পরোয়া করো না
তুমি এক ঝটকায় হাত সরিয়ে নিলে
বলতে পারতে লাগছে তোমার
যে ফুলগুলো বাসি,
সেগুলো ফেলার আগে
কেউ জিজ্ঞাসা করে না - ফেলব?
প্রিয় বইটা
প্রিয় বইটা হাতের নাগালে থাকলেই শান্তি, না হয় হলই না সারাদিন তার একটাও পাতা ওল্টাবার সময়। তবুও চোখের দেখাতেই মনের পাঠ, নীরব পাঠ।
প্রিয় মানুষটার বেলাতেও...নাই বা হল কথা বলার সময় সারাটা দিন। তবু থাক নীরব ছোঁয়া, চোখের ছোঁয়া....বিনা কথায় লক্ষ কথা বোনা..আকাশটার মত...
প্রশ্ন
প্রশ্ন করতে বারণ কোরো না
হারিয়ে যাবে
যেমন হারিয়ে গেছে
অনেক দেবতা
অনেক ধর্ম
সমাজের অনেক
তথাকথিত অভিভাবক
প্রশ্ন শুনতে ভয় পেয়ো না
মিলিয়ে যাবে অস্তিত্বের সংকটে
প্রাণের প্রাণ
প্রতিটা বাঁকে তুমি একা। প্রতিটা ক্ষতে তুমি মাটির প্রলেপ লাগিয়েছ একা। রক্তগুলো মাটির মধ্যে বানিয়েছে নতুন নতুন নদী। তারাও বয়ে চলেছে একা। তোমার চোখের প্রতি উন্মীলনে জাগে পিপাসা। তোমার চোখের প্রতি নিমীলনে আশ্রিত অপেক্ষা। তুমি জেনে গেছ, সব কুঁড়ি ফুল হয় না। সব ফুলে ফল হয় না। তবু তুমি গোধুলির রঙ গলা নদীতে যখন শেষ স্নান সেরে ওঠো, অস্তগামী সূর্যের কপালে দাও আশিস চুম্বন। তোমার ভেজা শরীরের জলের রেখায় ফোটে
প্রতিফলন
তুমি প্রতিফলন নাকি আমি?
মাঝে মাঝেই গুলিয়ে ফেলি
আমার আমিতে তুমি
নাকি তোমার আমিতে আমি
পাকচক্র
তুমি মোহঘূর্ণীর পাকচক্র নও। তুমি ভোগ্যও তো নও। নও তুমি ধুলোঝড়ের মত আচমকা আসা উত্তেজনা।
তুমি আমার একমাত্র শান্তি-সরোবর
আমার নগ্ন-আত্মার শেষ আশ্রয়স্থল
আমার প্রেম -
স্নিগ্ধ ভোরের শুকতারা
পূর্ণতা আর শূন্যতা
প্রশ্নজাল
"জীবের আত্যন্তিক মঙ্গল কিসে?".... "হ্যাঁ গো, কাল কি দুধে বেশি জল মিশিয়েছিলে নাকি ?"
দুটোই প্রশ্ন। প্রশ্ন কোথায় নেই? সেই গীতায় অর্জুনের প্রশ্ন... বাইবেলে যোহন, ম্যাথিউ ইত্যাদির প্রশ্ন... বুদ্ধকে আনন্দ, আম্রপালির প্রশ্ন... সক্রেটিসকে প্লেটোর প্রশ্ন... অধুনা কথামৃতে ঠাকুরকে স্বামীজি থেকে গিরিশের অবধি নানান প্রশ্ন।
পুরোনো বেণারসীর গায়ে
পুরোনো বেণারসীর গায়ে এখন শুধু ন্যাপথলিনের গন্ধ
চেনা কথাগুলোর শূন্য নীড়ে
মড়া কাঠখড় ছড়ানো
সিঁড়ির দরজাও বহুকাল আছে বন্ধ
প্রতীক্ষা
তোমার কোনো বাস্তব বোধ নেই।"
ঝিলিক কথাটা বলে ঝাঁট দিতে দিতে আড়চোখে একবার শুভায়ুকে দেখে নিল। শুভায়ু খবরের কাগজে ডুবে। মাথাটা না তুলেই বলল, হুঁ।
"কাল মুন্নীর স্কুল থেকে চিঠি দিয়েছে, ওদের এবারের সামার ভ্যাকেশানের ডেটটা কি কারণে যেন এগিয়ে এসেছে। রিজার্ভেশান করেছ?"
শুভায়ু চোখ তুলে বলল, বলোনি তো!
