সৌরভ ভট্টাচার্য
10 December 2016
প্রতিটা সার্থক উপন্যাসে একটা বড় চরিত্র - ভাগ্য। কি এই ভাগ্য?
সময়ের বিচিত্র গতিপথ। তার ঢেউয়ে আমাদের জীবনগুলো শুকনো পাতার মত ভেসে ওঠে, ছিটকে
যায়, আবার কখনো কখনো ডুবেও যায়। মানুষ ভাবে একটা, হয় একটা। তার নিজের মধ্যে হাজার
প্রবৃত্তির ওঠাপড়া, তাদের মধ্যে একটা আপাত সামঞ্জস্যতা তৈরি করে বাইরের নানান
ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে নিজের চলার মত একটা রাস্তাও তো তাকে বানাতেই হবে! হয় তো কোনো
রকমে একটা রাস্তা সে বানাতে পারলও। কিছুটা পথ চলল। আচমকা বাইরে থেকে এসে পড়ল ঝড়।
সব এলোমেলো হয়ে গেল। নিজের মধ্যেও তৈরি হল চূড়ান্ত
অসামঞ্জস্যতা। যাকে আমরা যন্ত্রণা বলি। আরো গভীর অর্থে যাকে আমরা বলি জীবন।
এমনটাই হয় না? মানুষ লড়ে তো কত লড়ে? কার কার সাথে
লড়ে? তার ভাগ্য আর তার ভগবানের মধ্যে কোনো একটা বোঝাপড়া তো তাকে করেও নিতেই হয়। সে
ভগবান হোক, কোনো প্রবল প্রতাপশালী অদেখা অস্তিত্ব অথবা কোনো প্রবল ক্ষমতা ধারণকারী
রাজনৈতিক আদর্শ। বাস্তবে কার ক্ষমতা কতখানি সে কি বাস্তব নিজেও জানে? বোধ করি, না।
কারণ অবশেষে বাস্তবটা যে কি বস্তু সেটাই গোলাতে শুরু করে। নেশাই তখন এক অন্যতম
আশ্রয় বাঁচার। সে মদের নেশা হোক, কিম্বা ক্ষমতালোলুপতা ছাড়া দার্শনিক ঈশ্বরই হোন।
সে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করার কিছুই নেই, শুধু শান্তি ছাড়া। মানুষ তখন একটা ভীষণ
শূন্যকে খোঁজে যে তাকে পরম সান্ত্বনা দেবে। তবে সে তাকে আর শূন্যতা বলে না। বলে
নির্বাণ, বলে মুক্তি। মানুষের অন্তর্জগতের শূন্যতা আর মহাকাশের শূন্যতা তো এক
জিনিস নয়!
সময়ের বিচিত্র গতিধারার এমনি একটা মরমী দলিল -
ভগবানের দুষ্টুমি, লেখক - এম মুকুন্দন, মুল ভাষা - মালায়ালম, অনুবাদক - বাসবী
চক্রবর্তী, প্রকাশক - সাহিত্য একাদেমী, মূল্য - ১৫০/-
কিছু কিছু বই হয় না?! পড়ার শেষে শুধু একটা গভীর কান্নাকে স্পর্শ
করে নিজের মধ্যেই লীন হয়ে যায়, এ সেরকম একটা বই। কাঁদতে ইচ্ছা করবে না, কারণ কিছু
চোখের জল মাটিতে পড়লে অপচয়, মানবজমিন আবাদ করতে কাজে লাগে তা। সব শেষে এটাই বলি,
আমি খুব একটা বড় ডিগ্রীধারী মানুষ নই। কোনো বিষয়েই 'বিদ' হয়ে উঠতে পারিনি। তাই কোন
'ইজমে' কোন লেখা পড়ে সে বিচার করার যোগ্যতা আমার নেই। জ্ঞান হওয়া ইস্তক যা দেখছি,
বুঝছি, অনুভব করছি, তা মানুষের অতিরিক্ত আর কিছু না। সেই বোধেই যা পাই তা দু'হাত
ভরে নিই, যা পাই না দুচোখ ভরে দেখি। জীবন অনেক কিছু কেড়েছে, ভবিষ্যতেও কাড়বে সে
বিশ্বাস আমার আছে। যত কাড়ে তত একটা জিনিস দিয়ে যায় - অভিজ্ঞতা। জীবনকে ভালোবাসার
আরো তুমুল আকুতি। মৃত্যুকে নিশ্চিত জেনে জীবনের গালে গাল লাল করা একটা তীব্র চুমু
খাওয়ার ইচ্ছা। যদিও জানি সে দাগও যাবে মিলিয়ে। তবু... একটা ঢেউ সাগরের কাছে আর কি
আবদার করতে পারে...