Skip to main content
মাছ

- ও মাছদাদা, চিংড়ি কত করে?

- দুশো করে বৌদি।
- এবারে উঠেছে বোধায় বেশি নাকি?
- হ্যাঁ, নেবেন?
- না না, আগের টাকাগুলো শোধ করে নিই। আগেরটা তো দিতে পারিনি এখনো। আসলে ওর মাইনে হতে দেরী হচ্ছে। হলেই দিয়ে দেব। তারপর মাছ নেব, কেমন?
- ঠিক আছে বৌদি।

মাছওয়ালা সাইকেল নিয়ে চলে গেল। শ্বেতা বারান্দার গ্রীল ধরে এখনো দাঁড়িয়ে। বয়েস পঁয়ত্রিশের আশেপাশে হবে। 

আরেকজন মাছওয়ালা আসল সাইকেল নিয়ে।

- আরে রতনদা যে! দু'হপ্তা পর যে, কি হয়েছিল?
- জ্বর বৌদি।
- এখন শরীর ঠিকঠাক?
মাছওয়ালা হেসে মাথা নেড়ে উল্টোদিকের ঘোষদের ছোটোবউকে মাছের দাম বলতে লাগল। 
- কি মাছ নিবি রে কাবেরী? ছেলে উঠেছে ঘুম থেকে? 
- হ্যাঁ দিদি। ওর বাবার সাথে মর্নিংওয়াকে গেছে।
- সে কি রে? ওই তিন বছরের ছেলে মর্নিংওয়াক! ওটা কি বাটা নাকি রতনদা?
- হ্যাঁ।
- জ্যান্ত না! দেখ কাবেরী কেমন লাফাচ্ছে মাছগুলো!
- নেবেন নাকি বৌদি? রতন বলল, আড়চোখে ঘোষেদের ছোটবউয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে। ছোটবউ মুখ টিপে হাসল।
- না গো। তোমার দাদার মাইনেটা হোক। আগের মাসেরটা চুকিয়ে দিই, তারপর নেব।

শ্বেতা ঘরে চলে আসল। তার ছেলেটা ফোরে পড়ে। সে বলল, মা মাছ নিলে না? 
শ্বেতা ঝাঁঝিয়ে উঠে বলল, না। পড়াশোনা ছেড়ে ওইদিকে মন ছিল তা হলে? কিচ্ছু হবে না লেখাপড়া... সব টাকার শ্রাদ্ধ! আমার কপাল!
জ্যোতির্ময় বলল, নেবে না যখন দাম করছিলে কেন? জানোই তো দেবে না।
শ্বেতা থমকে দাঁড়াল জ্যোতির্ময়ের চা খাওয়া কাপটা হাতে করে।
জ্যোতির্ময় তার হাতটা টেনে বলল, বোসো।
শ্বেতা যন্ত্রচালিতের মত বসেই, উঠে পড়ল। চীৎকার করতে লাগল... আমার আর সহ্য হয় না। কতবার বলেছি মশারিটা ওভাবে ভাঁজ করবে না... আর ও কি দাড়ি কাটার ছিরি... নিজের জিনিস নিজে গুছিয়ে রাখতে পারো না.... আছেই তো বাড়িতে বিনা মাইনের কাজের লোক...

ঘোষেদের বড়বউ খবরের কাগজ থেকে চোখ সরিয়ে বলল, শুরু হল রে ছোটো!

(ছবিঃ সুমন)