১
---

তোমার আঙিনায় আছি বসে,
আমার ক্ষুদ্র তনুতে তোমার কিরণ
কি আদরে ভালোবেসে!
 

(ছবিঃ প্রীতম পাল)

একটা ভুল মানুষকে ভালোবাসার অনেক জ্বালা। সব চেয়ে বড় জ্বালা হল, ভুলটা ভাঙলেও ভালোবাসাটা ভাঙে না। কিন্তু সেই ভালোবাসাকে শ্রদ্ধা করার মত শক্তিও আর থাকে না। কি সংকট। না যায় ভোলা, না যায় মানা। এ যে নিজের ভালোবাসা নিয়ে নিজেই নাজেহাল। না পারা যায় ভাসাতে, না পারা যায় ঘরে নিয়ে গিয়ে কুলুঙ্গীতে তুলে রাখতে। 

শব্দ ছাড়া আমরা চিন্তা করতে পারি না। হক কথা। খুব বড় দার্শনিক Wittgenstein এই নিয়ে বহু গবেষণা করে নানাবিধ তত্ত্বের আলোক দিয়েছেন।
 
কথা হল, এ খুব খাঁটি কথা, বলার অপেক্ষা রাখে না। স্বামীজি জ্ঞানযোগ বইতে বলছেন, 'চিন্তা বাঙনির্ভর'। উপনিষদের ঋষিরা প্রার্থনা জানাচ্ছেন, তাঁদের মন ও বাক্য যেন একে অন্যের পরিপূরক হয়ে ওঠে। রবি ঠাকুরের বিখ্যাত উক্তি, 'বাক্য যেথা হৃদয়ের উৎসমুখ হতে'।

১
----
তবু ভাল আছি তো

জানি কেউ কেউ বিশ্বাস করে না

আয়না, মাথার বালিশ, আর নির্জন সন্ধ্যে

২
----
জানি তুমিও ভাল আছ

তবু কেউ কেউ বিশ্বাস করে না

আমার হৃদয়, তোমার চোখ, আর রাতের আকাশ

চলতে ফিরতে যদি এদিকে তাকাও
তাকিয়ো
আমিও তাকাব
বিনা অনুরোধে
বিনা যন্ত্রণায়
বিনা আশঙ্কায়

বিশ্বাস করব, তুমি ভাল আছো
বিশ্বস্ত থাকব, আমার ব্যাথার কাছে
যে বলেছিল, ওকে আর চেয়ো না
আমি আরেকটা ভাঙন নিতে পারব না।

এখানে খুব বৃষ্টি হচ্ছে জানো
তোমার ওখানে?

তোমার সাথে বৃষ্টিতে ভিজেছি
                      সারা সকাল
            তোমায় না বলে।

১
---

ভয় আতঙ্ক উদ্বেগ দুশ্চিন্তা....এদের পার্থক্য বোঝা খুব কঠিন। এদের একটি সাধারণ বৈশিষ্ট হল, এরা খুব একটা যুক্তির ধার ধারে না। মনের মধ্যে অসম্ভব কল্পনাকে সম্ভব করে ভাবাতে এদের জুড়ি নেই। অকারণ, অযৌক্তিক এমন সব ভাবনার জাল বুনতে শুরু করে আর তাতে যে কখন আটকা পড়েছি - তা বোঝারও বিবেচনা শক্তি হারিয়ে যায়! 

বাথরুম থেকে ঘরে ঢুকেই চমকে উঠলাম। আমার চেয়ারটায় আমিই বসে খবরের কাগজ পড়ছি।

ভালোবাসা
    তোমার একটি শ্বাসের উচ্চারণে
            কত শব্দের বাস?
জন্ম গেল
    ক্ষণিক স্পর্শ পেলাম তোমার
  না পেলাম বোঝার অবকাশ!
    হ্যাঁ গো,
        তুমিই কি তবে পরজনমের আশ?

এলোমেলো ঝোড়ো হাওয়ায় কাঁপছে ভিজে কাক একটা সামনের আম গাছটায়।
বৃষ্টি মায়ার মত হাত বাড়িয়ে বলল, ভিজে আকাশটা ছুঁয়ে দেখো একবার....

ভিজে আকাশটা ছুঁয়ে কাকটার গায়েও হাত বুলিয়ে ফিরলাম।
  ওর শরীরে নিবিড় আত্মীয়তা
         এ কাক নয় তো!
  এ তো কাকের শরীরে আমার অসম্পূর্ণ কান্নারা!

সব শাড়িগুলো মন খারাপে ভিজে
   একটা শাড়িও শুকাতে পারেনি সকাল থেকে।
ছাদে উঠেছে চোদ্দোবার, হারমোনিয়াম খুলেছে বন্ধ করেছে, সুর আসেনি গলায় কিম্বা আঙুলে।
 পুরোনো দিনের কথারা চুন সুরকির মত খসে খসে পড়েছে সারাটা দিন
      মেয়েটার মন ভাল নেই
   মেয়ে তো নয়, বউটার মন ভাল নেই।

"আচ্ছা, ও ভালো আছে?"

