Skip to main content

শব্দ ছাড়া আমরা চিন্তা করতে পারি না। হক কথা। খুব বড় দার্শনিক Wittgenstein এই নিয়ে বহু গবেষণা করে নানাবিধ তত্ত্বের আলোক দিয়েছেন।
 
কথা হল, এ খুব খাঁটি কথা, বলার অপেক্ষা রাখে না। স্বামীজি জ্ঞানযোগ বইতে বলছেন, 'চিন্তা বাঙনির্ভর'। উপনিষদের ঋষিরা প্রার্থনা জানাচ্ছেন, তাঁদের মন ও বাক্য যেন একে অন্যের পরিপূরক হয়ে ওঠে। রবি ঠাকুরের বিখ্যাত উক্তি, 'বাক্য যেথা হৃদয়ের উৎসমুখ হতে'।
 
কথা হচ্ছে, আমার চিন্তা করার ভাষা আর বলার ভাষা কি আলাদা? হ্যাঁ বহুলাংশে আলাদা। এ দুটিকে এক করেছেন দু'জন মানুষ। এক - পাগল, দুই - মহাপুরুষ। আর আমরা? হে হে, সেও কি উদাহরণ দিয়ে বোঝাতে হবে?
 
একজন কলিংবেল টিপলেন, দরজার ফাঁক দিয়ে তার মুখ দেখেই, মনে মনে বলে উঠলাম, ..........., আসার আর সময় হল না! (শূন্যস্থানগুলো নিজ দায়িত্বে পূরণ করে নেওয়াই ভাল)। দরজা খুলেই হাস্যমুখে বললাম, ওমা! কতদিন পরে, আসুন আসুন আসুন...
 
অজস্র উদাহরণ। থাক। আমি মিথ্যাকথা বলা উচিৎ কি উচিৎ না, কখন কি অবস্থায় কতটা মিথ্যা বলা উচিৎ, সে তর্কেও যাচ্ছি না।
 
বিপদটা অন্য জায়গায়। ভাবার ভাষা আর বলার ভাষা আলাদা হতে শুরু করলে, আত্ম-বিশ্বাস আর আত্ম-মর্যাদার খুঁটি খুব নড়বড়ে হয়ে পড়ে দেখেছি। কোনো প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সে মানুষের বিভ্রান্তির একশেষ হয়। সে বুঝে উঠতেই পারে না, কোন ভাষাটা সত্যি, ভাবার না বলার? যা আছে, না যা বানিয়েছে? যা আছে, অর্থাৎ যা fact তাকে স্বীকার করতে লাগে নম্রতা। আর নম্রতা তখনই সম্ভব যখন বুদ্ধির আর বোধের পরিপক্কতা এসেছে। না তো দেখা যায়, প্রার্থীরাই যা একটু নম্র হন। সে ভোটই হোক আর ভিক্ষাই হোক। সেই নম্রতাটা ঠিক নম্রতা না, ওটা একটা ব্যবহারিক কৌশল বলা যেতে পারে।
 
তাই ভাষাকে যত বেশি ভাবের সাথে সম্পৃক্ত করা যায়, মনের ওপর চাপও ততটাই কম হয় বলে মনে হয়। না বলতে পারা, না বোঝাতে পারার যে কি যন্ত্রণা সে সব মানুষই অল্পবিস্তর ভুগে আসছেন, মায় কবিগুরু অবধি (হেথা যে গান গাইতে আসা আজও হয় নি সে গান গাওয়া... ইত্যাদি)।
 
ভাষার স্বচ্ছতা মনের স্বচ্ছতা আনে। যাকে গোদা বাংলায় বলতে শুনেছি, স্পষ্ট কথায় কষ্ট নেই। বলতে কষ্ট নেই বইকি, কিন্তু বলার পর? না, সে আশঙ্কা অমূলক। আজ অবধি সত্যি লুকিয়ে শেষরক্ষা হয়েছে বলে তো কিছু দেখলাম না। জটিলতাই বেড়েছে। সত্যি বলার সে সাহসটুকু হাতের পেশির উপর নির্ভর করে না, করে সিদ্ধান্তের স্বচ্ছতার উপর।
 
কথা হল, কি ভাষায় তা বলব? যে হৃদয়ে হিংসা, রাগ, ঈর্ষা সে হৃদয় সত্য বলে না। সত্যটার মূলনীতিই হল সহমর্মিতা। আমি আমাকে না বুঝলে যেমন নিজের প্রতি অবিচার করি, ভুল মতামতে নয় হীন, না হয় তো মহান বানিয়ে বসি; ঠিক তেমনই সহমর্মিতার অভাবে অন্যকেও হয় আমার থেকে নীচ না তো আমার থেকে উঁচু ভেবে, হয় হেলা, না হয় তোষামোদ করি। ফলতঃ কারো সাথেই আমার সত্য পরিচয় হওয়ার সেতুটা মেলা অসম্ভব হয়ে পড়ে। কি করে হবে, ভাষার শুদ্ধতা নেই। অশুদ্ধ ভাষাতে মনকে জারিয়ে জারিয়ে মনটাকে বিষাক্ত করে বসে আছি যে!
 
শুদ্ধ ভাষা শুদ্ধ ভাবের দোসর না হলে তা উপায় নেই। না চিত্তের না সমাজের!