বাজার
বাজারে তো আর জামার অভাব নেই। কত কায়দা, কত রঙ, কত বাহার! তা বলে কি সব জামা আমার মাপের হয়, না সব জামায় আমায় মানায়!?
এটা বুঝে গেলে, বাজার আর আমাকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায় না। বাজারের প্রয়োজন নিজের প্রয়োজন ফুরালেই ফুরায়।
এটা না বুঝলে বাজার আর কিছুতেই পিছু ছাড়ে না। আত্মার দেহ ছাড়ার সময় হয়ে যায়, কিন্তু দেহের আর বাজার ছাড়ার সময় হয় না। মন সাবধান!
কিচ্ছু হয় নি ক্ষতি
যখন সে গেলো
এমন ধুলো উড়লো,
ভাবলাম
বুঝি বা সব হারালাম
ধূলো ওড়ার পর
থিতিয়ে শান্ত হল
দেখি কিচ্ছু হয় নি ক্ষতি!
খানিক ধুলো নাকে চোখে গেল।
অন্তর্লীন
প্রকাশ
আবরণ
ভারী বাতাস। জলে ভারী। কালো মেঘের বুকে জমে থাকা বিদ্যুতের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে অবাক হয়! এত আলো! এত তেজ! তবু সে মেঘের বুকে মিলিয়ে থাকে কি করে? কেন সে থাকে?
সে বৃষ্টি হয়ে নীচে পড়ে। কত রঙের ফুল পৃথিবীর বুকে ফুটে। তার অবাক লাগে। এত রঙ! এত রূপ! তবু এই একরঙা সবুজ গাছগুলোর মধ্যে লুকিয়ে থাকে কি করে? কেন তারা থাকে?
সৃষ্টি
ভক্ত-
এত স্বাধীনতা কেন দিলে তুমি?
স্বেচ্ছাচারী পাতকী হলাম, স্বামী!
প্রভু-
নিজের ছায়ায় গড়েছি তোমায়
সার্থক আমি প্রেমেতে তোমার
বাঁধনেতে বাঁধা নই কোনোদিন আমি।
কোথায় zaবা
'ভাল কথা বলো।'
'মিথ্যা কথা বোলো না।'
হিংসা
দুর্বলের হিংসাই একমাত্র সম্বল আর অভিযোগই একমাত্র হাতিয়ার। এটা বেশ বুঝতে পারছি। কবে একটা গল্প পড়েছিলাম। একটা মশা হাতির পিঠে বসেছিল। তা আচমাকাই হাতির লেজের বাড়ি খেয়ে ঘায়েল হয়ে, ঘ্যান ঘ্যান শুরু করে, এটা কি ন্যায্য বিচার হল!
তারপর অনেক জল এনে হাতিটাকে ডুবিয়ে মারার চেষ্টাও করে মশা। হয় না।
তেমন কিছু না
আমি বললাম, কিছু কি হয়েছে?
ও বলল, না, তেমন কিছু না।
(ওর চোখ বলল, হয়েছে)
আমি বললাম, আচ্ছা।
(আমার চোখ বলল, হয়তো বুঝলাম)
ও বলল, হাসলে যে?
