মায়া
মিল
কোনো মিল নেই
তবু মিল তো আছেই
না হলে সব বসন্তে একই ফুল
নতুন হয়ে আসে কি করে?
সব মৃত্যুই পরিচিত করে কেন
অপরিচিতকেও
মতে অমতে
মুক্তপথ
বিশ্বাস আমার ব্যক্তিগত
গোপনীয় নয়
উপলব্ধি আমার বোধগত
কুক্ষিগত নয়
প্রেম আমার চিত্তগত
আত্মগত নয়
মানুষ মাত্রেই উভচর
মানুষ মাত্রেই উভচর
তুমিই শুধু না,
সময়ে সময়ে আমিও জেনো গুপ্তচর
মাটি
আচমকা মনে হল সবাই যেন খুব এগিয়ে গেছে। রাস্তার দিকে তাকিয়ে মনে হল, কই কাউকে তো চোখে পড়ছে না। বিস্মিত হলাম না। এটাই তো হওয়ার ছিল। এরকমই তো হয়।
মকরন্দ
১
---
ফুলের বুকে মকরন্দ
আমার বুকে তুমি
একলা রাখতে সাহস পাই না
তাই দোসর অন্তর্যামী!
২
---
আয়নাও তোমার সামনে ভয়ে ভয়ে দাঁড়ায়
তুমি সরে গেলে
ওর বুকের থেকে চিরবাঞ্ছিত তোমার ছায়াও মিলায়
মিথ্যা
১
----
মন্দ্র সপ্তকে মিথ্যা বলা যায় না
মিথ্যা বলতে তার সপ্তক লাগে
চোখের মণির দৃষ্টি ছুটে তীর বেরোলে
সাজানো কথার ঢালের আড়াল লাগে
মতান্তর
মৃত্যু নিশ্চিত
মৃত্যু নিশ্চিত, জীবন অনিশ্চিত
অনিশ্চিতকেই বুকে জড়ালাম
মৃত্যু খুঁজে নেবে আমায় সময় হলেই
জ্বলন্ত লাভার অদম্য ইচ্ছা-বীজ
বুকে বসালাম
মৃত শরীরই কঠিন শুধু না
মৃত শরীরই কঠিন শুধু না, মৃত মনও কঠিন হয়
জীবন জলের মত নমনীয়,
যার স্রোতে পাথরও দ্বিখন্ডিত হয়
মেঘমালা
মে দিবস
ফাটা মাটি। অবাধ্য পাহাড়। শুষ্ক মরুভূমি। যন্ত্রের রক্তচক্ষু।
যারা মুখোমুখি, পাশাপাশি, হাতেতে হাত রেখে
যারা যেন বেহিসাবী, প্রাক-মঞ্জুরিত প্রাণ
তারা বুঝুক আবার আজ, তাদের টানেই জীবনের জয়গান।
মাঝে মাঝে
মাঝে মাঝে নুড়িকেও পাহাড় মনে হয়,
ভয়ের নামতা পড়লে
সে নুড়ির ছায়াও পাহাড় মাড়িয়ে যায়
একটু এগিয়ে দেখলে
মহৎ সমীপে
কাল গভীর রাতে ছাদে এসে দাঁড়ালাম। সারাটা আকাশ জ্যোৎস্নায় ভেসে যাচ্ছে। আশেপাশে গাছগুলোর মাথায় চুঁইয়ে চুঁইয়ে পড়ছে দুধ সাদা রঙ। ঠান্ডা বাতাস দুরন্ত বাচ্চার মত শরীরকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাচ্ছে। দেহ শীতল হচ্ছে। রবীন্দ্রনাথের ভাষায়, 'এই যে বাতাস দেহে করে অমৃতক্ষরণ'।
মেঘনীল
মুখ্যু ঢেকি
খুঁজবি কেন শূন্যে বসে?
কল্পনারই অঙ্ক কষে!
আছের মধ্যে দেখ দেখি
যে আছে তারে চিনিস নাকি?
তার ফাঁকিতে পড়েছে সবাই
চোখ বেঁধে নাচ ধিতাই ধিতাই
মনটা ভীষণ সৃষ্টিছাড়া
মনটা ভীষণ সৃষ্টিছাড়া
যেন এক তরকারি নুনে পোড়া!
মনসুর
মনসুরের আঙিনায়
মহাপ্রভু
মগ
অনেক সময় পরিত্যক্ত মগটা আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। জল ভরার ক্ষমতা না থাকার খবরটা ওর কানে কেউ তুললেও বিশ্বাস করে না। আমি যতবার ওকে ভাগাড়ে রেখে আসি, ততবার ও হ্যাঁচড়াতে হ্যাঁচড়াতে আমার বাড়ির উঠোনে এসে বসে থাকে। তাকিয়ে থাকে। মুখে এখনো সেই আত্মবিশ্বাস - আমি পারব, তুমি জল ভরেই দেখো না।
মাটির অভিশাপ
"মেয়েদের সম্মান করতে শেখো"
কেন বললে এরকম একটা কথা?