বেশ রাতে স্টেশানে নামে। বাড়ি ফেরার পথে নেয় একভাঁড় চা রোজ। শক্ত করে আঁকড়ে থাকে গরম চায়ের ভাঁড়। জীবনে বেঁচে তার এই একটাই উষ্ণতা অবশেষে।

আমার কেন জানি মনে হয়
    বারবার মনে হয়, খুব মনে হয়
বিশেষ করে রাতে শুতে গেলে
    অন্ধকার ঘরে জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকতে থাকতে মনে হয়
    এক আকাশ তারাও আমার কথাটায় আমার ভাবনাটায় সায় দিচ্ছে।

সত্য তবে কি মিথ্যার আয়ুষ্কাল?
    না কি মেঘ চিরে আসা আলো?

অন্ধকারে আমি তুমি সব এক
    আলোতে জাগা তফাতগুলো কি ভালো?

মিথ্যাগুলোই থাক তাই তবে বেঁচে
    মুখে গাই সত্যের জয়

অর্ধসত্য বন্ধুর মত আসে
    পূর্ণসত্যে তাই এত ভাই ভয়!

১
====
ভেজা চোখ এড়াতে মুখ ফেরালাম
    ভাবলে উপেক্ষা
শুকনো চোখে তোমার দিকে ফিরলাম
    ভাবলে চালাকি

স্লোগানে স্লোগানে আকাশ বাতাস মুখরিত ভরপুর
নরমে গরমে গরজি উঠিছে জনতা কর্ণপুর
সকলের ভাল করিবার লাগি তাহাদের ব্যাকুলতা
"ছাড়িয়া দেগো মা কাঁদিয়া বাঁচি" উঠিছে মর্মব্যাথা
তবু ছাড়িবে না, করিবেই ভাল, মিলিয়া কিম্বা একা
কার মতদান কে করিয়া যায়, কার মুখে কার কথা!
ওগো ভোটনাথ, কর্ণ, মর্ম হয়েছে ভীষণ তপ্ত
ক্ষ্যামা দাও এবে, ঝরেছে তো কত রক্তও

কেউ দেওয়াল নোংরা করে যেতেই পারে
অপেক্ষায় থেকো না যে -
সে-ই আবার জল ন্যাতা নিয়ে আসবে
                      দাগ মুছতে

অপেক্ষায় দাগটাই পাকা হয় শুধু

নিজেই মুছে ফেলো
    অন্তত দেওয়ালটার কথা ভেবে

ভাষারা সঙ্কেত জানায় যে চোখে
সে সঙ্কেতগুলো সারাটা মুখে ছড়িয়ে
তোমার বুক থেকে হাত বাড়াও
সে ভাষাকে তুমি পাবে হাতের মুঠোয়

তোমায় ছাড়া বাঁচব না

বলেছিলেন তো
একচোখ জলে
বুকের মধ্যে হাপর সামলে

তবু চলে গেছে
জল শুকিয়েছে
হাপর থেমেছে

'হম তেরে বিন অব রহে নহি সকতে'

গানটা শুনলেও
চায়ে চিনি দিতে ভোলেন না
হিসাবের ফর্দে কাটাকুটি হয় না
রাতে ঘুমে বিচ্ছেদ ঘটে না

ছলছল চোখ
   কিছুটা আগুনের তাপে
   কিছুটা আগুনের ধোঁয়ায়

বুক ভাঙা শোক
   কিছুটা অপূর্ণ প্রেমে
   কিছুটা ভাঙা পাত্রের মায়ায়

এক মুঠো সান্ত্বনা
   কিছুটা সামনের মেঠো পথে
   কিছুটা ছুঁয়ে আসা বৃত্তের সীমানায়

তোমায় প্রথমবার কোথায় দেখলাম? বলব না। তোমায় দেখলাম। তুমি দেখলে না। কারণ তখনও তুমি, তোমার তুমি নও। তখনও তুমি নির্ভুল তুমি। আমার তখন ডানে বামে ভুল, উঠতে বসতে ভুল, ঘুমে জেগে থাকায় ভুল। সেই ভুলেই আমি প্রথম তোমায় চিনলাম।

আরে ভালোবাসা মানে তো আমিও বুঝি
     বুকের ভিতর অম্বল হওয়া বুক জ্বালা

সব সহ্য করে নিই। নিতেই হয়।
     এমনকি পাঁজর ঝাঁঝাঁনো ভালোবাসাও

ভালোবাসা মানে,
একটা অসম্পূর্ণ বৃত্তকে সম্পূর্ণ করে দেখা
হাতের আঙুলের চারটে ফাঁকে,
                  পাঁচটা আঙুল ভরে রাখা