সম্ভাষণ
যখন ছোটোবেলায় মামাবাড়ি যেতুম, মানে উড়িষ্যায়, আমার মামারা প্রবাসী বাঙালি, সেখানে রাস্তায় কারোর সঙ্গে দেখা হলেই, হয় "জুহার আঁগিয়া" বা "রাম রাম" এরকম কোনো একটা সম্ভাষণ আসত। বড়দের মধ্যেই অবশ্য। এর পর ভারতের নানা জায়গায় দেখেছি দেখা হলেই প্রথমে হয় "রাম রাম" নয় "রাধে রাধে" ইত্যাদি বলে সম্ভাষণের একটা প্রচলন আছে।
সাদা মেঘ
মাঠের মধ্যে দাঁড়িয়েই দেখল চাঁদের দুপাশে দুটো ডানা। নীল ডানা। সেই নীল ডানার নীল রঙ দিয়েই আকাশটা নীল। আর চাঁদের গা থেকে জোনাকির মত আলো বেরিয়ে বেরিয়ে হয়েছে তারা। এত তারা। আঙুলের কড়ে গোনা যায় না। এমনকি খাতাতেও লিখে শেষ করা যায় না।
সত্যের জোর
সত্যের উপর ভালোবাসা নেই অথচ দেশের উপর, ধর্মের উপর, স্বজাতির উপর ভালোবাসা আছে যারা বলে, তারা আদতে মিথ্যাই বলে। সুচারু রূপে বলে।
সব গোল্লা
গ্রীষ্মকাল। প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। হাওড়ার সালকিয়ায় থাকি তখন। ঘিঞ্জি শহর। ছাদে সবাই শুয়েছি। গরমকালে তখন তেমনই শোয়া হত। অনেক রাত। আমার ঘুম আসছে না। পাশে সবাই ঘুমাচ্ছে। মাঝে মাঝে হাওয়া দিচ্ছে আর সামনের অশ্বত্থ গাছের পাতাগুলো হাততালি দেওয়ার মত আওয়াজ করে উঠছে। আকাশে চাঁদ। ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘের দল ভেসে যাচ্ছে। অল্পক্ষণের জ
সাধারণ বুদ্ধি
সব কবিতার লাইন সত্যি হতে নেই
আমি ঘরে ঢুকতেই
ছেলেটার মা আবার ডুকরে কেঁদে উঠলেন।
"বারবার অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছেন, আপনি একটু পাশে বসুন"
কেউ একজন পাশ থেকে বললেন।
"ছেলেটা আমার কোলেই মাথা দিয়ে বলল স্যার, মা আমি বিষ খেয়েছি"...
সাড়া দাও
গোঁসাই বাগানে বসে। ফুলের বাগান। একতারায় সুর ওঠে। গোঁসাই ডোবে, মাঝে মাঝে চোখ খুলে তাকায়। চারদিকে দেখে। আবার ডোবে।
সেজে এলো আমের পল্লব
বামুনদের বাগানে কাকভোরে যখন নাপিতদের নধর ছাগলটা ঢুকলো, কেউ খেয়াল করেনি। প্রমাদ গুনেছিল লতাগাছটা
সত্য
উত্তর পেল না।
কারণ মনের মত উত্তর সে খুঁজে পেল না। ...
সত্য আর বিজ্ঞান
...
সোশ্যাল মিডিয়া
...
সেমিকোলন আর দীর্ঘশ্বাস
এই তো
একের পর এক সহ্য করে যাচ্ছি সব
বর্ষা বসন্ত গ্রীষ্ম শীত
এই তো
একের পর এক সহ্য করে যাচ্ছি সব
প্রেম, অপ্রেম, ঈর্ষা, অপমান, শোক
এই তো
সব সহ্য হয়ে যাচ্ছে
কপটতা, ছলনা, ষড়যন্ত্র, প্রতারণা
এই তো
সহ্য হয়ে গেল দেখো
সেই ভিখারিটা
কোন প্ল্যাটফর্মে বসলে বেশি ভিক্ষা পাবে
ঠিক করতে না পেরে
যে ভিখারিটা প্রথমে জ্যোতিষী
তারপর ঈশ্বরের কাছে গিয়েছিল
...
