সৌরভ ভট্টাচার্য
15 November 2014
যে যায়, সে যায়।
যে থাকে, সে টেনেবুনে পাঁচ-দশ বছর আরও থাকে।
সেও যেত, কিন্তু তার রয়েছে বেজায়
পিছুটান, কেউ-কেউ রহস্য করে যাকে
বলে মিছুটান।
~ নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী (মিছুটান)
"ধুর্, চাকরীটা ছেড়েই দেব ভাবছি, না হলে কিচ্ছু করা হচ্ছে না" - এই বাক্যটা বা এই ধরণের উক্তি আমি আমার বন্ধু-বান্ধবদের মধ্যে শুনেছি, তারপরের পরের থেকে শুরু করে এখনো অবধি শুনে আসছি। সবার কাছ থেকে নয় অবশ্যই, তবে বেশ বড় একটা অংশের থেকেই। ট্রেনে, বাসে চলতে ফিরতেও এই কথাটা প্রায়শই শুনি, "ধুর শালা, এবার ছেড়েই দেব"। আরেকটা মজার জিনিস খেয়াল করেছি, এই মানসিকতাটার উদাহরণ খুব একটা দক্ষিণ বা পশ্চিম ভারতের মধ্যে দেখতে পাই নি, বিশেষ করে দক্ষিণে ভারতে। অবশ্যই সেখানেও ব্যতিক্রম নিশ্চই আছে।
নিজের কাজের প্রতি এই অনীহা অশ্রদ্ধা অতৃপ্তি দেখলে অবাক হতে হয়- কেন? কোথাও যেন একটা মনোভাব - 'ঠিক এই কাজটা করার জন্য আমি জন্মাই নি, আমার অন্য কিছু করার ছিল'। ফলস্বরূপ, সারা জীবন- 'হেথা নয় হেথা নয়, অন্য কোথা অন্য কোনোখানে'।
কিন্তু এতে লাভ? যার সত্যিই কিছু করার আছে, তাকে দেখেছি সে সামনে ঝাঁপ দিয়েছে আগু পিছু না ভেবেই। সেই কথামৃতের গল্পটার মত, ঠাকুরের অনবদ্য ভাষায়। ছেলে মাকে বলছে, "মা, আমি শুলুম, তুমি আমার হাগা পেলে আমাকে তুলে দিও"। মা বলছেন, "বাবা, আমায় তুলতে হবে না, ওই হাগাই তোমায় ঠেলে তুলবে।"
কিন্তু কথা হল বেগ না আসতেও ঘরের কাজ অযত্নে সেরে দরজায় গাড়ু নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকারও তো কোনো কারণ দেখি না, "আহা আমার যদি বাহ্য পেত!" বলে দীর্ঘশ্বাস ফেলারও কোনো যুক্তি নেই, তাতে ইতঃনষ্ট ততভ্রষ্টই হয় শেষমেশ।
ইতিহাসের দিকে তাকালে খেয়াল করা যায় কারোর কোনো সামাজিক অবস্থাই তার প্রতিভা বিকাশের চূড়ান্ত বাধা হতে পারেনি চিরটাকাল। বহু প্রতিকুলতার মধ্যেও ভ্যান গগের আঁকা থামে নি, খালিল গিবরাণের লেখনী থামে নি, এদেশে তো উদাহরণ দিতে শুরু করলে থামা দায় হবে। ভাগ্য এঁদের জেদের কাছে, নিজের সিদ্ধান্তের সততার কাছে মাথা নত করতে বাধ্য হয়েছে। যেমন আমরা শুনে এসেছি, 'সূর্য্য উঠলে প্রদীপের প্রয়োজন হয় না তাকে দেখার জন্য'।
কিন্তু সে প্রতিভা যদি না থাকে? তাহলে সাধারণভাবে বাঁচা কি খুব লজ্জার! মাদার টেরেসা একটা সুন্দর কথা বলতেন, "ঈশ্বর আমাকে সফল হওয়ার জন্য পাঠান নি, বিশ্বস্ত হওয়ার জন্য পাঠিয়েছেন"। কি চমৎকার কথা!
কি দরকার সারাদিন ক্ষোভের পর ক্ষোভের পাহাড় জমিয়ে তোলার। যেন আমি বিরাট একটা কেষ্ট বিষ্টু, হতভাগা এই সাধারণ কাজটা আমার সমস্ত প্রতিভার পায়ে শিকল বেঁধে রেখেছে। ছাড়া পেলেই আমি দেখিয়ে দিতাম আমি কে!
স্বামীজির কথা মনে পড়ছে। বলছেন, ছোটবেলা থেকে আমরা সবাই ভাবি, আমরা কোনো বড় কাজ করার জন্য জন্মেছি। তারপর যত বড় হই, প্রকৃতি চড় থাপ্পড় মেরে আমাদের সঠিক জায়গাতে বসিয়ে দেয়। আমরা যদি উপস্থিত কাজটাতে মন প্রাণ লাগিয়ে দিতে পারি, তবেই ভবিষ্যতে আমাদের আরো বড় কাজের জায়গা দেওয়া হবে।
আব্রাহাম লিঙ্কণ-এর জীবনী বোধহয় এর একটা জ্বলন্ত ভাষ্য। আর মনে পড়ে তপন সিনহার বিখ্যাত সিনেমা, 'গল্প হলেও সত্যি'র কথা। এই কথাটারই সুর তাতেও।
আমার কিছু করার ইচ্ছা থাকতেই পারে। আপত্তি নেই। আপত্তি অকারণ আত্মপ্রবঞ্চনায়।
ক্ষতি তো নিজের আর আমাতে ন্যস্ত কাজের। সর্বক্ষণ যদি বিরক্তই থেকে গেলাম নিজের কাজের ওপর তবে সে কাজের মান উন্নত হবে কি করে? পরিষেবায় আন্তরিকতা আসবে কি করে? নিজের কাজের ওপর যদি শ্রদ্ধা না রাখি তবে নিজের ওপরেও স্বাভাবিক শ্রদ্ধা রাখা দায় হবে যে! ক্রমশ পিছনের সারিতে হটতে থাকব। কোনো সৃষ্টিশীলতা থাকবে না।
যেকাজই হোক না, তাকে আমার মত করে পরিপূর্ণতার রূপ দেব শত বাধা অতিক্রম করেও, তবেই যে না আমি সার্থক! তা সে দেশ বিদেশে আমায় চিনুক আর নাই চিনুক!