কেন বললে? বলো বলো, কেন বললে?
বলোনি তো চোখ দিয়ে দেখতে শেখো
পা দিয়ে হাঁটতে শেখো, জিভ দিয়ে বলতে শেখো
তবে কেন কেন কেন?
কেন এরকম অসভ্য, ইতর একটা কথা
ভদ্রতার মোড়কে সাজিয়ে রেখেছ বসার ঘরে
তবে কি তোমার মনে অসম্মানের বীজ আছে?
টের পেয়েছ?
কেউ তা জানার আগেই ঢেকে ফেলতে চাও স্লোগানে -
মহাশিবরাত্রি
অনুরাগের কোনো রঙ হয় না, গ্রীষ্ম বলেছিল। প্রকৃতির বুকে বেজেছিল কথাটা। সে সাধনায় বসল। বর্ষার জল, শরতের উদাস আকাশ, শীতের হিম তার বুকের ওপর দিয়ে ধীরে ধীরে বয়ে গেল। প্রকৃতি বললে, এ নয়, এ নয়।
মাগো আমার সকলি ভ্রান্তি
(আজ গুরুপূর্ণিমা। প্রজ্ঞা, জ্ঞান, বোধ, শুভবুদ্ধির দীপশিখা বহনকারী সেই পুরাকাল থেকে অধুনা সমস্ত আলোকিত আত্মার প্রতি আমার সশ্রদ্ধ প্রণাম।)
মোহর
লোকটা বেলচা করে ময়লা তুলছিল। ময়লার গাড়ি এসেছে সকালবেলা। বিশ্রী বোটকা গন্ধ। শহরের ময়লা মানুষের তৈরি ময়লা। লোকটার আগে কৌতুহল ছিল। এখন নেই। ময়লার রকমেরও সীমা আছে। কিন্তু মাত্রা নেই পরিমাণের। লোকটা উদাস। বেলচা চলছে নিয়মমাফিক ঘচাঘচ।
মেঘলা চিরকুট
এই মেঘলা আকাশেই সে যাবে
যে শাড়িটা গেলবার পূজোয় কেনা, ভাঙা হয়নি
সেই শাড়িটাই পরে যাবে
মর্মযোগ
মুক্তি
পাখিটা উড়ে গেল
ডাল থেকে বৃন্তচ্যুত হয়ে পাতা ঝরে পড়ল মাটিতে।
পাখি লজ্জিত হল। ফিরে এসে মাটিতে বসল, পাতার পাশে। সাশ্রুলোচনে বলল, একি করলাম আমি, তোমার জীবনমূল দিলাম ছিন্ন করে!
মানবিক না অমানবিক?
মহতী বিনষ্টি
আমি ফিনিক্সও নই, হোমাপাখিও নই
গরুড় কিম্বা কাকভূশণ্ডীও নই
চাতকের মত তৃষ্ণার্ত, তাকিয়ে আছি
তুমি শূন্য হলে, আমি শূন্য
তুমি পূর্ণ হলে, আমি পূর্ণ
মৃত্যু নতুন কিছু বলে না
মৃত্যু নতুন কিছু বলে না
সব নতুনকে ঢাকে পুরোনো মোড়কে
মৃত্যুতে আত্মীয় তো সবাই
সব রাস্তারা অসম্পূর্ণ
নিত্যঘোর ভাঙে অচেনা চমকে
মর্ম
মর্মে যদি হলি কানা
কালো অক্ষরে কি দেখবি আলো?
দ্বন্দ্ব যুদ্ধ বাধিয়ে মরিস
জগত জোড়া করলি কালো
মর্মে গিয়ে মর্ম জাগা
সে জন মর্মে আছে মিশ খেয়ে
মর্ম ছাড়া ধর্ম কথা
যেন বোবা উঠেছে গান গেয়ে
মহাত্মা না সেলিব্রিটি?
মহাত্মা না সেলিব্রিটি? নাকি দুই-ই? একবার বাণী বসুর একটা সাক্ষাৎকারে উনি বলেছিলেন, লেখালেখির জগতে রবীন্দ্রনাথকে বাদ দিলে, এ দুয়ের সাযুজ্য খুব কমক্ষেত্রেই দেখা যায়। এ প্রসঙ্গ বিতর্কের। কিন্তু যা বলতে চাইছি সেটা তর্কের জন্য না মোটেই।