সব ব্যাটাকে চিবিয়ে খাব
সম্রাট অশোক, শিবাজী থেকে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল কেউ বেঁচে নেই জেনে সজনীকান্ত ডাক ছেড়ে কাঁদতে শুরু করল। কেউ থামাতে পারে না। বাড়ির লোক, পাড়ার লোক, মিউনিসিপালিটির চেয়ারম্যান কে না এলো। কিন্তু সজনীকান্ত কখনও হাউমাউ করে, কখনও ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদেই চলেছে।
স্বপ্ন
ছেলেরও স্বপ্ন ছিল সে অনেক বড় হবে
সমস্যা হল
বাবার স্বপ্নে ছেলে থাকলেও
ছেলের স্বপ্নে বাবা ছিল না ...
সংশয়
সে মানুষও খড়ের গাদায় হাঁটতে যায় না নিশ্চিন্তে
খালি পায়ে ...
সত্য হলে না
সত্যের ধারক হতে চাইলে
...
সেজে এলো আমের পল্লব
সমুদ্রতট ও মুক্তা
সমুদ্রের ধারে সবাই তো তার ক্রেতা না। কয়েকজন ক্রেতা।
সমুদ্র দেখতে আসা সবাই তো আর তার মুক্তামালায় উৎসাহী নয়। কেউ কেউ আসে উৎসুক। তারা সবাই তো
...
সঙ্গগুণে
রাত তো অনেক। গ্রামের ফাঁকা রাস্তা। মাথার উপরে বাঁকা একফালি চাঁদ। রাস্তার দু ধারে মাঠ। কেউ তার সঙ্গে ভালো করে কথা বলছে না। কানাই সাইকেল থেকে নামল। সাইকেলটা স্ট্যান্ড করে রাস্তার পাশে বসল। গলাটা অল্প অল্প ব্যথা করছে। তার বয়েস কত হল? সামনের অক্টোবরে বত্রিশে পড়বে। কিন্তু এখনও নিজের মন বসল না। গোটা জীবনটাই ছড়ানো। গুরু বলেন, কানাই জীবনে কিছু দুঃখ গ্রহণ করে নিতে হয়, কিছু দুঃখকে বরণ করে নিতে হয়। নইলে জীবন চাষবাসহীন ক্ষেতের মত পড়ে থাকে। সে অভিশাপ।
...
সম্পর্ক - মন্থন
স্বেদ
বিয়ের আগে আর পরে নিজেকে যখন দেখে, নিজেকে মনে হয় হরিদ্বারের গঙ্গা, আর কলকাতার গঙ্গা। না, শুচিতা-অশুচিতার ধার ধারেনি সন্ধ্যা কোনোদিন। তার শরীরে প্রথম খাবলা বসিয়েছিল তার ঠাকুর্দার ভাই, জগন্নাথ ভট্টাচার্য। সে-ই যখন পুজো-আচ্চাকে জীবিকা করে আশি বছর জীবন কাটিয়ে সজ্ঞানে মারা গেল, সন্ধ্যার বিশ্বাস হয়েছিল যে শুচি-অশুচি মানুষের। সে শুধু মেয়েমানুষের মনে ভগবানের ভয়ের শিকল পরিয়ে পোষ্য বানাবার কল বই আর কিছু নয়।
...
স্ব-আরোপিত অজ্ঞতা
ভালোবাসার মানুষ বলল, শুনে যদি কষ্ট পাও, তাই বলতে পারিনি।
এটা গপ্পো? গপ্পো বটে, আবার না-ও বটে।
মানুষ অ্যাডভ্যান্টেজ নেবেই। যত দেবে তত নেবে। এ স্বাভাবিক। শরীর, মন, সুযোগ-সুবিধা, অর্থ --- যা দেবে বিকিয়ে, তা-ই নিয়ে নেবে। হ্যাঁ, সব বিকিয়ে দিয়ে হাহুতাশ করে তো লাভ নেই। তবে ওই মিষ্টি কথায় বিষই জুটবে ভাগ্যে।
...
সিট ভেজানো লোকটা
প্রচণ্ড বৃষ্টি। রাস্তায় আটকে গাড়ি। জ্যাম।
দরজায় ধাক্কা দিল। দাদা, একটু খুলবেন? প্লিজ!
