Skip to main content

সম্রাট অশোক, শিবাজী থেকে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল কেউ বেঁচে নেই জেনে সজনীকান্ত ডাক ছেড়ে কাঁদতে শুরু করল। কেউ থামাতে পারে না। বাড়ির লোক, পাড়ার লোক, মিউনিসিপালিটির চেয়ারম্যান কে না এলো। কিন্তু সজনীকান্ত কখনও হাউমাউ করে, কখনও ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদেই চলেছে।

আসলে সজনীকান্ত ছাত্র হিসাবে ভীষণ মেধাবী ছিল। বাড়ির লোকের চাপে সে মেধার সংক্রমণ এত দ্রুত ছড়াতে শুরু করেছিল যে সামনে যাই পেত অমনি বুঝে মুখস্থ করে একশা করত। অগত্যা তার বাবা মা তাকে একটা বড় লাইব্রেরীর আজীবন সদস্য করে দিয়ে ক্ষান্ত হল না শুধু, চব্বিশঘন্টা বারোমাস লাইব্রেরিতে থাকার অনুমতিপত্রও বার করে এনেছিল।

তো সজনীকান্ত সেই যে কিশোর বয়সে লাইব্রেরি ঢুকেছিল, এই বেরোলো প্রায় যৌবন শেষ করে। বেরিয়েই শোনে জগতে এত বড় বড় পরিবর্তন হয়ে গেছে। এতবড় ধাক্কা, তার একটা প্রতিক্রিয়া হবে না?

তো যা হোক। তাকে আবার পাঁজাকোলা করে সবাই লাইব্রেরিতে দিয়ে এলো। কারণ সে হাঁটতে পারে না। পায়ের বুড়ো আঙুল অবধি মেধা টনটন করে এমন তীব্র সংক্রমণ।

লোকে বলে একবার নাকি কোনো রমণী লাইব্রেরিতে ভুল করে ঢুকে পড়েছিল। চোখে পড়ে সজনীকান্তকে। সজনীকান্ত চোখ তুলে তার দিকে তাকিয়েই বলেছিল, তোমায় দেখে প্রকৃতি আমার শরীরে যে বিকার উৎপন্ন করেছে, সে নিতান্তই ছলনা, তুমি যাও, মেধাহীনের প্রবেশ আমার হৃদয়ে নেই। সেখানে জ্ঞানের প্রদীপ জ্বলে জ্বলে এমন কালি পড়েছে যে কোমল অনুভব নিয়ে ছেলেখেলা করা সময় আমার নাই। সে কালি আমার গর্ব। আদিরসের কালিমায় আমি লিপ্ত হতে চাই না, চাই না, চাই না।

সজনীকান্তের সে চীৎকারে লাইব্রেরির দেওয়ালগুলো এমন কেঁপে উঠেছিল যে প্রায় চিড় ধরার জোগাড়। যা হোক রমণী কোনো ক্রমে অজ্ঞান হতে হতে নিজেকে সামলে বার করে এনেছিল এই রক্ষে।

সজনীকান্ত লাইব্রেরিতে বসে। সবাই দূর থেকে দেখেছে সে কি করে। আবার কাঁদে কিনা। নাহ্, কান্নাকাটি নেই আর। এইবার? কি করবে?

দেখতে দেখতে সজনীকান্ত একটা বলের মত কুঁকড়ে গোল হয়ে গেল। হাত পা সব এমন হল, যে হাজারটা হাত পা। না না, যেন বড় কাঁকড়া একটা। মেধা সবটা খেয়েছে, একজন বলল ফিসফিস করে। গোল বলটা লাইব্রেরির এই তাক, সেই তাক ঘুরে বেড়াতে বেড়াতে বলল, একটা খাব, দুটো খাব, সব ব্যাটাকে চিবিয়ে খাব... দুনিয়া জুড়ে তাক লাগাব.... কিন্তু দুনিয়া জুড়ে মূর্খের দল... কাকেই বা মেধার খেল দেখাবো.... অমনি সজনীকান্ত গানের পদ বদলে নিল, একটা খাব, দুটো খাব সব ব্যাটাকে চিবিয়ে খাব... মূর্খ দুনিয়াকে পায়ের তলায় পিষে দেব...

সবাই ভয়ে পালালো। কিন্তু পালালে কি হবে, সবাই নাকি তারপর থেকেই মাঝে মাঝেই স্বপ্ন দেখে একটা হাজার হাত পা, মুখওয়ালা গোল বলের মত মেধা সারাটা জগত পায়ে পিষে দিচ্ছে, চিবিয়ে খাচ্ছে। রস গড়িয়ে সমুদ্র হচ্ছে। আর সেই সমুদ্রে আকাশের নীল আর বনের সবুজ মিশে কালো হয়ে যাচ্ছে। পাখির ডাকের মত ডাক ছেড়ে আকাশের নীল আর বনের সবুজ বলতে বলতে মিলিয়ে যাচ্ছে, বাঁচাও... বাঁচাও... বাঁচাও..

কিন্তু কে কাকে বাঁচাবে। সবার একটু একটু লোভ হচ্ছে তো মেধা পাওয়ার। সেই নিয়ে কি কালোবাজারিই না শুরু হয়েছে। কিন্তু কে ঠেকাবে বলো? তাই কালোবাজারি মেধা আর সাদাবাজারি মেধাকে আলাদা করতে না পেরে সব মিশিয়ে একটা নতুন মেধা বাজারে ছাড়া হয়েছে - স্মার্টবাজারি মেধা। সবাই বলছে সারাটা জগত নাকি সে-ই চালায় এখন।