Skip to main content

নিস্প্রাণ

সংসারের দিকে পিছন ফিরে
সিংহাসনের দিকে মুখ করে
ওনার তিরিশটা বছর কাটল
স্বামী পূত্র পূত্রবধূ পৌত্র সবাই আছে
শুধু উনি থাকলেন না
এত বছর ধরে উনি এত বড় সংসারের
দিকে পিছন ফিরেই কাটালেন
থেকেও না থেকে

সেদিন রাস্তায় যেতে যেতে আবার চোখ পড়ল
ওনার গারদ ঢাকা শীর্ণ শরীর
সিংহাসনের দিকে ফেরা
আনন্দহীন শুকনো মুখে বন্ধ দুটো চোখ

সারাদিন


আমার ঘরের উত্তরের জানলাটা খুললে
উত্তাল সমুদ্র, সেদিকটা আমি রাতের বেলায় খুলি

আমার ঘরের দক্ষিণের জানলা খুললে রুক্ষ
পাথর পাহাড়, সেদিকটা আমি দুপুরবেলায় খুলি

আমার ঘরের পূবের জানলা খুললে 
আবর্জনার স্তূপ, সেদিকটাও মাঝে মাঝে খুলি

আমার ঘরের পশ্চিমের জানলা খুললে
ধূ ধূ মরুভূমি, সেদিকটা আমি রাতদিন খোলা রাখি,

প্রার্থনা - ৩০ শে জানুয়ারী

আমায় যেভাবেই হোক
মানুষের পাশে থাকতে দাও
হাত ধরার হাত দাও
না বলতে পারা চোখের কোণে আটকে থাকা
কথাগুলো বুঝিয়ে দাও
আমার চোখে ওদের চোখের জলগুলো লুকিয়ে এনে ভরে দাও
আমার বুকে ওদের বুক থেকে কাঁটাগুলো তুলে গেঁথে দাও
কোনো কাজে না লাগি যদি
আমার সারা শরীরে ধুলোবালি আবর্জনা
ভরে দাও পাপোষের মত
তবু আমায় মানুষের পাশে থাকতে দাও!

আবদার

কথা বলার দরকার নেই
একটু বসতে তো পারিস
ভাল লাগে তো সব কিছু তা হলেই
ঝুল নোংরা লাগে না
ধূলোতে অসুবিধা লাগে না
আঁচের ধোঁয়ায় চোখ তো জ্বলে, রাগ হয় না
শুধু তুই পাশে বসলেই

নিজের জন্য

সারাদিনে অন্তত একটা জানলা নিজের জন্য খুলো
যে আকাশটা দেখতে চেয়েছিলে, পুরোটা না হোক তার খন্ডাংশই দেখো
সে জানলা দিয়ে একটু বাতাস আসুক
আর আসুক কিছুটা আলো

কিছু ধুলো আসুক না হয় ঝরাপাতা নিয়ে
কিছু অবসর হঠাৎ আসুক
বুকের ভিতর অচেনা পথ দিয়ে

জেনে গেছে?

রাস্তার ধারে চাদরে ঢাকা একটা আস্ত মানুষ
ঘুমাচ্ছে
একটা কুকুর শুঁকে দেখে গেল, বেঁচে আছে!
একটা মানুষ (ভাল পোশাক পরা) লাথি মেরে বলল, বেঁচে আছে শালা!
কিছুটা দূরে কল থেকে, ভাঙা কানা উঁচু থালায় জল ভরে তার বাচ্চা মেয়ে
কয়েকটা যমদূতের মত গাড়ি ডিঙিয়ে লোকটার পাশে এসে বলল, বাবা ছাতু মাখ্

ভেংচী

যার কাছে ভালবাসা চেয়েছিল মানুষটা
সে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানিয়েছিল

যার কাছে একটা চুম্বন আর একটা গোলাপ চেয়েছিল
সে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়েছিল

এখন আর 'ধন্যবাদ' আর 'কৃতজ্ঞতা' শব্দদুটো সহ্য করতে পারে না লোকটা
শব্দদুটো বড্ড ভেঙ্গায় তাকে

কে তুমি?

