কবীর দোঁহা
মূর্খ রে তুই না বুঝে,বাইরে খুঁজিস মরে।।
কবীর দোঁহা
মালী সেঁচুক শত ঘড়া,ঋতুতেই ফল উপজায়।।
কবীর দোঁহা
বৈদ্য বেচারা কি করে,কত আর বিধান জানায়।।
কেউ ডাকে না
কেউ না।
আজকাল বড় কেউ ডাকে না কাউকে।
প্রয়োজন শুধু ছিনিয়ে নিতে আসে।
তাকে কি ডাক বলা যায়?
না বোধহয়!
...
কে যেন
কে যেন বলে গেল-
ভাঙা-তালি জোড়া দিতে দিতে
কত বেলা হল খেয়াল আছে?
মুখ তুলে চাইলাম
কেউ কোত্থাও নেই
আবার শুনলাম-
বাইরে যা পাবে,
তা খণ্ডিত, ক্ষুদ্র, অসম্পূর্ণ।
খোঁজ ভিতরে,
পাবে তাঁকে
যিনি অখণ্ড, মহৎ, পূর্ণ।
অবশ হল শরীর মন
ভাঙা টুকরোগুলো পাড়ে রেখে
নদীতে ডুব দিলাম।
কথা-কলি
নুনের কৌটোয় জল
চিনির কৌটোয় পিঁপড়ে
চালের কৌটোয় পোকা
পাশাপাশি বসে গল্পাচ্ছে।
নুন বলল, কি জল!
চিনি বলল, কি পিঁপড়ে!
চাল বলল, কি পোকা!
নুন চিনিকে বলল, চালের পোকায় কি গন্ধ!
চাল নুনকে বলল, চিনির পিঁপড়েরা কি চেঁচায়!
চিনি চালকে বলল, নুনের জল কি নোনতা!
নুন বলল, তোর পোকা!
চিনি বলল, তোর জল!
চাল বলল, তোর পিঁপড়ে!
কি হলে যে ভাল হত
কি হলে যে ভালো হত, বুঝতে পারি না-
কেন বিশ্বাস করব?
কেন বিশ্বাস করব?
তোমার ছায়া আর তুমি ভিন্ন রাস্তায় হাঁটো।
পাতকুয়োতে বালতি ফেলে
বালতি তোলার কাঁটা খোঁজো নিজেই।
তোমার কথাগুলো ঝাঁঝরা ধরা এত-
'মানে' গুলো সব গলে গলে পড়ছে, বোঝো?
তোমার পায়ের শব্দে বেড়াল চমকে ওঠে
তোমার আশ্বাসে আমার নিউরোনগুলো
হাই তোলে আড়ামোড়া ভেঙে
কালবৈশাখী
উদভ্রান্তের মত অনেকটা রাস্তা ছোটা হয়ে গেছে
ততটা কাছাকাছি পৌঁছানো যায়নি যদিও
চোরাবালিতে বেশ খানিকটা ডুবে আটকে।
আকাশটা পুরোপুরি বিদায় জানাতে না পেরে মাথার উপর থমকে দাঁড়িয়ে আছে।
কি জানি
কেউ কেউ আমায়
ডানদিকের গলিতে আসতে বলে
বাঁ দিকের গলিতে সরে যায়।
আমি দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে
এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে
তাকে বাঁদিকের গলিতে
পাই, আচমকাই।
লজ্জায় চোখ নামাই,
কি জানি সে ইচ্ছা করে ভুল বলেছিল
নাকি আমি ভুল করে ভুল শুনেছিলাম?
কিছু কথা
আমার সব কথা অক্ষরের মত না, শব্দের মত না।
কিছু কথা কৃষ্ণচূড়া ফুলের মত
কিছু কথা বর্ষার পাতাঝরা জলের মত
কিছু কথা ফসল তোলা ক্ষেতের মত
কিছু কথা মাটিতে ঝরা, তবু না যেতে চাওয়া ফুলের মত
কিছু কথা টিন কাটা তীক্ষ্ণ আর্তনাদের মত
কিছু কথা শেষ ট্রেন চলে যাওয়া প্ল্যাটফর্মের মত
এরকম আরো অনেক অনেক কথা
যার শব্দ অভিধানে নেই, বলব কি করে?
কিম্ আশ্চর্যম!
পার্কে এক যুবক এক যুবতীর ঠোঁটে চুমু খেল।
তার কিছু দুরে নর্দমা থেকে এক মৃতপ্রায় মানুষকে কোলে তুলে নিলেন এক বিদেশী সন্ন্যাসীনী।
অভিধান বলল, প্রেম।
ক্লাসে এক ছাত্রের গায়ে আরেক ছাত্র দিল পেন ফুটিয়ে।
আর ওদিকে এক পারমাণবিক বোমে এক নিমেষে লক্ষ মানুষ পড়ল কালের গ্রাসে।
অভিধান বলল, হিংসা।
ধন্য অভিধান, আর তার শিষ্যেরা।
কিচ্ছু হয় নি ক্ষতি
যখন সে গেলো
এমন ধুলো উড়লো,
ভাবলাম
বুঝি বা সব হারালাম
ধূলো ওড়ার পর
থিতিয়ে শান্ত হল
দেখি কিচ্ছু হয় নি ক্ষতি!
খানিক ধুলো নাকে চোখে গেল।
কোথায় zaবা
'ভাল কথা বলো।'
'মিথ্যা কথা বোলো না।'
কমা
দুটো দাঁড়ির মধ্যে কটা কমা থাকে?
দীর্ঘশ্বাসের সত্যিই কোনো প্রতিশব্দ হয়?
