Skip to main content

লোকটা যেখানে যেত পকেটে করে আরশোলাটাকে নিয়ে যেত। আরশোলাটার বাঁদিকের দুটো ডানাই ভাঙা। ডান দিকের দুটো পা-ও ছিল না। ফলে না ভালো করে উড়তে পারত, না তো ভালো করে হাঁটতে পারত। সে লোকটার বুক পকেটে, প্যাণ্টের পকেটে করে ঘুরে বেড়াত। লোকটা আরশোলাটার নাম রেখেছিল গুমশুম। 

     আরশোলাটা লোকটার পকেটে কবে থেকে আছে বলতে পারব না। মনে হয় লোকটাও মনে করতে পারবে না। আরশোলাটার গান শুনতে পেত। আরশোলাটার মন খারাপ হলে বুঝতে পারত। 

     একদিন আরশোলাটা বলল, সে আত্মহত্যা করতে চায়। জীবনের উপর সব আশাভরসা তার চলে গেছে। 

     লোকটা শুনে অবাকই হল। আশাভরসা তো তার অনেক আগেই চলে যাওয়ার কথা। হঠাৎ কি এমন হল যে সে আত্মহত্যা করতে চায়? 

     লোকটা ঘরের সব টিকটিকি তাড়িয়ে দিল। কে জানে কখন তাদের সামনে গিয়ে হাজির হয়। অনেক ভালো ভালো বই এনে তাকে পড়ে পড়ে শোনালো। অনেক ভালো ভালো মোটিভেশনাল স্পিচ শোনালো। এমনকি জগতে যত রকম দার্শনিক তত্ত্ব আছে, সব শোনালো। 

     বলল, জগতটা শূন্য। আরশোলা চুপ। 

     বলল, জগতটা সত্যে আধারিত। আরশোলা চুপ। 

     বলল, জগতটা অ্যাবসার্ড। আরশোলা চুপ। 

     বলল, জগতটা ভালোমন্দ মেশানো। আরশোলা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। 

     একদিন অনেক রাত। লোকটার হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল। পাশেই একটা মাজনের খাপে আরশোলাটা ঘুমাতো। সে নেই। খোঁজ খোঁজ। 

     পাওয়া গেল। ছাদে। জ্যোৎস্না এসে পড়েছে তার গায়ে। এমনিতে জৌলুস কিছু নেই। তবু বাদামী গা বেশ লাগছে দেখতে। 

     লোকটা কাছে গেল। অনেকক্ষণ দাঁড়ালো। আরশোলাটা নড়ে না। কেমন সন্দেহ হল। 

     ঠিক। মারা গেছে। সাধারণত মড়া আরশোলা চিৎ হয়ে পড়ে থাকে। কিন্তু এ দাঁড়িয়ে। শুঁড়দুটো পায়ের কাছে গোটানো। 

     লোকটা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে তার মৃতশরীরকে নিয়ে নীচে এলো। খবরের কাগজের স্তূপ বানিয়ে দাহ করল। 

     দুদিন পর থেকে একটা আশ্চর্য ঘটনা ঘটল। লোকটা যাকেই দেখে, দেখে তার গায়ে বা মাথায় একটা আরশোলা ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাকে স্থির থাকতে দিচ্ছে না। ডানা ভাঙা, পা ভাঙা, শরীর মোচড়ানো। অনেক রকম আরশোলা দেখতে দেখতে সারাটা দিন কেটে যায় তার। পার্কে গিয়ে বসে। স্টেশানে গিয়ে বসে। ফুটপাতে দাঁড়িয়ে থাকে। জেটিতে বসে থাকে। চারদিকে আরশোলা আর তাকে বয়ে বেড়ানো মানুষ। 

     অনেক রাত। ঘুম আসছে না। লোকটা ছাদে উঠল। আজ অমাবস্যা। তারার আলো ছাদে। লোকটা বসে থাকতে থাকতে হঠাৎ মনে হল তার পায়ের কাছে কিছু ঠেকছে। মাথাটা ঝুঁকিয়ে দেখল। কি অদ্ভুত তো! আরশোলাটার ভাঙা ডানা দুটো আর পা দুটো! কি অদ্ভুত! কোত্থেকে এলো! 

     লোকটা হাতে নিতেই চারদিকে সব বদলে যেতে শুরু করল। তারাগুলো তীর বেগে তার দিকে ছুটে আসতে শুরু করল। আকাশটা একটা গামলার মত হয়ে তাকে কোলে তুলে নিল। সে চীৎকার করে বলতে চেষ্টা করল, কি হচ্ছে এ সব? কি হচ্ছে?!

     এক খণ্ড মেঘ তার বুকে ঢুকে, এক পশলা বৃষ্টি দিয়ে পাঁজরগুলো ভিজিয়ে একটা লাল পাথর তুলে নিল। আর বলল, তুমি যে বাকি পা আর ডানা পেয়ে গেলে, এবার তোমার এখানে কোনো কাজ নেই! সবাই তাই-ই খুঁজছে। পেয়ে গেলেই সবাই চলে যাবে। এসো।