উত্তরণ
পেয়ারা গাছের ডালে।
জ্যোৎস্না পড়ল তার উপর
তাকে জড়িয়ে।
...
উঠবই
স্বপ্নগুলো গুঁড়িয়ে।
আমি তবু থাকব।
আমার ভিটে মাটি কেড়ে নিতেই পারো,
দেশান্তর করে।
আমি তবু থাকব।
...
উত্তরণ
সারাদিন তুমি মৃত্যুর আসার পথ বন্ধ করে চলেছ।
এবার থাম, তুমি ক্লান্ত।
সে আসবেই।
বরং জীবনটাকে দেখ, ভালবাসো।
তুমি বলবে, জীবনকেই তো আমি ভালবাসি, তাই তো মৃত্যুকে রাখি ঠেকিয়ে।
আমি বলব, না। তুমি জীবনকে ভালবাসো নি কোনদিন।
লোভ করেছ।
বেঁচে থাকার আনন্দকে সহজ ভাবে নাও নি।
কাড়তে চেয়েছ,তোমার বরাদ্দর চেয়ে বেশি।
তাই এত ভয় তোমার। মৃত্যু কে দেখ বিভীষিকা!
উপহার
আমার জন্য কি আনবে?
পারো যদি এনো-
এক মুঠো সময়।
সে হোক না গোধূলির মত রাঙা
কিম্বা নদীর কলকল শব্দের মত বিহ্বল
ভোরের মত স্নিগ্ধ
নতুবা তোমার চোখের মত চঞ্চল।
উপলব্ধি
প্রশ্ন কোরো না
আমি উত্তর জানি না
আমার হাতে অনেক রেখা
কোনো জ্যোতিষীর হাতে হাত রেখে
উত্তর পায় নি ওরা
আমার মাথার মধ্যে জিজ্ঞাসাগুলো
এলোমেলো তারার মত সাজানো
আমি অন্ধকারে ডুবে আছি
তবু ভোরের আকাশের দিকে
চেয়ে থাকতে থাকতে মনে হয়
আমার প্রশ্নগুলোর দরকার নেই
উপলব্ধির কোনো প্রশ্ন থাকে না
প্রশ্ন থাকে না ছুঁতে পারা তারার
উত্তর
অন্যকে প্রশ্ন করো
জানতে পারবে
নিজেকে প্রশ্ন করো
বুঝতে পারবে
সময়কে প্রশ্ন করে
অপেক্ষা করো
উপলব্ধি করবে
উতলা
আমার খুব রাগ তোমার চোখের পাতার উপর
কেন তারা যখন তখন পড়ে?
আর যেখানে সেখানে ঝরে?
আমার খুব হিংসা তোমার ঠোঁটদুটোর ওপর
কেন নিজেদেরকে ছোঁয়
আর নিজেকে আদর করে?
আমার খুব ঈর্ষা তোমার পোশাকগুলোর ওপর
কেন তাদের সাথে এত আঁট তোমার?
আমায় পাগল করে ছাড়ে
আমার খুব লোভ তোমার গায়ের গন্ধের ওপর
কেন তারা আমার গায়েও নেই?
যে এতই উতলা করে?
উৎস
থাকে আরো অন্ধকার
...
উপায়
বাচ্চাদের স্কুলের সামনে দাঁড়াও
...
উত্তরসূরী
ক্লান্ত একঘেঁয়ে রেল লাইনের মত
পুরো চোখ মেলে তাকাই না আগের মত
...
উদারচেতা
কলকাতায় কিছু বিশেষ রাজনৈতিক মতাদর্শের মানুষ, কবি ইত্যাদিরা জমায়েত হয়ে গোমাংস ভক্ষণ করে প্রতিবাদ জানালেন - খাবারে কোনো ফতোয়া মানছি না।
অবশ্যই এঁরা উদারচেতা। তা প্রমাণ করার জন্য পশ্চিমবঙ্গ তথা কলকাতার চেয়ে নিরাপদ স্থানও নেই, এও তাঁরা ভালভাবেই জানেন।
উৎসব
উৎসবের পিছনে এককীত্বের একটা খোঁচা থাকে। সব উৎসবের। আমরা যে প্রতিদিন বিচ্ছিন্ন থাকার অভ্যাসগুলো সযত্নে গড়ে তুলি- তার বিরুদ্ধে একটা তো কিছু করা চাই!
উপমা
এখনো জীবন বিজ্ঞান বইগুলোতে লেখা থাকে, মাছের দেহ কেমন? না, মাকুর মত।
বোঝো, এ যুগের কটা ছেলেমেয়ে মাকু দেখেছে, যে চিনবে। তখন বাধ্য হয়ে বলতে হয়, মাকু ওই মাছের দেহের মতই আর কি।
নাও, কে কার উপমা হয়!
