Skip to main content

বর্ষশেষ

মামু বলল, দেখো ডুবন্ত সূর্য.... কি দারুণ রঙ না মামু!

ধরা দিতে চাইলে দূরত্বটা কিছুই নয়

ধরা দিতে চাইলে দূরত্বটা কিছুই নয়
চাঁদের আলো বিছানার চাদরে পড়লে বুঝি
ধরা না দিতে চাইলে অতি নৈকট্যও ফাঁকি
হাতঘড়ির আওয়াজটা কানে এলেই বুঝি

মাছ

- ও মাছদাদা, চিংড়ি কত করে?

- দুশো করে বৌদি।
- এবারে উঠেছে বোধায় বেশি নাকি?
- হ্যাঁ, নেবেন?
- না না, আগের টাকাগুলো শোধ করে নিই। আগেরটা তো দিতে পারিনি এখনো। আসলে ওর মাইনে হতে দেরী হচ্ছে। হলেই দিয়ে দেব। তারপর মাছ নেব, কেমন?
- ঠিক আছে বৌদি।

মাছওয়ালা সাইকেল নিয়ে চলে গেল। শ্বেতা বারান্দার গ্রীল ধরে এখনো দাঁড়িয়ে। বয়েস পঁয়ত্রিশের আশেপাশে হবে। 

শুভ জন্মদিন, মা


একটা ছোট্ট চারাগাছ জন্মাল বনে। বড় হতে লাগল। বনের পাখি, পশু, মানুষ সব্বাইকে সে ভালোবেসে ফেলল। পাখি ডালে বাঁধল বাসা। মানুষ ক্লান্ত হয়ে পেল আশ্রয়, পেলো মনের কথা বলার সাথী।

পরিবর্তন

কেউ বিপদে ফেলে বলেছিল -
            দেখ কেমন লাগে
কেউ বিপদে দেখে বলেছিল -
কাজ আছে ভাই আসি
সব ঠিক হয়ে গেলে একটা মিসড কল দিস
             চলে আসব
কেউ বিপদে শুনেই বলেছিল -

বাউল অন্তর্যামী

আমার আশেপাশের সব ফ্ল্যাটের সব্বাই পাক ছুটি
কেউ যাক দিঘা, কেউ পুরী। কেউ ভাইজ্যাগ, কাশ্মীর
        এমনকি সুইজারল্যান্ড বা প্যারিস
   যাক না, যেখানে খুশী যাক। হিংসা আজ ফাটা কোলবালিশ।
তুমি এসো সন্ধ্যেবেলা। 
আমি সমস্ত চমক আগলে, বুকের হাতুড়িটাকে সামলে, বসাই চা।
তুমি বসার ঘরে বসা।

একা

হাট্টিমাটিমটিম

স্থান - মন্দির

উপস্থিত-
ডাক্তার - রুগী
উকিল - মক্কেল

উদ্দেশ্য - আত্মোন্নতি

ভগবান - কনফিউজড

নেট ফল - কে গায়?
   হাট্টিমাটিম তারা মাঠে পাড়ে ডিম

আলো

ওগো কে জ্বাললে এত আলো?

আমায় ডাকো
    আমায় ডাকো
        আমায় একটিবার ডাকো

আমিও জ্বালি একটি প্রদীপ
আমার সারা জীবনের সব অন্ধকার করে জড়ো

আমায় ডাকো, আমায় ডাকো,
         আমায় একটিবার ডাকো

টর্চ

টর্চটার একদিন খেয়াল হল। কি খেয়াল হল? না সে তার ব্যাটারীগুলোকে দেখবে। এদিকে ঘরে আর অন্য আলোও নেই। তো তা সে মানবে কেন? জোর করে সব ব্যাটারী বার করে টেবিলে রাখল। তারপর সে ব্যাটারীগুলো দেখবে বলে আলো জ্বালার চেষ্টা করতে লাগল, মানে নিজেকে জ্বালানোর আর কি! এখনো চেষ্টা করে চলেছে।

যেমন কেউ কেউ তাঁকে ভিতরে ছেড়ে বাইরে দেখার গোঁ ধরেছে।

হৃদয়াবেগ


জিজ্ঞাসা করলাম,
কত জল বুকে তোর?
এক হাত? এক হাটু

সে বুকের মধ্যে নিল আমার হাত চুবিয়ে

ছলকে উঠল আমার বুকের জল

সে জিজ্ঞাসা করল, কত জল?

