Skip to main content

অনেক সময় পরিত্যক্ত মগটা আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। জল ভরার ক্ষমতা না থাকার খবরটা ওর কানে কেউ তুললেও বিশ্বাস করে না। আমি যতবার ওকে ভাগাড়ে রেখে আসি, ততবার ও হ্যাঁচড়াতে হ্যাঁচড়াতে আমার বাড়ির উঠোনে এসে বসে থাকে। তাকিয়ে থাকে। মুখে এখনো সেই আত্মবিশ্বাস - আমি পারব, তুমি জল ভরেই দেখো না।
    আমি কয়েকবার তুলে এনেছি। জল ভরতে গিয়ে টুপ টুপ করে সব জল বেরিয়ে যেতে দেখেছি। মগটা সজল চোখে বলেছে, তবু আরেকবার।
    আর না। বিরক্ত আমি। এবার ওকে দূরে ফেলে আসব। অনেকটাই দূরে। ফেরার জন্য রাস্তা না পায় যাতে কোনোমতে।
    ফেলে আসলাম। নতুন মগ আগেই আনা হয়েছে। পুরোনো মগের জায়গায় নতুন মগ। বেশ চলছিল। তবু মাঝরাতে থেকে থেকেই দেখি পুরোনো মগের স্বপ্ন। ডাকছে। বলছে, এসে দেখে যাও!
    গেলাম দেখতে। ভাগাড়ের এদিক ওদিক খুঁজে পেলাম না কোত্থাও। স্বপ্ন তো মিথ্যা কথাই বলে। ফিরতে যাব, হাতে বসল ছোট্ট রঙীন পোকা। আমি তাকাতেই উড়ে গিয়ে বসল একটা অপূর্ব সুন্দর বেগুনী রঙের ফুলে। কাছে গেলাম।
    আরে একি! এ লতানো গাছটা উঠেছে সেই মগটার বুক থেকে। তার বুক ভরতি মাটি।
    বললাম, কি অপূর্ব লাগছে তোমায় দেখে। কি করে হল এসব?
    সে বলল, যেদিন বুঝলাম জল ভরার দিন শেষ, সেদিন বুক ভরে নিলাম বাতাস। তবু কেন যেন কাঁদি। বাতাস বলল, কি চাও, কেন কাঁদ? বললাম, জলের সাথে আর কি হবে না দেখা? বাতাস বলল, হবে। সে আনল মাটি। ভরল আমার বুকে। তাতে পাখি বুনল বীজ। গাছ হল। যে ছিদ্র দিয়ে জল যেত বেরিয়ে সেই ছিদ্র দিয়েই সে গাছের শিকড় ছুঁলো মাটি। জল আনল তার বুকের কুয়ো থেকে। এ দেখো কেমন ফুল ধরেছে গাছে?
    আমি বললাম, অপূর্ব।
    সে বলল, তুলে নাও ও ফুল। ওতে ভরে দিয়েছি জল, সাজিয়ে রেখো বাড়ির কোনো কোণায়।
    বাড়ি ফিরলাম। সাথে আনলাম জলে ভরা ফুল। রাখলাম ফুলদানিতে জল ভরে, জলভরা ফুল।