একটা দুর্দান্ত বই পেলাম কাল, 'ভারতসংস্কৃতি', সুনীতিবাবুর। 'গোঁসাই তুলসীদাস' প্রবন্ধে একটা জায়গায় লিখছেন, "বড়ো কবি, বিশ্বজনের মনের আনন্দ যিনি যোগান, তাঁর রচনা যে -কোনও ভাষায় অনূদিত হ'তে পারে; মূল ভাষার সৌন্দর্য্য না মিললেও, ভাবের মহত্ত্ব নষ্ট হবার নয়। তুলসীদাসের রচনার সম্বন্ধেও সেই কথা বলা যায়। তবে তাঁর ভাষা আমাদের বাঙলার এত কাছাকাছি যে, একটু পরিশ্রম ক'রে পড়লে, তাঁর নিজের রচনার মাধুর্য্য আমরা আস্বাদন করতে পারি। সুখের কথা, বাঙালীর পক্ষে নিজের মাতৃভাষা আর তার লিপির মাধ্যমে তুলসীর সাথে পরিচয় হওয়া অনায়াস-সাধ্য হয়েছে। শ্রীযুক্ত সতীশ্চন্দ্র দাশগুপ্তের বাঙলা গদ্যানুবাদে বাঙলা লিপিতে মূলের সঙ্গে তুলসীর 'রামচরিতমানস' এখন পাওয়া যাচ্ছে..."
কদিন আগে একটা প্রবন্ধ লিখতে গিয়ে লিখেছিলাম, 'তুলসীদাস ভারতের একটা অধ্যায়।'
আমি যখন প্রথম পড়ছি তুলসীদাস, বাঙলায় খুঁজে পাইনি। একে তাকে জিজ্ঞাসা করে তবে কিছু কিছু মানে বুঝেছি। কারণ সুনীতিবাবুর উল্লিখিত বাংলা বইটা তখন ছাপা নেই। পরে গীতাপ্রেস আনল বাংলায় 'রামচরিতমানস'। সেখানেও অবিশ্যি গোলমাল। ওদের প্রথম অনুবাদটা যতটা সুললিত ছিল, পরেরটা নয়। তবু মন্দের ভালো। আর সুনীতিবাবুর ভাষায়, একটু পরিশ্রম করে পড়লে হিন্দীটাই চমৎকার বোঝা যায়। তুলসীদাসের কাব্য নিয়ে বিবেকানন্দও একটা চিঠিতে বলছেন, বিশ্বমানের সাহিত্য।
মুশকিল হল আন্তর্জাতিক ব্যক্তিকে খুঁজে পাওয়া যত সোজা, বিশ্বজনীন মানুষকে ততটা নয়। বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী রামকৃষ্ণদেবের পা জড়িয়ে বলেছিলেন, "এত সহজ হয়েই যত গোল করেছো"
একজন বাঙলী সন্ন্যাসীকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, আপনি যে রামচরিতমানস পাঠ করেন, শ্রোতা কেমন? বললেন, এক বয়স্কা মহিলা একদিন জিজ্ঞাসা করলেন, "মহারাজ, এ বই শেষ হবে কবে? তবেই বুঝুন!"
আসলে চৈতন্যচরিতামৃত, চৈতন্যভাগবত ইত্যাদি পাঠ করা হয় সেকেলে, নয় ব্র্যাণ্ডেড ভক্ত হতে হয়।
(আমার মনে এই দুটো বইয়ের রস না পেলে বাঙলা সাহিত্যের, বিশেষ করে কাব্যসাহিত্যের একটা বিশাল অংশ অধরা থেকে যায়, কিম্বা পাঠক হিসাবে হাতেখড়িই হয় না সঠিক অর্থে) রামচরিতমানসও আমাদের কাছে সেই গোত্রীয় আরকি!
অগত্যা....