আমার চোখ মুদে আসল

বুকের মধ্যে কান পাতলাম
সহস্রধারার মূর্ছনা

(ছবিঃ সমীরণ নন্দী)

বড়দিন


ছেলেটা ঘুড়ি ওড়াচ্ছিল সকালবেলা। গ্রামের নাম বিলালপুর। শীত পড়েছে বেশ। ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি।
আচমকা ঘুড়িটা সোঁ সোঁ করে আকাশে উঠতে লাগল। ছেলেটা প্রথমটা ঘাবড়ে গেল। ভাবল ঝড় শুরু হল? না তো, আশেপাশে গাছগুলোর মাথা তো দুলছে না। সে যখন খুব ছোট তখন একবার ঝড়ে তাদের বাড়ির টিনের ছাদ উড়ে গিয়েছিল। খুব ভয় পেয়েছিল। সে কি কান্না তার! মনে হচ্ছিল তার বাবা মা সক্কলকে বুঝি উড়িয়ে নিয়ে যায়।

বেয়াদব ভালোবাসা


তোমাকে দেখে বুঝেছিলাম জানো
এমন বেয়াদবের মত ভালোবাসা যায়
এমন রোদ্দুর মাখা গায়ে
এত ভালোবেসে অন্ধকারও মাখা যায়

যেদিন তুমি মরণকে আলিঙ্গন করলে
  ক্ষমা করে তাদের
যারা তোমার মৃত্যুর আয়োজন করেছিল
  সেদিন থেকে মৃত্যু হেরে গেল জানো
সেই তোমার বেয়াদব ভালোবাসার কাছে
 ক্ষমাগ্নিতে ঘাসেরাও হল শুদ্ধ তোমার রক্তে

ক্রিসমাস ইভ

তোমার শুধু ঘরের কোণ নেই
তোমার আছে এক মহাকাশ সাগর
তোমার শুধু মাটির প্রদীপ নেই
তোমার আছে এক নীহারিকা আলো
বুকে তোমার, শুধু হিংসা রক্তচক্ষু নেই
আছে দেখো, করূণামাখা ক্ষমা
প্রেম কি শুধু পানাপুকুরের ডোবা? 
সে ত্যাগে সেবায় ঝরণা উছল ধারা
পূজা, শুধু আচার-বিচার-নিয়মে নয়
সে নিজের মধ্যে বিশ্বকে খুঁজে পাওয়া

৭ই পৌষ

সেদিন এক বালক বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ নিয়েছিল
       এই মাটিতে আজকের দিনে, কিছু সূর্যোদয় আগে
বিশ্বের প্রতিটা অণু- পরমাণুতে লাগল দোলা
               প্রতিটা আন্দোলনে জাগল ছন্দ
আদিকবি আসন পাতলেন মাটিতে। ইচ্ছা করলেন -
তাঁর সৃষ্টির অতলস্পর্শী সুধাকে করবেন স্পর্শ

বদ্তমিজ দিল

সাদা শাড়ী পরা পৃথুলা মহিলা সন্ধ্যের অন্ধকারে ধীরে ধীরে হাঁটছেন। কৃষ্ণ মন্দিরের সামনে দাঁড়ালেন। মাথা নীচু করে হাতজোড় করে আঁচলটা বুকের কাছে এনে প্রণাম করলেন। চাবির গোছা ঝনঝন করে উঠল। 

একটু দাঁড়াও

তুমি হাতের রেখা গুনো না
তুমি আশেপাশের কথা শুনো না
তুমি উনুনে আঁচ ধরিয়ে একটু আড়ালে যাও
তুমি ভ্যানটা গাছের ছাওয়ায় রেখে একটু দাঁড়াও

তোলপাড়

রাজ্যসভা লোকসভা তোলপাড়
তোলপাড় আলোচক বুদ্ধিজীবী মহল
সেই ভয়াবহ ডিসেম্বরের রাত
আতঙ্ক আক্রোশ ঘিরে আইনি টহল

মাথা ঘিলু চটকাচ্ছে বিবেক বিচার
কত বয়সের অপরাধে দাগী অপরাধী হয়?

