আদৌ কি চাইছি
একটা বড় মেলা। কত রকম আলো, কতরকম নাগরদোলা, কত রকম সুখ। একটা রিফ্রেশিং স্পট - রবীন্দ্রনাথ।
পঁচিশে বৈশাখ, বাইশে শ্রাবণ - মেলায় ভীষণ ভিড়। পঁচিশে বৈশাখ অপেক্ষাকৃত বেশি। সেদিন মেলার ফাউণ্ডেশন ডে। বাইশে শ্রাবণ, ভিড় কিছুটা কম, সেদিন মেলার কর্তৃত্ব হস্তান্তরণের দিন। বাকি দিনগুলো কেউ না কেউ আসেই।
আমি কি ভুল?
ওর কি হয়েছে বলুন তো? ঘুমাচ্ছে না ক'দিন হল। সারারাত এপাশ ওপাশ করে। মশারি তুলে বাইরে এসে জিজ্ঞাসা করে আমায়, দাদা, এখন রাত না দিন? আমি বলি, রাত তো! সে আমার মুখের দিকে কিছুক্ষণ হাঁ করে তাকিয়ে থাকে। তারপর মাথার চুলগুলো টানতে টানতে বলে, আমারও তো তাই মনে হচ্ছে, এখন তো রাত, তবে!?
আরশিনগর
গোঁসাই বসে দীঘির ধারে। গুনগুন করে গান ভেসে আসছে, “গেরাম বেড়ে অগাধ পানি, নাই কিনারা নাই তরণী পারের... বাঞ্ছা করি দেখব তারে কেমনে সেথা যাই রে…”
গোঁসাই, বসি একটু?
গোঁসাই চোখের ইশারায় বলল, বসো।
আয় রে আয় হাঁড়ি হাঁড়ি
আজ তো আমরা জোম্যাটো, সুইগি ইত্যাদি কত কত নাম শুনছি। কিন্তু একি খুব নতুন? মোটেই না। এই সব কাজ আগে ভূতে সারত। হাতে তালি দিয়ে, "আয় রে আয় হাঁড়ি হাঁড়ি মণ্ডামিঠাই কাঁড়ি কাঁড়ি", এসব সুর করে গাইলেই হত। অ্যাপ্সের কথা ভাবছেন? মানে সে সব ছিল কিনা? মোটেই না। খালি গান গেয়ে, সে সুরে হোক চাই বেসুরে হোক, ভূতের রাজাকে খুশি করলেই হত। আপনাকে তখন আর পায় কে?
আংটিটা
অঞ্জু চায়ের কাপদুটো টেবিলে রাখতে রাখতে ঘরের পরিবেশটা বুঝে নিল। প্লাবনের চোখের কোল ফোলা। জুঁই যে সারারাত ঘুমায়নি অঞ্জু জানে। চোখ এতটা না ফুললে এত সকালে কেউ আসে? অঞ্জু কারোর মুখের দিকে না তাকিয়েই বলল, প্লাবন আজ দুপুরে খেয়ে যেও এখানেই….
জুঁই বলে উঠল, না মা, তুমি ওকে নিয়ে ভেবো না, ও একটু পরেই বেরিয়ে যাবে…
আর তুমি
আমার বুক ভরে নেওয়া শ্বাস প্রশ্বাস
আর তুমি
আমার চোখে জেগে থাকা আলোর সাগর
আর তুমি
আমার শ্রবণ জুড়ে বাতাসের আনাগোনা
আর তুমি
আমার জিহ্বায় জাগা জলের তৃপ্তি
আর তুমি
আমার স্পর্শে জাগা প্রাণের সাড়া
আর তুমি
আমার হৃদয় জুড়ে বওয়া জোয়ারভাটা
আর তুমি
আমার ভ্যাক্সিনটা?
সদানন্দ আর সন্ধ্যা লাইনে দাঁড়িয়ে। সন্ধ্যা সদানন্দের পিছনে দাঁড়িয়ে। ছিয়াত্তর বয়সের মানুষটার শরীর টাল খেয়ে যায় যখন তখন। লাঠিটাও শক্ত করে ধরে রাখতে পারে না। শিরা বেরোনো হাতটা থরথর করে কাঁপে। সন্ধ্যা অতটা অশক্ত নয়। এখনও চারটে বাড়ি কাজ করে সংসার চালায়। তার বয়েস তার মনে হয় আটান্ন হবে। কিন্তু আধার কার্ডে লেখা তেষট্টি। কি করে হয় কে জানে!