(ওর চোখে ফুটল যন্ত্রণা)
আমি বললাম, না এমনি।
(আমার চোখে জড়ালো স্নেহ)
ও বলল, আচ্ছা।
পরিত্যক্ত
তোমাকে বাগানে বেড়াতে নিয়ে গেছি দুবেলা
তোমার দু-হাত ধরে, আমি নিজে।
ভুলে গেছ।
তোমার মনে আছে শুধু সে কদিনের কথাই
যে কদিন তোমার মন খারাপ ছিল,
তোমার খোলা বাতাসের দরকার ছিল
যে দিনগুলোতে সবচেয়ে বেশি
কিন্তু দেখো, আমার তোমাকে দরকার ছিল
রোজ, দুবেলাই-
বাগানে, খোলা বাতাসে
হাল্কা জ্ঞান
জ্ঞান মানে, অনেক জানা না। জ্ঞান মানে অনেক কিছুই যে জানি না, এটা জানা। তখন থেকেই বাঁচা শুরু, নির্ভয়ে, সপ্রেমে।
নির্ভয়ে, কেন না ভয়ের মূল যে 'আমি' নামক গ্যাস বেলুন, তাতে 'ছিদ্র হইয়াছে'। সমস্ত গরম হাওয়া বেরিয়ে, সে অসীমের কোণে চুপসে পড়ে আমার দিকে জুলজুল চোখে তাকিয়ে আছে। তাই আর ভয় নাই। ওই যে ঠাকুর বলতেন না, 'আমি মলে ঘুচিবে জঞ্জাল', অনেকটা সেই আর কি।
বেরিয়ে এসো
রেগো না। রেগে লাভ নেই। বরং মুখ ফেরাও। চলন্ত রিকশার স্পোক গোনার চেষ্টা করো। বা নিজের বুকের জামাটা খামচে ধরে নিজেকে হেঁচড়ে বার করো, তবু রেগো না। রেগে লাভ নেই।
প্রত্যাশা রেখো না। লাভ নেই। ভুলে যাও। যেমন উনুনে আঁচ ধরিয়ে ধোঁয়াকে ভুলে যায়। কারোর চোখের দিকে বেশিক্ষণ তাকিও না। কুকুরটার ল্যাজটার দিকে তাকাও। হাজার চেষ্টাতেও সোজা হয় নি যেটা। হাত দুটো পকেটে ভরো। পেতো না।
কমা
দুটো দাঁড়ির মধ্যে কটা কমা থাকে?
দীর্ঘশ্বাসের সত্যিই কোনো প্রতিশব্দ হয়?
কিছু চিঠি আজও অলিখিত -
মনের খামে ভরা
সত্যি করে বলো
সব চিঠিই কি ডাকবাক্সে যায়?
বাইরে
পূজা শেষ না হতেই উঠলাম
কে কাঁদে?
নৈবেদ্যর থালা হাতে বাইরে এসে দাঁড়াই
কে ডাকে?
প্রদীপের আলো ধরি তুলে
কে তুমি?
প্রভু বললেন, আমি।
আয়
খোল দরজা
টান মেরে খোল
ওরে ভিতরে আয়
আসবি না?
তবে আমায় বাইরে ডাক
ডাক, ডাক, ডাক
বুক চিরে ফিনকি দিয়ে প্রাণের ফোয়ারা
মাটি ভিজিয়ে যাচ্ছে
গাছ লাগাবি না?
আয় আয় আয়
বীজ বুনেছি রে
সব মৃত আশাগুলো
গুটিয়ে গুটিয়ে
শুকিয়ে শুকিয়ে
বীজের পর বীজ জমিয়েছি
তোর মুখের দিকে তাকিয়ে বসে
কোথায় তুই ঝোড়ো বাতাস?
মা জানো
মা জানো তোমার শাড়ীগুলোতে
এখন শুধুই ন্যাপথলিনের গন্ধ
তোমার চটিটা প্লাস্টিকে মোড়ানো,
একটুও কাদা লেগে নেই তাতে
তোমার শাঁখা-পলা গুলোয়
সিঁদুরের দাগ ফিকে হয়েছে অনেক
অবলুপ্ত হোয়ো না
যাকে ভালোবাসো
তাকে তার কক্ষপথের থেকে সরিও না
তাকে ভালোবাসতে গিয়ে
নিজের কক্ষপথে থেকেও সরে যেও না
গতি কমিয়ে বাড়িয়ে
চলার ছন্দ মেলাও
পথ হারিও না।
হয় পাশাপাশি চলবে, না হয় দূরে দূরে
তবু, পথ হারিয়ে অবলুপ্ত হোয়ো না।
ছেঁড়া সুতো
রাতুল যেভাবে বাড়ি ফিরল সেই জানে। তুমুল কালবৈশাখী শুরু হল সন্ধ্যে থেকে। রাতুল তখন বাসে, শিয়ালদায় আসছে। রাতুল ডেলি প্যাসেঞ্জারী করছে তা প্রায় পাঁচ বছর হল। কি ঝড়, কি ঝড় রে বাবা! আগরপাড়ার কাছে ওভারহেডের তার ছিঁড়ল। তারপর হেঁটে, অটোতে, বাসে কোনরকমে যখন খড়দায় পৌঁছাল, তখন রাত সাড়ে আটটা। বাড়িতে ঢুকেই রাতুলের মা বললেন, শীগগিরি মাথায় জল ঢাল, না হলে ঠান্ডা লেগে যাবে।
পরিস্থিতি ও আমরা
যে, কোনো পরিস্থিতিতেই নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে না, সে নির্বোধ।
যে, সব পরিস্থিতিতেই দারুনভাবে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে, সে অত্যন্ত চালাক।
আমার লেখা
১
---
ইচ্ছা ছিল তোমার ঘরের ডাস্টবিনটা হব
ইচ্ছা ছিল তা না হোক, পাপোষখানা হব
তা না হলেও ঝাঁটা কিম্বা ন্যাতা?