আমি ভাবি -
বলো দেখি, কতটা উদাসীন হলে সমাজ
এ ঘৃণ্য প্রবৃত্তিরও কিশোর মস্তিস্কে জন্ম হয়?

আমি

এক আমি পিছন ফিরে
আরেক আমি সামনে তাকিয়ে

তোমার 'আমি' মাঝখানেতে
          আসন বিছিয়ে
একখানে তার ছায়া, আরেকখানে কায়া


(লেখাটা আগেই দেওয়া। Samiranদার হাতের ছোঁয়ায় তা আরেক মাত্রায় উন্নীত হল। ধন্যবাদ দাদা।)

অরণ্য

এ আমার একলা অরণ্য। একা অরণ্য।

এর শিকড়ে আমার স্মৃতির অববাহিকা
ওরা চুপিচুপি কথা বলে
কান্নাগুলো শিশিরে ভিজে আজও উজ্জ্বল
মায়ের আঁচলের গন্ধ, বাবার হাতের স্পর্শ
ফেলে আসা বন্ধুর টিফিন বক্স
কারোর ওড়নার গন্ধ
              ওরা কথা বলে। একা একা।

নাবিক

বাসনাগুলোকে নাবিক করেছি। খালাসির কাজে ছিল ওরা। তাদের দিলাম নাবিকের ভার।

লুকোচুরি

খামখেয়ালী রোদ এল ছাদের উপর
এসে বললে, সময় আছে?
বললাম, কেন? 
সে বলল, 
দাঁড়াব একটু। বসতে বললে বসতেও পারি।

আমি খেলছিলাম ছায়ার সাথে একা, লুকোচুরি।
সে কার্ণিশের কোল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে,
       আমায় ইশারায় বলল -
        না, ওকে যেতে বলো এক্ষুণি

শীতের কম্বল


যে আলোতে নিজের, অন্যের ভিতরটা দেখা যায় তা হল অনুকম্পা। অন্যের দিকে ফিরলে অন্যকে দেখায়, নিজের মধ্যে ফিরলে নিজেকে চেনায়। না হলে, নিজের অহংকারের জুলুমে অন্যকেও মারি, নিজেও মরি। নিজের ভার লাঘব করলে অন্যের চলার পথে পাথর হই না, আর নিজের বুকের ওপর পাথর হয়ে বসি না। 

হ্যাঁ, আমিই



---
কোর্টে আজ রায় বেরোবার দিন। থিকথিক করছে ভিড়। আসামী একজন মহিলা। বিবাহিতা। বয়েস ৩৩।
    অপরাধ - অসুস্থ স্বামীকে রেললাইনে ধাক্কা মেরে চলন্ত ট্রেনের সামনে ফেলে দেওয়া। দিনেরবেলা, সবার সামনে।
    যে ক'দিন আদালতে মামলা চলছিল মেয়েটা একটা শব্দও উচ্চারণ করেনি। যতবার জানতে চাওয়া হয়েছে এর পিছনে কারণ কি? সে নির্বাক থেকেছে।

জাগরণ


একটা কয়েন পড়ল মাটিতে। আমার কানে শব্দ আসল। মনে চমক দিল, আমি ফিরে তাকালাম।  

আমার সারাটাদিন

তোমার ভোরবেলায় আমি আছি?
আমার ভোর তোমার চোখের সাথে হয়

তোমার দুপুরবেলায় আমি আছি?
আমার দুপুর তোমার হাসির সুরে হয়

তোমার বিকালবেলায় আমি আছি?
আমার বিকাল তোমার ঘামের গন্ধে হয়

তোমার সন্ধ্যেবেলায় আমি আছি?
আমার সন্ধ্যে তোমার গলার স্বরে হয়

তোমার রাত্রিবেলায় আমি আছি?
আমার রাত তোমার ঠোঁটের বিছানায় হয়

আমার দিদা

সংসারে সুতার্কিক দেখেছি, ধূর্ত মানুষ দেখেছি। তারা বুদ্ধিমান অবশ্যই। তবে মনের পরিধি ছেড়ে গহন গভীরে প্রবেশ করে, আত্মচেতনাকে স্নিগ্ধ করে, সংসারকে শান্তিনিকেতন করে গড়ে তুলতে খুব কম মানুষকে দেখেছি।

