স্বামীজী
স্মৃতির উড়ো বালি
জলের নীচে বুদবুদ
একটা দুটো তিনটে
তাতে প্রতিচ্ছবি
এর ওর তার
উপরে উঠে ফেটে যাবে
হাওয়ার সাথে মিলিয়ে যাবে
কিছু গাছ, কিছু ফুল, কিছু কথা
মাটির উপরে রোদ বসে পোয়াবে
তুমি ওদের গল্প শুনে বুঝবে
ওরা ওই বুদবুদের গল্প বলছে
তুমি চিনতে পারবে
বলতে পারবে না
ওরা বুদবুদ না এখন
ওরা মিলিয়ে যাওয়া হাওয়া
সন্ন্যাসী ও যুবক
দূরপাল্লার রেলগাড়ি। অনেক দূরে পাড়ি দেবে বলে স্টেশনে দাঁড়িয়ে লম্বা নিশ্বাস নিচ্ছে। জানলার ধারে বসে আছে একটি যুবক। তার ঠিক উল্টোদিকে এক সন্ন্যাসী উপবিষ্ট। যুবকের মুখটি ভারী বিষণ্ণ। পাংশুবর্ণ। সন্ন্যাসী নীরবে কিছুক্ষণ লক্ষ্য করে প্রশ্ন করলেন তাকে, সে চলেছে কোথায়? জবাব পেলেন না কোনো।
স্বপথ
ঈশ্বরের বিরোধিতাও এক ধরণের আস্তিকতা। কারণ যার অস্তিত্বহীনতা নিয়ে আমার মনে কোনো সংশয় নেই, তার অনস্তিত্ব নিয়ে এত মাথা ঘামানোর কি দরকার?
স্বীকারোক্তি
তখন অল্প পরিচয়
অন্ধকারই বেশি, খুব স্বল্প আলো
তোমাকে লাগল ভাল
আলোতে ছায়াতে মিশে
তোমার যে মূর্তি মনে আঁকলাম
বুঝিনি তো যে
তাতে সত্যের চেয়ে কল্পনা আছে বেশি
যা দেখি তা নয় ঠিক
সত্য ঢেকেছে মাধুরী ছদ্মবেশে
সন্ধ্যেবেলা হেঁটে ফিরে এসে দেখি কি সমস্যা
সন্ধ্যেবেলা হেঁটে ফিরে এসে দেখি কি সমস্যা, বাড়ির এক্কেবারে বাইরের দরজার গ্রীলের ফাঁকে আটকে একটা বাচ্চা কুকুর। আপ্রাণ বেরোতে চেষ্টা করছে, ডাকছে। বেরোতে পারছে না। পাড়ার কুকুর। গেট খোলা থাকলেই বাগানে ঢুকে পড়ে। তারপর বেরোবার সময় এই রকম ফাঁকে আটকিয়ে কিছুক্ষণ খণ্ডযুদ্ধ করে নিজের থেকেই মুক্ত করে নিজেকে।
সাধনা
তোর সাধনায় জাগা অন্তরে
রাত্রি যেমন দিনের বুকে
স্বপ্নগুলোকে বাঁচিয়ে রাখো
স্বপ্নগুলোকে বাঁচিয়ে রাখো
না হলে আকাশ থাকবে মাথার উপর
ওড়ার জন্য ডানা থাকবে না
সকাল থেকে মেঘলা আকাশ
সকাল থেকে মেঘলা আকাশ
বুকে প্রেমের টহলদারি
মন ছুঁয়েছে ভেজা বাতাস
চাইছে তোমার নজরদারি
সুরের আলো
সকাল থেকে সুরের আলো
শুদ্ধ গন্ধে গা ভাসানো
গঙ্গার স্রোতে দু'পারের ডাক
জলের স্রোতে কাল গলানো
বুকের মধ্যে ছলছল জল
সবই কেমন আপন যেন
ফুচকার মত বুক ফাটিয়ে
সর্বগ্রাসী প্রেম ঢোকানো
সহস্র জন্মের তৃষ্ণা
সহস্র জন্মের তৃষ্ণা নিয়ে দাঁড়িয়ে
এ নিত্য প্রবহমানতার মাঝে
সব ফিরিয়ে দেব পৃথিবী,
ফিরিয়ে নাও আমায়
তোমার চিরস্থির অসীম অনন্তলোকে
সব দূর, দূর না
সিনেমা শেষ হলে
সিনেমা শেষ হলে, সাদা পর্দাটা চুপ, সব কথা ফুরিয়ে যায়
কিছু কিছু মানুষ কি করে কখন যেন অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যায়
সত্য যেখানে মাধুর্য ছোঁয়
সত্য যেখানে মাধুর্য ছোঁয়
সেখানে তুমি আমার
প্রশ্ন যেখানে বিস্ময় ছোঁয়
সেখানে আমি তোমার
সূর্যাস্তের পথ
সুতো
সূত্র কথাটার অর্থ সুতো। আমার লজ্জা নিবারণের জন্য যে বস্তুটি সর্বাগ্রে প্রয়োজন - পোশাক, সে এই সহস্র সুতায় নির্মিত। আমার জীবনে সুতার প্রথম প্রয়োজন - আমার পরিধেয় বস্ত্র।
সেদিন যত কথা বলার ছিল
সেদিন যত কথা বলার ছিল
অভিধানে তত শব্দ ছিল না
আজ শব্দ ভরতি অভিধান ঘুমিয়ে
কেন যেন ওরা আজ বাক্য গড়তে পারে না
সব দিয়ে শেষ ধরা দিলে
সীমা মানে
সীমা মানে লক্ষণরেখা না তো!
