তসলিমা লিখছেন -
“Sad to see women held protests in Kerala against the Supreme Court's verdict allowing entry of women at the Sabarimala Temple.Yes,women can have patriarchal mindset,they can be masochists & misogynists. I should trust progressive men,hope they will fight for women’s equal rights.”
যে রাজ্য শিক্ষায় সর্বাধিক এগিয়ে। যে রাজ্যে বামপন্থা আন্দোলন প্রথম ই ম এস নাম্ববুদিরিপাদের হাত ধরে নিজের মাটি তৈরি করেছিল ভারতে। যারা প্রথম ভারতে বর্ণপ্রথার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমে একটা উন্নত সমাজ গড়ার কাজে হাত দিয়েছিল, সেই রাজ্যের এই ছবি কেন? আরো মজার কথা হচ্ছে তাদের হয়ে কারা পিটিশান আনছেন? Chetana Conscience of Women a Delhi Delhi based NGO for empowring women. এটা আয়রনি।
তবে পুরুষতন্ত্র একার জোরে টিকে আছে তা নয়? সেখানে নারীদের সগর্বে মেনে নেওয়ার একটা বড় ভূমিকা আছেই? তবে কি নারীবাদের এক অংশ পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে ততটা লড়াই না যতটা পুরুষতন্ত্রের দৃষ্টি আকর্ষণের একটা কৌশল মাত্র? কারণে এই রায়ের বিরুদ্ধে, পরকীয়া রায়ের বিরুদ্ধে বেশি সোচ্চার হয়েছিলেন মহিলারাই। এমনকি একজন মহিলা বিচারপতিও।
নাকি এ লড়াইটা ধর্ম বনাম নৈতিক অধিকার। যারা দেবতার রোষে বিশ্বাস করেন, তারা যুক্তির ধার ধারবেন না এ বলা বাহুল্য। আর যেখানে যুক্তি নেই সেখানে প্রথাই শেষ কথা। বিধানই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। ভয় সেখানে দুরকম। এক অতিজাগতিক অভিশম্পাত। দুই, প্রথা হারালে অস্তিত্ব হারাবার ভয়। কারণ সেই প্রথার সাথে আমার অস্তিত্বের ব্যাখ্যা জড়িয়ে। এতদূর একটা ব্যাখ্যা পাচ্ছিলাম। কিন্তু এর সাথে ওই সংগঠনেরর ভূমিকা কি? বহু মানুষের কথা যদি অযৌক্তিক হয়ে থাকে, মানুষের সাম্যের অধিকারের বিরুদ্ধে হয়ে থাকে, তবেই তাকে স্বীকৃতি দিতে হবে?
মনে আছে আম্বেদকর এই হিন্দু অ্যাক্টের বহু-বিবাহ রদ ইত্যাদি আনতে গিয়ে ইস্তাফা দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। তখন নানা মুনি, তথা কথিত নানা মহাপুরুষ অ্যান্টি হিন্দু অ্যাক্ট, হিন্দুধর্ম রসাতলে গেল বলে মিটিং, মিছিল ইত্যাদি করে একশা হয়েছিলেন। রামলীলা ময়াদান আর এস এস এর হুংকারে কেঁপে উঠেছিল। তখন কিছু প্রগতিশীল হিন্দু সামনে এসে দাঁড়িয়েছিলেন বলে সে অ্যাক্ট পাস হয়েছিল, যদিও ততদিনে আম্বেদকর এসব থেকে অনেকটা দূরে। মুসলমানেদের হয়ে সে সময়ে দাঁড়ানোর অবশ্য কেউ ছিল না সেদিন, তাই সেখানে সামাজিক প্রথার প্রাচীন ব্যাখ্যাই আধুনিক ব্যাখ্যা হিসাবে থেকে গেল, কিন্তু সে আলাদা কথা।
একজন দেবতা যিনি রজঃস্বলা নারীর মুখদর্শন করেন না, তাঁকে পুজো দিয়ে মানুষের কল্যাণ হয়, সে মানুষের মধ্যে নারী আছে কি? পৈতের সময় আমাকে বলা হয়েছিল তিনদিন এমনকি মায়ের মুখও দেখা যাবে না। আমি সে ঈশ্বরে বিশ্বাস করিনি। পৈতে ফেলে দিয়েছি। আমায় বলা হয়েছিল অমুকের ছোঁয়া, তমুকের ছোঁয়া খাওয়া যাবে না। মানিনি, ঈশ্বরকে মুক্তি দিয়েছি মাথা থেকে। এ জোর মার্ক্স লেনিন পড়ে পাইনি। পেয়েছি লালন কবীর উপনিষদ থেকেই। আমাদের দেশের এও তো আরেক ধর্মের কথা। তবে এ কোন ধর্মের কথা, যারা বিশ্বাস করতে পারে অনায়াসে পৃথিবী স্থির আর সূর্য তার চারদিকে ঘুরছে তাদের? এ অচলায়তন ভাঙবে। অবশ্যই ভাঙবে। তবে সব ধর্ম, প্রথার উপরে রাষ্ট্র, যদি সে দুর্বল হয় তবে কি হয় তার উদাহরণের জন্য ইতিহাস আর আমাদের চারপাশের দিকে তাকালেই চলবে। কোনো ধর্মগ্রন্থ যেন দেশের আইনের উপরে না ওঠে। আর কোনো দেশের আইন যেন মানবিক সাম্যের বাইরে না যায়, তবেই মঙ্গল। ভারতের মূল শক্তি তার সেক্যুলারিজম, সেই যদি টলে তবে বিপদ। সে মন্দিরে যে ঢুকবে না ঢুকবে না, কিন্তু যদি কেউ ঢুকতে চায় তাকে বাধা দেওয়ার যে কেউ না থাকে শুধুমাত্র সংস্কারের অজুহাতে!