বিরক্তি
কিশোরবাবুর বয়েস পঞ্চান্ন। সুচাকুরে। নিজের বাড়ি। বাড়ি মধ্যমগ্রাম। স্ত্রী ঘরোয়া। সুশ্রী। ভক্তিপরায়ণা, স্বামী - ঈশ্বর দু'দিকেই। ছেলে আমেরিকায়, কর্মরত। মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে।
বেঞ্চ
কলেজের শেষ দুটো ক্লাস করেনি ওরা
পার্কে এসে নির্দিষ্ট বেঞ্চটায় বসল
অভিমান। চুমুগুলো যেন বিফলে গেল।
সব ক'টা বিকেল, সন্ধ্যে যেন ব্যর্থ গেল।
লেকের জলে যে ছায়াদুটো পড়ত
তারা জলের গভীরে মিলিয়ে গেল
বীমাবিপত্তি
আজ বলে না। নরহরিবাবুর দীর্ঘদিনের ইচ্ছা মা কালীর নামে একটা জীবনবিমা করেন। ডেট অব বার্থ নিয়ে একটু সমস্যা আছে, কিন্তু নরহরিবাবুর শালা সুড়ঙ্গ সিকদার সে ব্যবস্থাও করে ফেলেছেন। সুড়ঙ্গবাবু পেপারমিলে কাজ করেন। সাইডে হাত দেখার ব্যবসা থুড়ি সাধনা। খোদ কামাখ্যায় গিয়ে রপ্ত করেছেন, সুড়সুড়িবাবার কাছে। তিনিই তার বলাইচাঁদ নামটা এপিঠ-ওপিঠ করিয়ে সুড়ঙ্গ সিকদার করেছেন।
বিকল্প
কোথায় খুঁজছো খোলা আকাশ?
কিসের চাইছো বিকল্প?
মুঠো খুলে যদি টানটান হয় আঙুলগুলো
যদি ভেসে যায়-
মাথা ভরা সব প্রজল্প
বাপু
নাবালিকাকে ধর্ষণ করে খুন
মাঝবয়েসী মহিলাকে ধর্ষণ করে খুন
বৃদ্ধা মহিলাকে ধর্ষণ করে খুন
আমিও আসছিলাম বাপু জন্মজয়ন্তীতে যোগ দিতে,
দাঁড়িয়ে পড়েছিলাম।
তোমারও কোথায় একটা দাঁড়ানোর কথা ছিল না?
মনে পড়ছে না।
বর্ণপরিচয়
গোপাল অতি সুবোধ (বা)লোক। সে কাহাকেও ধর্ষণ করে না। যাহার সহিত তাহার বৈবাহিক সম্পর্ক তাহার ইচ্ছার বিরুদ্ধেও যৌন সংসর্গ করে না। যাহা পায় তাই খায়, যাহা পায় তাই পরে। ভাল খাব, ভাল পরিব বলিয়া অফিসে ঘুষ নেয় না। সবার আগে অফিসে যাইয়া নিজের কম্পিউটার খুলিয়া বসে। মন দিয়া কাজ করে। দ্বিপ্রহররের কর্মবিরতির সময় বন্ধুদের সাথে গল্প করে, ফেসবুক করে, ওয়াটস অ্যাপ করে। কোনো মহিলা কর্মচারীর সহিত অসভ্য ব্যবহার করে না। কাউকে কোনো ঘরে আলাদা ডাকিয়া লইয়া নিজের পদের ও অঙ্গের অসদ্ব্যবহার করে না। বাড়ি ফিরিবার কালে কি অফিস যাওয়ার কালে ট্রেনে বাসে নিজের হাত, জিভ ও চোখের উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকে। ট্রেনে পর্ণ দেখে না। কাহারও কোনোরূপ উদ্বিগ্নতার কারণ হয় না। বাড়ি ফিরিয়া আসিয়া কিছুক্ষণ টিভি দেখে। স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের সহিত গল্প করে। বন্ধুদের আড্ডায় যায় আবার বেশি দেরি না করিয়াই ফিরিয়া আসে। রাতের খাবার পরিবারের সাথে একসাথে খাইয়া শুইয়া পড়ে। ...
বেমানান নাতো!
