Skip to main content

সংশয়রাক্ষস নাশমহাস্ত্রম - স্বামীজি বললেন ঠাকুরকে। যিনি সংশয়কে নাশ করার শুধু অস্ত্র না, মহাস্ত্রস্বরূপ।
কিসের সংশয়? ঈশ্বরের অস্তিত্ব নিয়ে? 'হাঁ'ও বটে, 'না'ও বটে। 'হাঁ'- কারণ, ঠাকুরের ঈশ্বরের 'ইতি' করা যায় না।
সন্ধ্যেয় রাস্তায় দাঁড়ানো রঙমাখা মুখে গণিকারূপী 'মা', মন্দিরের প্রসাদে মুখ দিয়ে যাওয়া বেড়ালরূপী 'মা', তাঁর সমাধিস্থ দিব্যকান্তিপ্রজ্বলিত মুখে লাথি মেরে যাওয়া ঈর্ষাপরায়ণ কালীবাড়ির কর্মচারীরূপী 'মা', যার পায়খানা নিজের চুল দিয়ে গভীর রাত্রে পরিস্কার করেছিলেন সেই রসিক মেথররূপী 'মা', গোপালের মায়ের মত হতদরিদ্রা বিধবারমণীরূপী 'মা' প্রমুখ তাঁর 'মা'; সহধর্মিণীরূপী 'মা', সংসারে নিস্পৃহ দিব্যত্যাগের জীবনে ব্রতী হতে দৃঢ়সঙ্কল্পত্যাগী যুবকবৃন্দরূপী 'মা'।
মানুষের মধ্যে গভীর অনুসন্ধান তাঁর। "চোখ বুঝলেই তিনি আছেন, আর চোখ খুললেই তিনি নেই! তা না, সবই তিনি।" "শালগ্রাম শিলায় তাঁর পূজা হয়, আর মানুষে হয় না?" "মানুষগুলো যেন বালিশের ওয়াড়, ভিতরে শুধু তিনি।"
এরকম নানান উক্তি ছড়িয়ে ছিটিয়ে সারা জীবনে। মানুষ কি এতই মূল্যবান? বললেন, "হ্যাঁ গো, মানুষ কি কম গা, মানুষ অনন্তকে চিন্তা করতে পারে।"
এরকম একটা কথা কেউ বলল না তো! আমার সবচাইতে বড় ক্ষমতা আমি সসীম হয়েও অসীমকে ধারণা করতে পারি। আমার মধ্যে সে অসীম, সে অনন্তে যাওয়ার করিডোর আছে। সেখানেই তো আমি অনন্য, যেখানে আমি আমার ক্ষুদ্রতাকে অতিক্রম করতে পারি। সে ক্ষমতার ওপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলছিলাম আমরা। বস্তুজগৎ এক প্রতিযোগিতার জন্ম দিয়ে আরেক প্রতিযোগিতায় শেষ করে। শান্তি কই?
ভোগে শান্তি কই, সেখানে তো ভোগান্তি। শান্তি মুক্তিতে। মুক্তি মানে পালানো না। "সংসারের দুঃখকষ্ট দেখে যে সংসার ত্যাগ করে সে হীনথাকের লোক"। অর্থাৎ, তাতে তাঁর সম্মতি নেই। তবে মুক্তি কিসে? নিষ্কাম ভালোবাসায়। "তোমার কাছে কিছু চাই না, শুধু দেখতে ভালোবাসি।" "নাহং নাহং, তুঁহু তুঁহু।" 'আমি আমি' না, 'তুমি তুমি'। যতক্ষণ 'আমি' ততক্ষণ অজ্ঞান। "জল ফুটছে, তাতে আলু পটল বেগুন লাফাচ্ছে, মনে করছে আমি লাফাচ্ছি। জানে না, নীচে আগুন আছে।" তাই "আমি ম'লে ঘুচিবে জঞ্জাল।"
সংশয় আমায় নিয়ে আমার। আমার জীবন নিয়ে, আমার প্রেম নিয়ে, আমার কাজ নিয়ে, আমার সফলতা-বিফলতা নিয়ে, আমার লক্ষ্য নিয়ে। আমার সকাল থেকে রাত অবধি হাজারো সংশয়ের মেঘ। কোনোকিছুই যেন ঠিক করে উঠতে পারছি না। যাই ধরছি, স্থির করছি - সাবানের ফেনার মত পিছলে পিছলে যাচ্ছে। প্রতিমুহুর্তে হারিয়ে ফেলছি নিজেকে। ঘেঁটে ঘেঁটে যাচ্ছে সব। এদিকে সব জানি বিদ্যেবোঝাই বাবুমশায়ের মত। শুধু সাঁতার জানি না। তাই সব থেকেও সব বৃথা হতে বসেছে।
ঠাকুর হেসে বললেন, ওরে, একের পিঠে যত শূন্য বসাস সংখ্যাটা তত বড় হয়। কিন্তু সামনের 'এক'-টাকে মুছে দিলে সব শূন্য শুধু শূন্যই। সেই এক'কে খোঁজো।
খুঁজে পাচ্ছ না? একটু তোমার অহংটাকে দূরে সরিয়ে আমার কাছে নিভৃতে একলাটি এসো না গো। তোমায় একের খেই ধরিয়ে দেব বলেই তো আমার আসা! অহং যাচ্ছে না? একটু কাছে এসো, ওকেও সরিয়ে দেব, কৌশলে না গো। প্রেমে। আমি ঢোঁড়াসাপ না, জাতসাপ। একবার ধরলে না মজিয়ে ছাড়ি না। এসেই দেখো না।