শরীরটা যখন অসুস্থ থাকে, যখন বিছানা ছেড়ে দু-পা উঠে খাবার জলটা গড়িয়ে খেতে মাথা টলে, হাঁফ ধরে যায় - তখন বোঝা যায়, যে স্বাস্থ্যকে অনায়াসে লাভ করেছি তার সত্যিকারের মূল্য কতখানি। এত দৌড়-ঝাঁপ, বকবকানি, কীসের জোরে।অথচ সেই স্বাস্থ্যকে কত তুচ্ছ করে দেখি যখন ভাল থাকি তখন, মনেই থাকে না!
সাথে সাথে এও মনে হয় চিরটাকাল ক্ষোভেই কাটালাম, 'এটা পেলাম কই? সেটা হল কই?' কত ক্ষোভ, দীর্ঘশ্বাস। একবারও ভেবে দেখেছি কি, যা পেয়েছি অনায়াসে তার যোগ্য ছিলাম কি?
যখন এ সংসার ছেড়ে চিরদিনের মত যাওয়ার সময় হবে তখন হঠাৎ করে চিরকালের তুচ্ছ করা জিনিসগুলো কি আমার চোখে অমূল্য, অসাধারণ লাগবে না?
আমার বাড়ির ছাদে পড়া জামগাছটার ছায়া, দেওয়ালে চলা পিঁপড়ের সারি, দুপুরবেলায় ফেরিওয়ালার ঘর্মাক্ত ক্লান্ত শরীরের হাঁক, একটা বাচ্চার অর্থহীন কথা, কোনো একজন তথাকথিত না-সুন্দরীর চোখের গভীর চাহনি - এরা আমার কাছে সীমাহীন সত্য, অকৃত্রিম বিস্ময় মনে হবে না? আমার খুব মনে হয়, হবে। এগুলোকে আবার করে দেখার জন্যই বাঁচতে ইচ্ছা করবে। অথচ তখন সময় থাকবে না আর হাতে। চিরকাল পাহাড়ের চূড়ায় ওঠার সাধে, পাহাড়ের পাদদেশে, যেখানে দাঁড়িয়ে আছি তার সৌন্দর্য্যকে ধর্তব্যের মধ্যেই আনলাম না কোনোদিন!
সর্বোপরি যে মানুষগুলোর অকুণ্ঠ ভালোবাসা ঘিরে রাখছে আমায়, যাদের অনেকটা, 'ওরা তো আছেই' বলে চোখ ফিরিয়ে রাখছি- তাদের দিকে হাতজোড় করে ফিরতেই হবে। বলতেই হবে তাঁকে যিনি ঘিরে রেখেছেন হাজার তুচ্ছতার আড়ালে নিজেকে - 'এই জীবনে ধন্য হলেম তোমায় ভালোবেসে।'
না হলে নির্ভার হয়ে ফেরা যাবে না যে!
সৌরভ ভট্টাচার্য
6 March 2015