বেহিসাবী
তোমার সামনে বসি আমি বেহিসাবী
ভক্তি নিয়ে
...
বিশ্বাস
কোথায় তুমি?
প্রদীপ, মশাল ব্যর্থ হয়ে ফিরে এল আমার সাথে
...
বিদ্যুৎ
জিজ্ঞাসা করলাম, কে করল?
কিছু বলল না
...
বন্ধন
তাতেই পাবে পথ।
কেউ বললেন কামিনী-কাঞ্চন করো ত্যাগ
তাতেই পাবে পথ।
...
বহুজন হিতায় বহুজন সুখায়
“তুমি ঠিক করে দেওয়ার কে?”
বাউল
মন বিষণ্ণ। মন পেলো না পারের খবর। আসা যাওয়া দেখছে সে জনমভর। প্রাণ আর জড়ের মধ্যে কোন চৈতন্যের বাস? কে বাসা করে মানুষের বুকে? কার ইঙ্গিতে বর্ষা বসন্ত নিয়ম করে আসে যায়? মন বোঝে তার গভীরে পাতাল সিঁড়ি, নামলে পরে নামতেই থাকে, নামতেই থাকে, নামতেই থাকে। চোখ কিসের সুখে আপনিই ভরে ওঠে, বুকের ভিতর দুধ ওথলানো, পাওয়া না-পাওয়ায় মেশা কান্না সুখ। কার মুখের আভাস ওই নীলাকাশে আবছা ভেসে ওঠে?
ব্রত
আমি ধ্রুবসত্য কি জানিনি
খুঁজিনিও কোনোদিন
আমার বুকের ভিতর থেকে
মিথ্যাকে স্বীকার করিনি কোনোদিন
যত রমনীয়, যত মনোহর
যত আরামের, যত কমনীয়
সে হোক
অসহ রাত, অসহ বিচ্ছেদ
অসহ বিভীষিকা, অসহ পথ
হয়েছে সহনীয় অবশেষে
বিশ্বাস
বোবা কথারা
বোবা মুখের বোবা কথারা
এখানে ওখানে হাঁটুগেড়ে বসে
মিথ্যাগুলোকে পথ ছেড়ে দেয়
সাজানো কথা বোঝে না সে
বৃষ্টি
বৃষ্টি
বিশ্বাস
বীরেনকাকু
বর্ষশেষ
মামু বলল, দেখো ডুবন্ত সূর্য.... কি দারুণ রঙ না মামু!
বাউল অন্তর্যামী
আমার আশেপাশের সব ফ্ল্যাটের সব্বাই পাক ছুটি
কেউ যাক দিঘা, কেউ পুরী। কেউ ভাইজ্যাগ, কাশ্মীর
এমনকি সুইজারল্যান্ড বা প্যারিস
যাক না, যেখানে খুশী যাক। হিংসা আজ ফাটা কোলবালিশ।
তুমি এসো সন্ধ্যেবেলা।
আমি সমস্ত চমক আগলে, বুকের হাতুড়িটাকে সামলে, বসাই চা।
তুমি বসার ঘরে বসা।
বড়দিন
ছেলেটা ঘুড়ি ওড়াচ্ছিল সকালবেলা। গ্রামের নাম বিলালপুর। শীত পড়েছে বেশ। ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি।
আচমকা ঘুড়িটা সোঁ সোঁ করে আকাশে উঠতে লাগল। ছেলেটা প্রথমটা ঘাবড়ে গেল। ভাবল ঝড় শুরু হল? না তো, আশেপাশে গাছগুলোর মাথা তো দুলছে না। সে যখন খুব ছোট তখন একবার ঝড়ে তাদের বাড়ির টিনের ছাদ উড়ে গিয়েছিল। খুব ভয় পেয়েছিল। সে কি কান্না তার! মনে হচ্ছিল তার বাবা মা সক্কলকে বুঝি উড়িয়ে নিয়ে যায়।
বেয়াদব ভালোবাসা
বদ্তমিজ দিল
সাদা শাড়ী পরা পৃথুলা মহিলা সন্ধ্যের অন্ধকারে ধীরে ধীরে হাঁটছেন। কৃষ্ণ মন্দিরের সামনে দাঁড়ালেন। মাথা নীচু করে হাতজোড় করে আঁচলটা বুকের কাছে এনে প্রণাম করলেন। চাবির গোছা ঝনঝন করে উঠল।
বাগান
সব বাগানের দরজায় তালা থাকে না
এমনকি সব বাগান পাঁচিলে ঘেরাও না
কিছু কিছু বাগান এমন আছে -
যেখানে ঘেঁটু ফুল সেজে
পারিজাত ফোটে গাছে
গেছি সে বাগানে বারেবারে সব ভুলে
মালির দু'হাত সুরভিত নানা ফুলে
সে বিনা দ্বিধায় দিতে পারে সব ফুল
তেমন তোমার নেওয়ার সাজি হলে
বালি
দু'হাতের থেকে সময়গুলো বালির মত ঝরে ঝরে পড়ে যাচ্ছে। বালি? না বালি তো তবু দু-এক কণা আটকে থাকে হাতের ভাঁজে। হাওয়ার মত উড়ে উড়ে যাচ্ছে সময়।
বিষাদ সায়রে
বিষাদ সায়রে এক বুক জলে দাঁড়িয়ে
মাথাটা ডোবালে ডোবাতেও পারি
তবু নীল আকাশের দিকে তাকিয়ে
বোঝো?
