Skip to main content

দু'হাতের থেকে সময়গুলো বালির মত ঝরে ঝরে পড়ে যাচ্ছে। বালি? না বালি তো তবু দু-এক কণা আটকে থাকে হাতের ভাঁজে। হাওয়ার মত উড়ে উড়ে যাচ্ছে সময়।

যে লোকটা তেলেভাজা ভাজে গলির দোকানে। ওর বউটা গায়ে আগুন দিল। ছেলেটা মুম্বাইতে গেল। গেল তো গেল জম্মের মত গেল। ও তবু চপ ভাজে, সিঙ্গাড়া ভাজে, পিঁয়াজি ভাজে। সবার সাথে সেই একইরকমভাবে কথা বলে - আরে না দাদা চপ ঠাণ্ডা না.... আরে কালকের আলু হবে কেন..... ইস্ দাদা সব পিঁয়াজি শেষ...

আচ্ছা ও কি সময়কে আটকেছে ওর হাতের মুঠোয়? একইরকম থাকে কি করে?


না না পারেনি। ও বুকের মধ্যে জোর করে আটকে রেখেছে খানিক সময়কে বন্দী করে। যখন ও রাতের বেলা তালা লাগিয়ে অন্ধকারে ঝুঁকে পড়ে বাড়ির দিকে যায়, ওর মুখ দেখে মনে হয় মিত্তিরদের বাড়ির বাজ পড়া নারকেল গাছটার কথা। শুধু কি তাই? সেদিন কি করতে আমি ওই বস্তির ধার দিয়ে যাচ্ছিলাম। দেখি ওর টালির ঘরের ভিতর হালকা একটা আলো। খাটে মশারি টাঙানো। কোনোদিন খোলে না বোধায়। ও মেঝেতে বসে একটা থালায় ভাত ডাল মেখে খাচ্ছে। খাচ্ছে না। মুখের ভিতর পুরে চিবোচ্ছে, গিলছে... আবার মুখে ভাতের দলা দিয়ে চিবোচ্ছে, গিলছে। দেখো দেখো সরু গলার হাড়টা ঠেলে ভাতের দলাটা কেমন নামছে... যেন গলার কাছে আটকে গেলেও লোকটার কোনো আপত্তি থাকত না...


একে খাওয়া বলে? আমি যেন দেখিনি কাকে বলে খাওয়া?


চোখদুটো দেখে মনে হল সেই ঘোষদাদুর চোখদুটোর কথা, সেই যে গো মারা যাওয়ার পরেও কেমন খোলা ছিল... ওর চোখদুটো পুরো অমনি জানো। খাচ্ছিল বসে একা। একা একা, হ্যাঁ পুরোদস্তুর একা। ওর মাথার উপর কালীই হবে... হ্যাঁ কালী কি তারার ছবি। মনে হচ্ছিল নিই রাস্তা থেকে তুলে একটা আদলা ইঁট, মারি ওই ছবিতে। হ্যাঁ রে, এত কষ্ট, এত নিঃসঙ্গতা তোর কোন আক্কেলে তৈরি! 


লোকটার বুকের মধ্যে সেই বন্দী সময়টা মরণের অফিসে লাইন দিয়ে। আর্জি জানাবার জন্য, এসো আমার বকেয়া খাজনা মিটিয়ে ছুটি দাও! 


ও যখন ঘুমিয়ে পড়েছিল। আমি বাতাসের সাথে ওর মশারীর সামনে দাঁড়িয়েছিলাম। ও কাঁদে না। ও ভাবে না। ও বেঁচে নেই। ওর ঘরের দেওয়ালের থেকে বেশি ঝুল ওর বুকের ঘরে। 


তবু ও বাঁচবে। মানুষ তো... ফস্ করে কি করে মরে যায়...


সময় বয়ে চলেছে। নির্মম নিষ্ঠুরের মত বয়েই চলেছে। ও বাঁচতে বলছে। খেলতে বলছে। এ কি ভীষণ খেলা। ও বোঝে?