নিজের কাজের প্রতি এই অনীহা অশ্রদ্ধা অতৃপ্তি দেখলে অবাক হতে হয়- কেন? কোথাও যেন একটা মনোভাব - 'ঠিক এই কাজটা করার জন্য আমি জন্মাই নি, আমার অন্য কিছু করার ছিল'। ফলস্বরূপ, সারা জীবন- 'হেথা নয় হেথা নয়, অন্য কোথা অন্য কোনোখানে'।
কিন্তু এতে লাভ? যার সত্যিই কিছু করার আছে, তাকে দেখেছি সে সামনে ঝাঁপ দিয়েছে আগু পিছু না ভেবেই। সেই কথামৃতের গল্পটার মত, ঠাকুরের অনবদ্য ভাষায়। ছেলে মাকে বলছে, "মা, আমি শুলুম, তুমি আমার হাগা পেলে আমাকে তুলে দিও"। মা বলছেন, "বাবা, আমায় তুলতে হবে না, ওই হাগাই তোমায় ঠেলে তুলবে।"
কিন্তু কথা হল বেগ না আসতেও ঘরের কাজ অযত্নে সেরে দরজায় গাড়ু নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকারও তো কোনো কারণ দেখি না, "আহা আমার যদি বাহ্য পেত!" বলে দীর্ঘশ্বাস ফেলারও কোনো যুক্তি নেই, তাতে ইতঃনষ্ট ততভ্রষ্টই হয় শেষমেশ।
ইতিহাসের দিকে তাকালে খেয়াল করা যায় কারোর কোনো সামাজিক অবস্থাই তার প্রতিভা বিকাশের চূড়ান্ত বাধা হতে পারেনি চিরটাকাল। বহু প্রতিকুলতার মধ্যেও ভ্যান গগের আঁকা থামে নি, খালিল গিবরাণের লেখনী থামে নি, এদেশে তো উদাহরণ দিতে শুরু করলে থামা দায় হবে। ভাগ্য এঁদের জেদের কাছে, নিজের সিদ্ধান্তের সততার কাছে মাথা নত করতে বাধ্য হয়েছে। যেমন আমরা শুনে এসেছি, 'সূর্য্য উঠলে প্রদীপের প্রয়োজন হয় না তাকে দেখার জন্য'।
কিন্তু সে প্রতিভা যদি না থাকে? তাহলে সাধারণভাবে বাঁচা কি খুব লজ্জার! মাদার টেরেসা একটা সুন্দর কথা বলতেন, "ঈশ্বর আমাকে সফল হওয়ার জন্য পাঠান নি, বিশ্বস্ত হওয়ার জন্য পাঠিয়েছেন"। কি চমৎকার কথা!
কি দরকার সারাদিন ক্ষোভের পর ক্ষোভের পাহাড় জমিয়ে তোলার। যেন আমি বিরাট একটা কেষ্ট বিষ্টু, হতভাগা এই সাধারণ কাজটা আমার সমস্ত প্রতিভার পায়ে শিকল বেঁধে রেখেছে। ছাড়া পেলেই আমি দেখিয়ে দিতাম আমি কে!
স্বামীজির কথা মনে পড়ছে। বলছেন, ছোটবেলা থেকে আমরা সবাই ভাবি, আমরা কোনো বড় কাজ করার জন্য জন্মেছি। তারপর যত বড় হই, প্রকৃতি চড় থাপ্পড় মেরে আমাদের সঠিক জায়গাতে বসিয়ে দেয়। আমরা যদি উপস্থিত কাজটাতে মন প্রাণ লাগিয়ে দিতে পারি, তবেই ভবিষ্যতে আমাদের আরো বড় কাজের জায়গা দেওয়া হবে।
আব্রাহাম লিঙ্কণ-এর জীবনী বোধহয় এর একটা জ্বলন্ত ভাষ্য। আর মনে পড়ে তপন সিনহার বিখ্যাত সিনেমা, 'গল্প হলেও সত্যি'র কথা। এই কথাটারই সুর তাতেও।
আমার কিছু করার ইচ্ছা থাকতেই পারে। আপত্তি নেই। আপত্তি অকারণ আত্মপ্রবঞ্চনায়।
ক্ষতি তো নিজের আর আমাতে ন্যস্ত কাজের। সর্বক্ষণ যদি বিরক্তই থেকে গেলাম নিজের কাজের ওপর তবে সে কাজের মান উন্নত হবে কি করে? পরিষেবায় আন্তরিকতা আসবে কি করে? নিজের কাজের ওপর যদি শ্রদ্ধা না রাখি তবে নিজের ওপরেও স্বাভাবিক শ্রদ্ধা রাখা দায় হবে যে! ক্রমশ পিছনের সারিতে হটতে থাকব। কোনো সৃষ্টিশীলতা থাকবে না।
যেকাজই হোক না, তাকে আমার মত করে পরিপূর্ণতার রূপ দেব শত বাধা অতিক্রম করেও, তবেই যে না আমি সার্থক! তা সে দেশ বিদেশে আমায় চিনুক আর নাই চিনুক!