সারা সন্ধ্যে তুমি
স্পর্ধা
আমি বললাম,"না"।
সে ফিরে গেল।
...
সব পাল্টে
কেন?
এখনকার কথা কি সব বাসী, পুরোনো?
...
সে
তার সবখানে।
যার নেই
...
সৃষ্টি
গুমরাচ্ছে,
ফাটবে নাকি?
সামঞ্জস্য
...
স্বরগঙ্গা
দৃশ্য ঝাপসা হয়ে আসল ধীরে ধীরে।
কানে আসছিল
কাদের কথা, পাখার শব্দ,
হালকা হয়ে আসল তাও ক্রমশ।
...
সর্বনাশী
আমি ঘরের কোণে একা।
শুরুও নেই, শেষও নেই,
এই ভাল, না দোকা?
...
স্বপ্ন
টগবগিয়ে চিরছে তোমার বুক।
তুমি স্বপ্নে দেখো লাল গোলাপ
তাদের রঙে রাঙা তোমার সুখ।
...
সহমরণ
সহমরণ।
তবু মনে আসে তাদের কথা, যাদের উনিই সর্বস্ব, জীবন।
...
সুখের বাঁধ
কখন তৈরি হল বাঁধ
আনন্দের স্রোত গেল থমকে
ভ্রুক্ষেপও করলাম না,
মত্ত হলাম আরো নুড়ি কুড়াতে।
...
সীমার মাঝে অসীম তুমি
মা কে ডাক্তার দেখিয়ে নিয়ে ফিরছি কল্যানী থেকে। সন্ধ্যে হব হব করছে। রাস্তার আলো গুলো জ্বালা হয়ে গেছে। আমি আর মা গাড়ির পিছনের সিটে বসে। তিনি খুবই অসুস্থ।
...
সংশয়
তুমি বললে, "কাব্য"
কে বলল, "মারো"
তুমি বললে, "বাস্তব"
কে বলেছিল, "ক্ষমা করো"
তুমি বললে, "হয় না"
...
সরলভাবে
সরিয়ে ফেল এ আবর্জনা।
সত্যিকারের সাজ
তাই সারাদিন ও সাজল।
বেলা গেল, মাস গড়িয়ে বছর গেল।
সে এসে বলল, "হয় নি।মুছে ফেল।"
সারাদিন ও মুছল।
...
সুচিত্রা ভট্টাচার্য্যকে
রাতে ভেবে রাখা ছিল,
আগামীকালকে কোন লাইনটা দিয়ে করবে শুরু?
মাথার মধ্যে ছিল,
কিছু না- বলা, খুব যন্ত্রণায় পোড় খাওয়া কিছু মুখ?
অনেক প্রশ্ন ভিড় করেছিল মাথার অলিতে গলিতে?
সমাজের সাথে হাত হাত রাখতে আরেকটা সাদা কাগজ ছিল -
কলমের দিকে চেয়ে?
জানি এর উত্তর পাওয়া সম্ভব নয়,
জানি আমাদের আসা যাওয়ার ধরা বাঁধা ছকে তো আর জীবন বাঁধা নয়!
