তসলিমা লিখছেন
তসলিমা লিখছেন -
তবুও আমি নাইব
সাবান আছে?
নেই
শ্যাম্পু?
তাও নেই
টাওয়েল?
নেই
গামছা?
সেও নেই
টব আছে?
না, নেই
বালতি, কিম্বা গামলা?
নেই নেই, সেও নেই
আশেপাশে পুকুর?
নেই
দীঘি
নেই
নদী
নেই
তুমি না
তুমি না
তোমায় বিশ্বাসঘাতক করেছি আমি
মেঘলা আকাশে ছাতা খুলতে বলে
ঝরণার জলে ঢেউ গুনতে বলে
তোমরা কারা?
অবশেষে প্যাডে মাসিকের রক্তের দাগে শারদীয়া উৎসবের অভিবাদন জানাতে হচ্ছে!
আমার ভয় হচ্ছে, নারীরা কি ভুলতে চলেছে তাদের জননতন্ত্র ছাড়া একটা মস্তিষ্ক নামক অঙ্গও আছে। এ দেশে আশাপূর্ণাদেবী থেকে মাতঙ্গিনী নামক অনেক শ্রদ্ধেয়া মস্তিষ্ক জন্মেছিলেন। আজও কান পাতলে তাদের কণ্ঠস্বর কানে শুনি। তোমরা কারা?
তুমি অন্য কথা বলো
যে কথা বলোনি কোনোদিন
আজ নতুন করে বলতে চেয়ো না
স্রোতে ভাসানো কাগজের নৌকা
কোন বাঁকে অদৃশ্য হয়েছে
মনে নেই আর
তুমি অন্য কথা বলো
তুমি হয় তো আমিষে সৎ
I have experienced two types of hypocrisy - civilized and uncivilized.
I have seen some non hypocrites, who are in asylum now, as an example of failure of medical science to treat their non hypocrisy.
তুমি আকাশকে বর্ষা বলো
তবু জীবিতের মত ভাবি
কেন কথায় কথায় এত মৃত ব্যক্তিদের প্রসঙ্গ
কেন বারবার কবর খোঁড়া, চিতার ভস্ম হাতড়ানো
আমি তুমি দু'জনেই তো বেঁচে আছি এখনও
এসো না কথা বলি, না হয় দ্বিমত হই
তবু জীবিতের মত ভাবি!
তুমি থাকবে না
একদা এক কালে সামগান ছিল। একদা এক কালে মৈত্রী-করুণা-নির্বাণ ছিল। একদা এক কালে আজান ছিল। একদা কালে ওয়াহে গুরু ছিল।
একদিন মাটি ভেঙেছিল। একদিন নদী ভেঙেছিল। একদিন হৃদয় ভেঙেছিল। একদিন বিশ্বাস ভেঙেছিল। একদিন মানুষ ভেঙেছিল।
...
তুমি কি বার্তা পাঠিয়েছিলে
তোমরাই জানো
কোন রক্তের ঘনত্ব বেশী
কোন প্রাণেতে আনুগত্য
কোন কোন দেহ প্রাণহীন হলে
তোমরা তাকে শহীদ বলো
তোমরা জানো
কখন মাইকে গলা চড়ে
ভোকালকর্ড শীতঘুমে যায়
কখন কাকে তুচ্ছ করে
হঠাৎ ভীষণ উৎসব পায়
তোমরা জানো
তৃষা-নিশা
মনের উপর বোধের নিয়ন্ত্রণ থাকবে - এমন কথা ছিল সভ্যতার মূলে। কিন্তু সভ্যতা বলতে কি বোঝানো গেল? বলা হল যা মার্জিত, যা ভদ্র। ভদ্র অর্থাৎ মার্জিত। যা দোষমুক্ত। দোষ কি?
তিতিল নয়ন-নীরে ভীম কলেবর
মহাকাব্যের একটা সুর থাকে। হঠাৎ মনে এলো সেই ক্ষণটার কথা --- গভীর রাত; একজন নারী একজন পুরুষের সাথে গোপনে দেখা করতে যাচ্ছেন, নিজেকে রক্ষার বিনতি জানানোর জন্য। কারণ কীচক তাকে বিরক্ত করছে। কীচক তার মর্যাদায় হাত দিতে চাইছে। কার মর্যাদায়?
তারপর
যতটা আকুতি, আর যতটা সংযম নিয়ে ডাকত, "কেউ আছেন নাকি... ভিক্ষা পাই গো"... ততটা ভিক্ষা কোনোদিন পেত না।
তর্পণ
...
তুমি অর্থ খুঁজলে
তুমি অর্থ খুঁজলে
আমি খুঁজলাম অনুভব
তুমি মিথ্যা নিলে
আমি নিলাম সত্য
তুমি দোপাটি লাগালে
আমি লাগালাম গম
তুমি সমুদ্রে ঘুরতে গেলে
আমি বেড়াতে গেলাম জঙ্গলে
তুমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে নদীকে বললে, এবার?