ঝিলিক ঝাঁঝিয়ে উঠল, বলিনি মানে? পরশু থেকে এই নিয়ে তিনবার বললাম।
পলি
১
----
অভ্যাসের পর অভ্যাস পলি পড়ে গেছে
মেয়েটার বিয়ের ষোলো বছর পর মনে হয়
শূন্য খাঁচায় দুটো মৃত শরীর বাসা বেঁধে আছে
তবু পলি সরিয়ে, পলি সরিয়ে যখন জাগে কারোর চোখ
মেয়েটা বাজার থেকে পলি কিনে আনে,
ভাঙা ডানাকে বলে - চোপ
প্রতিটা সূর্যাস্তের সাথে
পদচিহ্ন
চৌকাঠ পেরোলাম
বারান্দা পেরোলাম
উঠান পেরোলাম
রাস্তায় আসলাম
শুধু তোমার জন্য
শুনলাম তুমি ফিরে গেছো
অনেকক্ষণ ওই পাকুড় গাছটার তলায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে
তুমি শুনতে পাও নি?
আমি চৌকাঠ পেরোচ্ছিলাম
বারান্দা পেরোচ্ছিলাম
উঠান পেরোচ্ছিলাম
বোঝোনি, সে শুধু তোমারই জন্য?
প্রার্থনার মন্ত্র তাঁর
অফিস থেকে ফিরে লোকটা তার বাচ্চাকে কোলে নিয়ে আদর করতে লাগল। মুখে নানা অর্থহীন শব্দমালা। বাচ্চাটা কোলে খিলখিল করে হেসে উঠতে লাগল।
পাশের ঘর থেকে লোকটার বাবা শব্দগুলো শুনছিলেন। চশমাটা খুলে বিছানায় রেখে, খবরের কাগজটা পাশে মুড়ে, বালিশে হেলান দিয়ে আধা শুলেন। চোখ বোজা।
প্রতিদিন
প্রতিদিন সকালের গালে
একটা সুরের টিপ এঁকো
কাজলের মত
যেন সারাটা দিন
কোনো ভ্রুকুটির নজর না লাগে
প্রার্থনা
যতগুলো শ্বাস নিলাম বুক ভরে
ফিরিয়ে দিয়েছি কিছু কি তার?
জমিয়ে রাখিনি কি বুকের খাঁচায়
কিছু তার লুকিয়ে এখানে ওখানে?
যতগুলো মুহুর্ত পেলাম
ফিরিয়ে দিয়েছি কি সব তার?
লুকিয়ে রাখিনি কি কিছু তার
বুকের কোঁচড়ে অলস শ্যাওলা জড়িয়ে?
পঞ্চভূত
কেউ আগুনকে ভালোবাসে
পোড়ায় বলে
কেউ আগুনকে ভালোবাসে
উজ্বল বলে
তুমি কেন ভালোবেসেছো?
আদৌ বেসেছো কি?
পলাশ
পল্টুনামা
বাঁ দিকে, রাস্তা পেরিয়ে যার চায়ের দোকান
ওর নাম পাঁচু
বয়েস কত? বাহাত্তুরে ধরব ধরব করছে
ওর যে নাতি, বয়েস কত?
তা এই আশ্বিনে তেরোর কোল তো ছুঁচ্ছে
চায়ের দোকান, সেই তো চালায়
বুড়ো তো কেবল তামাকই খায়
হাই তোলে আর হরি হরি বলে
নাতি পল্টু কেটলি চাপায়,
তারই ফাঁকে বইটা খোলে
প্রয়োজন
সাম্যবাদ কি পুঁজিবাদ না, অবশেষে প্রয়োজনবাদ। আদর্শ, নীতি ইত্যাদির যুগ কোথাও একটা শেষের দিকে। এখন দেখতে হয় আদর্শ বা নীতি কতটা উচ্চ বা মহান না, কতটা ফলপ্রসূ। কারণ, চাই সুখ। আমার প্রয়োজন সুখ। শীতকালে লেপ, রুম হিটার। গরমকালে এসি, কুলার। সকালের চা থেকে রাতের ঘুম – সব আমার প্রয়োজন, আমার সুখ। মাঝে যা আসে সবের মূল সূত্র – সুখের আস্বাদ অথবা ভবিষ্যতের সুখের প্রতিশ্রুতি। আমার স্বপ্ন, আমার ইনভেস্টমেন্ট। আমা
পূর্ণ ও অংশ
একটা হাঙর সেদিন সমুদ্রের তলায় ভাসতে ভাসতে বলছিল, আমি সমুদ্র মানি না। আমি ডাঁয়ে বাঁয়ে উপরে নীচে সর্বত্র ঘুরে এসেছি ভায়া। সমুদ্র বলে কিছু নাই।
একটা মাছ সেদিন সমুদ্রের তলায় একটা মরা ঝিনুকের খোলে সমুদ্রের জলে সমুদ্রের জল রেখে বলছিল, এই আমার সমুদ্র। বাকি সবটা মিথ্যা!