হলাম কই?
নিম্নমানের কিছু কবিতাই ভরে রইল খাতা
যদি পারতাম একটা কাঁটা তুলতে
আর না হোক
সারা জীবনে একটা পা পারতে যদি
বিনা ব্যাথায় ফেলতে!
কবিতা তোমার সাথে
১
----
কবিতা,
তুমি আমার ঈশ্বর আর প্রেমিকার
মাঝখানে দাঁড়াও
আমি একছুটে -
হাতের কটা কাজ সেরে আসি
কিছু কথা আছে।
২
------
কবিতা,
তোমার গায়ের থেকে-
কিছু পারিজাতের রেণু ঝরে যাক
কিছু ধুলোবালি থাকুক গায়ে
না হলে তোমার হাত ধরতে সংকোচ হবে
আমি ময়লা মেখে যে!
সাদা-কালো
লোকটা খুব বিচার করত
মানুষগুলোকে চিরত
কেউ ঠিক না
খুব রেগে যায় লোকটা
কেউ খাঁটি না
সব বেটা স্বার্থপরের দল!
কথা কওয়ার লোক পাই কই বল?
ভিখারি আসলে ফিরিয়ে দেয়
সাহায্য চাইলে খেদিয়ে দেয়
সেলসম্যানকে ভেংচী দেয়
সব শালা মতলববাজের দল
নিয়তি
চোখের সামনে
এক
এক করে
সব শেষ হচ্ছে
নিরুপায় সাক্ষী আমি-
ও
পথ চেনে না আমায়
আমিও চিনি না তাকে
চলতে চলতে চিনছি তাকে
প্রতিটা বাঁকে বাঁকে
সময় চেনে না আমায়
আমিও চিনি না তাকে
পেয়ে হারিয়ে বুঝছি তাকে
আলো আঁধারের ফাঁকে
আমি চিনি না আমায়
আমায় চেনে না কে ও?
আমার বুকেই থাকে দেখি
চেনা চেনা, তবু অচেনা-ও!
অন্য বসন্তে
মনে ভাবছি কিসের এ ব্যাথা?
যে গেছে চলে, তার?
না যে আসেনি আজও তার?
নাকি যে এসেও আসেনি, তার?
ভ্রমর বলল, সে আছে
এ বসন্তে না, সে অন্য বসন্তে আছে
আমি বললাম, আছে!
তবে কি সে জানে
প্রতি বর্ষাকালে
যখন নদীর বুক ওথাল পাথাল
আমি ডুবিয়ে পা হাঁটু অবধি জলে
তীরে বসে নৌকা ভাসাই
পায় কি সে তার কূলে?
