Skip to main content

        যতটা আকুতি, আর যতটা সংযম নিয়ে ডাকত, "কেউ আছেন নাকি... ভিক্ষা পাই গো"... ততটা ভিক্ষা কোনোদিন পেত না।
        আজও পায়নি। বটগাছের তলায় দাঁড়িয়ে, তুমুল বৃষ্টি হচ্ছে যে। একটা নরম, খোসা কালো হয়ে যাওয়া কলা ফলওয়ালা দিয়েছে, ওটা এমনিই ফেলা যেত। বসে বসেই খাচ্ছিল। একটা এমন বাজ পড়ল যে লোকটা ঠোঙা ফাটার মত, টপ্ করে মরে গেল। আধখানা কলা খাওয়া বাকি থেকে গেল। গাছের তলায় উবু হয়ে পড়ে রইল, বৃষ্টির জল ওকে ঘিরে নদী বানিয়ে ড্রেনের মধ্যে পড়তে লাগল, ও যেন একটা চর নদীর মাঝখানে। ওর আত্মাটা এমন জোরে ছিটকালো যে বটগাছটার গায়ে জন্মের মত চিপকে গেল।

        তারপর কতগুলো বর্ষা গেল তার ইয়ত্তা নেই। ও চিপকেই রইল। গাছটা কাটা হবে, এখানে একটা ইন্ডাস্ট্রি হবে। ওর খুব আনন্দ হল, চাকরি হবে। কিন্তু গাছটা কাটতে গিয়ে ওকে বারো টুকরো করে ফেলল। ও ঝরে ঝরে মাটিতে পড়ল। আবার প্রচণ্ড বৃষ্টি। ওর টুকরোগুলো ভাসতে ভাসতে ভুড়ভুড়ি কাটতে কাটতে ড্রেনের দিকে এগোতে লাগল। কিন্তু ড্রেনে পড়ে গেলে সর্বনাশ, ও কোনোদিন খুঁজে পাবে নিজেকে? প্রাণপণে স্রোতের মুখ বদলানোর চেষ্টা করল, হল না। ড্রেনে পড়ল। পাঁকে মিশল। কত বছর কাটালো তার ইয়ত্তা নেই। কতগুলো বর্ষা গেল। লোকটা অনেকবার ভাবল এবার গঙ্গায় মিশবে। মিশল না। পাঁকের তলায় দেবে যেতে যেতে, দেবে যেতে যেতে শক্ত পাথরের মত হয়ে গেল।
        সেই পাঁক তোলা হল পঁয়ত্রিশ বছর পর। পাঁক ভাগাড়ে ফেলা হল। তিন বছর পর সে একটা ছোট্টো চারাগাছ হয়ে জন্মালো। চারমাস পর তার কুঁড়ি হল। আকাশের দিকে তাকালো, চারপাশের ভাগাড়ের নোংরা, পচা জিনিস দেখল। ভালো লাগল। শিকড়টা যতটা দূর পারলো মাটির সাথে আঁকড়ে নিল। দেখতে দেখতে আকাশ কালো করে মেঘ হল। হুড়মুড়িয়ে বৃষ্টি নামল। সারা শরীর মন প্রাণ দিয়ে ভিজল। এই প্রথম যতটা আকুতি, যতটা ইচ্ছা, তার চাইতে বহুগুণ বেশি পেল। একটা কুকুরকে দেখল বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে ছাদ খুঁজছে। গাছটা বিমর্ষ হল। সে কুকুরকে বলল, আর কয়েকটা বছর দাঁড়া।
        ঠিক সেই সময় একটা গরু ঢুকলো ভাগাড়ের পশ্চিম দিক থেকে ভিজতে ভিজতে।