Skip to main content
নিশুতিরাতের হাতছানি

হঠাৎ হাওয়ার হাতছানি
আকাশে পিছলে পিছলে যাচ্ছে চাঁদ
কুঁড়ির ভিতর আধজাগা ফুল শুনছে শিশির পড়ার শব্দ
ঝিঁঝিঁর ডাকে নিঝুম রাত উঠে বসেছে জ্যোৎস্নার চাদর জড়িয়ে
তার উষ্ণ হৃদয়ের ধোঁয়া কুয়াশার মত ঘিরে চারিদিক

এই কটা কথা কবিতার লিখেছি কি লিখিনি....
এমন সময় পুকুরের জলে নামল দুটো মামদো আর দুটো স্কন্ধকাটা।
যেই না আমার চোখে চোখ পড়েছে, বলল, এই শালা, ভয় দেখাবি নাকি? অমন মানুষের মত জানলায় দাঁড়িয়ে কেন?
আমি বললুম, কবিতা লিখব।
বলল, ন্যাকা! কবিতা লেখার আর সময় পেলো না, যা ভাগ!
আমি বললুম কেন ভাগব? আমার জানলায় আমি দাঁড়িয়েছি তো তোর তাতে কি?
মামদোটা কিছুক্ষণ কি ভেবে বলল, তা অবিশ্যি ন্যায্য কথা, আপনার জানলায় আপনি দাঁড়াবেন তা বলার কি আছে। তবে কথা হচ্ছে সাথে মেয়েমানুষ আছে কি না, তাই বলছিলাম আর কি! 
ওমা! তাই তো! দেখি দুটো শাকচুন্নী বটগাছের নীচে দাঁড়িয়ে, ঘোমটায় মুখটানা।
আমি সরে আসতে যাব, এমন সময় একটা শাকচুন্নী বললে, তা কি নিকছিলে গা? বলেই ধাঁ করে আমার জানলার গ্রীল ধরে দাঁড়াল। আহা কি তার রূপ আর কি তার সুবাস! কোন রকমে বলতে লাগলাম

হঠাৎ হাওয়ার হাতছানি..

অমনি সে সলজ্জ দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে গদগদ হয়ে বললে, এ যে আমায় নিয়ে নিকেচ দেকচি! 
আমি কিছু বলার আগেই বলল, একবার ব্লুটুথটা অন করো তো...
আমি বেশ খানিক ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। তাও কাঁপা কাঁপা হাতে অন্ করলাম
সে তার একটা ছবি পাঠিয়ে বলল, সেল্ফি আমার। নিমতলায় তুলেছিলাম।গত পরশু আমাদের ফিস্ট ছিল।
তারপরেই বলল আমিও লিখি, শুনবে?
আমি হ্যাঁ বা না বলার আগেই সে শুরু করল গ্রীলের খাঁজে হাত পা ছড়িয়ে মিহি গলায় আবৃত্তি....

আমার গায়ে মাথায় আগুনের ছ্যাঁকা
তোমার পায়ে পায়ে হেলে সাপ ব্যাঁকা
আমার খুলির ভিতর ঘিলুর খিচুড়ি
তোমার হাড়ে হাড়ে কাতুকুতুর সুড়সুড়ি

হয়তো আরো পড়ত, কিন্তু এরই মধ্যে একটা ব্রহ্মদৈত্য কোত্থেকে এসেই বললে, ফের আজাত কুজাতের সাথে কথা! তোকে কতবার বলেছি না অগো ছায়া মাড়াস নি মাড়াস নি, যা এখন কেষ্টপুরের খালে একটা ডুব দিয়ে আয়!

শাঁকচুন্নিটা দমে গেল। থতমত খেয়ে, লজ্জা পেয়ে আমতা আমতা করে বলল, আঁজ্ঞে এই যাই কত্তা!!

শাকচুন্নীটা যাবার আগে ফিসফিস করে বলল, বুইলে, তোমাদের ছিগনাল আর আমাদের ছিগনাল মাসের যে শনিবার অমাবস্যা আর যে মঙ্গলবার পূন্নিমে থাকে, সেই সেই দিনগুলাতে ধরে। তুমি মিসড কল দিলিই আমি কবিতা শোনাতে চলি আসব। তুমিও আসতি পারো। তবে একটু কষ্ট করতি হবে, এই যেমন ধরো ছাদে উঠে একটা টুক করে ঝাঁপ দিয়ে দিলে। বা রেতের বেলা বালিশ কাঁথা নিয়ে রেল লাইনে শুয়ে পড়লে। খুব ভয় লাগলে আমার সেল্ফিটা দেখো আর ভয় লাগবে না। বলেই সে হাপিশ।
চারিদিকে তাকিয়ে দেখি বাকি ভূতগুলোও কখন চলে গেছে। ঘরে এসেই ছবিটা ডিলিট করলাম আগে। তারপর শুয়ে পড়লাম।
বেশ কিছু মাস কেটে গেছে, হঠাৎ একদিন রাতে মোবাইলটা বেজে উঠল। দেখি একটা কিম্ভুত নাম্বার থেকে মেসেজ। তাতে লেখা, 
আগামী মাসের শনিবারটা অমাবস্যা। আমি আসব। অবিশ্যি তুমিও আসতে পারো তার আগেই। এই, ছাদে ওঠো না, আমি ছাদেই বসে আছি। তুমি ঝাঁপ দিলেই, তুমি আর আমি জন্মের মত, থুড়ি মরণের মত এক। বুঝলে?


(ছবিঃ সুমন)