ভ্রমর বলল, পায় পায় পায়
যখন
তোমায় সবচেয়ে সুন্দর দেখায় তখন
যখন তোমার চোখে তোমায় দেখা যায়
তোমার মুখের কথা সত্যি হয় তখন
যখন প্রতিটা শব্দে তোমায় ছোঁয়া যায়
তোমায় সবচেয়ে ভালোবাসি তখন
যখন তোমার ভিতরে আমায় দেখা যায়
কুন্ঠিত
শুকনো বালিতে আছড়ে পড়ল ঢেউ
সন্ধ্যাকাশে ঘরে ফেরা পাখির ডানার আঁচড়
হাল্কা হাওয়ায় স্মৃতির পর্দার কেঁপে ওঠা
আনমনে ভুলে যাওয়া কথার কুন্ঠিত আসা
এক বিষন্ন ফেলে আসা সন্ধ্যের মুখোমুখি আমি
বললাম, কেমন আছো?
আমার সারা ঘরে অচেনা ফুলের চেনা গন্ধ ছড়িয়ে
তার উছলে উঠল চোখ
ভিজে হাতে না
ভেজা হাতে ছবি আঁকো কেন?
রঙগুলো সব ছড়িয়ে যায়!
দেখো সূর্য্যের গায়ে পড়েছে কালো রঙের ছিটে
বাচ্চাটার হাসিতে পড়েছে লাল রঙের দাগ
ওই যে গাছ এঁকেছো-
ওর সবুজ পাতায় হলুদ রঙের ছাপ
ছি ছি
মোছো তাড়াতাড়ি!
নতুন করে আঁকো
ভিজে হাতে না
হাত শুকিয়ে নাও আগে
ধর্ষণ
সন্ন্যাসীনী ধর্ষণ মর্মান্তিক না। বয়সটাও মর্মান্তিক না। মর্মান্তিক সমাজের অবক্ষয়টা। শরীরে ক্যান্সার হলে তার অনেক লক্ষণ ফুটে ওঠে। যেগুলো কদর্য, অসহনীয় হলেও মূল তো তারা নয়!
নতুন করে
রোজ কিছুটা রাস্তা একলা হেঁটে এসো
কারোর সাথে কথা না বলে
ফেরার জন্য তাড়া না রেখে
ফেরার পথকে রেখো
চলার পথে গোপনে।
না-রাখা কথা
যখন কেউ কথা দিয়ে না রাখে
কষ্ট হয়, সবার যেমন হয়,
এমনকি যে রাখেনি তারও হয়
মনে হয় তার পিছনে পিছনে হাঁটি
ছায়ার মত
সে থাকুক আপন মনে
আমি নোঙর তুললাম
আমি কি তোমার জন্য অপেক্ষা করব?
না, আর না
যে অপেক্ষা অপেক্ষাতেই শেষ হয়
আমি সে অপেক্ষার অপেক্ষায় থাকব না
আমি নোঙর খুললাম
তোমায় পেলাম না
না হোক কিছু দুর্যোগ পাক আমায়
কূল তুমি চিনতে, ধ্রুবতারাও তুমি জানতে
আমি কিছু চিনি না
আজ চেনার দরকারও নেই
চেনা সুখ থেকে অচেনা ঝড়
অনেক বেশি বাস্তব আমার কাছে
আমি ভাসলাম
দিগন্তরেখায়
তোমার চোখের দিকে তাকিয়ে
সমুদ্রকে পিছনে রেখে দাঁড়িয়ে আছি
বহু শতাব্দী ধরে
পায়ের শিরা ফেটে রক্ত পড়েছে বালিতে
ধুয়ে নিয়ে গেছে সমুদ্রে
মুক্ত এসেছে ঝিনুকের খামে
ফিরিয়ে দিয়েছি
শুধু তাকিয়ে থেকেছি তোমার চোখে
সে আছে বলে
ছল
ভেবেছিলাম তোমায় আমি দেব
আমার যা কিছু সব উজাড় করে
দিলাম তোমায় এমন কিছু
ভাবিও নি যা দিতে পারি
গর্বে মেতে ঘরে ফিরি
এমন দান পাও নি জীবন ভরে!
ঘরে এসে চমকে উঠি
সারা ঘরে একতিলও নেই স্থান
রাখি পায়ের পাতা
সবখানেতে তোমারই দানে ভরে!