বদলায় তো সবাই
কাউকে বদলায় সময়
কেউ বদলায় নিজেকে, সময়ের আগে
মেয়েটাকে দেখলাম অনেকদিন পর
চোখে যে দুটো কালোদীঘি ছিল
শুকিয়ে ফেলেছে। এখন আগুন।
চলনে আগে দ্বিধা ছিল, ব্রীড়া ছিল,
এখন দৃঢ় স্থির সলক্ষ্য পদক্ষেপ।
সিঁথিতে সিঁদুর ছিল। কোর্টে রেখে এসেছে।
বাজে গল্প
পদার অঙ্কে মাথা যে কোনোকালেই ভালো নয়, তাহা আমরা সকলেই জানিতাম। তবু অসুবিধা ছিল না। বিদ্যালয়ের গণ্ডী পার করিয়া চায়ের দোকান করিয়া দিব্যি সংসার পাতিয়াছিল।
কথায় বলে দশচক্রে ভগবান ভুত হন। আর এ তো সামান্য পদা মণ্ডল। হইল কি, কাহার কথা শুনিয়া জানি না, পদা রাজনীতিতে যোগদিল।
বারুদ জমাচ্ছো
বারুদ জমাচ্ছো। জমিয়ে যাও যাও।
শুধু মনে রেখো,
আগুন কিন্তু সীমানা মানে না।
বাকি সব বোগাস
হাওড়া স্টেশান ছেড়ে ট্রেনটা যখন বেরোয় রাত্তিরবেলা কি সন্ধ্যেবেলা, ওই হলুদ হলুদ, কমলা কমলা আলোগুলো দেখলে আমার ভীষণ মন খারাপ করত ছোটোবেলায়।
এখন করে না।
সন্ধ্যেবেলায় যখন চারদিকে শাঁখ বাজত, ঘন্টা নাড়ার আওয়াজ আসত, আকাশটা শেষ আলোর রেখাকে 'যেতে নাহি দিব' বলে আঁকড়ে রাখতে চাইত বুকে, আমার বুকের ভিতরটা ফাঁকা হয়ে যেত।
এখন হয় না।
বাতাস তো অনুভব
বাতাস তো অনুভব
ব্যথাও
বাতাস সজল আজ
ব্যথাও
বদল
ঠিক কি কারণে যেন এসেছিলাম
মনে করতে পারছি না
চেনা গলিগুলোর চোখে ভ্রুকুটি
নাম মনে করতে পারছে না আমার!
মুক্তি? কার মুক্তি?
স্মৃতির গারদে আটকে
জামিন নেই, জামিন হয় না
কয়েক লক্ষ কয়েদি সরিয়ে
বৈঠা তোমার হাতে
বৈঠা তোমার হাতে
তা বলে, জোয়ার-ভাঁটা তো নয়!
বারবার আসার অজুহাত
বারবার আসার অজুহাত দিতে পারব না
আমার বর্ষা বিনা নিম্নচাপেও আসে
বাকি সব বোগাস
হাওড়া স্টেশান ছেড়ে ট্রেনটা যখন বেরোয় রাত্তিরবেলা কি সন্ধ্যেবেলা, ওই হলুদ হলুদ, কমলা কমলা আলোগুলো দেখলে আমার ভীষণ মন খারাপ করত ছোটোবেলায়।
এখন করে না।
বেঢপ সাইজ
মার্বেল বসানোর কাজ শেষ হল। ঝাঁ চকচকে বাড়ির অন্দরমহল। বাইরে কিছু মার্বেলের টুকরো ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে। বললাম, ওগুলো ওরকম বাইরে ছড়ানো কেন?
"ওগুলো কোনো খাপে বসল না তাই। বেঢপ সাইজ।"
বাজার
...
