ক্ষ্যাপার হাঁক
কুম্ভীরাশ্রু
করবী
একটা করবী বৃন্তচ্যুত হয়েছিল সেই মুহুর্তে
কৌশল
কথা
না তো। আসেনি তো কেউ?
শাড়িটাকেই ঘিরে ভাঙা বারান্দার উত্তর দিক আটকানো
পৌষের শীত গো মা, মানবে কেন?
আরে আরে ডেকো নি গো!
ও রাত আটটাতেই ঘুমুতে যায়।
কি খায়?
থাকলে খায় ভাত
না হলে খায় মুড়ি
হে হে...মাঝে মাঝে বাতাসও খায়
কোথায় শোয়?
ওই মাদুর পেতে। নিকানো বারান্দা।
ঠাণ্ডা লাগে?
না তো, সারা শরীরে কড়া পড়ে
ক্রিসমাস ইভ
তোমার শুধু ঘরের কোণ নেই
তোমার আছে এক মহাকাশ সাগর
তোমার শুধু মাটির প্রদীপ নেই
তোমার আছে এক নীহারিকা আলো
বুকে তোমার, শুধু হিংসা রক্তচক্ষু নেই
আছে দেখো, করূণামাখা ক্ষমা
প্রেম কি শুধু পানাপুকুরের ডোবা?
সে ত্যাগে সেবায় ঝরণা উছল ধারা
পূজা, শুধু আচার-বিচার-নিয়মে নয়
সে নিজের মধ্যে বিশ্বকে খুঁজে পাওয়া
ক'টা সাঁতারে
মাতালটা পুকুরের ধার ঘেঁষে বসে
চিৎকারের সাথে বেরোচ্ছে, বিষবমি,
অশ্লীল শব্দ বন্ধনে
শুনছে কে?
শান্ত পুকুর সন্ধ্যার অন্ধকারে একলা সাক্ষী
কিছু জোনাকি, আধ-ঘুমন্ত কুকুর
কুঁড়ি
কেনার কথা মনে থাকে না
বয়স্কা ভদ্রমহিলা রোজ রাতে ফোনটা মাথার কাছে নিয়ে শোন। চার্জারটা হারিয়ে গেছে বহুদিন। কেনার কথা মনে থাকে না।
কিছু মধু এখনো বুকে আছে
পায়ের তলায় মাটি ছিল না কোনোদিন
মাথা ভরা কল্পনাও ছিল না ভিড় করে
আমার চারদিকে, চারপাশে
শুধু ইচ্ছা ছিল কিছু
এখনো আছে
কথা ছিল
কথা ছিল একসাথে যাব স্নানে
দীঘির জলে
একসাথে দেব ডুব
একসাথে উঠব পাড়ে
কিনারা
রাস্তার দুটো ধারই রাস্তা বানায়
না হলে তা মাঠ
নদীর দুটো তীরই নদী বানায়
না হলে তা বন্যা
দিগন্তের রেখাই করে আকাশ মাটিকে আলাদা
দুজনের হাতে হাত মিলিয়েই
আমার কিনারা আমায় ঘিরে তুমি
না হলে আমার 'আমি' দিশাহারা
কাঁচা বাদাম
এক প্যাকেট বাদাম। চিবোচ্ছেন, ভাবছেন। ভাবছেন, চিবোচ্ছেন। ভাবনাটা বেশ পুডিং-এর মত জমে আসছে। বেশ একটা বুড়ির চুলের মত মিহি সুখ আপনাকে আচ্ছন্ন প্রায় করে ফেলেছে... এমন সময় অকস্মাৎ আপনার মুখে এসে পড়ল - পচা বাদাম!
গেল না পাকা আম মাটিতে থেঁতলে পড়ার মত, আপনার সুখ!