শোনা- জানা
লোকটা কোনোদিন লঙ্কা খায় নি শুনেছিলো ঝাল
সে লঙ্কা দেখলেই বলত, উঃ কি ঝাল!
লোকটা কোনোদিন তেঁতুল খায় নি
শুনেছিল টক
সে তেঁতুল দেখলেই বলত, উঃ কি টক
লোকটা এই ভাবে করলা দেখলে বলত, ইস তেতো!
কুমড়ো দেখলে বলত, ইস মিস্টি!
তাকে একদিন বাজারে পাঠানো হল
বাজারে গিয়ে সে একসাথে সব দেখে ফেলল গুলিয়ে
তৈরী তো?
কে যেন বলে
বেশ জোরের সাথে বলে
আত্ম-বিশ্বাসের সাথে বলে
আমার কানে কানে বলে
তৈরী তো?
জানি
রাস্তাটা শেষ হবে আরেকটুখানি এগোলে, জানি
তবু হাঁটছি
তোমার হাতটা আরেকটু পরেই ছেড়ে যাবে, জানি
তবু আঙুলে আঙুল রাখছি
তোমায় বাঁধিনি আমি, নিজেকে বেঁধেছি, জানি
তবু কোথাও একটা বাঁধন খুঁজছি
আমার জীবন 'তবু' তে আটকে জানি
তবু চলার পথে 'কিন্তু' কে দূরে রাখছি
ধূলোর মত যারা
সবাইকেই একই রকম দেখতে
রিকশাওয়ালা, মিস্ত্রী, সব্জীওয়ালা
এরকম আরো অনেকের মুখগুলো
আলাদা করে চিনতে পারি না
তাকানো হয় না কখনো ভাল করে
লুঙ্গি পরা, কালো গায়ে গেঞ্জি অথবা জামায়
সবাই একই রকম
আমার মানিব্যাগের সাথেই সম্পর্ক ওদের
জখম
তোমার পাশে বসার জন্য
কত চেষ্টা করলাম।
জানতাম না-
পাশে তোমার অন্য কেউ তখন,
এখন ইরেজারে মুছতে মুছতে
খাতার পাতাই জখম।
এড়িয়ে
সব খারাপ কথার উত্তর দেওয়ার দরকার নেই। যখন কেউ বলছে, তখন তার দিকে না তাকিয়ে জানলা দিয়ে বাইরে চলে যাও। কান থাকুক কানে। মন থাকুক চোখের সাথে বাইরে- খেলুক, ঘুরুক, দেখুক, ছুটুক। তারপর ফিরে এসে দেখবে, যে বলছিল সে নেই। ব্যস হয়ে গেল।
কঠিন একটু। বাইরে যাওয়াটা না, যেতে চাওয়াটা। মনে হয় আমিও বলি। যেই বললে, অমনি ফাঁদে পা দিয়ে দিলে। আর ওড়া হল না।
স্বার্থপর
যে গাছটা জল না পেয়ে শুকিয়ে গেল
সে গাছটার তলায় রোজ দাঁড়াই
আজও দাঁড়িয়ে
শিকড়ের কথা ভুলে
গাছটার ডাল ফুল ফল পাতা খুঁজছি
মনে হয় ওরা আসছে
অশ্রুত শিকড়ের দীর্ঘশ্বাস
আমায় ছোঁয় না।
আগুন
বুকের ভিতর যে আগুন
তা নিভতে দিও না
দেখেছি যে ভিতরে পোড়ে
সে বাইরে পোড়ে না
তোমায় আমি চেয়েছিলাম
তোমায় আমি চেয়েছিলাম।
এই কথাটা ভুলতে গিয়ে-
কত কি না করলাম!