একটা হারানো বিকাল আমার ছাদে এসে দাঁড়াল
একটা কাক আর একটা বুনোফুলের গন্ধ নিয়ে
আমার সামনে দাঁড়িয়েই থাকল
নাছোড়বান্দা সেলসম্যানের মত
যতক্ষণ না পুরোনো, রঙ চটা, জং ধরা তালাটা খুললাম

আমার বন্ধুরা


আমার বন্ধুরা মাথা ঘামায় না
আমি কি পারি তা নিয়ে
তারা জানে, জানে শুধু না
হাড়ে মজ্জায় জানে, আমি কি কি পারি না
সেগুলোকে তারা এমন ভাবে ঢেকে রাখে,
যেন আমিই পৃথিবীর সবচেয়ে নিখুঁত মানুষটা
অথচ আমি জানি, বেশ জানি
ওদের মত হাড়ে মজ্জায় শুধু না
শিরায় ধমনীতে জানি
ওরা না থাকলে আমি জীবনে অনেকগুলো
সূর্যোদয়ই দেখতে পেতাম না

সরে যেও না


সরে যেও না
তুমি সরে গেলে
ফুসফুসে অক্সিজেন এসে ফিরে যাবে
বুকের সাথে মিশবে না

শপথ

শপথ করবে যদি করো
কোনো বইয়ে হাত রেখে না
কোন গত মানুষের নামে না
এমনকি ঈশ্বরের নামেও না
শপথ কর নিজের বুকে হাত রেখে
যেখানে হাত রাখলে সমুদ্রের গর্জন শোনা যায়
যেখানে হাত রাখলে আগ্নেয়গিরির উত্তাপ পাওয়া যায়
যেখানে হাত রাখলে ঝড়ের বাতাস ছোঁয়া যায়

বুকের ওপর রাখো হাত
আর বলো তোমার শপথবাক্য
যে বাক্যের মরণ আবীরে রাঙা হয় জীবনের মুখ, পরমানন্দে

নোঙর খুলে

জীবনটাকে পুকুর ভেবে ঝাঁপ দিয়েছিলাম
ঝাঁপ দিয়ে বুঝলাম, কি ভুল করেছিলাম
এ যে বর্ষার উত্তাল সমুদ্র
যাতে সুখের নোঙর ফেলতে চেয়েছিলাম
সে নোঙরে একা আমিই গেলাম আটকে
বুঝতে পারিনি
ঢেউ এর পরে ঢেউ এর চাবুক খেয়েছি শুধু
ভাসিনি

এখন আর নোঙর ফেলি? - পাগল!

সাঁতার শিখে গেছি
তাই নোঙরও লাগে না, হাল-পালও লাগে না,

তিনটি কবিতা


==
অনেক কিছু বদলে গেছে
কিছুটা পাল্টেছি আমি
কিছুটা পাল্টেছো তুমি
আর কিছুটা পাল্টেছে সময়



==
গাছের শিকড় কি বুঝতে পারে
কখন বসন্ত এলো?
সে জানে বর্ষাকে
যখন সে পায় মাটির সোঁদা গন্ধ তার সারা গায়ে

ঘুমায় নি এখনো


আমার কান্নাগুলো এখনো জেগে আছে
ওরা ঘুমায় নি
কাছে গেলেই আমার কাঁধে হাত রেখে
জিজ্ঞাসা করে, কিছু বলবে?
আমি বলতে তো চাই অনেক কিছু
একটু হাসার চেষ্টা করি ওদের মুখের দিকে তাকিয়ে
তবু চোখ গড়িয়ে নামে জল, ঠোঁটের হাসি ছুঁয়েই
ওরা বলে, আবার এসো, আমরা আছি চিরকাল, ভয় নেই আমরা ঘুমাবো না
সবাই ফিরে গেলে এসো কাছে
তুমি ক্লান্ত হয়ে শুয়ো আমাদের ঘেঁষে

দিও না

ওরা কাড়তে চাইছে
ছিনিয়ে নিতে চাইছে
সরিয়ে দিতে চাইছে

তুমি কি দেবে, ওদের-
কেড়ে নিতে?
ছিনিয়ে নিতে?
সরে যেতে?

