সর্বজনীন অসর্বজনীনতা
আমাদের ধর্মের সাথে উৎসবের খুব একটা মূলগত যোগাযোগ আছে বলে মনে হয় না। ধর্মের কোনো একটা দিক একে অনুপ্রাণিত করে, এতটাই সত্যি। এরপর বাকিটা আমরা আমাদের মত বানিয়ে নিই।
সেই ভাল
সব হাসি কি প্রসন্নতার?
কত হাসি মতলবেরও
সব খবর কি ঘটেছিল?
কত খবর কল্পনারও
যা কিছু ভাই এদিক ওদিক
বুঝবি যে সব, তার নেই ঠিক
তার চেয়ে ভাই আশমানেতে
ঠ্যাঙ তুলে শো, চিৎপাতেতে
মারুক ধরুক কাড়ুক নাড়ুক
ফুল চন্দন কি পোকাই পড়ুক
তোর কি কাজ সেদিক পানে
মন মজা তোর মাঠের গানে
স্মৃতি
স্মৃতির গর্তে গর্তে হাজার হাজার লাল কাঁকড়া
অলস সময়ের তীরে তীরে
আমার পায়ের শব্দে ঢুকে পড়ে
আবার বেরিয়ে আসে অলক্ষ্যে
আমার আড়চোখে চোখ রাখে
সিঁড়ি
সিঁড়ির প্রথম ধাপের সাথে
শেষ ধাপের যে সম্পর্ক
যদি তুমি বোঝো
পা পিছলাবে না আর
প্রথম ধাপেই থাকে শেষ ধাপের ইঙ্গিত
সে দিশা যে বোঝে, যে খোঁজে
সে তার
সুন্দর
যা থাকার না
তা থাকে না।
যে থাকার না
সে থাকে না।
তবু
ফাঁকা ঘরটাতে আলপনা দাও
সুন্দর করে।
শূন্যতাকেও ভরিয়ে তোলো নতুন করে।
সন্ধ্যের আকাশ
সন্ধ্যের আকাশ ম্লান হয়
ভোরের আকাশ তার ঠিকানা জানে বলে
সন্ধ্যাতারা বার্তা নিয়ে শুকতারার কানেতে যায় বলে
সংকট
তুমি অচেনা হলে বলে
আমি নিজেকে গুলিয়ে ফেললাম
তোমার বাঁদিকে না ডানদিকে ছিলাম আমি?
মনে পড়ছে না তো,
তুমি আমার কোন হাতে হাত রেখেছিলে,
বাঁ হাতে কাটা দাগ, ডান হাতে আঁশটে গন্ধ
কোন হাতটা ধরেছিলে?
সোজা পথ
লোকটা দিনের পর দিন, মাসের পর মাস দেওয়ালটায় ঘুঁষি মেরে চলেছে। সে জানে দরজা আছে, তবু দরজার ছিটকিনি খুলে বাইরে যাবে না। সোজা পথে, সহজে যেতে তার নাকি লজ্জা লাগে, অহংকারে লাগে।
অবশেষে লোকটা দেওয়াল ভেঙে, হাত গুঁড়ো করে বাইরে এলো।
এসে এবার সে পড়ল বিপদে। পথ কই? পথ তো ছিল দরজার সামনে।
স্বাধীনতা দিবস
স্বাধীনতা দিবস। উৎসব? কত বন্ধু ট্যাগ করছেন এখানে। কত বন্ধু ভারতীয় পতাকা পাঠাচ্ছেন ওয়াটস অ্যাপে। খুব ভাল থাকতে চাইছি। মহান মানুষদের কত ত্যাগ, বীরত্ব, ইত্যাদি শুনছি টিভিতে। সত্যি কথা বলতে, ভালো লাগে না এগুলো আর।
সবার শেষে
সবার শেষে একজন মানুষই দাঁড়িয়ে থাকে,
বিধ্বস্ত, শ্রান্ত,
তবু সামনের দিকে তাকিয়ে।
সবার শেষে কিছু বিশ্বাসের আত্মা আবার দেহ খোঁজে,
নতুন ধর্মে, নতুন মতে।
সবার শেষে কিছু নিহত ভালোবাসা তুষারপাত হয়ে ঝরে
নিঃসঙ্গতার অরণ্যে।
সবার শেষে কিছু কান্নার আওয়াজ সঙ্গীতের মূর্ছনা হয়ে ফেরে
কাল থেকে মহাকালে।
সাগরতীরে
সে
সে, একটা ছোট বালির কণা হতে পারে
কিম্বা হিমালয়ের চূড়া
একটা গোলাপ
কিম্বা একজন কাছের মানুষ।
সে ইঙ্গিত হতে পারে
অথবা নির্দেশ
পথ হতে পারে বা সাগর
দুঃখ হতে পারে সুখও
আনন্দের জ্যোতিতে আলো।
সে আরো অনেক কিছু হতে পারে
শুধু আমি চাইলেই
আমি চাইব কবে?