যখন তুমি সবার ‘হাঁ’-এ
‘হাঁ’ মিলিয়ে নিরাপদ
তখন তুমি সাদা মুখে
আয়নার সামনে যেও না
ভয় পাবে
তার চেয়ে রঙ মেখে এসো
নিজের গলার স্বর শুনে চমকে যাও
জানি
ব্যর্থ
বীজটাকে হাতে করেই বেড়ালো
না নিজে মিশল বীজে
না বীজকে মেশালো নিজেতে
না জন্মাল গাছ
না ফুটল ফুল
না ধরল ফল
শুকনো বীজের খোসা হাওয়ায় উড়ছে
সে খোসাগুলোর নাম দিয়ে দিয়ে
রাখছে গুদোম ঘরে জমিয়ে
যেন খোসা থেকেই জন্মাবে গাছ
বাঁক
বদল
স্যুটকেশটা হাতে করে রিকশায় উঠল
তারপর উঠল ট্রেনে
শুলো বাঙ্কে
দু'জোড়া সতর্ক চোখ থাকল চেয়ে -
যেন নীচে না পড়ে
বনসাই
একটা বটগাছের বনসাই
তার আকার এখন
একজন প্রমাণ লোকের হাঁটুর কাছাকাছি
তাতেই হল সুবিধা
গাছটা পেল না মাথা তুলতে
গাছটা পেল না মোটা গুঁড়ি বানাতে
গাছটা পেল না আকাশের নাগাল,
তার ডালপালা ছড়িয়ে
বিকার ও সম্পর্ক
মন আর শরীর। এ দুটোই অস্তিত্ব। ভাগাভাগি করে নেই, বেশ আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে।
কিন্তু এই দুটোতেই তো পরিচয় শেষ হয় না আমার। পরিচয় হয় সম্পর্কের সূত্রে। সম্পর্ক মনের সাথে, শরীরের সাথে। শুধু আমার না, আমার চারপাশের সাথেও। শুধু জীবন না, জড়ের সাথেও। বিভিন্ন সম্পর্কের সূত্রে পরতে পরতে গড়ে ওঠে আমার এই পরিচয়।
বিশ্বাস
বিশ্বাস চোখ রাঙিয়ে আনা যায় না, বিশ্বাস বাক চাতুরীতে টেকে না, বিশ্বাস বড় অঙ্কের সংখ্যা জন্ম দেয় না।
বিশ্বাস জন্মায় আরেকটা শুদ্ধ বিশ্বাস থেকে। যেমন প্রাণ থেকে প্রাণ, শিখা থেকে শিখা, তেমন বিশ্বাস থেকে বিশ্বাস।
বসন পরো মা
মা দূগ্গা, পরেরবার কুমোরটুলিতে আসার সময়, আগে থেকেই বক্ষবন্ধনীটা শ্বশুরবাড়ী থেকে নিয়ে নামিস মা। চিত্রগ্রাহকদের চিত্রের ঠেলায় তোকে যে রুপে দেখতে হচ্ছে... আর তো পারা যায় না মা। আদিরস, ভক্তিরসে মিশে ঘেঁটে একাকার দেখি গো চারদিক। বলি বসন পরাটুকু একটু ধৈর্য ধরলে না গো!
বারবার
বারবার উঠে দাঁড়াতেই তো চাইছি
মাটিতে পড়ে মাটিকেই ভর করে
অন্ধকারে পা ফেলছি,
আজ না, প্রতিদিন
এক পা, দু পা করে এগিয়ে এসেছি
তবু আজও ভয়
পরের পাটা পড়বে কোথায়?
বাণী
ঈশ্বরের কাছে ঈশ্বরকে না পেয়ে ফিরেছি অনেকবার
মানুষের মধ্যে পেয়েছি তাঁকে আচমকাই
মুগ্ধ হয়েছি, তৃপ্ত হয়েছি, হয়েছি পবিত্র
ব্যানার্জী বাড়ির বড়বউ
বিপত্তি
মানুষটা খুব কষ্টে সংসার চালিয়েছেন
এতটুকু অপচয় বরদাস্ত করেননি কোনোখানে
এখন বয়েস হয়েছে,
বুঝছেন, তার বাড়ির লোকও অপচয় পছন্দ করে না একরত্তি।
যত্তসব বাজে খরচ,
অনর্থক শ্বাস-প্রশ্বাসের মাশুল গোনা-
কি বিপত্তি!
বলে যাও
আমি সব ভুলে যাই
ওই চোখ দুটোর দিকে তাকিয়ে
সরিয়ে নেবে?
নাও
তবে,
কোনদিকে তাকিয়ে
তোমার চোখ দুটো ভুলি,
বলতে পারো?
পারলে, বলে যাও
বিষ
যখন তাকিয়েছিলে
বলেছিলাম, সুন্দর
তুমি বিষাক্ত কপটতায়
চুমু খেয়েছিলে
সে বিষ নামল ধীরে ধীরে
আমার সর্বাঙ্গ ছেয়ে,
বাধা দিইনি
বিষে আমার অধিকার
না তোমার আদরের মোহ
না বুঝেই ভালোবেসেছি তোমায়
বোঝার আগে
পথ হারালাম?
না তো!
বুঝলে কি করে?
বুঝতে চাওয়ার আগেই
ফেললাম ভালোবেসে
বুঝেছি তখন
এ পথ আমারই পথ
পেয়েছি অবশেষে