Skip to main content


আচমকা মনে হল সবাই যেন খুব এগিয়ে গেছে। রাস্তার দিকে তাকিয়ে মনে হল, কই কাউকে তো চোখে পড়ছে না। বিস্মিত হলাম না। এটাই তো হওয়ার ছিল। এরকমই তো হয়।

একা একটা খুব পুরোনো বটগাছের তলায় এসে বসলাম। খাঁ খাঁ করছে রোদ চারদিকে। রাস্তায় দূরে মনে হচ্ছে জল পড়ে আছে, আসলে মরীচিকা।
বটগাছ বলল, "ক্লান্ত?"
বললাম, "না তো!"
বটগাছ একটা বড় দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, "আমি অনেক দেখলাম। কত বিচ্ছেদ। কত হারিয়ে যাওয়া। কত শুনবে? আমার যত পাতা ঝরল, হল তার চাইতে লক্ষগুণ বেশি। তবে কি জানো, এই একা হয়ে যাওয়াটাই ভাল। আমাকে দেখো। আমার আশেপাশে কত গাছ জন্মাল, বড় হল, মরে গেল। আর আমি? সেই ঠাঁয় একা দাঁড়িয়ে আজ কতগুলো বছর হয়ে গেল। একা।"
বটগাছ চুপ করল। কিছু পাখির আওয়াজ ওর ডালের ভিতর থেকে ভেসে আসল। বটের দিকে তাকালাম মাথা উঁচু করে। সে মৃদু বিষণ্ণ হাসল। বলল, "ওরা আশ্রিত। আশ্রিত কখনো বন্ধু হয় না। মনে রেখো।"
পকেট থেকে কিছু কাগজ বার করলাম। ওরা এককালে চিঠি ছিল। এখন কাগজ। শুধুই কাগজ। মুড়ে রাখা ভাঁজে অনেক শব্দ অস্পষ্ট। পড়া যায় না। কি হবে পড়ে? কিছু প্রতিশ্রুতি ছিল হয় তো।
কাগজগুলো ফেলে দিলাম মাটিতে। কিছু হাওয়ায় ভেসে উড়ে পড়ল বটের ডালে। বট পড়ল। হাসল মৃদু। বলল, "এখনো বিশ্বাস করো?"
চুপ করে রইলাম।
বট বলল, "আমার একটা কথা মনে রাখবে?"
মাথা উঁচু করে ভুরু কুঁচকে চাইলাম। আবার কথা? কথারা তো উইয়ের ঢিবির মত। এই একের পর এক জমে অ্যাত্তো লম্বা হয়। আবার অজান্তেই হুড়মুড় করে কখন ভেঙে পড়ে। তবু তাকালাম বটের মুখের দিকে। বলুক না। শুনতে তো দোষ নেই। কথা মানে কি? হাওয়ায় মিলিয়ে যাওয়া কিছু শব্দ বই তো নয়?
বট বলল, "তুমি কি ভাবছ আমি জানি। কথা মানে উইয়ের ঢিবি বা হাওয়ার খেলা বই কিছু নয়, এই তো?"
চমকে উঠে লজ্জা পেলাম। মাথা নীচু করলাম। শুনলাম বট বলছে, "একটা কথা মনে রেখো। একজন সারাটা জীবন তার কথা রাখে। কে জানো?"
বটের মুখের দিকে তাকালাম। বট বলল, "পায়ের তলার মাটি। শ্বাসবায়ু, আলো, জল, খাদ্য সব একদিন ছেড়ে যাবে। মনে রেখো, সব। যা কোনোদিন তোমায় ছাড়বে না – সে হল তোমার পায়ের তলার মাটি। ওকে শক্ত করে আঁকড়ে বাঁচো। আনন্দ পাবে, বেঁচে থাকার অর্থ পাবে। সব কাজ সারা হলে ওর বুকেই মিলিয়ে যাবে। ও আঁচল পেতে তোমায় আড়াল করে নেবে।"
আমার প্রাণ শীতল হল বৃষ্টি ভেজা মাটির মত। মাটির গন্ধ আমার সারাটা শরীর জুড়ে। বুকের খাঁজে খাঁজে মাটির ডাক - অভয় ডাক।