গভীর রাতে আমার বুকের ভিতর থেকে দুজন বেরিয়ে আসল।
একজনের চোখে কাজল, মুখে রঙ, কপালে কুমকুম, সারা শরীরে নানা আভরণ। সে কখনো চঞ্চল, কখনো উদাসীন, কখনো ক্রোধন্মত্তা, কখনো ঈর্ষার ভ্রুকুটি তার চোখে। আবার কখনো লজ্জা, কখনো কান্না, কখনো উদ্দাম হাসি তো কখনো মৃদু হাসি তার ঠোঁটে।
জিজ্ঞাসা করলাম, কে তুমি?
ঈষৎ হেসে, জটিল ভ্রুভঙ্গিমায় বললে, চিনতে পারলে না? আমি আবেগ...বলে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল।
অপরজনকে দেখলাম স্থির। পদ্মাসনে বসে। নিমীলিত নয়নে যেন বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের ছবি। তাকে ঘিরে এক নয়নমোহন জ্যোতিপুঞ্জ। ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি। সারা দেহের ভঙ্গিমায় এক উদাসীনতা মিশ্রিত মমতা।
তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম, কে আপনি?
তিনি স্থির শান্ত নয়নে আমার দিকে চাইলেন। মৌন রইলেন।
আকাশবাণী শুনলাম, ঘোষিত হল - ইনি অনুভুতি। এঁর হাতেই তোমার রথের লাগাম ধরাও, রথ লক্ষ্যে পৌঁছাবে ধীরে। আবেগের হাতে লাগাম দিও না। হবে লক্ষ্যভ্রষ্ট।
জিজ্ঞাসা করলাম, কি ভাবে চিনব? দুয়েরই তো বাস হৃদয়ে।
আকাশবাণী জলদগম্ভীর স্বরে বললেন, ইনি থাকেন হৃদি গুহায়, আবেগ থাকেন হৃদি উদ্যানে। শান্ত হলেই পাবে গুহায় প্রবেশের পথ। কল্যাণ হউক।
ঘুম ভেঙে গেল। বাইরে আলো ফুটেছে। দেখি চিরস্থির নীলাকাশে চঞ্চল রঙের মেলা।
(ছবিঃ সুমন দাস)