বন্ধুহস্ত
দক্ষিণস্কন্ধ মোর পাইল আঘাত
আপন কক্ষচ্যুত হইয়া
চিকিৎসক রুধিলেন দক্ষিণের কাজ
বেড়িলেন বিচলন রোধক দিয়া
বাজারের থলে
লোকটা মাসকাবারি বাজারের থলেটার নীচের দিকটা দিল কেটে। এদিকে হাত দিলে ওদিক থেকে হাত যাচ্ছে বেরিয়ে।
সবাই হো হো করে হাসল।
বকেয়া
জীবনের কিছুটা বকেয়া
দুর্যোগের কাছে ছিল
জানতাম না।
জানলাম সেদিন
যেদিন ঝড় বকেয়া হিসাবের খাতা নিয়ে এলো
বলল, সই করো
নকল সই করলাম
ঝড় হেসে বলল,
"আবার আসব"
বহুতে এক
বুদ্ধিকে রেখেছিলাম পাহারায়
বুদ্ধিকে রেখেছিলাম পাহারায়,
সে-ই হল চোর
অসর্তকতায়,
নিজের ঘরে
বোধ
বহমান পত্রিকা - সেপ্টেম্বর সংখ্যা
বড় রাস্তাটা
বড় রাস্তাটা আরো চওড়া হওয়ার কথা ছিল
তাই অনেক উচ্ছেদ হল, সংস্কার হল
তারপর বড় রাস্তাটা
কি করে, কি করে জানি
বলেছিল, যাবে না
বলেছিল, যাবে না
তবু গিয়েছিল
মন বলেছিল,
ফিরবে না
ফিরেওছিল
মন বলেছিল,
থাকবে না
থেকেওছিল
মন বলেছিল -
ঠকব না
তবু ঠকেওছিল
মন বলেছিল
ভালোবাসবে না
বাসি
এমন কিছু ছিল না হয়ত
তবু মন খারাপটা ছিল
কিছু মন যেন এখনও বাসি
কড়া পড়া পা
কিসেতে হোঁচট খেলো?
বাংলার সবরীমালা
তো সুপ্রীম কোর্ট বলল মেয়েরাও মন্দিরে ঢুকতে পারবে। আহা, আমাদের কালীঘাট, দক্ষিণেশ্বর, তারকেশ্বরের কথা হচ্ছে না, সে দক্ষিণভারতের কি এক সবরীমালা মন্দিরের কথা। আমাদের বাপু অমন ধারা শক্ত নিয়ম কোনো বড় মন্দিরে দেখি নাই। বাঙালী মাত্রেই মা অন্তঃপ্রাণ জাত। এই শুরু হচ্ছে দেবীপক্ষ, দেখুন না সপরিবার দূর্গা, তাতে দুইজন মা, লক্ষী-সরস্বতী, আবার লক্ষ্মী, তারপর কালী
বিদ্যাসাগরের কয়েকটি তির্যক গল্প ও উদ্ধৃতি
বিদ্যাসাগরের কয়েকটি তির্যক গল্প ও উদ্ধৃতি – শেষ পর্ব
বিদ্যাসাগরের কয়েকটি তীর্যক গল্প ও উদ্ধৃতি - প্রথম পর্ব
বয়স না, কাম না
বয়স না, কাম না,
মাড়িয়ে যাওয়াই আসল কথা,
বড্ড বাড় বাড়ছিস তোরা
তাই মাঝে মাঝে উচিৎ শিক্ষা..
বীর্য্য পিচকারিই দেখিয়ে দিচ্ছে
পুরুষ সাজার কি হয় সাজা!
বাঘাদা, গান কই?
"আসিবে ফাল্গুন পুন, তখন আবার শুনো
নব পথিকেরই গানে নূতনের বাণী।।"
ব্যস
ব্যস, এতটুকুই তো
কতটা হাত বাড়িয়েছিলে?
ব্যস, আর না, থামো
কতটা পথ ভেবেছিলে?
বাদামগুলোর মত
মন্দিরের গায়ে গায়ে অনেক গর্ত
পায়রা, মাকড়সা, পিঁপড়ের জমায়েত
মানত করা লাল কাপড়, সিঁদুরের খালি ডিব্বা, ভাঙা চিরুনি
এরকম অনেক কিছু থেকে যায়
ভাঙা, ফেলে দেওয়া, অবহেলার সংসার গড়ে ওঠে অলক্ষ্যে
একদিন কারোর শুচিবায়ু চোখে পড়ে
অবহেলার সংসার আবর্জনা হয়ে যায় নিমেষেই
বাঁশিওয়ালা
খোঁজ থাকে। কিসের খোঁজ বুঝি না। মানুষের যে ঈশ্বরের খোঁজ, সেই ঈশ্বরের কথা কত বইতে কত ভাবে। কত আবেগ, কত নীতি, কত বর্ণনা, তার কোনো শেষ নেই। মোদ্দা কথা মানুষের নিজের ভিতর নিজেকে নিয়ে একটা বোঝাপড়ার যেন আর শেষ নেই। যেই তুমি মনে করেছ একটা জায়গায় এসে পৌঁছেছ, অমনি এমন একটা ঢেউ এলো যে সব এলোমেলো হয়ে গেল। তুমি যা যা ভেবে রেখেছিলে সব গেল গুলিয়ে। কিচ্ছু নিজের ম