আমাকেও সঙ্গে নিও
তুমি ছাড়া
সব তছনছ করে যাবে
আর কে বলো?
এসো
আমার আবার সব গোছানো হয়ে গেছে,
নতুন রকম করে
এবার আসবে যখন
পারলে সব
পুড়িয়ে দিয়ে যেও
আদিম অনন্ত আকাশ
অতিমারীর প্লাবনে
সদ্য মা হারা
বাচ্চা মেয়েটা
ঘরের সব আলোগুলো জ্বেলে
দাঁড়িয়ে ঝুলবারান্দায়
একা
আমার যে আমি
আমায় লজ্জা দিও না
উনি হয় তো একটাই কথা বলতেন,
আমি কি তোমাকে বলেছি
আমি কি তোমাকে বলেছি
আমার ভীষণ ভয় করছে
আমি কি তোমাকে বলেছি
আমি তোমাকে হারাতে চাই না
আমি কি তোমাকে বলেছি
আমি হারিয়ে গেলে
সামলে নিও নিজেকে
আমি তুমি ঢেউ
প্রাণ শেষ হয়।
প্রাণধারা নয়
শরীর পুড়ে যায়।
চেতনা নয়
আমি, তুমি ঢেউ
মিলিয়ে যেতেই পারি।
এ মহাসমুদ্র শুষে নেবে
এত ক্ষমতাশালী তুমি নও।
আমাদের যেন মনে হয়েছিল
আকাশ মাটি বৃষ্টি আর ভালোবাসা
মিত্তির মশায় আলি সাহেবের কবরের সামনে এসে প্রায় প্রতি রবিবার বিকেলে বসেন। দুজনেই ছেলেবেলার বন্ধু, প্রাণের বন্ধু ছিলেন। কর্মসূত্রেও সারাটা জীবন কাছাকাছিই থেকে গেলেন। কিন্তু ভাগ্যের খেলায় আলি সাহেব চলে গেলেন মাত্র কয়েকদিন জ্বরে ভুগে। সবাই বলল, স্বাভাবিক সময়েই গেলেন। কিন্তু মিত্তির মশায়ের মন বলল, তাই কি? তবু মেনেই নিলেন, কারণ কথাটা সংসারের হিসাবে তো সত্যি।
আমরা এখানেই থাকি, আসিস
ধুধু মাঠ। একটা অশ্বত্থ গাছের নীচে হেলান দিয়ে বসে আছি। চারদিকে তাকানো যাচ্ছে না, এত রোদ। এগারোটা বারোটা হবে হয় তো। আজ বৈশাখ মাসের প্রথম দিন, হ্যাঁ, মানে নববর্ষ, ১৪২৮। বৈশাখ মানে তো, হে নূতন, দেখা দিক আর-বার... আর বুদ্ধ। বুদ্ধের জন্ম ঠিক বৈশাখে না হলেও, এই গরমকাল এলেই মনে হয় সেই বিকালে গোল চাঁদ - বুদ্ধপূর্ণিমার চাঁদ।
আবেগপ্রবণ
বাঙালি হুজুগে জাত। জন্মাবধি শুনে আসছি। আমার জন্মানোর বহুযুগ আগে যারা বাঙালি হয়ে জন্মেছিলেন তারাও একই কথা লিখে গেছেন। অর্থাৎ এই নিয়ে মতান্তর থাকার কথা নয়।
হুজুগের মাত্রাটা আরেকটু চড়িয়ে বললে, বাঙালি আবেগপ্রবণ জাত। এ কথাও বাঙালি সৃষ্টি করার সময় বিধাতা বিশেষ করে মাথায় রেখেছিলেন বলেই শুনেছি।
আমিও আছি
আপনার জন্য লজেন্স নিয়ে আসি
মাঝে মাঝে নিজের জন্য মায়া হয়। নিজের উপর তৃতীয় ব্যক্তির মত মায়া লাগে। মনে হয় নিজের গালে নিজে একটা চুমু খাই। নিজে যখন ঘুমাই তখন মনে হয় নিজের মাথার কাছে জেগে বসে থাকি। নিজের মাথায় নিজেই হাত বুলিয়ে দিই। আপনার এরকম হয়?
জানি না, ভেবে দেখিনি। হয়, হয় তো।
আগুনে পোড়ে না
আগুনে পোড়ে না
ইমন, মল্লার, বসন্ত, কাফি
আগুনে পোড়ে না
সুরধারা আদি-অন্তহীন
কালের আগুনে ছাই না হওয়া
সেই সে সুর
জানো না তোমরা
আগুনে পোড়ে না
আলাউদ্দিন!
