Skip to main content

দূরপাল্লার রেলগাড়ি। অনেক দূরে পাড়ি দেবে বলে স্টেশনে দাঁড়িয়ে লম্বা নিশ্বাস নিচ্ছে। জানলার ধারে বসে আছে একটি যুবক। তার ঠিক উল্টোদিকে এক সন্ন্যাসী উপবিষ্ট। যুবকের মুখটি ভারী বিষণ্ণ। পাংশুবর্ণ। সন্ন্যাসী নীরবে কিছুক্ষণ লক্ষ্য করে প্রশ্ন করলেন তাকে, সে চলেছে কোথায়? জবাব পেলেন না কোনো।
নড়ে উঠল ট্রেন। যুবকটি জানলা থেকে মুখ ফিরিয়ে সন্ন্যাসীর দিকে তাকাল পূর্ণদৃষ্টিতে। বলল--'' আমি অপরাধী। জেলফেরত কয়েদী।''
সন্ন্যাসী হাসলেন। স্নিগ্ধস্বরে বললেন--''তোমার শাস্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে বাবা, তুমি তো আর অপরাধী নও।''
যুবকটি কি যেন ভাবল ক্ষণিক---
তারপর সন্ন্যাসীর সামনে উজাড় করে মেলে ধরল নিজেকে। বলে চলল নিজের অন্যায়, অপরাধ, কৃতকর্মের কথা---নিঃসংকোচে। স্টেশনের পর স্টেশন পেরিয়ে গেল। উন্মোচিত হল একটির পর একটি কলঙ্কজনক অধ্যায়--- তার জীবনের।
অবশেষে সে বলল--''আমি আমার বাবার কাছে ক্ষমা চেয়ে একটি চিঠি লিখেছিলাম। বলেছিলাম, আমায় কোনদিন কোন চিঠি দিও না বাবা, সে আমার প্রাপ্য নয়। কিন্তু দৈবক্রমে যদি তোমার এই দুর্বৃত্ত ছেলেকে ক্ষমা করতে পারো, তবে আমাদের গাঁয়ের রেলস্টেশনের গা ঘেঁষে যে বুড়োবটগাছটা আছে, তার ডালে একটা ছোট্ট পতাকা লাগিয়ে রেখো--- আমি ট্রেন থেকেই দেখতে পাবো। যদি না দেখতে পাই, আমি ফিরে যাবো বাবা, কথা দিচ্ছি আর কক্ষণো বিরক্ত করতে আসব না।''
সন্ন্যাসী আর যুবক, দুজনেরই হৃদয় অজানা আশঙ্কায় উদ্বেল। রেলগাড়ির ছন্দেও যেন আকুল ভাবনার বোল উঠেছে---কুঝিকঝিকঝিক, কি যে হয়, কি যে হয়---
ধীরে ধীরে তার গাঁয়ের স্টেশন এসে পড়ল। যুবকটি জানলার ধার থেকে উঠে সন্ন্যাসীর পিছনের আসনে এসে বসল। শঙ্কাব্যাকুল গলায় বলল--''আমার নিজের চোখে দেখার সাহস নেই বাবা, আপনি দেখে আমায় বলে দিন-- আমার ভাগ্যে যা আছে আমি মাথা পেতে মেনে নেব।''
স্টেশন এল। ট্রেন থামল। সন্ন্যাসী অঝোর নয়নে কাঁদতে লাগলেন।
যুবকটি শান্তগলায়, তাঁকে যেন সান্ত্বনা দিচ্ছে, এমন করে বলল--''আমি আগেই জানতাম বাবা। কোনো পিতা তাঁর এমন অধম, পাপী সন্তানকে ক্ষমা করতে পারেন না-- আমি জানতাম।''
সন্ন্যাসী অবরুদ্ধ কন্ঠে বললেন--''বাইরে তাকাও, তাকিয়ে দেখো পুত্র, বুড়োবটের পাতা দেখা যায় না-- এমন কোনো ডাল নেই যাতে একখন্ড কাপড় বাঁধা নেই।''

[মূল রচনাঃ A saint and a young man]
(বাংলায় অনুবাদ করে দিয়েছেন: Sukanya Bandyopadhyay)