চেষ্টা করতে করতে
করতে করতে
নিজেকে ভুলে গেলাম
তবু কথাটা ভুলতে পারলাম না-
তোমায় আমি চেয়েছিলাম।
ধৈর্য্য
সব ছড়িয়ে যাক
আবার সাজিয়ে যাবে
যেখানের জিনিস
ফের ফিরে পাবে সেখানেই
সকাল
একাকার
যেদিন ঘরে আসলে-
আমার মনে ছিল কিছুটা শঙ্কা
ভেবেছিলাম সব দরজায় দেবে খিল
বলবে, "আজ থেকে এ ঘর শুধু আমাদের"
যেদিন ঘরে এলে
সেদিন শুধু দক্ষিণের দরজা ছিল খোলা
তুমি এসে পূব পশ্চিম উত্তরের দরজাও দিলে খুলে
বললে, "এ ঘর সবার আজ থেকে"
অবাক হয়ে বললাম, "তুমি?"
বললে, "আমি থাকব সবার মাঝে,
তোমায় ঘিরে, তোমায় আড়াল না করে"
মোহ
প্রভু বসি রাজসিংহাসনে
ভক্ত প্রবেশিল
হস্তে তার সহস্র ছিন্ন মস্তক, রুধি সিক্ত অসি
দিল প্রভু পায়ে
প্রভু শিহরিয়া উঠি জিজ্ঞাসিলেন, কি এ?!
ইচ্ছা
ইচ্ছাই শিব, ইচ্ছাই অশিব। যখন ভাবি তোমায় ভালোবাসব, একটা ফুল উপহার দেব, কি একটা কবিতা শোনাব- কোনো যুক্তি সাজাতে হয় না মাথার মধ্যে। খুব সহজেই আমার সারা সত্তা সাড়া দেয়, নিজের সাথে নিজের কোনো বিরোধ হয় না, হাল্কা লাগে।
বন্ধুর জন্য
আমি তোমার জন্য একটা নদী বানাবো
ছোট্ট নদী
যাতে হাঁটুজলের বেশি না থাকে
সারাদিন হাড়ভাঙা খাটুনি খেটে
আমার পাশে বোসো
পা ডুবিয়ো জলে
পা জলের তলার নুড়িগুলো ছুঁয়ে খেলবে
ধরো আকাশে চাঁদ উঠবে
গোটা না, একফালি
কয়েকটা তারা বেছে নেব, বড় আকাশ থেকে
আমাদের ছোটো আকাশটাতে
কালপুরুষ, সপ্তর্ষিমন্ডল আর শুকতারা
ধ্রুবতারা?
নির্ভার
শরীরটা যখন অসুস্থ থাকে, যখন বিছানা ছেড়ে দু-পা উঠে খাবার জলটা গড়িয়ে খেতে মাথা টলে, হাঁফ ধরে যায় - তখন বোঝা যায়, যে স্বাস্থ্যকে অনায়াসে লাভ করেছি তার সত্যিকারের মূল্য কতখানি। এত দৌড়-ঝাঁপ, বকবকানি, কীসের জোরে।অথচ সেই স্বাস্থ্যকে কত তুচ্ছ করে দেখি যখন ভাল থাকি তখন, মনেই থাকে না!
রূপ
আমার দুঃখগুলো কান্নাগুলো জমিয়ে
তোমার একটা রূপ গড়েছি
এখন সে রূপেই আমার সুখ
মানুষকে ভালোবেসে
একাই
তুমি প্রথম না
আমি অনেকগুলো গোলোকধাঁদা পেরিয়ে এসেছি
একাই
অনেক বসন্ত পেরিয়েছি শুধু শুকনো পাতা মাড়িয়েই
একাই
পিছন থেকে ছুরি মেরেছে বন্ধুর মত কেউ, ছুরিটা বার করেছি
একাই
যে কোনোদিন পাশে থাকে নি, সেও এসে বন্ধুত্বের জাল ফেলেছে
স্বার্থের সন্ধানে
সে জাল কেটে ক্ষত- বিক্ষত শরীরে বেরিয়ে এসেছি, একাই
বন্ধু, তুমিই প্রথম না
আনমনা
তুমি নিঃসন্দেহে ডেকেছিলে
তাই ব্যস্ততাতেও আনমনা হয়ে ভাবি
কে যেন ডেকেছিলো
অন্য কোথাও ছিল যেন যাওয়ার
তুমি নিঃসন্দেহে এসেছিলে
তাই বোধায় অন্যমনস্কতায় ভাবি
যাদের চিনি তারা তো নয়
খুব চেনা কার ছায়া আমার মনে?