তারা


যারা বিয়ের দিন অনেক সেজেগুজে হইহুল্লোড় করে গেল
তারা ডিভোর্সের দিন আসতে পারেনি
কারণ সেদিন তাদের আরেকটা বিয়ে বাড়ি ছিল

তবু তুমি

আমার মনের বার দুয়ারে কপাট দিলে
ভিতরে তুমি
দরজা এঁটে বাইরে এলে
পথে তুমি, ধুলোতে তুমি, আকাশে তুমি
দীঘির জলে তুমি, বটের ছায়ায় তুমি
চিলের চীৎকারে তুমি, দোয়েলের শিসে তুমি
রাতের আকাশে ধ্রুবতারায় তুমি
পাগল করা দক্ষিণের হাওয়ায় তুমি

আমি কি কোথাও নেই?

আমি আছি অপেক্ষায়
অনন্তকালের আকুল অপেক্ষায়
তোমার জন্য
তোমার সাথে মিশব বলে

লজ্জা

রাস্তায় দেখলাম অন্য মহিলা
সমস্ত যৌবন, দুই স্তন আর ক্ষীণ তনু
উন্মুক্ত করে প্রকাশ্য দিবালয়ে
পাগলী?
লোকে বলে তাই

রাস্তার চারিদিকে
ছুটন্ত ব্যস্ত বেহুঁশ মানুষ

পাগলীর দুহাত জোড়া ছেঁড়া কাপড়ের টুকরো
কাকে পরাবে?

ভেবেছিলাম বুদ্ধি বলবে-
কি নির্লজ্জ অবস্থা

অন্ধকারের আলোয়

সারাক্ষণ আলোর দিকে তাকিয়ে থাকো
যেখানে আলো নেই সেখানে আমি
আমায় দেখবে কি করে?
তুমি হাত বাড়াও শুধু, আমি ধরে নেব
আমি অন্ধকারেও দেখি
অন্ধকারেরও একটা আলো থাকে
যে আলোতে থাকে সে টের পায় না

উত্তর

অন্যকে প্রশ্ন করো
জানতে পারবে

নিজেকে প্রশ্ন করো
বুঝতে পারবে

সময়কে প্রশ্ন করে
          অপেক্ষা করো
উপলব্ধি করবে

বল্মীক

হাতের তালুতে অনেক ধুলো জমে তোমার
ঝেড়ে ফেলো এবার
আর কতদিন হাতদুটো পিছনে করে হাঁটবে?

যে বল্মীকে ছেয়েছিল বাল্মীকিকে
সে মাটি জমাতে পারো কি?

আর জানে বিসমিল্লাহ্‌

কিছু অকথিত কথা
কিছু আত্মভোলা ব্যাথা

কিছু কাছে থাকা দূর
কিছু বোবা কান্নার সুর

কিছু পোড়া চিঠির ছাই
কিছু পালক সুখের ঠাঁই

সানাই জানে
আর জানে বিসমিল্লাহ্‌

আমি-রা


নিজের সাথে দেখা করতে চেয়েছিলাম
দরজা খুলে দেখি অনেক লোক
জিজ্ঞাসা করলাম, তোমরা?!
ওরা একটা অন্ধকার দরজার দিকে ইঙ্গিত করল
সে দরজা দিয়ে ঢুকে দেখি আরো অনেকে দাঁড়িয়ে
আশ্চর্য! সবাইকেই খুব চেনা লাগলেও চিনতে পারছি না
কারা তোমরা? চীৎকার করে উঠলাম
হাজার কণ্ঠের ফিসফিসানি কানে এল-
আমরা তোমারই অতীতের এক একটা খন্ড
আমি বললাম, তবে আমি কে?

দ্বিমেরু


আদি কথা
----------
       বেলো যে মিথ্যা বলত তা নয়। মিথ্যাকে সত্যি ভেবে বিশ্বাস করার এক অদ্ভুত ক্ষমতা ছিল ওর মধ্যে। মিথ্যাকে সত্যি জেনে বিশ্বাস করা আর সত্যি মেনে বিশ্বাস করার মধ্যে পার্থক্য আছে। প্রথমটা অজ্ঞতা। দ্বিতীয়টা হয় দুর্বলতা, না হয় চালাকী।

চিরনূতন

তুমি বললে আমাদের ভালবাসা নাকি পুরোনো হয়ে গিয়েছে
কেমন খটকা লাগল শুনে
প্রেম কি কখনো হয় পুরোনো?