কাকভেজা মধ্যবয়েসী লোক একটা। গাড়িতে এসে বসল। সারা গা চুঁইয়ে জলে ভিজছে সিট।
সরি স্যার। আমায় হাস্পাতালে নাবিয়ে দেবেন একটু! আমার মেয়েটার অপারেশান! প্লিজ!
সে শুনতেই পেল না
সে সারাদিন ধরে রাতের প্রস্তুতি নিত। প্রদীপের সলতেগুলো পাকাতো বসে বসে। রোদ উঠলে গাছের তলায়, আর মেঘলা থাকলে উঠানে বসে। হারিকেনে তেল ভরত, কাঁচগুলো ঘষেমেজে রাখত ঝকঝকে।
সুর
কৃষ্ণ ঠুমরি থেকে শুরু করে কত যে চটুল গানে আছেন, সে এক আশ্চয্যি ব্যাপার। কৃষ্ণকে বাদ দিলে ভারতীয় সঙ্গীতের এক বিরাট অংশের উপাদান হারিয়ে যাবে। কি নিয়ে গান বাঁধা হবে? প্রেমকে কোন আয়নায় দেখা হবে? সে তো দেখা হবে বৃন্দাবনে, যমুনায়, মায় নদীয়াতেও।
সব ভালো আছে
আমি পাড়ায় পাড়ায় খোঁজ নিয়ে এলাম। ভয়?
সমে এসে মেলে
ফিরে আসার পর কি কি মনে থাকে?
মোড় আর গলি
গোছানো কিম্বা অগোছালো ঘর
সদ্য রান্না শেষ হওয়া রান্নাঘর
বাজারদোকান, যানজট
কিছু হাসি, কিছু ছলছল চোখ
কিছু উদাসীন গাল, কিছু অত্যুৎসাহী ঠোঁট
পাহাড়, নদী, সমুদ্র?
সূর্য ওঠে ভেসে
মৃত্যু নয়
মৃত্যুশোক বারবার ফিরে আসে
যে নেই
সে যে আমারও খানিকটা নিয়ে নেই
এ সত্যটা জলে ডোবা সিঁড়ির মত ভাসে
পুরোনো মুখের পাশে বসে নতুন মুখ
কুমোরপাড়ায় কি বিসর্জিত প্রতিমা ফিরে আসে?
সব আছে
সত্যানুরাগী
সে আর আরশোলা
লোকটা যেখানে যেত পকেটে করে আরশোলাটাকে নিয়ে যেত। আরশোলাটার বাঁদিকের দুটো ডানাই ভাঙা। ডান দিকের দুটো পা-ও ছিল না। ফলে না ভালো করে উড়তে পারত, না তো ভালো করে হাঁটতে পারত। সে লোকটার বুক পকেটে, প্যাণ্টের পকেটে করে ঘুরে বেড়াত। লোকটা আরশোলাটার নাম রেখেছিল গুমশুম।
সোনার পাথরবাটি
ঈশ্বর ঐশ্বর্য বিলাসী। ঈশ্বর যদি ভোট দিতেন অবশ্যই তিনি ক্যাপিটালিস্ট হতেন। কেন?
সত্যিকারের বোকা
একটা বাড়ি থেকে প্যাকেটটা দিল। বলল, আজ অষ্টমী, খেও ঠাকুমা।
সাগর সামাল দেওয়া লাঠি
এ কদিন যতবার রাস্তায় বেরোলাম চোখে পড়ল শুধু পুলিশ, পুলিশ আর পুলিশ। কলকাতায় যেমন চোখে পড়ল, তেমনই কালনা থেকে ফেরার সময় বিভিন্ন মণ্ডপের সামনে চোখে পড়ল পুলিশ আর পুলিশ।
সেন্টিমেন্ট
কিছু মানুষ ক্রিকেট খেলছে। আমরা মানুষ দেখছি না। আমরা দেশ দেখছি। আমরা দেখছি দুটো দেশ ক্রিকেট খেলছে। আবার তারাই যখন অন্যভাবে ক্রিকেট খেলছে, আমরা দেখছি দুটো রাজ্