আমি কোনদিকে যাই
তখন সদ্য টুইটারে অ্যাকাউন্ট খুলেছি। কলেজ পাশ করেছি সদ্য, মনে বেশ একটা দেশের কাজ করার ইচ্ছা। হঠাৎ রবীন্দ্রনাথ টুইট করলেন যারা যারা শান্তিনেকতনে ব্রহ্মচর্যাশ্রমে যোগ দিতে চাও, নীচের লিঙ্কে ক্লিক করে ফর্ম ভরে ফেলো।
আততায়ী তো তুমিও
আততায়ী তো তুমিও।
যখন অন্ধবিশ্বাস আর কুসংস্কারের আঘাতে নিজের শুভবুদ্ধিকে হত্যা করে বলো, সমাজকে জিতিয়ে দিলাম।
সমাজ বলতে বদ্ধ জলাশয় বোঝো, চিত্ত এমনই অসাড় তোমার।
আমার সকালগুলো
গত রাতের ফুরিয়ে যাওয়া মোমবাতিটা
টেবিলের উপর শ্রীহীন একদলা মোম হয়ে পড়ে
হীনমন্যতায়, লজ্জায়, অসম্মানে
আমি ওভাবে
পড়ে থাকতে চাই না
বরং তুমি ফিরে যাও
আমার সকালগুলোকে
অসম্মানিত কোরো না
আমি-তুমি
তুমি কি শুধুই তুমিই?
তুমি যেন
সময় পেরিয়ে দাঁড়িয়ে
থাকা আমিই
আমি কি শুধুই আমিই?
আমি যেন
ক্ষণকালের অসীম অপেক্ষায়
তুমিই
আমায় নাও
তপেন দেওয়ালে ঠেস দিয়ে বসে। নার্সদিদি এসে জিজ্ঞাসা করল, কেমন আছ তপেন?
আইস্ক্রিম
বাচ্চাটা লজেন্স নিয়ে দোকান থেকে বেরোলো। পিঠে স্কুলের ব্যাগ। ঘেমেনেয়ে একশা অবস্থা। কিন্তু দাদুটা কই?
আমিই তো সব হই
নিভে আসা প্রদীপগুলো নিভিয়ে মন্দিরের দরজাটা টেনে, মা-কে প্রণাম করে পূজারি বলল,
আনন্দ
কোনোটাই নয়। আনন্দ একটা শক্তি। উদ্যম। যার বিপরীতের শব্দ বিষাদ। আনন্দলাভ করার উপায়?
...
আমি আর সে
করে গেল একটু পর। ঘুমিয়ে পড়ল।
আমি কি জানি!
গোবিন্দপদর রাস্তাতে বেরিয়েই মাথাটায় আগুন খেলে গেলো। আজ দোলের দিন, কোথায় মহাপ্রভুর জন্মদিনে মানুষ হরিনাম করবে,
আমি বনাম বাজার
একবার আমার এক আত্মীয়ের ভীষণ শরীর খারাপ। তার বয়েস হয়েছিল। তো একজন পাড়ার ডাক্তারকে ডাকা হল, যিনি আদতে কম্পাউণ্ডার ছিলেন, কিন্তু তারপর চেম্বার করে বসেন এবং অনেকের অগতির দুর্গতি হন। তো তিনি স্টেথো, ব্যাগপত্তর নিয়ে তো এলেন। এসে আমার সেই আত্মীয়কে ভালো করে দেখেশুনে বললেন, ওনার মনে হচ্ছে আজ বা কাল বা পরশু'র মধ্যে একটা হার্ট অ্যাটাক হবে, আপনারা তৈরি থাকবেন।
...
আকাশ হতে যাইনি
আমি তৈরি, সেই কবে থেকে
আনন্দময়ী
সিক্সে পড়ে। নাম বুলবুল। বাবা মন্দিরের প্রধান পুরোহিত। তান্ত্রিক, জ্যোতিষীও বটে। গ্রামে নামডাক বেশ।
বুলবুল বাড়ি এসে, নাকেমুখে গুঁজে মাসির বাড়ি চলে গেল। একাই। সাইকেল নিয়ে। বলে গেল দুদিন পর ফিরবে। মা নেই। এক লতায়পাতায় পিসি আছে। সে না থাকলেই খুশি হয় বেশি।
...
আশ্রয়
আসক্তি ও একাকীত্ব
"আমার মনে হয় ওকে বিয়ে করলে ও আমাকে ভালো রাখবে…."