Skip to main content

কাল গভীর রাতে ছাদে এসে দাঁড়ালাম। সারাটা আকাশ জ্যোৎস্নায় ভেসে যাচ্ছে। আশেপাশে গাছগুলোর মাথায় চুঁইয়ে চুঁইয়ে পড়ছে দুধ সাদা রঙ। ঠান্ডা বাতাস দুরন্ত বাচ্চার মত শরীরকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাচ্ছে। দেহ শীতল হচ্ছে। রবীন্দ্রনাথের ভাষায়, 'এই যে বাতাস দেহে করে অমৃতক্ষরণ'।

মনটা প্রসন্ন হল। কেন হল? কেন এ আচমকা আনন্দমগ্ন বিশ্ব চরাচরের মধ্যে নিজেকে অনুভব করলাম?
মন বলল, আমি মহৎকে অনুভব করছি। এই চিরচেনা সব কিছুর আড়ালে, আমি আমার পরমাত্মীয়র ছোঁয়া পাচ্ছি। যিনি মহৎ।
তাই হয়। মানুষ যখন মহতের সামনে এসে দাঁড়ায় সে তার ক্ষুদ্রতাকে অনায়াসে বিসর্জন দিতে পারে। কারণ সেটা তার স্বরূপ না। তাই সে বিশাল পর্বতের সামনে দাঁড়ায়, অসীম সমুদ্রের সামনে দাঁড়ায়। ছুটে ছুটে যায় অরণ্যের গভীরতায়। এতো গেল প্রকৃতির কথা।
সে উৎসব রচনা করে। সবার সাথে, সবার মাঝে নিজের মুক্তি খোঁজে। তার আরেক মহত্বের স্পর্শ - মহান চরিত্রের স্পর্শ। তার সামনে প্রতিদিন দাঁড়ানোকে সে পূজা বলে। সে পূজা আসলে নিজের অন্তরের অপ্রকাশিত মহত্বের। যাকে সে বাইরে খুঁজছে। প্রকাশিত হওয়ার একটা পন্থা খুঁজছে।
সেই মহত্বের স্পর্শই তাকে প্রসন্ন করে। আত্মস্থ করে। সুস্থ করে।
আর কিছু না পাই, দিনের শেষে এ তারা ভরা আকাশ তো রইলই। তার সামনেই দাঁড়াব। গুরুদেবের ভাষায়...


প্রতিদিন আমি হে জীবনস্বামী,

   দাঁড়াব তোমারি সম্মুখে।
করি জোড়কর, হে ভুবনেশ্বর,
     দাঁড়াব তোমারি সম্মুখে।

তোমার অপার আকাশের তলে

      বিজনে বিরলে হে--
    নম্র হৃদয়ে নয়নের জলে
  দাঁড়াব তোমারি সম্মুখে।

তোমার বিচিত্র এ ভবসংসারে

 কর্মপারাবারপারে হে,
নিখিলজগৎজনের মাঝারে
  দাঁড়াব তোমারি সম্মুখে।

তোমার এ ভবে মোর কর্ম যবে

     সমাপন হবে হে,
ওগো রাজরাজ, একাকী নীরবে
     দাঁড়াব তোমারি সম্মুখে।