খবর বাজার

খবর খবর খবর

ধর্ষিতা মেয়ের শরীরে এইচ আই ভি,
সে মেয়ে হাসপাতালে মাকে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়লে
                      খবর

সেই কান্নার আওয়াজে আচমকা কোনো টিকটিকি
হাসপাতালের দেওয়াল থেকে মেঝেতে পড়লে 
      ব্রেকিং নিউজ

হাঁটবে না আমাদের সাথে?

হাতের কাছে কিছু চেয়েছিলে
  পাওনি। এই তো?
অথবা পেয়েও হারিয়েছ। তাই তো?

ওই গাছটার কাছে দাঁড়াও
জানতে চাও, শেষ বসন্তে ওর কত পাতা ঝরেছে?
জানতে চাও, ওর কত মুকুল অপরিণতিতেই
             মাটির কোলে গোর নিয়েছে?

যদি সাড়া দাও

কাজল তো আগেও দেখেছি
এর ওর তার চোখে। নিরীহ কালো বাঁকা দাগ।
সে কাজল এমন খুনী হয়?
        আগে জানতাম না জানো
তোমার চোখে দেখার আগে

আমিও গেলাম মিলিয়ে

আলো জ্বাললাম। আলোর সমুদ্রে
আমার ক্ষুদ্র আলো গেল হারিয়ে।
আমিও গেলাম মিলিয়ে।

যাও

ধর্ম, শাস্ত্র, নীতি - তোমরা দূরে যাও
   আমার লাগছে
আমার গলায় তোমাদের দশ আঙুলের দাগ
আমার দম আটকাচ্ছে, যাও -

তোমাদের নরকে আমার ঠিকানা লিখে রেখো
আমি যাব, আনন্দের সাথে যাব, স্বেচ্ছায় যাব
কোনো অভিযোগ থাকবে না আমার

শুভ জন্মদিন -মা


ছেলেটা অফিস থেকে ফিরল। মদের বোতল, গ্লাস টেবিলে সাজাতে লাগল, বন্ধুরা এসে যাবে। হঠাৎ হাতে লাগল, মদের বোতলের গায়ে সাঁটানো ছোট চিরকুট -
'শুভ জন্মদিন -মা'

চশমা

নতুন একটা চশমা নিলাম
বেজায় ঝক্কি পোয়াতে হল
কেমন লাগছে বললে না যে!
অমনি বুঝি হিংসে হল

আরে আরে দাম বেশি না
হাজার চারেক, বুঝলে কিনা
আঁতকে উঠলে দামটা শুনে?
গুণটা শুনলে বুঝবেখনে

অবসেসান


নতুন বাথরুম। নতুন টাইলস। নতুন ফ্ল্যাশ, কমোড। গরম জল, ঠাণ্ডা জল আলাদা আলাদা কল। নতুন দামী শাওয়ার। 
     রোজ দেখতে ভাল লাগে। চাকরীর পর খুব ইচ্ছা ছিল এরকম একটা বাথরুম হবে রণিতের। হলও। নিম্ন মধ্যবিত্তের এই বড় সাধ, তার এটাই বারবার মনে হয়।