সুখ ও আনন্দ
আনন্দ আর সুখের পার্থক্যটা হল খোলা হাওয়া আর পাখার হাওয়ার মত।
পাখার হাওয়া পেতে আমার কিছু শর্ত আছে। একটা ঘর চাই, পাখা চাই, তার চাই, সুইচ চাই, সর্বোপরি বিদ্যুৎ চাই। তবে গিয়ে পাখার হাওয়া।
শুধু তাই না। পাখার নীচে যদি কেউ বসে, তাকে তাড়াবার কৌশলও ভাবতে হয়। সুখ এমন ধারাই। অন্যকে তাড়াতে চায়। না হলে তার নিজের ভাগে কম পড়ে।
স্নেহ
কিছু দৃষ্টি ছায়ার মত
রোদে তাপে হঠাৎ ঠান্ডা জলের মত।
বয়স বাড়তে বাড়তে সে ছায়াদৃষ্টি কমে
অনেক গাছ নেই যে আর।
তখন ছায়াহীন মরুভূমিতে সে একা।
তার চোখে তখন ছায়ার দৃষ্টি
কিছু তরুণ, শৈশবের মুখে চেয়ে।
সংশয়ীর রোজনামচা
একটা ইতস্ততঃ বাঁচা
আগু- পিছু ভাবছে
ভাবতে ভাবতে দু'পা গিয়ে
চার পা ফিরে আসছে
একটা অস্বস্তির হাসি
ঠোঁটের আগায় ঝুলছে
ভাবের ঘরে চুরি-
বুঝছে, তবু করছে
একটা না-ভরসার মানুষ
হাতেতে হাত রাখছে
আঙুলের ফাঁকে জ্বালা জ্বালা
তবু হাত দেখি না ছাড়ছে
সম্পর্ক
কিছু সম্পর্ক এত আলগা
আগে থেকে যায় না বোঝা -
একটা হালকা ঝাঁকুনিতেই
এক্কেবারে ফালা ফালা!
কিছু সম্পর্ক এমনই ফাঁস
গলার কাছে এখনো লাল
ছেড়ে গেছে ফাঁস, তবু -
বুকের মধ্যে জ্বালা জ্বালা
কিছু সম্পর্ক এত পিছল
ধরতে শিখতে জম্ম কাবার
এই বুঝি সে কাছের ছিল
বাঁক ঘুরতেই, পালা পালা!
সময় সমুদ্র
মন একলা দাঁড়িয়ে সময়-সমুদ্রের সামনে
অনেক কিছু হারিয়েছে এ সমুদ্রে সে
ঢেউয়ের পরে ঢেউ আছড়ে ভেঙেছে তার ঘর
কেড়েছে তার সুখ
বুকের পাঁজরগুলোতে করেছে বড় বড় ফাঁক
সঙ্কল্প
চিন্তার আগাছা কিছু ছাঁটতে হবে
অনেকদিন ধরেই ভাবছি
কয়েকটা মুখভার করা শব্দ অভিধানে রাখব না আর
কয়েকটা মই নামিয়ে রাখব এবার
উঠব উঠব করে বসে আছি আকাশের দিকে চেয়ে
পায়ে ঝিঁঝিঁ ধরে গেছে, হাঁটব এবার, ওঠার কথা ভুলে।
কিছু নদীর মুখ ঘুরিয়ে ক্ষেতের দিকে আনতে হবে
আগুন ফাঁদে মারতে হবে কিছু পোকা
চর্বিত চর্বনের পিক ফেলে ফেলে দেওয়ালটা নোংরা করেছে যারা
সম্পদ
সব সম্পদ সিন্দুকে, লকারে, আলমারীতে রাখা যায় না। কিছু সম্পদ বুকের মধ্যেও সযত্নে রাখতে হয়। বন্ধুত্ব, বিশ্বাস, ভালোবাসা - এ সম্পদ চুরি হয় না, যদি না আমি হারিয়ে ফেলি।
সব ফসল ক্ষেতেই জন্মায় না। কিছু জীবনেও জন্মায়। উপলব্ধির ফসল ছাড়া জীবন রিক্ত। সাধক রামপ্রসাদের সেই বিখ্যাত গান আছে না- 'এমন মানব জমিন রইল পতিত আবাদ করলে ফলত সোনা'।
সৃষ্টি
ভক্ত-
এত স্বাধীনতা কেন দিলে তুমি?
স্বেচ্ছাচারী পাতকী হলাম, স্বামী!
প্রভু-
নিজের ছায়ায় গড়েছি তোমায়
সার্থক আমি প্রেমেতে তোমার
বাঁধনেতে বাঁধা নই কোনোদিন আমি।
সাদা-কালো
লোকটা খুব বিচার করত
মানুষগুলোকে চিরত
কেউ ঠিক না
খুব রেগে যায় লোকটা
কেউ খাঁটি না
সব বেটা স্বার্থপরের দল!
কথা কওয়ার লোক পাই কই বল?