সারারাত ঘুমালাম না, মাথার মধ্যে প্রশ্নচিহ্নের বাড়ি
প্রেম কি কখনো হয় পুরোনো?

সকাল বেলা উঠে ছাদে আসলাম
ডিমের কুসুমের মত রঙ সূর্য্যের
মনে হল এ সূর্যোদয় কি পুরোনো?

লাল সিগন্যাল

সন্ধ্যেবেলা স্টেশানে দাঁড়িয়ে
প্ল্যাটফর্মের শেষে লাল সিগন্যালটা
                       একলা দাঁড়িয়ে
পিছনে একরাশ অন্ধকার নিয়ে

আড়াল রেখেছি বনফুলে

বুকের মধ্যে একটা আলপিন ফোটালে
জিজ্ঞাসা করলে, লাগছে?
বললাম, না

তারপর একটা বড় পেরেক গাঁথলে
                            পাঁজর চিরে
জিজ্ঞাসা করলে, লাগছে?
দাঁতে দাঁত চেপে বললাম, না তো!

উতলা

আমার খুব রাগ তোমার চোখের পাতার উপর
কেন তারা যখন তখন পড়ে?
আর যেখানে সেখানে ঝরে?

আমার খুব হিংসা তোমার ঠোঁটদুটোর ওপর
কেন নিজেদেরকে ছোঁয়
আর নিজেকে আদর করে?

আমার খুব ঈর্ষা তোমার পোশাকগুলোর ওপর
কেন তাদের সাথে এত আঁট তোমার?
আমায় পাগল করে ছাড়ে

আমার খুব লোভ তোমার গায়ের গন্ধের ওপর
কেন তারা আমার গায়েও নেই?
যে এতই উতলা করে?

সেই ঢের

আমার কথা তুই বুঝিস না,
এত নিশ্চিন্ত তাই তোকে নিয়ে
আমায় তো বুঝিস!

আমার কথার জালে আমি নিজেই থাকি জড়িয়ে,
তুই ছাড়া তোর প্রাণের আনন্দে
আমার ভাবনা পেরিয়ে আমায় ছুঁতে তো পারিস!

আমার গান, তাল, লয় কিছুই বুঝিস না,
মুখ্যু ঢেকি
কেন গাইতে চেয়েছিলাম, সেটা তো বুঝিস!

মোহভঙ্গ

কি মুগ্ধতা ছেয়েছিল তোমার চোখে!
তুমি ফেরার রাস্তা ছিলে ভুলে

তারপর?

তারপর যা হওয়ার তা হল
মুগ্ধতা রঙ হারাল
ফেরার রাস্তা নতুন রঙ পেল

ঝোড়ো বাতাস

ঝোড়ো বাতাসে কার কথা খুঁজিস মন?
ঘরের আনাচে-কানাচে কার গন্ধ চাস?
সকাল বেলায় দরজার নীচে
পড়ে থাকা খবরের কাগজ
তুলতে তুলতে রাস্তার দিকে কেন তাকাস?
কল থেকে জল পড়ার শব্দে, টিকটিকির ডাকে,
টয়লেটের ফ্ল্যাশের আওয়াজে, তোর পুরোনো
দিনের ছবি আটকে, জানি।

অভিযোগ


আমার অন্যমনস্কতাকে উদাসীনতা ভাবলে
ভাবলে তোমায় দিচ্ছি ফাঁকি এড়িয়ে গিয়ে
ভুল করছ
আমি ফাঁকিতে পড়েছি চিরটাকাল
ফাঁকি দিই নি কখনো
এড়িয়ে গেছি অভিযোগের পরামর্শ সাবধানে, উপেক্ষায়
নিজের সাথেই খেলেছি বাঘবন্দি খেলা
তবু অন্যের অভিযোগ থেকে পারিনি বাঁচতে
এই ভাল,
না হয় অভিযোগেই থাক যোগাযোগের সাঁকো

আশা


একজন মানুষ সারা জীবনে কটা বসন্ত পায়?
সে জানে না
তবু সে প্রত্যেক বসন্তে করে বর্ষার জন্য অপেক্ষা
প্রত্যেক বর্ষায় করে কাশের জন্য প্রতীক্ষা

সেই নদীটা

রাস্তার ধারে ধারে একটা বিষন্ন নদী
আমার চলা-ফেরার দিকে তাকিয়ে থাকে
                   অপলক
আমাদের দৃষ্টি বিনিময়ের মধ্যে থাকে 
             কিছু কথা লুকানো 
জানি সে কথাগুলো ওর বুকে নুড়ি হয়ে

Lunatics


We, few friends were returning from Puri. Down Puri Express of 8pm.
     We had reached the station quite early. Train was already waiting at platform.