কিছু চিঠি আজও অলিখিত -
মনের খামে ভরা
সত্যি করে বলো
সব চিঠিই কি ডাকবাক্সে যায়?
কবিতা তোমার সাথে
১
----
কবিতা,
তুমি আমার ঈশ্বর আর প্রেমিকার
মাঝখানে দাঁড়াও
আমি একছুটে -
হাতের কটা কাজ সেরে আসি
কিছু কথা আছে।
২
------
কবিতা,
তোমার গায়ের থেকে-
কিছু পারিজাতের রেণু ঝরে যাক
কিছু ধুলোবালি থাকুক গায়ে
না হলে তোমার হাত ধরতে সংকোচ হবে
আমি ময়লা মেখে যে!
কুন্ঠিত
শুকনো বালিতে আছড়ে পড়ল ঢেউ
সন্ধ্যাকাশে ঘরে ফেরা পাখির ডানার আঁচড়
হাল্কা হাওয়ায় স্মৃতির পর্দার কেঁপে ওঠা
আনমনে ভুলে যাওয়া কথার কুন্ঠিত আসা
এক বিষন্ন ফেলে আসা সন্ধ্যের মুখোমুখি আমি
বললাম, কেমন আছো?
আমার সারা ঘরে অচেনা ফুলের চেনা গন্ধ ছড়িয়ে
তার উছলে উঠল চোখ
কালবৈশাখী
বুকে হাত রাখল
আমার হৃৎপিন্ড ছুঁয়ে বলল-
এত তাড়াতাড়ি ছোটে?
আমি বেগ কমালাম
আবার এল
হাত রেখে বলল, এত ধীরে?
বেগ বাড়ালাম
সেবার বলল
হয় নি এখনও
কাসন্দী
-শুধু ঠকলাম
-কে ঠকালো
-তার চাইতে জানতে চাও কে ঠকালো না
-বেশ। তাতে কি হয়েছে? খুব ক্ষতি হয়ে গেছে কি?
-তা হয় নি! আমি কাউকে বিশ্বাস করতে পারি না এখন
-কি মনে হয়?
-মনে হয় মুখোশ সব
-ছিঁড়ে ফেললেই হয়!
-একটা আলপটকা কথা বললেই হয়! কে ছিঁড়বে? আর কত ছিঁড়বে?
-তা হলে উপায়?
কালবৈশাখী
একলা একটুকরো হাওয়া আমার শোয়ার ঘরে
আমার দিকে তাকিয়ে বলল, চেনো আমায়?
আমি স্মৃতির জানলা খুলে, যতদূর চোখ যায় চাইলাম, চিনলাম না
বললাম, কে তুমি?
সে বলল, তোমার দীর্ঘশ্বাস
কে তুমি?
একটা হারানো বিকাল আমার ছাদে এসে দাঁড়াল
একটা কাক আর একটা বুনোফুলের গন্ধ নিয়ে
আমার সামনে দাঁড়িয়েই থাকল
নাছোড়বান্দা সেলসম্যানের মত
যতক্ষণ না পুরোনো, রঙ চটা, জং ধরা তালাটা খুললাম
কেন রে এই দুয়ারটুকু
মনে হয় মৃত্যু সবচেয়ে বেশী সার্বজনীন। সকাল বেলায় নিজের কাজে ধরাবাঁধা ছকে ব্যস্ত, এমন সময় একজন খবর দিল পাশের পাড়ার একজন মিস্ত্রী মই থেকে পড়ে মারা গেছেন। কয়েকদিন হাসপাতালে ভর্তিও ছিলেন নাকি। তার একটু পরেই খবর পেলাম কলকাতার খুব নামকরা একজন চিকিৎসকের বাচ্চা ছেলেটা ICU তে জীবন মরণের স্পর্শরেখায় লড়ছে।
কারাগার
জানতাম না তো
একি অন্ধকার!
আমি হাতড়ে হাতড়ে দরজা খুঁজছি।
...
কথা
সে জিজ্ঞাসা করল, আমি না থাকলে কি করিস?
...
কাপুরুষ ও মহা পুরুষ(?)
যখন বউ এর গালাগালি খায়
তার মায়ের মুখটা মনে পড়ে
সে মনে মনে বলে, বলেই চলে, বলেই চলে
...
কাছে দূরে
যতদূরেই থাক, তবু আমার বুকে পড়বে ছায়া।
...
কবীর দোঁহা
রে দুষ্ট মন, একই ক্ষণে রহিতে চাহ দুইদিক।।
...
কি যাতনা যতনে
যে থাকে, সে টেনেবুনে পাঁচ-দশ বছর আরও থাকে।
সেও যেত, কিন্তু তার রয়েছে বেজায়
পিছুটান, কেউ-কেউ রহস্য করে যাকে
...
কিছুটা
কয়েকটা গাছ চিনি
আর চিনি কয়েকটা পাখি
...
কিচ্ছু না
যা হবে সারা জীবনের সাধনা।
...
কিছু মানুষ
বাড়িতে থাকে না, অফিসে থাকে না
ক্লাবে থাকে না, মাঠে থাকে না
বর্ষায় থাকে না, বসন্তে থাকে না
...
কাপ
ওই ঠোঁটে না ওঠা কাপ দুটোর বুকে
ওদের আর টেবিলে রেখো না
...
কাকে বলে সুখ?
রাম শ্যাম যদু মধুর ওপর থেকে
এমনকি নিজের শরীরের মনের ওপর থেকেও
...
কে সাজায় তোকে?
তোর সাজের বাক্সটা রেখে আসি
এভারেস্টের চূড়ায়, না তো
...
কোলাকুলি
নদীতে ভাসিয়ে
আমার সামনে এসে দাঁড়া।
...