Skip to main content

বাঁ দিকে, রাস্তা পেরিয়ে যার চায়ের দোকান
  ওর নাম পাঁচু
বয়েস কত? বাহাত্তুরে ধরব ধরব করছে

ওর যে নাতি, বয়েস কত?
  তা এই আশ্বিনে তেরোর কোল তো ছুঁচ্ছে

চায়ের দোকান, সেই তো চালায়
 বুড়ো তো কেবল তামাকই খায়
হাই তোলে আর হরি হরি বলে
  নাতি পল্টু কেটলি চাপায়,
    তারই ফাঁকে বইটা খোলে

ইস্কুলে যায়?
যায় বই কি
 অশিক্ষিত থাকবে নাকি!
স্কুলের মাইনে, পড়ার খরচ
 নেই আপত্তি,
বুড়োর তাতে খুবই গরজ

চলছিল সব ঠিকই বটে
 বিধাতার তা সইবে কেন?
দিলেন বাঁশ, বুড়োটা মেরে
 পুতুল খেলা সবই যেন

কি করে নাতি, পল্টু মশায়
  দোকান ইস্কুল কেমনে চালায়
পাড়ার খুড়ো জগৎ নন্দী
 তারে দিল জবর ফন্দী
ইস্কুলটা তুই দেখ না
  দোকান না হয় আমিই চালাই
পড়বি লিখবি চিন্তা কি তোর?
   আমি থাকতে কিসের বালাই?

বছরখানা যেতে না যেতে
  দোকান গেল কার যে হাতে
পার্টি অফিসের বসার ঘর
  দোকান গেল তার উদর

পল্টু কোথায় পল্টু কোথায়
  কেউ জানে না কোথায় পালায়
জানে রবি আর চন্দ্রমামা
  কাশীর গলিতে গল্প নামা

ওই যে পল্টু গেরুয়া গায়ে
  বাবা কি এক নিয়েছে পায়ে
পল্টু বলে হরি হরি
  এতেই পেটে ভাত ভরি

এও না সইল বিধাতার গো
  কি যে বজ্জাৎ সে অমুকের পো
পল্টুরে ধরে মারণরোগে
  গোঁসাই বলে, এরে গঙ্গা দে রে

বিধাতার কি লীলার গুঁতো
    পল্টু বাঁচল, শরীর হল পাকিয়ে সুতো
এমন সময় কোন নষ্টা মেয়ে
    পাড়ে এল গঙ্গা নেয়ে
পড়ল পল্টু সোহাগ ডোরে
    নিয়ে গেল তারে নিজের করে
মা বলে ডাক, ডাক না ওরে
  পল্টু প্রথম ডাকল মা রে!

দিন গেল গো, মাস গেল
   বছর বছর হয়ে গেল
পল্টু এখন জোয়ান মদ্দ
   লোকে যদিও বলে না ভদ্দ
বাজে পাড়ায় মানুষ হলি
  জাত ধম্ম সব খোয়ালি

পল্টু এসব নেয় না কানে
  শুধু কি এক প্রাণ যে টানে
কার যেন এক করাত সানাই
  শুনলে সে সুর মন আইচাই
মাকে বলে দে না কিনে
  এমন সানাই দে না এনে
বাজাই যদি প্রাণ হয় জল
  বিশ্বভুবন বাদবাকি ছল

মা বললেন, কে শেখাবে
  নীচ জাত তুই, মেরে খেদাবে
অমনি কেন মারবে গো মা
  সানাই কাঁদে যার
   তার প্রাণ কাঁদে না!

চলল পল্টু হাতেতে সানাই
  ওস্তাদজির কৃপাকণা চাই
ওস্তাদ বলে জাত কি তোমার?
  পল্টু বলে নষ্টা মা আমার
গঙ্গা থেকে নিল তুলে
  যমের দরজা গেল ভুলে

ওস্তাদ বলে, সানাই শিখবে?
  কি কারণ শুনি, কেন এ ইচ্ছে
পল্টু বলে, তোমার সানাই
  সেদিনও আমার কানে আসে নাই
প্রাণের রন্ধ্রে প্রতিশোধ স্পৃহা
   মেলে শতমুখ লোলজিহ্বা
  বুকের সকল রক্ত মাখিয়া
বেড়াতেছিল নৃত্য করিয়া
হেনকালে প্রভু তোমার সানাই
পশিল কর্ণে, খোদার দোহাই
যত পাপ মনে, যত কু বৃত্তি
এক নিমেষে হল সমাপ্তি
তুমি যদি এবে রাখো এ পরান
শিষ্য করিয়া দিয়ে পদে স্থান
তবে সেবি দেবী সারদা চরণ
  না হলে প্রাণ করি বিসর্জন

করুণা অশ্রু নমিত পরাণে
দু'হাতে তারে বুকে নিল টেনে
বহুদিন গেল, বহু গেল সাল
পল্টু এখন বড় দিকপাল
দিকে দিকে নাম, দিকে দিকে খ্যাতি
পণ্ডিত বলে করে ডাকাডাকি

কি হল সেদিন, বলি শোনো শোনো
সেই সে দলের কি উৎসব যেন
পল্টু এল সে পার্টির অফিসে
চায়ের দোকান? নেই তো। হাপিশ সে
পল্টু বসেছে সভা মাঝখানে
উৎসুক শ্রোতা, কি বাজাবে কে জানে
ধরল পল্টু দীপক রাগিণী
তাপেতে মাতল ক্রমে সে মেদিনী
আগুন লাগল পার্টির অফিসে
দাউ দাউ জ্বলে কিসের হুতাশে

গল্প এসব, ছাই কল্পনা?
হোক না, হোক না
তবু পুড়ুক না
কত পল্টু বাড়িছাড়া আজ
না হয় পড়ল মল্লারে বাজ
তবু কিছু মিটবে মাটিতে
উঠবে কিছু নতুন ভিতেতে
থামবে দীপক বাজবে সাহানা
নতুন যুগের দেখাবে নিশানা

Category