O Lord


I  am not able to see you,
the world become visible through you.

I am not able to hear you,
I listen world's message through your whisper.

I am not able to understand you,
I can realize my bondage through your light.

I don't search you,
I search me within myself inside you.

মাঝে মাঝে

মাঝে মাঝে কৌটোটাকে উল্টিও
হয়তো হারিয়ে যাওয়া,
চাপা পড়ে যাওয়া এমন কিছু পেয়ে যেতে পারো
যা অনেকদিন ধরে খুঁজছিলে
হতে পারে সেদিন খুব দরকারী ছিল না

ভয় পাচ্ছ?
ভাবছ কেঁচো খুঁড়তে কেউটে বেরোবে?
তা কেন?
ছাইগাদায় অমূল্য রতনও তো থাকতে পারে!

দেখোই না কি হয়?
আর অন্যভাবে দেখতে গেলে
কেঁচোর থেকে কেউটেই ভাল
বাঁচার মত বাঁচা যাবে

স্বামীজি

তুমি যুক্ত করতে চেয়েছিলে
নিজের বৈশিষ্ট্য না হারিয়ে মেলাতে চেয়েছিলে
সব ধর্মকে বললে
মিলিত হও মানবধর্মে।
প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যকে বললে
মিলিত হও ধর্মে ও বিজ্ঞানে।
ধর্ম ও যুক্তিকে বললে
মিলিত হও হৃদয়ে ও মস্তিষ্কে।
ব্যষ্টি ও সমষ্টি জীবনকে বললে
মিলিত হও সত্যে ও সেবায়।
পুরাতন ও নূতনকে বললে
মিলিত হও উদারতা ও শ্রদ্ধায়।

হে প্রভু

আমি তোমায় দেখতে পাই না
তোমার ভিতর দিয়ে জগৎটাকে দেখি

আমি তোমায় শুনতে পাই না
তোমার শোনা দিয়ে ভুবন বার্তা শুনি

আমি তোমায় বুঝি না
তোমার আলোতে আমার বোঝা বুঝি

আমি তোমায় খুঁজি না
তোমার ভিতরে আমার আমিকেই খুঁজি

আমাতে তোমাতে অনন্তকাল আছি
পরমানন্দে আত্মময় নিতান্ত কাছাকাছি

বাসন্তীদেবী


     "গাও তো বাবা গোপাল, 'মানুষও হইয়া জনম লভিয়া, মানুষের করিলাম কি'.. কি বুঝলে বাবা? পৃথিবীতে এসে কাজের কাজ কিছু করতে হয় বুঝলে!" বলে তিনি গুনগুন করে গানটা গেয়ে উঠলেন।

কেন রে এই দুয়ারটুকু

মনে হয় মৃত্যু সবচেয়ে বেশী সার্বজনীন। সকাল বেলায় নিজের কাজে ধরাবাঁধা ছকে ব্যস্ত, এমন সময় একজন খবর দিল পাশের পাড়ার একজন মিস্ত্রী মই থেকে পড়ে মারা গেছেন। কয়েকদিন হাসপাতালে ভর্তিও ছিলেন নাকি। তার একটু পরেই খবর পেলাম কলকাতার খুব নামকরা একজন চিকিৎসকের বাচ্চা ছেলেটা ICU তে জীবন মরণের স্পর্শরেখায় লড়ছে।