ভিখারি আসলে ফিরিয়ে দেয়
সাহায্য চাইলে খেদিয়ে দেয়
সেলসম্যানকে ভেংচী দেয়
সব শালা মতলববাজের দল
সে আছে বলে
স্বার্থপর
যে গাছটা জল না পেয়ে শুকিয়ে গেল
সে গাছটার তলায় রোজ দাঁড়াই
আজও দাঁড়িয়ে
শিকড়ের কথা ভুলে
গাছটার ডাল ফুল ফল পাতা খুঁজছি
মনে হয় ওরা আসছে
অশ্রুত শিকড়ের দীর্ঘশ্বাস
আমায় ছোঁয় না।
সকাল
সাদা রজনীগন্ধা
বাচ্চা মেয়েটার রজনীগন্ধার গন্ধে
গা গুলিয়ে আসছিল
ফুটপাতে সে মায়ের সাথে বসে
পিছনে বেচছে রজনীগন্ধা মালা
সন্ধ্যেবেলা
লোকেরা সব কিনছে বেছে বেছে
সারাদিন যার ভাত পড়েনি পেটে
রজনীগন্ধায় গা গুলায় তার
সাদা ভাতের দানা ভাসে চোখে
রজনীগন্ধার রঙ লেগে তার ঠোঁটে
সে
রোজ দেখা হয় না
তবু রোজ দেখা হয়
রোজ কথা হয় না
তবু সব কথা হয়
রোজ হাতে হাত রাখি কই?
তবু সারা শরীরের স্পর্শ
এই তো, এখনও আমার সর্বাঙ্গে
সে -
বাইরে থেকেও ভিতরে থাকে
ভিতরে থেকেও হারিয়ে থাকে
হারিয়ে গিয়েও আমায় খোঁজে
আমি, হারিয়ে গিয়েও তারই মাঝে
সুন্দর
আমার একটা অভিযোগ
তুমি বড্ড বেশি সুন্দর
আমার একটা স্বীকারোক্তি
আমি বড্ড বেশি লোভী
আমার একটা সিদ্ধান্ত
আমি বঁড়শি হাতে না নেবো
আমার একটা উপলব্ধি
তুমিই আমার প্রাণের কবি
সংশয়ী
কে বলল, সন্ধ্যা হয়ে গেছে
আমি বললাম, ফিরবে কি?
উত্তর পেলাম না
কে বলল, সন্ধ্যা হয়ে এল
আমি বললাম, আলো জ্বালি?
উত্তর পেলাম না
কে বলল, সন্ধ্যা কি হয় নি?
আমি বললাম, হয়েছে তো
সে বলল
তবে ঘরে ফেরো নি কেন?
আলো জ্বালো নি কেন?
আমি নিরুত্তর রইলাম
সর্দিলীলা
(কীর্তনাঙ্গের প্রচলিত সুরে গেয়)
------------------------------
মরিব মরিব সখী নিশ্চয় মরিব
আমার এত সাধের অ্যান্ড্রয়েডখানা
কারে দিয়ে যাব
স্পর্শ
কেউই হাত বাড়ায় না
বাড়ায় কেবল শর্ত
শর্ত না চাই
চাই হাতের সরল স্পর্শ
সারাদিন
আমার ঘরের উত্তরের জানলাটা খুললে
উত্তাল সমুদ্র, সেদিকটা আমি রাতের বেলায় খুলি
আমার ঘরের দক্ষিণের জানলা খুললে রুক্ষ
পাথর পাহাড়, সেদিকটা আমি দুপুরবেলায় খুলি
আমার ঘরের পূবের জানলা খুললে
আবর্জনার স্তূপ, সেদিকটাও মাঝে মাঝে খুলি
আমার ঘরের পশ্চিমের জানলা খুললে
ধূ ধূ মরুভূমি, সেদিকটা আমি রাতদিন খোলা রাখি,
সরে যেও না
সরে যেও না
তুমি সরে গেলে
ফুসফুসে অক্সিজেন এসে ফিরে যাবে
বুকের সাথে মিশবে না