প্রতিটা বাঁকে তুমি একা। প্রতিটা ক্ষতে তুমি মাটির প্রলেপ লাগিয়েছ একা। রক্তগুলো মাটির মধ্যে বানিয়েছে নতুন নতুন নদী। তারাও বয়ে চলেছে একা। তোমার চোখের প্রতি উন্মীলনে জাগে পিপাসা। তোমার চোখের প্রতি নিমীলনে আশ্রিত অপেক্ষা। তুমি জেনে গেছ, সব কুঁড়ি ফুল হয় না। সব ফুলে ফল হয় না। তবু তুমি গোধুলির রঙ গলা নদীতে যখন শেষ স্নান সেরে ওঠো, অস্তগামী সূর্যের কপালে দাও আশিস চুম্বন। তোমার ভেজা শরীরের জলের রেখায় ফোটে সন্ধ্যা আকাশের তারার প্রতিফলন। তুমি ঘাসের উপর শুয়ে থাকো সারাটা রাত তারাদের নিয়ে একা। জোনাকিরা তারাদের সাথে খেলে। তুমি মৃদু হাসো। বাতাস এসে উড়িয়ে দেয় তোমার চুল।
রাত গভীর হয়। চাঁদ ভাসে আকাশের নীলরঙা স্রোতে। তার আলোর দাপটে দুধরঙা ফেনা চারদিকে। তুমি উঠে বসো জ্যোৎস্না চাদরে নিজেকে ঢেকে। ধ্যানের প্রদীপ জ্বালো। একা। খোঁজো কোনো পথ। ঈশ্বরের আসার ধ্বনি শুনতে চাও কান পেতে। পাও না। বুক জোড়া ধস নামার শব্দ। তুমি অপেক্ষা করো রোজ। একদিন সব ধস নামা হবে শেষ। বিষাদরাত্রি শেষে চৈতন্য আকাশে উঠবে শুকতারা। তার আলোয় দেখা যাবে তোমার ধ্যানের ঈশ্বরের রথের চূড়া। মৃদঙ্গের তালে তালে ধ্বনিত হবে তাঁর রথের চাকার আওয়াজ। তোমার গোপন সাধনা সহস্র অশ্রুধারায় নামবে ঝরণার মত। অপূর্ণতার প্রদীপে শিখা জ্বালবে প্রার্থনার, বিরহানলে। সাজাবে পথের দুপাশে। সে আসছে। ওই আসছে। তুমি মিলিয়ে যাচ্ছ ধূপের মত। সে আসছে।
এত অপেক্ষা তোমার। এত স্বপ্ন তোমার। এত ভালোবাসা তোমার।
তুমি জীবন। পদ্মপাতায় ক্ষণিক জলের বিন্দু।
চিরচঞ্চল। চিরতৃষ্ণার্ত। চিরউজ্বল।