সাদা রজনীগন্ধা
বাচ্চা মেয়েটার রজনীগন্ধার গন্ধে
গা গুলিয়ে আসছিল
ফুটপাতে সে মায়ের সাথে বসে
পিছনে বেচছে রজনীগন্ধা মালা
সন্ধ্যেবেলা
লোকেরা সব কিনছে বেছে বেছে
সারাদিন যার ভাত পড়েনি পেটে
রজনীগন্ধায় গা গুলায় তার
সাদা ভাতের দানা ভাসে চোখে
রজনীগন্ধার রঙ লেগে তার ঠোঁটে
আজ আকাশ চলো লুটি
রোজ রোজ এক পাড়া না
মাঝে মাঝে অন্য পাড়াও যেও
রোজ সকালেই পূবাকাশে না
মাঝে মধ্যে পশ্চিমাকাশেও চেও
আজ সকালে
না হয় খবরের কাগজ বাদ
ওতে শুধু ওদের খবর আছে
যারা থেকেও নেই কাছে
আজ সকালে
না হয় তাকেই মেসেজ করো
যাকে না ভেবেও রোজ ভাবো
যার কাছে রোজই ভাবো, যাবো
মিথ্যা কথা
তোমায় আমি চাই না
তুমি হেসে বললে, তাই?
আমি বললাম, তাই তাই তাই
তুমি বললে, বেশ তো
আমি তবে যাই যাই যাই
আমি বললাম,
না না না
তুমি বললে, না কেন?
আমি বললাম, ইচ্ছা তাই
যাব বললেই যেতে হবে?
যখন খুশী যাওয়া চাই!
শেষ বসন্ত
বসন্তকে বলেছিলাম, আমার কাছে এসো না। বড্ড বেশি শৌখিন তুমি, আমার সাথে বনবে না।
শুনল না। ষড়যন্ত্র করল আমার জানলার পাশের আমগাছটা। এক ঝাঁক মুকুল সাজিয়ে, গন্ধে মাতিয়ে, ওঁত পেতে বসেছিল আমারই জানলার পাশে।
জানতাম কই? ভোরবেলা জানলা খুলতেই হল অতর্কিতে আক্রমণ। বসন্ত এল ঘরে। বসল আমারই বিছানায়, আমার মুখোমুখি।
বললাম, কি চাও?
তবু বিশ্বাস করি
তবু বিশ্বাস করি
সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই
তবু বিশ্বাস করি
মানুষের উপর বিশ্বাস হারানো পাপ
তবু বিশ্বাস করি
নিজের বিশ্বাসের জন্য প্রাণ দেওয়া যায়
প্রাণ নেওয়া যায় না
তবু বিশ্বাস করি
মানুষের ধর্ম বইতে নেই, মানুষের ধর্ম প্রেমে
ভুল ভাঙা
তুমি এভাবে কেন আসো
দরজা জানলা ভেঙে, ছাদ ফুটো করে?
ভূমিকম্পের বুকও তোমায় দেখে কাঁপে
তোমায় বেঁধে রাখার দড়ি খুঁজেছি
এদেশ ওদেশ মন্দিরে গীর্জায় মসজিদে
মতে মতান্তরে
যেখানে বেঁচে থাকার পুঁজি খুঁজি
প্রতিদিনের মত সান্ধ্যভ্রমণে বেরিয়েছি। ফাঁকা একটা রাস্তা দিয়ে হাঁটছি এমন সময় দুজন ভদ্রমহিলার কথোপকথনের খন্ডাংশ কানে এসে পৌঁছাল -
"ভাই, যে কোনো পরিস্থিতিতেই মানুষ নিজের চলার রাস্তাটুকু করেই নেয়। তা সে যেমনই হোক। সংসারে কোনো অবস্থাতেই মানুষ নিজের চলাকে থামাতে পারে না।"
ঝড়
অভিমান আর প্রেম একসাথে দীঘিতে স্নানে গেল।