Skip to main content

অনুরাগের কোনো রঙ হয় না, গ্রীষ্ম বলেছিল। প্রকৃতির বুকে বেজেছিল কথাটা। সে সাধনায় বসল। বর্ষার জল, শরতের উদাস আকাশ, শীতের হিম তার বুকের ওপর দিয়ে ধীরে ধীরে বয়ে গেল। প্রকৃতি বললে, এ নয়, এ নয়।

    অবশেষে বসন্ত জন্মাল প্রকৃতির তীব্র হুতাশনের যজ্ঞানল থেকে। বর্ণে গন্ধে সে বর্ণনাতীত। প্রকৃতির ধ্যান হল ভঙ্গ।
    গ্রীষ্মকে আহ্বান জানাল প্রকৃতি, তার স্পর্ধিত উত্তর জানাতে - দেখাতে অনুরাগের রঙ!


    সেই থেকে গ্রীষ্ম আসে বসন্তের পিছুপিছু। এখনো তার তীব্র আক্রোশ বসন্তের প্রতি। তাই বুকের মধ্যে সে কালবৈশাখীকে নিয়ে ফেরে। সুযোগ পেলেই হানে বসন্তের বুকে। উড়িয়ে নিয়ে বেড়ায় বসন্তের ঝরাপাতার দল এখানে সেখানে। অনুরাগের যে রঙ বসন্তের গায়ে, আজও সে রইল অধরা গ্রীষ্মের নাগালের। তাই গ্রীষ্মের ক্ষোভ আজও এত তপ্ত, এত উষ্ণ।

    এই কথাগুলোই মহাকালের কানে এসে পৌঁছাল যখন, তখন বসন্তের খ্যাতি ভুবনজোড়া। তিনি গ্রীষ্ম আর বসন্তের মিলন ঘটাতে চাইলেন। প্রেম আর ত্যাগের মিলন না হলে সৃষ্টি হয় শূন্য, অর্থহীন, দিশাহীন। মহাকাল হলেন মহাদেব। তিনি শিব। তিনি মঙ্গল। জগতের সব বিষ তাঁর কন্ঠে। সব সামঞ্জস্যের তিনি পরাকাষ্ঠা। তিনি নীলকণ্ঠ।
    মহাদেব প্রকৃতির ধূলায় বসলেন ধ্যানে। একপাশে বসল বসন্ত। আরেকপাশে বসল গ্রীষ্ম। প্রেম ও ত্যাগ। তখন মহানিশা। প্রকৃতি তার দুই ভিন্নরূপ নিয়ে আহুতি দিতে চাইলেন মহাদেবের মহাসমাধিতে।
    মহাদেব বললেন, না। প্রকৃতিকে বললেন, তোমাকে অনন্তকাল এ দুই আপাত বিরুদ্ধভাবকে মহানিশায় নিয়ে বসতে হবে ধ্যানে। স্মরণ কোরো আমায়। ত্যাগের আর প্রেমের মিলন যেখানে সেখানেই আমি। নিজেকে নিঃস্ব করে পূর্ণ করার যে রাত্রি, সেই হবে শিবরাত্রি। মঙ্গলকে আহ্বান করার রাত্রি। নিজেকে পূর্ণ করার রাত - ত্যাগে ও প্রেমে।