
...
ছদ্মবেশ
কিছু সরল চোখ মিথ্যা বলতে পারে
কিছু সরল হাসি ছুরি লুকাতে পারে
কিছু মিথ্যা সত্য বলতে পারে
কিছু হাসি কান্না আনতে পারে
ছোঁয়াছুঁয়ি
অনেকক্ষণ ছোঁয়াছুঁয়ি খেলার পর বুঝলাম
ও আমায় ধরতে চাইছিল না,
আমায় দৌড় করাতে চাইছিল।
না হলে খেলাটা থেমে যেত বহুক্ষণ আগেই।
ও, না ধরা দিল
না ধরে রাখল
এতগুলো বছর শুধু খেলার ঘুঁটি হয়ে কাটলো
ছাপ
হাত ছিল ভিজে
দেওয়ালে ছিল কাঁচা রঙ।
ভিজে হাতে লাগল রঙ
কাঁচা রঙে লাগল হাতের ছাপ।
ভিজে হাতে উঠল রঙের দাগ
পাকা রঙে এখনো হাতের ছাপ।
মেয়েটা এখনো সে ভিজে হাতের খোঁজে।
ছেঁড়া সুতো
রাতুল যেভাবে বাড়ি ফিরল সেই জানে। তুমুল কালবৈশাখী শুরু হল সন্ধ্যে থেকে। রাতুল তখন বাসে, শিয়ালদায় আসছে। রাতুল ডেলি প্যাসেঞ্জারী করছে তা প্রায় পাঁচ বছর হল। কি ঝড়, কি ঝড় রে বাবা! আগরপাড়ার কাছে ওভারহেডের তার ছিঁড়ল। তারপর হেঁটে, অটোতে, বাসে কোনরকমে যখন খড়দায় পৌঁছাল, তখন রাত সাড়ে আটটা। বাড়িতে ঢুকেই রাতুলের মা বললেন, শীগগিরি মাথায় জল ঢাল, না হলে ঠান্ডা লেগে যাবে।
ছল
ভেবেছিলাম তোমায় আমি দেব
আমার যা কিছু সব উজাড় করে
দিলাম তোমায় এমন কিছু
ভাবিও নি যা দিতে পারি
গর্বে মেতে ঘরে ফিরি
এমন দান পাও নি জীবন ভরে!
ঘরে এসে চমকে উঠি
সারা ঘরে একতিলও নেই স্থান
রাখি পায়ের পাতা
সবখানেতে তোমারই দানে ভরে!
ছেলেটা
সিক্স থেকে সেভেনে ওঠার ফাঁক
...
ছাড়বে?
বলেছিলে তো হাত ধরতেই দেবে না
হাত ছুঁলাম তো, কই সরালে?
....
ছু কিত্ কিত্
বসের ঘরে স্টাফ ঢুকল
ছু কিত্ কিত্ ছু কিত্ কিত্।
...
ছন্দ
ছিন্ন শিকল পায়ে নিয়ে
দুর্বলের উপর সবলের অত্যাচার - অতি প্রাচীন কথা। কর্মক্ষেত্রে, শাসককূলে, ধর্মে, সমাজে, জাতিভেদে ইত্যাদিতে এর উদাহরণ ভুরিভুরি। সেগুলোর একটা যথাযথ কারণ আছে। অত্যাচারটা সমর্থনযোগ্য তা বলছি না। কেউ হয়তো শারীরিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ইত্যাদি ভাবে পিছিয়ে আছে। তাই সে নরম মাটিতে বলশালী প্রতাপ ফলিয়ে শুরু করেছে অত্যাচার। তবু সেরকম হলে তার উঠে দাঁড়াবার এবং অত্যাচারের প্রতিবাদ করার সুযোগ আছে ভবিষ্যতে।
ছাদ
বাড়ির উপর যে ছাদ, সেখানে আমার প্রতিদিনের ছুটি, প্রতিদিনের মুক্তি। সে শুধু তার উপর অসীম নীল আকাশ আছে বলে। যদি আকাশ না থাকত, সেটা তবে হত - দোতলা, তিনতলা, চারতলা...খুব জোর চিলেকোঠা..তাতে আরাম থাকত হয়তো, ছুটি থাকত না, মুক্তি থাকত না।
ছলছল
তারে জমেছে জল
সুর আসে না তাই
বাজাতে গেলেই সে
ভরা চোখে ছলছল
ছাড়বে না তো?
সে বলেছিল, ছেড়ো না আমায়।
আমি ছাড়িনি।
মৃত্যু এসেছিল না বলে
মাঝপথে।
সেদিন আবার কেউ বলল,
ছাড়বে না তো?
আকাশে যতদূর চোখ যায় তাকালাম,
কোনো মেঘ নেই।
মাটিতে কান পেতে শুনলাম,
কোনো কম্পন নেই।
সমুদ্রের ধারে এসে দাঁড়ালাম
ঝড় নেই।
দ্বিধান্বিত কণ্ঠে বললাম-
ছাড়ব না
ছায়া
হাত ধরেনি
হাত ধরতেও দেয় নি
লজ্জায়
শুধু হাঁটতে হাঁটতে দেখছিল
নিজেদের ছায়াগুলো বেহায়ার মত
একে অন্যের গায়ে মিশছে
প্রকাশ্যে, অসঙ্কোচে রাস্তায়
ছায়াপথ
মনের দু'পাশে দুটো হাত দিয়ে আগলে রেখেছো কিছুতেই যেন হারিয়ে না যাও ভিড়ে
বেসামাল ভূমিকম্পে কেঁপে উঠলে হাত
কামড়ে ধরো মনের দুটো পা
যাতে পালাতে না পারে
ঝর্নার মত নদী না হয় ছিটকিয়ে
এখন রাত্রি অনেক গভীর
সারা আকাশে রহস্যময় হাসি
অবশ শরীরে তবু আগলে আছো মন
ছল
বলেছিলাম, এ নৈবেদ্যর!