কিছু হারাওনি
হাতের মুঠোয় কটা কুঁড়ি ধরা ছিল
ভাসিয়ে ছিলাম জলে
ওরা স্বপ্নেতে আসে ফুল হয়ে ফুটে
"কিছু হারাওনি" যায় বলে
কয়েক বিন্দু জল
কুহক
অনুতাপ তোমার দরজায় আনে
অহংকার দরজার সামনে এসেও
ফেলে গুলিয়ে
কুতর্ক পথের ধুলো উড়িয়ে করে অন্ধকার
দু'চোখ ভরা মোহাঞ্জনের
কেন?
তোমার সাজানো সংসারে
খুব সন্তর্পণে চলি
আমার হাতে পায়ে লেগে
এটা ওটা ছিটকে পড়ে
এধার ওধার
কিছু জিনিস
বে-আব্রু হয়ে পড়ে,
আমার গায়ের বাতাস লেগে।
কি?
সত্য কি?
কে জানে?
কে বোঝে?
নিশ্চুপ সব
সত্য কি ভিতরে?
অনুভবে?
সত্যি কি বাইরে?
যুক্তিতে?
যে খোঁজে
সে বোঝে
যে বোঝে
সে কই?
সে মিলিয়ে গেছে
রোদে জলে বাতাসে আকাশে
কে?
জল পড়ল
টুপ
মন বলল
চুপ
জল বলল
কিসের ঢেউ?
মন বলল
এল কি কেউ?
কিছু কথা
কিছু কথা ঝেড়ে ফেলা যাক
কিছু বিশ্বাসের কাছে আবার ফিরে যাই
কিছু নালিশকে বলি, যাও
পুরোনো পথে নিজের পায়ের ছাপ খুঁজে
কিছুটা পথ আবার হেঁটে আসি
কালাম সাহেব
ডঃ আব্দুল কালাম মহাশয়,
কৌতুক
জোকস পড়ে যতই হাসি পাক না কেন, ছোটোবেলার বন্ধুদের সাথে- সেই অকারণে, অসময়ে, ভুলভাল জায়গায় (তা স্কুলের প্রার্থনার লাইনই হোক, কি খুব কড়া স্যারের ক্লাসই) হাসতে হাসতে, তার চেয়েও বেশি, হাসি চাপতে চাপতে চোখের জলে, নাকের জলে হওয়ার অনুভূতিটার খুব অভাব বোধ করি।
কৃতজ্ঞ
জ্যোৎস্নাকে পৃথিবীর বুকে আছড়ে পড়তে দেখেছি।
জানি না, কে কার কাছে কৃতজ্ঞ থাকে।
জ্যোৎস্না পৃথিবীর কাছে?
সে বুক পেতেছে বলে
না পৃথিবী জ্যোৎস্নার কাছে?
সে বুকে এসেছে বলে।
আমিও জানি না
কে বেশি কৃতজ্ঞ,
আমার 'আমি' না তোমার 'তুমি'?
যে ভাবে তুমি মিশেছ আমাতে।
শুধু জানি আমি ভয় পাই
কালো মেঘ আর গ্রহণের আড়ালকে।
ক্ষোভ
ক্ষোভ এই জন্য না, যে পাইনি
পেয়েছি যোগ্যতার চেয়ে অনেক বেশি।
ক্ষোভ এই জন্য যে, দিতে পারিনি
যতটা দিতে চেয়েছিলাম।
আমার ছোট হাতে যতটুকু কুলিয়েছে
তা তোমার মান রাখেনি
ছুঁতে পারেনি তোমার তৃপ্তির সব চাইতে নীচের রেখাটাও।
কিছু বলার নেই
তোমায় কিছু বলার নেই আমার
কোনো অঙ্গীকার করানোর নেই
কোনো অভিমান, কোনো অভিযোগ নেই
সব বোঝো তুমি
সব জানো।
কাঁটা
বুকের ভিতর কাঁটা বিঁধে আছে
তুলতেই পারি জোর করে
রাখব কোথায়? ফেলব কোথায়?
ফের যদি বেঁধে কারো বুক চিরে?