আমি উদাস হয়ে আকাশকে বললাম, ধুর
তোমার পাশে বসে থাকার একটা যন্ত্রণা আছে
তোমার পাশে বসে থাকার একটা যন্ত্রণা আছে
বিন্দু বিন্দু সময়
যেন ঘামের মত কপালে জমে
মিলিয়ে যাচ্ছে
তোমায় অনুভব করতে পারছি
শোনো,
তুমি জানলার ধার থেকে সরে দাঁড়াও,
প্লিজ
তক্ক বনাম তর্ক
...
তুমি যদি ছুঁয়ে থাকো
তুমি যদি ছুঁয়ে থাকো
হাতের সবকটা রেখা
তোমার গন্তব্যের সাথে জুড়ে দিতে পারি
তুমি আমার বিদ্বিষ্ট নও
তুমি আমার বিদ্বিষ্ট নও
তুমি বজ্র বিদারিত
ক্লিষ্ট শূন্য গহ্বর।
আমার অভীষ্টের পথ বিদ্বিষরহিত,
অস্তমিত সূর্য
তোমার রুদ্ধ চেতনার ভাষান্তর
তুমি কি জানো?
আমার অবকাশযাপন নিঃসংজ্ঞ
তুমি কি জানো?
দ্বিধান্বিত ভাবনার নিঃসরণ
একলা আকাশে
নিঃশব্দ পদচারণ
তুমি কোথায়?
তাই তোমার ধর্ম জানি না
আমি শুধু তোমার চোখের মণির দিকে তাকাই
তাই তোমার ধর্ম জানি না
আমি শুধু অন্ধ হয়ে তোমার স্পর্শে মেখে থাকি
তাই তোমার ধর্ম জানি না
আমি শুধু তোমার সুবাস লাগা বাতাসে বেঁচে আছি
তাই তোমার ধর্ম জানি না
তোমার ঠিকানা আছে
তোমার ঠিকানা আছে, বিশ্বাস করি না
অকারণ যন্ত্রণারা ভাষার সান্ত্বনা পায় না
অন্যমনস্কতাই জীবন
শুধু তোমার চোখেই জীবন সরাসরি তাকায় না
তোমার শহরেও ভোর হল
ঝড়ে সব ক'টা রজনীগন্ধা ক্ষেতে শুয়ে পড়ল
এমনই প্রচণ্ড ঝড় হল
পরেরদিন, যেই না সুয্যি উঠে ফুটফুটে সকাল হল
তারা সব্বাই ধুলো-জল ঝেড়ে
হুররে করে, সোজা হয়ে উঠে দাঁড়ালো
তুফান পেলে বাঁচি
তুমি?
একপেশে মন খারাপ
বড্ড জেদি
বন্ধ দরজা
পাতা পড়ার শব্দেও কানখাড়া
তুমি?
তোমার কণ্ঠস্বরে
তোমার কণ্ঠস্বরে একটা খোলা মাঠ আছে
আমি মাঝখানে দাঁড়িয়ে গভীর শ্বাস নিয়ে বলি, আঃ!
তোমার কণ্ঠস্বরে একটা শীতল দীঘি আছে
আমি চোখেমুখে জল ছিটিয়ে বলি, শান্তি!
তোমার কণ্ঠস্বরে একটা তারাভরা অমাবস্যা আছে
আমি চোখ বন্ধ করে দু'হাত ছড়িয়ে ভাসতে ভাসতে বলি, এলাম।
তোমার কণ্ঠস্বরে বিষণ্ণ দুপুরে
তখন আমি অনেক ছোটো
(আজ সুমনের জন্মদিন। এই লেখাটা ওর জন্যেই, আমার ছোটোবেলার একটা টুকরো। এর থেকে বেশি নিজের আর কি দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব তাকে, আমার এই লেখালেখি যাবতীয় কিছুর মূলেই যার প্রেরণা-উৎপাত।)
তোমার প্রতিবাদ
তোমার প্রতিবাদ
ঝোড়ো হাওয়ায় দাবানল লাগিয়ে
আমার প্রতিবাদ
ঝোড়ো হাওয়ায় ঘরের কোণের
প্রদীপ আগলিয়ে
তবু তুমিই
আলোকে গভীরে যেতে বলো
আরো গভীরে
যেখানে মনের বিস্তীর্ণ আঁকিবুঁকি
বকের পায়ের মত ছাপ ফেলে
যেখানে হেঁটে গেছে তোমার ব্যক্তিগত ইতিহাস
শামুকের মত মহাকাল হেঁটেছে তার পিছুপিছু
তুমিই তো
শুধু তুমিই
যখন সব মিথ্যাগুলো
...
তুমি
যখন কেউ মুঠো ভরে
কেউ সম্পূর্ণ না ভরা মুঠোয় ফিরে যাবে
তুলনা
নারকেল, আম, অশ্বত্থ, কৃষ্ণচূড়া সব গাছগুলো
জ্যোৎস্না হয়ে দাঁড়িয়েছিল
...
তুচ্ছতার ভার
মানে বলতে পারোনি হয় তো
তোমার তো অনেকরকম ব্যস্ততা
...
তর্পণ
মদনপুর স্টেশানে বাউল বসে। ভীষণ অসুস্থ। পাড়ার একটা ছেলে পৌঁছে দিয়ে গেছে। টোটো করে। মানুষের উপর অগাধ বিশ্বাস বাউলের।
...