ছিটকিনিতেই আটকায়
দরজা জানলা কব্জায় না, ছিটকিনিতেই আটকায়
সম্পর্কগুলো সম্পর্কে না, বিধি-নিষেধেয় সমস্যায়
ছল
তুমি দূরে থাকলে
নিজের চোখকে এড়িয়ে যাই
ওর সব প্রশ্নের উত্তর আমি কি ছাই জানি!
তাই বুকের উপর ঢাকনা টেনে পাড়া বেড়াতে যাই
কিছু কথা মনে করেই ভুলতে হয়,
তা নিয়ম করে মানি!
ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি
ছাদ মাটি ভালোবাসা
ছাদের উপর দাঁড়ালে
বাড়ির পর বাড়ি
কারোর আধখোলা জানলা, কারো হা-পাট্টা
কোথাও টুকরো চলাফেরা, কোথাও টিভির ভিতর নির্বাক নড়চড়া
ছোট মামু
ছেলেটা
ছেলেটাকে আমি চিনতাম।
ও একটা সামাজিক ভালোবাসা চেয়েছিল।
পায় নি। ছেলেটা সমকামী ছিল।
এখন শুনেছি অন্ধকার গলিতে দাঁড়ায়।
অসামাজিক প্রেমই ওকে ডেকে নিল।
ছট
ছন্নছাড়া
শিকড় নেমেছে অতীত অন্ধকারে
'আমি' ছায়াটা হতে হতে মিলিয়ে যাচ্ছে
...
ছড়ানো ছেটানো
এবড়ো খেবড়ো
টুকরো টাকরা ভালোবাসা
এখানে সেখানে
হেলায় ফেলায়
ছবি তুলিয়ে আমি নই
ধানকাটা মাঠ, ছোটো নীল ফুল, সরষে ফুলের সাগর, কুয়াশায় কোমল সূর্যের তেজ কিছু পাঠালাম। যা পাঠাতে পারলাম না তা হল মানুষের কোলহল আর যন্ত্রের আওয়াজহীন পাখিদের ডাক, তাদের নিঃসঙ্কোচ উড়ে যাওয়া, মলিন বস্ত্রে চাল ঝাড়া বৃদ্ধার হাসিমুখে সতর্কবাণী উচ্চারণ ..."কাছে আসবেন না...আপনারা ভদ্রলোক..গায়ে ধুলোবালি লাগবে যে"...
ছবি
ঘনশ্যাম আর সুনয়না ঘরের মধ্যে ঢুকলেন। ঘুটঘুটে অন্ধকার চারদিক। আজ ভূতচতুর্দশী। কেউ চোদ্দ প্রদীপ জ্বালার নেই। সবাই বেড়াতে গেছে। ঘনশ্যাম খাটে বসলেন। সুনয়না নিজেদের ছবিটা খুঁজলেন এ দেওয়াল, সে দেওয়াল। নেই। অবশেষে বাথরুমের পাশের জুতোর র্যাকের নীচ থেকে ভাঙা ছবিটা বার করলেন। কত পুরোনো ছবি।
ছোট্ট যীশু - অতীশ
ছুটি
ক্যাপ ফাটালে একটু জোরে
সবাই কেমন আসে তেড়ে
বলে, ওরে কি দুষ্টু রে
নে তো ওর বন্দুক কেড়ে
দৌড়ে তখন মণ্ডপে যাই
দুগ্গা মায়ের মুখে তাকাই
দুগ্গার কেন মুখ নড়ে না?
ওকি বাংলা বলতে পারে না?
এতগুলো হাত কোলে তো নেয় না
একটা দিনও চুমুও দেয় না
কি রোজ শুধু মন্ত্র শোনে
অং বং ছং থাকে কি মনে?
নড়ে না চড়ে না খায় না দায় না
ছুঁতে চাই না
বৃষ্টি ভেজাচ্ছে না
বৃষ্টির শব্দতে ভিজছি
ছুঁতে চাই না
তোমার আশ্বাসে বাঁচতে চাই
ছেলেটা ধীরে ধীরে বদলে গেল
...
ছাদ
লোকটা বিখ্যাত হবে বলে
সকাল বিকাল সন্ধ্যে ভোর
বৃষ্টি খরা শীত গরম
সব উপেক্ষা করে ছাদে দাঁড়িয়ে থাকত
নীচের তলা থেকে কেউ ডাকলে সাড়া দিত না
ধীরে ধীরে সাড়া দিতে ভুলেই গেল
ছড়ানো ছেটানো ভালোবাসার আবদার
ছড়ানো ছেটানো ভালোবাসার আবদার
কচু পাতায় বৃষ্টির জলের মত টলটল
বড় জীবন্ত, বড় স্বচ্ছ