সীমা মানে নিজের বুক ভরে
নিজের মত বাতাস নিতে পারা
সীমা মানে পাথর তোলা পাঁচিল না তো!
সীমা মানে দু'চোখ ভরে
আমার মত আকাশ দেখতে পারা
সীমা মানে শিকল না তো!
সীমা মানে জীবনকে আমার
সুখে দুঃখে কোলে তুলে নিয়ে হাঁটা
সোজা কথা
আঁকাবাঁকা কিছু কথায় তুমি সোজা কথাটা ছুঁতে চাও। সোজা কথাটা সিঁড়ির নীচে, ছাদে, হাবুলের চায়ের দোকানের কোণে থাকে লুকিয়ে। তুমি ঘুমিয়ে পড়লে, তোমার বুকের ওপর একলা একলা বেয়ে ওঠে, কেন্নোর মত। কখনো বা সার দেওয়া পিঁপড়ের সারির মত। তুমি ঘুমের মধ্যে টের পাও - সোজা কথাটা তোমার বুকে। সকাল হয়। তুমি হারিয়ে ফেলো।
সন্ধ্যামালতী
মেয়েটার সেদিন সন্ধ্যামালতী ফুল দেখতে ইচ্ছা করছিল। ফুলটা না দেখতে পেলে সে যেন মরেই যাবে আজ। সত্যিই মরে যাবে।
সব পোড়ে না
কালের আগুনে পুড়ছি সবাই
আমি তুমি সে
পুড়তে পুড়তে হচ্ছি ক্ষয়
প্রতিদিন একটু করে রোজ
সুখ
পারিজাতের রেণু লাগা সুখ
চাইনি তো
তুলোয় ভাসা বাসন্তী সুখ
তাও চাইনি
মোমের মত নরম সুখের আস্তরণ
চাইনি চাইনি চাইনি
সতীমা'র মেলা
সন্ধ্যের জলসা
সীমানা ছাড়িয়ে
সময়
যা মুঠোর মধ্যে ছিল
আশা ছিল তাতে থাকবে
আমার হাতের ছাপ
নেই
কিছুটা মিলিয়েছে সময়
কিছুটা মিলিয়েছে
নতুন হাতের ছাপ
সারাটা রাত
সারাটা রাত
তুমি এলে না, ঘুমও এলো না
মন তোমার ঘরের দাওয়ায়
দাবার গুটি সাজিয়ে বসল
নিজের সাথেই নিজের কতবার
চেকমেট হল
সম্পদ তবে শ্রীপদ
সংশয়রাক্ষস নাশমহাস্ত্রম - স্বামীজি বললেন ঠাকুরকে। যিনি সংশয়কে নাশ করার শুধু অস্ত্র না, মহাস্ত্রস্বরূপ।
কিসের সংশয়? ঈশ্বরের অস্তিত্ব নিয়ে? 'হাঁ'ও বটে, 'না'ও বটে। 'হাঁ'- কারণ, ঠাকুরের ঈশ্বরের 'ইতি' করা যায় না।
সেদিন ছিল শিবরাত্রি
সেদিন ছিল শিবরাত্রি। মন্দিরে তিল ধারণের জায়গা ছিল না। ঘন্টা,কাঁসর, ভক্তদের কোলাহলে মুখরিত ছিল দেবালয় প্রাঙ্গণ।
আজ মন্দিরে কয়েকটা টিকটিকি আর পোকাদের ভিড় - মন্দিরে দেওয়ালে, বিগ্রহের গায়ে। শূন্য প্রাঙ্গণ। দেবতা একা। তিনি নীরব চোখে আমায় বললেন,
প্রয়োজন ফুরালে সবাই একা হয়। এমনকি দেবতাও।
সংশয়
তুমি আমায় হারিয়েছ প্রতিবার
আমার সংশয়ের উত্তর দিয়ে নয়
আমার সংশয়কেও অনুমতি দিয়ে
তোমার রাজসভায় আসার
সে সংশয় ক্ষীণ দুর্বল চিত্তে তোমায় স্পর্শ করতে চায়,
অবিশ্বাস করতে চায়
তুমি দু'হাত সরে দাঁড়াও প্রতিবার
সংশয় জিতে যায় নাগাল না পেয়ে
সম্পর্ক
"তুমি কতদূরে গেছো?"
প্রজাপতিটা জিজ্ঞাসা করল রেললাইনকে। রেললাইনটার এ মাথা ও মাথা দেখা যায় না। এক জঙ্গলের থেকে বেরিয়ে সে আরেক জঙ্গলে গেছে মিশে। প্রজাপতি তার সাধ্যমত কতদূর উড়ে দেখে এসেছে তো। কিচ্ছু দেখা যায় না, কোথায় ওর শুরু, কোথায়ই বা ওর শেষ।
সমীরণদা
সে কি এই ভারতবর্ষ?
ওই যে মেয়েটা অভিসারে গেল
ওর যেতেই হয়,
মাথার উপর আকাশ ভাঙা মেঘ
বাইরে ঝোড়ো হাওয়ার সাথে সন্দিহান কুতকুতে চোখ চারদিকে ঝোপেঝাড়ে