ডঃ আব্দুল কালাম মহাশয়,
এই মাত্র শুনলাম আপনি মর্ত্যলোক ছেড়ে গেলেন। কষ্ট লাগল, অনিবার্য্য জেনেও। কেন জানেন? যারা আপনার কথার বিশেষ আমল না দিয়ে, আপনার দেখানো পথকে উপেক্ষা করে চলেছে, তারা আজ পুস্প স্তবকে, স্তবে আপনার আত্মার শান্তি করবেন দলে দলে। যদিও জানি না আত্মা হিসাবে কিছু আছে কিনা, তবু থাকলেও যে আপনি শান্তিতে থাকার মানুষ নন, সেটা এদের কাউকে বোঝানো যাবে না। আপনি সুক্ষ্ণ শরীরেও এই হতভাগা দেশের শিক্ষা- ছাত্র- শিক্ষায়তন ছেড়ে কোনোদিন যেতে পারবেন বলে বিশ্বাস হয় না।
আপনি একটা কথা খুব বলতেন। শিক্ষাঙ্গন তখনই সার্থক, যখন তা শিক্ষার্থীর প্রশ্নে মুখরিত হয়ে ওঠে। অগুনিত শিক্ষার্থীর মনের আঙিনায় ঘুরে ফিরে বেড়িয়েছেন, শুধু তাদের প্রশ্ন করার সৎসাহসটুকু জুগিয়ে দেওয়ার জন্য। দেখেছি, ক্ষুদে ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা জ্বল জ্বল চোখে, কি উদ্দীপনা, উত্তেজনায় আপনাকে প্রশ্ন করেছে, যা তার নিত্য দেখা শিক্ষক/শিক্ষিকাকে করতে হয়তো সাহসে কুলাতে পারেনি। এ ভাবেই একটা যোগসূত্র তৈরী করার ক্ষমতা আপনার ছিল। যে সূত্রে একটা দীপ থেকে আরেক দীপে আলো জ্বলে।
আপনার একটা ছবির পাশে একবার শ্রী অরবিন্দের LIFE DIVINE বইটা দেখে বিস্মিত হয়েছিলাম। বিজ্ঞানীর পাশে ধর্মের বই! পরে আপনাকে পড়তে গিয়ে বুঝলাম, আপনার ধর্ম, চোখ বন্ধ করে মূর্খের স্বর্গের স্বপ্ন না। আপনার ধর্ম মননের মশালে শুভকে খোঁজা, বিবেককে স্বাস্থ্যবান করে তোলা। বুঝলাম, আপনি শুধু বাইরেই না, ভিতরেও খোঁজেন। তাই মানুষের ভিতরে প্রবেশের সোজা রাস্তাটা এত সহজে চোখে পড়ে আপনার - ভালোবাসা আর শ্রদ্ধা।
আরো অনেক কিছু বলতে ইচ্ছা করছে। থাক। আজ এতটাই। আসলে আপনি এখন তো আর দেহে সীমাবদ্ধ নন, তাই বলি সব স্কুল কলেজগুলোতে ঘুরে বেড়াবেন, ছাড়বেন না আমাদের। আমরা বলি যত, করি না তত, জানেনই তো। তবু কচি মুখগুলোকে যে অভয়বাণী শুনিয়েছিলেন সে বাণী তাদের উদ্বুদ্ধ করুক - স্বপ্ন দেখতে, প্রশ্ন করতে। আর ভাবতে, যা আপনি সব সময় ভাবতে বলতেন, " আমিও পারব" এ বিশ্বাস রাখার কথা।
আপনার জন্য শান্তি কামনা করা মূর্খামি। তাই বলি সাথে থাকুন। ভালো থাকবেন।
ইতি,
এ দেশের সহস্র হতভাগ্যের একজন