প্রার্থনা

কল্পনাগুলো শুদ্ধ হোক
যেন সে সাদা ডানায় নীলাকাশে ওড়ে

ইচ্ছাগুলো নির্মল হোক
যেন স্বচ্ছ ধারায় ঝরণার মত ঝরে

চিন্তাগুলো মার্জিত হোক
যেন সে হৃদয়গুহায় প্রদীপ জ্বেলে রাখে

ভালাবাসাগুলো এক হোক
যেন সে না বেঁধে ভালবাসতে শেখে

ভিতরে এসেছি


বেঁধে রাখব তো বলিনি
বাঁধা পড়েছি
তোমায় চাইতে এসেছিলাম
নিজেকে নৈবেদ্য করে বেঁচেছি
তুমি পাশের পাড়ায় থাকো
নাকি সুদূর হিমালয়ে
একে তাকে প্রশ্ন করেছি
আমার দরজার কাছে
তোমার চরণচিহ্ন দেখে
এক দৌড়ে ভিতরে এসেছি

সরে বাঁচা


একটু সরে সরে বাঁচার অভ্যাস এখন
বেশি গায়ে গায়ে থাকলে উত্তাপ বাড়ে
বাঁকা চোরা গলিতেই পেয়েছি সোজা পথ
তর্ক যুক্তির বেড়াজাল টপকে মাঠে এখন।
কানে আঙুল দিয়ে ফাঁকা পেট বাচ্চাটার কান্না ভুলি না,
ফাঁকা পেটে আমারও বমি পায়।
দুটো হাত প্যান্টের পকেটে ভরে
নিজের কথা ভাবতে ভাবতে যারা অন্যের কথা শোনে
ওদের দুয়ো দিয়ে, ওদের পিছনের রাস্তায় নেমে গেছি,

নতুন

রোজই ভাবি, আর না
প্রেম করব অন্য কারোর সাথে

হয় কই?
রোজ সকালে তোমাকেই
         নতুন রকম লাগে

তাই হোক

আমি না ভালবাসলে যদি ভাল থাকো
তো থাকো
তবে এমন না হয় দেখো
নিজেকে ভালোবাসার ইচ্ছা হারিয়ে ফেলেছ

আমি না চাইলে, যদি সুখে থাকো
তো থাকো
তবে এমন না হয় দেখো
নিজেকেই আর চাইতে ইচ্ছে করছে না

আমি না হয় দূরেই থাকলাম
তবে নিজের থেকে দূরত্ব না হয় দেখো

মরণ সাক্ষী

আমি তোমায় অনন্তকাল চাই
বুকের মধ্যে এক সমুদ্র কান্না
দু'হাত দিয়ে তোমায় বুকে চেপে
হারাবার ভয় তবু নিঃশেষ হয় না

দু'চোখ তোমার মুখের দিকে চেয়ে
সূর্য্য চন্দ্র বালি ঘড়িতে আটকে
কথাগুলো বোবা ব্যাকুল চাওয়ায়
ঠোঁটের কোণে থরথরিয়ে কাঁপছে

অনর্থক

বিশ্বাস না হয়
কানে আঙুল দাও
দুচোখ ঢাকো হাতে
পায়ে শিকল লাগাও

দেখো, তবু তোমার হৃদয় চলছে
তুমি বেঁচে আছো আজও, এখনও
            বিশ্বাস করো!

PK

PK দেখলাম। হতবুদ্ধি হলাম। একজন ভিনগ্রহবাসীর চোখে ভারতবর্ষের প্রচলিত ধারণাগুলিকে বোঝার চেষ্টা। ভেবেছিলাম সিনেমাটি গভীর তাৎপর্য ও চিন্তাপ্রসূত হবে। হল বিপরীত।

ভুলিও না

পথ বদলাতে পারো
গতি বদলাতে পারো
দিশা বদলিও না

রামের শ্যামের যুক্তি দিয়ে
নিজেকে ভুলিও না

সামনে যেতে পারো
পিছনে সরতে পারো
চলা থামিও না

ছন্দ ভেঙে নতুন ছন্দ খুঁজো
গান হারিয়ে না

ওদিকে

নরহরিবাবু প্রায় তিরিশ বছর হল ইছাপুর থেকে ডেলিপ্যাসেঞ্জারী করছেন।ইদানীং একটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটছে। উনি ঠিক ঠাহর করে উঠতে পারছেন না, ঠিক কি হচ্ছে।
     উনি বাড়ি ফেরেন প্রায় রাত আটটার কাছাকাছি। স্টেশানে নেমেই কোনো একজন অপরিচিত মানুষের সাথে উনি কোনো পরিচিত মুখের আদল পান। শুধু তাই না, সেই পরিচিত মানুষের সাথে নরহরিবাবুর দেখা হবেই, সেদিন না হলে পরের দিন তো অবশ্যই।

তমোনাশ

শিষ্য দাঁড়ালেন গুরুর সামনে
অহংকারে পূর্ণ হৃদয় তার
গুরু নামালেন চোখ
শিষ্য হলেন গর্বিত
স্বয়ং গুরু ফেরান নিজ দৃষ্টিপাত!