কাঁপন
নীল আকাশকে পিছনে রেখে
নারকেল পাতার দল
কাঁপছে বাতাসে থরথরিয়ে।
একটা কাঠবেড়ালির লাফ
পাতার সাথে আকাশে ধরালো কাঁপন।
কাঁদা
অসহ্য ব্যাথা গায়ে হাতে পায়ে। লোকটা হাঁটতে গিয়ে মুখ থুবড়ে পড়ল কাদায়। সারা গায়ে কাদা। শুধু কাদা? না পাঁক। কি বিশ্রী দুর্গন্ধ। অবশ্য দুর্গন্ধ তো বিশ্রী হবেই। লোকটা উঠতে গিয়েও উঠতে পারছে না। আরো কাদার মধ্যে দেবে যাচ্ছে। কাদার মধ্যে শামুকের ভাঙা খোলে ক্ষত বিক্ষত হচ্ছে গা হাত পা।
কখন এলে?
ভাবলাম তোমায় বৈরাগ্যে ভোলাবো
তুমি তাকালেই না।
ভাবলাম তোমায় পাণ্ডিত্যে ভোলাবো
তুমি গুরুত্বই দিলে না।
ভাবলাম তোমায় স্তবে ভোলাবো
তুমি শুনলেই না।
শেষে উদাস হয়ে, নিজের পাশে বসলাম, একা-
কখন এলে!
কি হবে
এত ঔদ্ধত্য তোমার!
কি হবে-
যদি শেষরক্ষা না হয়!
চোখের জল না বুকের আগুন
কার কথা শুনবে সেদিন?
নাকি,
দীর্ঘশ্বাসকে দীর্ঘ করবে আরো-
যতদূর যায় ভাঙা অহঙ্কারের ছায়া?
কিছু কথা
কিছু কথা শব্দ হতে ভয় পায়
পাছে তার অনুভব আবিলতায় ঢেকে যায়।
কিছু অনুভব কথা হতে ভয় পায়
জানে, শব্দ এত ভারে ভাঙবে দুর্বলতায়।
কিছু দুর্বলতা আড়চোখে ইশারায় বলে-
"ঢাকো ঢাকো আমায় মিথ্যার কৌশলে"
সব সত্যি-
সত্যি কথায় থাকে না আটকে
কিছু মিথ্যার বেশে ফাঁকি দিয়ে যায়
বুদ্ধির বেড়া টপকে।
কিছু শব্দ
কিছু শব্দ চেনা
কিছু শব্দ অচেনা
স্বপ্নগুলো-
এই চেনা-অচেনার ফাঁকে
কিছু না
আমায়-
সফল হতে হবে
জ্ঞানী হতে হবে
গুণী হতে হবে
ধনী হতে হবে
মানী হতে হবে
সবেতে জিততে হবে
সব্বাইকে হারাতে হবে
এত চাপ কে দিল রে মাথায়?
হব না কিছু
যা ভাগ!
কোথায় গেলে
বুকের ভিতর তীর বিঁধল
তুমি এলে?
চোখের পাতা ঝলসে গেল
তুমি তাকালে?
শ্বাস-প্রশ্বাসে ঝড় উঠল
তোমার গন্ধ এলো?
মন্দ- ভালো গুলিয়ে গেল
আমায় ছুঁলে?
সব কিছু যে থেকেও নেই
কোথায় গেলে?
কেউ খেলছে
কেউ খেলছে
তবু খেলছে না
কেউ খেলছে না
তবু খেলছে
কবে?
মেসেজ আসার শব্দে
ফোন আসার শব্দে
কলিংবেলের শব্দে
কবে মিশেছো?
বাইরে রাখা জুতোর তাকে
আলনায় কাপড়ের মাঝে
চশমার খোলা খাপে
কবে ঢুকেছো?
আমার চায়ের কাপে
উড়ন্ত চুলের ফাঁকে
আমার ঘামের গন্ধে
কবে এসেছো?
আমার টুথপেস্টের ভাগ
মাথার বালিশের ভাগ
একফালি অবকাশের ভাঁজ
কবে চেয়েছো?