সময়
বউটার বিষম ব্যামো।
ডাক্তার বললে, কঠিন রোগ
তান্ত্রিক বললে, মা ক্ষেপেছে
জ্যোতিষী বললে, শনি এয়েচে
বন্ধু বললে, হুম বিপদ দেখি
শত্রু বললে, বেশ হয়েছে
স্বামী তাকালো রাতের আকাশে
মন বললে, সময় হয়েছে।
স্বীকারোক্তি
আমার হাঁটতে
শুধু দুটো পা না,
মাটিও লাগে
আমার কাজে
শুধু দুটো হাত না,
সংসারকেও লাগে
আমার শ্বাসে
শুধু ফুসফুস আর নাক না,
বাতাসও লাগে
আমার দেখতে
শুধু দুটো চোখ না,
আলোও লাগে
আমার বাঁচতে,
শুধু হৃৎপিণ্ড আর রক্ত না,
তোমাকেও লাগে
সামিয়ানা
নিজের খেয়ালের সামিয়ানা টাঙিয়ে
ওই যে ছেলেটা শুয়ে
আমিও ওর সাথেই ছিলাম
ওরই পাশে, ওর হাতেতে হাত রেখে।
ওর কোঁচড়ে এখনো আঁটির ভেঁপু?
এখনো ও মেঘেতে গল্প দেখে?
দিঘীর জলে টুপ করে কি পড়ে -
এখনো সে বুঝি অবাক হয়ে খোঁজে?
আমার ওর আজ বিস্তর ব্যবধান
তবু যেন সামিয়ানাটা ঘিরে
রাতের আকাশ এখনো ভিড় করে
কালের গতির উলটো স্রোতে ফিরে
স্বর্গ-মর্ত্য
তোমার হাতে শালগ্রামশিলা?
আমার হাতে ঘাস
তোমার হাতে কোরাণ না গীতা?
আমার হাতে বাতাস
তোমার হাতে জপের মালা?
আমার হাতে জল
তোমার চোখে স্বর্গের ছবি?
আমার চোখে মাটি
তোমার পা শুদ্ধ শুকনো
আমার পা কাদায় ভিজে
তুমি চলেছ অমৃতের পথে
আমি চলেছি ক্ষেতে
তোমার অপেক্ষায় ভগবান
আমার অপেক্ষায় মানুষ
স্পর্ধা
দুটো শরীর ভীষণ কাছে এলো
মনকে ঠেলে সরালো।
অন্ধ ওরা দু'জনেই এখন
একে অপরকে হাতড়ে খুঁজছে-
খুঁড়ছে সন্দেহে
ক্ষত-বিক্ষত শরীর দুটোয়
শুধুই স্পর্ধা আজ।
সাগরের নীর
যাকে বাইরে দেখলাম নানা
তাকে ভিতরে দেখি এক
এক কুঁড়িতেই সহস্র দল
মন একটু তলিয়ে গিয়ে দেখ
বাইরে যতই ছোটাছুটি রে
ভিতরে সে এক স্থির
তার চোখে চোখ রাখতে পারলে
মন মাঝ সাগরের নীর
সাড়া দাও
প্রয়োজনের চাদরটা সরিয়ে
তাগিদকে পিছনে রেখে
দু-পা এগিয়ে দেখো-
তোমার অপেক্ষায় অনেকে আছে
অপ্রয়োজনের আমন্ত্রণ হাতে করে
সাড়া দাও।
সান্ত্বনা
একটা ব্যাথা
আরেক ব্যাথার দ্বারে
সান্ত্বনা খুঁজে ফেরে
সপ্তমী
মেয়েটার বছর বারো বয়েস। একটাই জামা হয় প্রতিবার। এবারেও হয়েছে। বাবার মিল বন্ধ। তাই জুতো হয়নি। জামাটা হলুদ রঙের। ইচ্ছা ছিল একটা লিপিস্টিক যদি দিত কিনে..হলুদ রঙের।
সরিয়ে নাও
তুমি তোমার থেকে তোমাকে সরিয়ে নাও
তুমি তোমার থেকে আমিকে আমাকে দাও
সত্য লাগিয়া ফিরিতেছিলেম
সন্ধ্যাকাশে
স্মার্টফোন
পাগল পাগল লাগত তো বউটার
এখনো লাগে।
ঘোমটা দিয়ে যখন শাশুড়ির পাশে বসে
বাইরের লোকের সামনে দাঁড়ায়
মনে হয় একটা লাথ মারে
সব ভণ্ডগুলোর মুখে
মারেনি কোনোদিন
সব মিলিয়ে আঠারো জন সেনা মারা গেলেন
কথাটা এই মাথাটা গরম হচ্ছে। সারাদিন কাজের ফাঁকে ফাঁকে একটা রাগ সারাটা শরীর দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। শুধু রাগ? না, শুধু রাগ না, অপমান লাগছে। হ্যাঁ অপমান লাগছে। গায়ে ফোস্কা পড়ার মত না। বোধহয় চিতায় সজ্ঞানে বসার মত - সঠিক উপমা হতে পারে, জ্বলুনীটা বোঝানোর জন্য। কারণ সত্যিকারের চিতায় তো বসিনি কখনো।
সবাই ও ওরা
“সবাই যারে সব দিতেছে”...