একজন কিশোর সেদিন সমুদ্রের পাড়ে বসে একটা আধখানা ডাবের খোলায় সমুদ্রের জল ভরে খেলছিল।
পুরুষের বহুগামিতা
...
পরিধি
কেন্দ্রে নয় তো
পার্থক্যটা হয় পরিধিতে
ক'টা বৃত্তের পরিধি ছুঁয়ে গেল?
ক'টা বৃত্তের পরিধি ছুঁয়ে এলে?
অবশেষে কেন্দ্রটা যায় মিলিয়ে
পরিধিটা যায় রেখে
যুগ-যুগান্ত ধরে সে পরিধি মিলিয়ে চলে
প্রাচীন বর্ষা
রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়েছিল। বৃষ্টি পড়ছে সকাল থেকে। একটা ময়লা চাদর জড়িয়ে লোকটা সামনের বাসস্ট্যাণ্ডের দিকে তাকিয়ে। হাতে চায়ের ভাঁড়। তার খেয়াল নেই জল জমতে শুরু করেছে। পায়ের পাতা ডুবে গেছে ইতিমধ্যে। একটা ফাঁকা সিগারেটের প্যাকেট জলে ভাসতে ভা
প্রবল
প্রতিটা ধর্মের নিজস্ব মেনুকার্ড আছে। তাই রসনার ধার বোধের ধারের থেকে প্রবল।
প্রতিটা ধর্মের নিজস্ব কিছু বিধান আছে। তাই অনুকরণের মোহ চিন্তার পূণ্যের থেকে প্রবল।
প্রাণ-জল ব্যাখ্যা
ছাত্র বলল, সময় না হলে কিছু হয় না স্যার। সে আপনি যতই বলুন।
বললুম, বটে।
ছাত্র বলল, তা না তো কি? আচ্ছা আপনিই বলুন, নিউটন কি করে মাধ্যাকর্ষণ সূত্র আবিষ্কার করেছিল?
আপেল পড়ার গল্পটা আওড়ালাম।
পিচ
নতুন পিচ ঢালা রাস্তায় হাঁটতে নেই
রাস্তার দুপাশে লাল কাপড় দেওয়া থাকে,
দু'একজন তবু অবাধ্য হয়। অ-সভ্য হয়।
জানতাম। হাঁটে গোঁয়ারের মত।
পারতে না?
না হয় দাঁড়াতে আরেকটু
আমার চলার তো কোনো সময়সারণি নেই
নেই জোয়ার ভাঁটার মত আসা-যাওয়াও
না তো আছে উদয় অস্ত যাওয়ার মত আহ্নিক গতি
প্রেমকে ফানুস করে
প্রেমকে ফানুস করে আকাশে উড়িয়ে শান্তিতে আছি
পোড়ালে পোড়াক আকাশ
পুড়ে মরুক নিজে
আমার ঘরদোরে আগুন না লাগালেই বাঁচি
পাঞ্জাবীর ছেঁড়া বোতামঘর
থমকে থাকা সময়
...
পলাশ কথা ২০১৭
...
পলাশ-বরন
প্রাণ
হৃদয়ও আসলে মস্তিষ্ক - এ কথা জেনেও
হৃদয়কে হৃদয়েও অনুভব করি
একে রহস্য বলো, রহস্য
মায়া বলতে চাও, বলো..
তবু বুকের মধ্যে নড়াচড়াকেই বলব প্রাণ
জীবন্ত জীবাশ্ম হব কেন?
পরিচয়
ঠিক কোনদিকে কি ভাবে দাঁড়াব, বুঝতে পারছি না
ছবিটা না দেখা অবধি তো সেরকম কিছু মনে হয়নি
বেশ হাসি-ঠাট্টা-আমিষ-নিরামিশ কথাবার্তা হচ্ছিল
বিষয় - বন্ধুর মেয়ে দেখা পর্ব
প্রশ্রয়ের অপেক্ষায়
বাসি বিছানায়, ছাড়া জামা-কাপড়ে, আগোছালো ঘর-দোরে
আলসেমির শান্তিজল ছড়ানো
প্রশ্রয়ের অপেক্ষায়