শূন্য আমি


ফুল তোলার কথা ছিল
তুলিনি

চন্দন বাটার কথা ছিল
বাটিনি

মালা গাঁথার কথা ছিল
গাঁথিনি

ভোগ রাঁধার কথা ছিল
রাঁধিনি

বেলা গেল, বেলা হল, বেলা গেল
তবু উঠিনি, উঠিনি, উঠিনি

"তুমি তো নাই, নাস্তিক আমি!"
বলে পাশ কাটালাম বাইরে

রাঙিয়ে গেল হৃদয় গগন


আসন্ন সন্ধ্যা। অস্তমিত রবি পশ্চিমাকাশে। চারদিক তপস্বীর মত শান্ত, বিরহীর মত উদাস। ঘর ফেরা পাখির দল ফিরে গেছে খানিক আগে। মেঘের ফাঁকে ফাঁকে শেষবেলার সূর্যের সোনালী আভা। যেন পুরবী বাজছে বাতাসে বাতাসে। বাতাসের ভেজা আঁচলে যেন কান্নাভেজা সুর। 

আপনি কি বলেন?

এবারের পূজোর ছুটিতে আমরা বন্ধুরা মিলে অজন্তা বেড়াতে গিয়েছিলাম। ফর্দাপুর বলে অজন্তা সংলগ্ন একটা জায়গায় একরাত্রি হোটেল বাস করতে হয়েছিল। 
সকালবেলা হোটেলের বয় আমাদের ঘরে চা দিতে এলো। ঘরের দ্রব্যসামগ্রীর দিকে ধাঁ করে একনজরে চোখ বুলিয়েই, হঠাৎ তার মুখটা সলজ্জ দুষ্টু হাসিতে রক্তিম হয়ে উঠল। তারপর একটু সংকোচের সাথেই বলল, সাহাব, এক বাত পুছে?
বললুম, বোলো।

ওরা আছে, আশেপাশে


তোমার ফেলে যাওয়া কয়েকটা গ্রীষ্মের রাত
তোমার হেঁটে যাওয়া কয়েকটা বর্ষার সন্ধ্যে
তোমার কুয়াশা ঢাকা কিছু উষ্ণ আলিঙ্গন

এখনও ছায়ার মত আমার সাথে ফেরে

যখন মাঝরাতে কয়েকটা কুকুরের সাথে হাঁটি
যখন মাঝরাতে ঘুম ভেঙে জলতেষ্টা পায়
যখন মাঝরাতে দূরে রেলগাড়ির আওয়াজ শুনি

তখনও

পণ


মন্ত্রমুগ্ধের মত চেয়ে বসে আছে দম্পতি। দত্তক নেবে। চলছে জিজ্ঞাসাবাদ। মা হতে না পারার মাশুল। অপমান।
অনাথ শিশু ধুলোতে। না খাওয়া, রুগ্ন শরীর। উচ্ছিষ্ট যাচকের বেঁচে থাকার সাধ! অসহ্য!
সমাজ। নিয়ম। আইন। উকিল। নির্দেশাবলী।
শিকড় পাথর চিরবে।
পণ। জেদ। স্বপ্ন। দুই ভিখারীর সাধ।

অনাসক্ত

ফুলের সুগন্ধ বাতাসে ভর করে এলো
    দুহাত বাড়ালো
বলল, আমায় নাও

ক'টা সাঁতারে

মাতালটা পুকুরের ধার ঘেঁষে বসে
চিৎকারের সাথে বেরোচ্ছে, বিষবমি,
                      অশ্লীল শব্দ বন্ধনে
    শুনছে কে?
শান্ত পুকুর সন্ধ্যার অন্ধকারে একলা সাক্ষী
কিছু জোনাকি, আধ-ঘুমন্ত কুকুর

আমি

আগুনে হাত দিলাম

লক্ষণরেখা

এ চৌকাঠ আমার লক্ষণরেখা
আমার শৈশব, আমার কৈশোরকে রাখবে আড়াল
আমি জানি বাইরে সব হাত আদর করে না আজ
সব চোখে স্নেহ নেই, আশীর্বাদ নেই সব মনে আজ

বাইরেটা আজ কেন ভাঙা খেলার মত বাজে?
আমার হাঁটা চলা কেন দুদিক খেয়াল রেখে?
মায়ের চোখে এত কেন ভয় একটু দেরি হলে?