"আমরা সবাই রাজা আমাদের এই রাজার রাজত্বে”...
“ওরা কাজ করে”...
"ওরা অকারণে চঞ্চল”...
সবার উপরে মানুষ সত্য
মানুষ মানুষের চাইতে অতিরিক্ত বেশি কিছু চায়। অতিমানবিক ক্ষমতা চায়, অতিমানবিক ঈশ্বর চায়, অতিমানবিক দর্শন চায়। কিন্তু সে সবই তার বিকারের চাওয়া। কথামৃতে একটা গল্প আছে, একজন বিকারের রুগী ঘরে শুয়ে শুয়ে বলছে, “ওরে আমি এক জালা জল খাব রে, ওরে আমি বিশমণ চালের ভাত খাব রে।“ বদ্যি বাইরে দাওয়ায় হুঁকো খেতে খেতে বলছেন, “ওরে খাবি খাবি, আগে জ্বরটা সারুক।“
সেজো না
সেজো না। আগেও বলেছি তো।
এসো অনাড়ম্বরে
তুমি আমার প্রতিদিনের,
বিশেষ দিনের নও তো!
সময়
জ্ঞান হওয়া ইস্তক দেখছি
একটা সাদা চাদরে পা থেকে গলা অবধি ঢাকা আমার
মাথার কাছে কিছু ছায়ামূর্তি ঘোরাফেরা করছে
ফিসফিস করে বলছে -
যা কাজ আছে তাড়াতাড়ি সেরে নাও
বুঝে নাও সব কিছু
ধর্ম বিজ্ঞান রাজনীতি ইতিহাস
খানিক পরেই চাদরটায় ঢাকব মুখ
সৌজন্যতা
সব শাড়িগুলো মন খারাপে ভিজে
একটা শাড়িও শুকাতে পারেনি সকাল থেকে।
ছাদে উঠেছে চোদ্দোবার, হারমোনিয়াম খুলেছে বন্ধ করেছে, সুর আসেনি গলায় কিম্বা আঙুলে।
পুরোনো দিনের কথারা চুন সুরকির মত খসে খসে পড়েছে সারাটা দিন
মেয়েটার মন ভাল নেই
মেয়ে তো নয়, বউটার মন ভাল নেই।
"আচ্ছা, ও ভালো আছে?"
সে
মানুষ নিশ্ছিদ্র একাকিত্বে, দুঃসহ যন্ত্রনায়, ঘুমহীন রাতে
নিজের বুকের মধ্যে যাকে খোঁজে, যার সাড়া পায়
তাকে সে বলে ঈশ্বর
সেই স্পর্শের, সেই দৃষ্টির ছায়া যখন সে বাইরে তাকিয়ে কোনো করুণ চোখে দেখে
তাকে সে বলে বন্ধু
সবুজ
সাগর কথন
১
----
বুদ্ধি নিজে না বুঝেও বোঝাতে পারে
সে তো নাক উঁচু তাই দাম্ভিক
অনুভব নিজে বুঝেও কি বোঝাতে পারে?
সে কবে হল ভাই তার্কিক?!
স্রোত
নদীর স্রোতে পা ডোবাতো
মাথা ভিজিয়ে স্নান করত
তার উছ্বল স্রোতের সুরে গান গাইত
ভালোই ছিল
কে বলল, ওকে ঘড়ায় যদি বাঁধতে পারিস
তবে ও চিরকালের তোর!
সে ঘড়ার জলে নদী বাঁধতে চাইল
ঘড়া ভরা জল ঘরের কোণে রাখল
সীমা
'তবু আমার শীর্ন দেহে ধরেছে তোমার রঙ'
নদী এই বলে তাকালো আকাশের দিকে
আকাশ অনন্ত চোখে তাকালো নদীর মুখের দিকে
তখন দিনান্তের রঙ সারা আকাশ বিছিয়ে
নদীর ছলছল চোখে যে তৃষ্ণা
সে তৃষ্ণা সন্ধ্যাকাশের আকুল আকাঙ্খায়
মহাকাশের দিকে তাকিয়ে
অনন্তকাল ধরে