উইয়ের দাগ
ইঁট বেরোনো বারান্দায়
হাড় বেরোনো মানুষটা
বেতের চেয়ারে বসে।
চেয়ারের নীচে ঘুণের শব্দ
দেওয়াল জুড়ে উইয়ের দাগ।
উনুন খুঁড়ে
অনেক শরীরের স্বাদ পেতে পেতে
যে মানুষটা হৃদয়ের স্বাদ ভুলল-
সেদিন সে বুকে হাত দিয়ে দেখে
খুব বড় একটা অন্ধকার গর্ত
তার অনেক নীচে একটা গরম চাটু
সে জল খুঁজছে এখন, উনুন খুঁড়ে।
উনি
১
----
পাশের বাড়ীর মেয়েটা গলায় দড়ি দিল
উনি সেদিন থেকে বাড়িতে দড়ি রাখেন না।
তার পাশের বাড়ির মেয়েটা গায়ে আগুন দিল।
সেদিন থেকে উনি বাড়িতে দেশলাই রাখেন না।
এইভাবে উনি বাড়িতে-
ব্লেড, ফিনাইল, এসিড, পাখা, ইঁদুর মারার বিষ - কিছু রাখেন না।
উপেক্ষা
উপেক্ষার জবাব দিতে জানত
দিতও হয় তো
দিল না,
উপেক্ষাকে উপেক্ষা করার মত ঔদাসীন্য ওর পায়ের নখে এখন
তাই চলতে ফিরতে ওর চোখের মণিতে এখন লক্ষ নক্ষত্রের বাস
ও নিজেই নিজের উত্তর দক্ষিণ
নিজেই নিজের কম্পাস
উদাসীনতা
উপর তলার কথা
উপর তলার কথা
ভিতরের কথাকে রাখে আড়াল
চুপ করে থাকো খানিক
পাবে সে নীরব কথার নাগাল
উদাস
এখনো সেদিকে তাকিয়ে থাকার অভ্যেস
এখনো শিরদাঁড়ায় যন্ত্রণা দেয় ঠাণ্ডা বাতাস
এখনো চোখের কোণে জমা জল, দ্বিধায়
এখনো গল্পগুলো শেষ লাইনে এসে উদাস
উৎকণ্ঠা
মেঘলা আকাশ
ছায়া ছায়া
ভিজে ভিজে সবুজ এদিক ওদিক
বৃষ্টি বিরাম অবকাশে
একবিন্দু বৃষ্টির জল
জানলার কার্ণিশে আটকে
উদাসীন
স্টেশান আবার ট্রেনের অপেক্ষায় কবে থাকল?
নাকি বাসস্ট্যান্ড থাকে বাসের অপেক্ষায়?
অপেক্ষায় তো থাকে যাত্রীরা, যাদের যাওয়ার আছে
কোথাও না কোথাও, দরকারে- অদরকারে
উল্টো ভাঁজ
লুঙ্গিটা পরা, তবে গিঁট দেওয়া নেই
বেড় দেওয়া কোমরের কাছে
একহাতে ধরা,
মনে হয় এক্ষুণি বেসামাল হবে
হয় না। ধরাই থাকে
একটা হাত ধরে থাকতে থাকতে বেঁকে গেছে ধনুকের মত
উত্তর-pro-দেশ
আমার যে সব ছাত্রছাত্রী টেস্টে বাজে রেজাল্ট করে, তবু মাধ্যমিক কি উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় বসে যায়, তাদের কাছ থেকে মির্যাকেল আশা করি। হয় না। অতীত আর ভবিষ্যতের একটা সাযুজ্য থাকে। সেটা বিঘ্নিত হলে তাকে বলি, ব্যতিক্রম।
উচ্চতা
লোকটার থাকার ঘর চোদ্দতলায়
লিফটে করে ওঠে
জানলা দিয়ে নীচে তাকায়
ফুটপাথের সংসারকে দেখে আত্মশ্লাঘায়
ফুটপাথে প্লাস্টিক মোড়া ছাদের নীচে একার সংসার
সে প্লাস্টিকের ফুটো দিয়ে দেখে শরতের আকাশ
উজাড় করে
আমার রাখার মত পাত্র ছিল না
আমার মনের উপর সসংকোচ
দ্বিধাপাতের ধারা
...
উপড়ানো বটগাছ
একলা একটা পাখা কত কথা বলবে?
চারটে দেওয়াল তো আর আরব্যরজনী শোনাতে পারে না?
জানলারও একটা সীমা আছে!
মানুষটা রাতদিন শুয়ে শুয়ে কি ভাবে জানি না
মশারির মধ্যে শীর্ণ শরীরটা
মূল উপড়ানো বট গাছের মত শুকিয়ে যাচ্ছে দিন দিন
অথচ মাত্র কয়েক বছর আগেই
এই মানুষটার পাঁজর আর মেরুদণ্ডের উপর ভর করে দাঁড়াতে শিখল গোটা পরিবারটা
উনি বললেন, এই ঘড়িটা দুবাই থেকে আনানো
...
উদ্বাস্তু
উদ্বাস্তু হয় মানুষ
কেঁচো কখনও মথ হয়ে ওড়ে না
ভিটে হারিয়ে মথ হয়ে যায় মানুষ
...
উচ্চতার প্রলোভন
...
উদ্ধত
তুমি এলে
সব গোছানোর মধ্যে
...
উদ্বিগ্ন ঈশ্বর হন না
মানুষই হয়। তোমার আমার মত।
...
উপলব্ধির সুর
...
উঠে যেও না
আরো কিছুক্ষণ যদি সব কিছু এমনই নিঃশব্দ থাকত
আরো কিছুক্ষণ যদি তোমার দিকে মুখ ফিরিয়ে থাকতাম
...
উল্টোপিঠ
...
উপোস
তিনি মুখটা শুকিয়ে বললেন, না দিদি, যাদের মাসে পনেরোদিন এমনিই পেটে ভাত জোটে না তাদের আবার উপোস!
...