একটা ঘটনা ও দুটো প্রশ্ন


---
মা হাসপাতালের বেডে শুয়ে, অর্ধ-চৈতন্য,
মহাপ্রস্থানের পথে, চিকিৎসা শাস্ত্রের বাইরে।
আমি বেডের ধারে গার্ড দেওয়া রেলিং-এ
কনুই রেখে, গালে হাত দিয়ে মায়ের দিকে
স্থির দৃষ্টিতে চেয়ে,
আগুন নেওয়ার আগে, দু'চোখ ভরে শুষে নিচ্ছি
মায়ের মুখ, হাত, পা।
হঠাৎ স্লিপ করে গেল কনুই,
মা অর্ধ-চেতনায় চমকে উঠলেন,
আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,

ভাঙা ঘুম

মা, যে দিন স্বপ্নে তুমি আসো
মনে হয় সে ঘুম হোক দীর্ঘজীবি
ভাঙা ঘুমকে জোড়া লাগাতে
আপ্রাণ করি চেষ্টা
বিছানায় নিজের সাথে করি যুদ্ধ-
যদি আরেকটু থাকতে পাই তোমার সাথে থাকতে।

হয় কই?
পাখির ডাক, হাল্কা রোদ, নানান কাজ-
আমার অলস বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে,
ক্লান্ত আমি ওদের বলি, উঠছি।

সেদিন

ছোটবেলায় পড়েছিলাম
বাচ্চাটা বলেছিল, "যেতে নাহি দিব"।

আজ ছোট্ট ভাগ্নে বলল, "যেতে তো হবেই"
এটা প্রজন্মের পার্থক্য নাকি বোধের অকাল বোধন?

সেটা সত্যিই দুর্দিন হবে
যেদিন একটা বাচ্চার বায়না হবে যুক্তিসম্মত।

মাটি

লাফিয়ে লাফিয়ে আকাশ ছোঁয়ার চেষ্টায় আছি
একবারও ফিরে দেখছি না,
প্রতিটা লাফে মাটির বুকে কি বাজছে!

মাটি যদি কাদা হয়ে আটকাতো?
আটকাবে না, সেটা জানি
সে তো সর্বংসহা!
তাই লাফাইও মাটিতে
মুখ থুবড়িয়ে পড়িও মাটিতেই

আলোর গন্ধ

  প্রাণানন্দবাবু রিট্যায়ারের পর পরই পাহাড়ে বেড়াতে গিয়েছিলেন। ফিরে ইস্তক ওনার মধ্যে উনি একটা বিশেষ পরিবর্তন খেয়াল করছেন। উনি এখন আলোর গন্ধ পান। প্রথম প্রথম ভাবতেন বুঝি অন্য কিছুর গন্ধের সাথে গুলিয়ে ফেলছেন। এখন দেখছেন, তা না। সকালবেলা সূর্য্যের আলো জানলা দিয়ে ওনার বিছানায় এসে পড়লেই উনি সারা ঘর শিউলির গন্ধ পান। জ্যোৎস্নারাতে ছাদে বসে থাকতে থাকতে জুঁই-এর গন্ধে বিভোর হয়ে ওঠে ওনার মন। সব গন

পাথেয়


যার মাথা রাখবার একটা কাঁধ আছে
সে ভাল আছে
যার হাসি দেখবার একটা মুখ আছে
সে বেঁচে আছে
যার ঘুম থেকে উঠবার আনন্দ আছে
সে সুখে আছে
যার দৃষ্টি ডোবানো দুটো চোখ আছে
সে মজে আছে
যার প্রণাম করবার দুখানা পা আছে
তার সব আছে


[শুভ নববর্ষ। অনেক শুভেচ্ছা আর শুভ কামনা রইল সবার জন্য। সাথে থাকি, সাথে চলি - এইটুকুই প্রার্থনা।]