১
---
মা হাসপাতালের বেডে শুয়ে, অর্ধ-চৈতন্য,
মহাপ্রস্থানের পথে, চিকিৎসা শাস্ত্রের বাইরে।
আমি বেডের ধারে গার্ড দেওয়া রেলিং-এ
কনুই রেখে, গালে হাত দিয়ে মায়ের দিকে
স্থির দৃষ্টিতে চেয়ে,
আগুন নেওয়ার আগে, দু'চোখ ভরে শুষে নিচ্ছি
মায়ের মুখ, হাত, পা।
হঠাৎ স্লিপ করে গেল কনুই,
মা অর্ধ-চেতনায় চমকে উঠলেন,
আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
"লাগেনি তো?"
বিশ্বাস করুন, আমি এক বর্ণ মিথ্যা বলছি না,
আমার সব যন্ত্রণার দিব্যি দিয়ে বলছি,
এটাই ঘটেছিল।
আমি আজও এর ব্যখ্যা খুঁজি অবচেতনে,
পাইনা, শুধু -
আমার সব ব্যাথায় আজও মায়ের চমকে ওঠা মুখ-
"লাগে নি তো"।
২
---
মায়ের জ্ঞান আসছে যাচ্ছে, ICU তে।
সকালবেলা, মা আমায় কাছে ডাকলেন
ইশারায়।
কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম।
আমায় ক্ষীণকণ্ঠে জিজ্ঞাসা করলেন,
"বাবু, আমি কি মারা যাচ্ছি, আমার গলা
শুকিয়ে আসছে কেন?"
আমি প্রস্তুত ছিলাম না মোটেই
এমন খাঁটি একটা সত্যি প্রশ্নের জন্য।
মায়ের চোখের থেকে চোখ সরিয়ে
কাঁচ ঠেলে দৃষ্টিটাকে বাইরে ছুঁড়ে দিলাম
ঝাপসা দৃষ্টিকে স্বচ্ছ করে, একগাল হেসে বললাম-
"ধুর পাগল!"
মাকে এত বড় মিথ্যাটা বলে ভাল লেগেছিল
সেই প্রথম।
৩
---
মা যেদিন যাবেন,
তার আগের দিন সকালবেলা।
আমার দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে
জিজ্ঞাসা করলেন-
"তুমি কে?"
আচ্ছন্ন দৃষ্টি
হা ঈশ্বর, কি উত্তর দেব এ প্রশ্নের?
নিজের নামটা উচ্চারণ করলাম
তাকিয়ে রইলেন,
অপরিচিত দৃষ্টি
খুব কষ্টের মধ্যেও সান্ত্বনা পেলাম-
এই ভাল
যিনি একদিনের জন্য বাইরে গেলে সজল চোখে
বিদায় দেন,
চিরকালের বিদায়ের মত কান্না ঈশ্বর তাঁকে দিতে পারেন নি
তাই চেনা যা কিছু, অচেনা হওয়াই ভাল।