আমি ঘরে ঢুকতেই
ছেলেটার মা আবার ডুকরে কেঁদে উঠলেন।
"বারবার অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছেন, আপনি একটু পাশে বসুন"
কেউ একজন পাশ থেকে বললেন।
"ছেলেটা আমার কোলেই মাথা দিয়ে বলল স্যার, মা আমি বিষ খেয়েছি"...
ঘর ভর্তি লোক।
পাখা চলছে ফুল স্পিডে
দেওয়ালে মা কালীর ছবি
পাখার হাওয়ায় দোলা বাচ্চার মুখের ছবিওয়ালা ক্যালেন্ডার,
দরজার পাশে একটা ছোটো ছেলের ছবি,
আমার ছাত্রের।
ওটা কত বয়সের ছবি হবে?
পাঁচ, ছয়!
যে শরীরটা পোস্টমর্টেম হয়ে আসবে
তার বয়েস ষোলো।
আমার কান্না পাচ্ছে না
আমি অনেক কান্না আর গোঙানির মাঝে বিহ্বল হয়ে বসে।
টেবিলে রাখা ওর বই
কয়েকটা খাতা,
আলনায় রাখা
জামাকাপড়
সব চিনতে পারছি
জ্বলজ্বলে দুটো চোখ
আমার মাথা বুক ছিঁড়ে খাচ্ছে।
এবার ফিরব।
চটি পরতে গিয়ে চোখে পড়ল
ওর চটিদুটো র্যাকে রাখা,
আমার ক্লাসরুমের বাইরে রাখা থাকত অনেক চটির ভিড়ে।
শুধু মানুষই নশ্বর।
কয়েকদিন গেল।
একদিন ওর বাবা এলেন
হাতে একটা ডায়েরি,
যে মেয়েটাকে ভালোবাসত
তাকে লেখা সব কবিতা
তার "প্রিয় স্যারের হাতে দিয়ে গেলেন"।
আমি হাত পেতে নিয়ে বললাম,
"আচ্ছা"।
বাবার অভিমানী,
খাদের ধার ছুঁয়ে থাকা
চোখের দিকে
তাকিয়ে বলতে পারলাম না
"অত শক্তি নেই আমার,
নিয়ে যান"।
পাতার পর পাতা উল্টালাম
"ওদের ব্রেক-আপটা ও মেনে নিতে পারেনি স্যার।"
ওর কোনো এক বন্ধু বলেছিল
মনে পড়ল।
কিন্তু সেই নিয়ে
একটা লাইনও নেই কবিতায় ওর।
শুধু একটা লাইনে চোখ বিঁধে রইল
"তোকে না পেলে মরে যাব,
তুই দেখে নিস।"
ডায়েরিটা ফেরত দিয়ে এলাম
"থাকুক আপনাদের কাছে এ স্মৃতি হয়ে"।
ওর মা হাতদুটো জড়ো করে বললেন,
"আসবেন মাঝে মাঝে
আপনাকে কি চোখে যে দেখত"।
বিঁধল কথাটা বুকে,
"তবু একবার জানালি না আমায়!"
এ কথা কাকে বলব আজ?
ওর ভাঁজ করা
জামাকাপড়গুলো আলনায়
দোলের রঙ লাগা একটা জামা
আগেরদিন চোখে পড়েনি,
গত বসন্তের হবে..
ফিরতে ফিরতে
একটা কথাই মনে হল
"সব কবিতার লাইন সত্যি হতে নেই"।
(আজ বিশ্বকবিতা দিবসের এক কবিতা তোর জন্যেই থাক)