সমুদ্রের ধারে দাঁড়িয়ে সে মুক্তার হার বিক্রি করে। সকাল থেকে রাত। সমুদ্রের ধারেই খায়। হাত মুখ ধোয়। স্নান করে। বাড়ি যায় রাতে। অনেক রাতে।
সমুদ্রের ধারে সবাই তো তার ক্রেতা না। কয়েকজন ক্রেতা।
সমুদ্র দেখতে আসা সবাই তো আর তার মুক্তামালায় উৎসাহী নয়। কেউ কেউ আসে উৎসুক। তারা সবাই তো ক্রেতা নয়।
সমুদ্রের ধারে রোজ হাজার হাজার লোক। ভিড়। সে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে। গল্প, হাসি, কান্না, ঝগড়া, বিষাদ। সব দেখে। এমনকি আত্মহত্যাও দেখেছে কয়েকবার। দুর্ঘটনার সাক্ষীও থেকেছে।
মুক্তার মালা সব বিক্রি হয় না কোনোদিন। কিছু বিক্রি হয়। বাকি সব বাড়ি নিয়ে যায়। আবার নিয়ে আসে ধুয়েমুছে পরেরদিন।
জ্যোৎস্নার রাত। অনেক রাত। ফেরেনি সে আজ। কেন জানি ইচ্ছা করেনি।
তন্দ্রা এসেছিল। হঠাৎ শুনল অপূর্ব কণ্ঠস্বর। এক অদ্ভুত মানুষ। সারা গা নীল। জল। বলল, আমি সমুদ্র। আমার বুকের সব মুক্তো দেবো তোমায়। তুমি বিনা পয়সায় দিও ছড়িয়ে। দেখো তো কি হয় তারপরে?
সে বলল, আচ্ছা।
পরের দিন রাশি রাশি মুক্তো দিল সে ছড়িয়ে সমুদ্রতটে। ঝাঁপিয়ে পড়ল মানুষ। মারামারি হল। রক্তারক্তি হল। খুনোখুনি হল। সব মুক্তো লুঠ হল।
আবার রাতে এলো সমুদ্র। বলল, মানুষ সুখী হয় কিসে?
সে বলল, জানি না।
সমুদ্র বলল, তুমি সুখী?
সে বলল, তাও জানি না।
সমুদ্র বলল, তুমি কি চাও?
সে বলল, শূন্যতা। আমার সবটুকু কাড়ো। দাও তোমার মত শূন্যতা।
সমুদ্র বলল, আমি শূন্য? আমি যে পূর্ণ!
সে বলল, আমায় ঠকিও না। তুমি মহাশূন্য বলেই তোমার বুকে এই অপরিসীম জল! এত এত নদীর ধারায় মিশেও হওনা পূর্ণ। সব রেখেছে শূন্যে স্থির করে। আমাকেও করো অমন।
সমুদ্র বলল, আমায় কি দেবে?
সে বাড়িয়ে দিল একটা মুক্তোমালা। বলল, নাও।
সমুদ্র বলল, এতো আমারই বুকের সৃষ্টি।
সে বলল, কিন্তু আমার সুখে গাঁথা। তুমি নাও। আমায় তোমার মহাশূন্যতা দাও।