জানি না।

ভূমিসূতা

মেয়েটার হাত বিছানো
         আলতো করে
              নরম মাটি ছুঁচ্ছিল

আড়চোখে সে নীলাকাশে চেয়েছিল

নিশুতিরাতের হাতছানি

হঠাৎ হাওয়ার হাতছানি
আকাশে পিছলে পিছলে যাচ্ছে চাঁদ
কুঁড়ির ভিতর আধজাগা ফুল শুনছে শিশির পড়ার শব্দ
ঝিঁঝিঁর ডাকে নিঝুম রাত উঠে বসেছে জ্যোৎস্নার চাদর জড়িয়ে
তার উষ্ণ হৃদয়ের ধোঁয়া কুয়াশার মত ঘিরে চারিদিক

ছিন্ন শিকল পায়ে নিয়ে

দুর্বলের উপর সবলের অত্যাচার - অতি প্রাচীন কথা। কর্মক্ষেত্রে, শাসককূলে, ধর্মে, সমাজে, জাতিভেদে ইত্যাদিতে এর উদাহরণ ভুরিভুরি। সেগুলোর একটা যথাযথ কারণ আছে। অত্যাচারটা সমর্থনযোগ্য তা বলছি না। কেউ হয়তো শারীরিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ইত্যাদি ভাবে পিছিয়ে আছে। তাই সে নরম মাটিতে বলশালী প্রতাপ ফলিয়ে শুরু করেছে অত্যাচার। তবু সেরকম হলে তার উঠে দাঁড়াবার এবং অত্যাচারের প্রতিবাদ করার সুযোগ আছে ভবিষ্যতে।

কুঁড়ি

Normal 0 false false false

দিনের আলো যে সত্যকে


দিনের আলো যে সত্যকে আলোর ছলে ঢাকে
না ঘুমানো রাত বুকের ওপর তাকেই জাগিয়ে রাখে

না-স্পর্শ


আমি যে ঠিক প্রতিশোধ নিতে চাই
                           তা না
আমি যে ক্ষমা করেছি সম্পূর্ণভাবে

সুখ

সুখ খুঁজে মন জনম গেল 
       হেঁটে বেড়াস কানাগলি
কি সুখে সব সুখ খোয়ালি
         নিজেই নিজের চোরাবালি

ডুব দে রে মন মাঝপুকুরে
      জলে ছায়ার মায়া ছাড়
লাগবে মাটি পায়ের তলায়
      মন একডুবেতে ছারখার

হংসধ্বনি

তাড়া নেই কোথাও যাওয়ার। তবু হাঁটছি। সোজা রাস্তা। সন্ধ্যে ইতস্তত করছে পুরোপুরি চাদরে মুড়তে দিনের অবশিষ্ট আলোটুকুকে। ডানদিকের আকাশে ঈষৎ রক্তিম পূর্ণচন্দ্র। 

নয়


বাতাস ঢুকল পর্দা উড়িয়ে
এসেই প্রশ্ন, গলা জড়িয়ে

এসেছিল বুঝি, ফিরে গেল?

কি ভাবে খবর হল?

তোমার গায়ে এখনো যে তার গন্ধ

যা অসভ্য! আগল করি বন্ধ

লজ্জা হল?

বয়েই গেল

মরবি নাকি!

সে আর বাকি?

কতবার মলি? তাও গোনা হয়?

হাজার কোটি উনিশ লক্ষ নয়

নয়েই শেষে আটকে গেল, কি ভয়?

মরণ


ভ্রমর বাতাসকে বলল, তুমি ভারী বুদ্ধু।
বাতাস বলল, কেন? 
ভ্রমর বলল, সারাদিন থাকো ফুলের আশেপাশে, তবু চাও না একবিন্দু মধু। 
বাতাস হাসল। ভ্রমর বলল, হাসলে যে! লুকালে বুঝি কিছু? 
বাতাস বলল, না তো। 
ভ্রমর বললে, বলো তবে কি পাও?
বাতাস বলল, ওর গন্ধ।
ভ্রমর ফুলকে বলল, আর তুমি কি পাও?
ফুল বলল, ওর স্পর্শ।